ঝর্ণা The Untold story ! সমাপ্ত - অধ্যায় ১১১

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-31677-post-2740548.html#pid2740548

🕰️ Posted on December 17, 2020 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags:
📖 998 words / 5 min read

Parent
মঞ্জু নেই !! এই কথাটা শুনেই আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরল ! এয়ারপোর্ট এর গেটেই আমি বসে পরলাম ! সিকিউরিটির লোকেরা ছুটে এসে আমাকে তোলার চেষ্টা করল ! আমার হাত রাজুর দিকে বাড়িয়ে সীমাহীন অন্ধকারের অতলে চলে গেলাম !  যখন জ্ঞ্যান ফিরল নিজেকে এয়ারপোর্ট এর প্রাথমিক স্বাস্থ কেন্দ্রে পেলাম ! রাজু সমির হরপ্রিত সুজাতা সবাই ভির করে দাঁড়িয়ে আছে ! উঠে বসার চেষ্টা করলাম ! রাজু আমাকে উঠতে দিতে চাইল না ! তবুও জোর করে উঠে বসলাম ! " চল আমাকে এখুনি যেতে হবে  ! তার আগে আমাকে বল কি হয়েছে ! কেনই বা তুই বললি মঞ্জু নেই !" হবে হবে সব বলব ! আগে তুই নিজেকে একটু সামলে নে ! তারপর তোকে সব বলব !  - না আমাকে এখুনি বল কি হয়েছে মঞ্জুর ? - বোধগয়ার কাছে ওদের বাস একটা খাদে পরে যায় ! মঞ্জু সমেত আরও পাঁচজন প্রান হারিয়েছে ! এরা সবাই বাসের সামনের দিকে বসে ছিল ! এখনও ওদের দেহ গয়ার জেনারেল হাসপাতালে রাখা আছে ! তোর বাবা আর তোর পিসেমসাই আর লাহিরিবাবু পৌঁছে গেছেন ! আমি বললাম "এখুনি গয়া যাবো ! আমার টিকিট করিয়ে দে ! " - গয়ার ডাইরেক্ট ফ্লাইট নেই ! আমি পাটনার টিকিট করিয়ে রেখেছি ! তোর শরির ঠিক হলেই আমি টিকিট কনফারম করিয়ে নেবো !  -এখুনি যাবো ! আমার মঞ্জু আমাকে এইভাবে ছেরে যেতে পারেনা ! বুকের ভিতর কান্না গুল দলা পাকিয়ে উঠে আসতে চাইছে !  রাজু সমির আর আমি সেই সন্ধায় পাটনার ফ্লাইট ধরলাম ! রাত দশটায় পাটনা পৌঁছে  একটা গারি করে যখন গয়া পৌঁছলাম তখন ভর হতে শুরু করছে ! সোজা হাসপাতালে গিয়ে দেখি বাবা, পিসেমসাই আর লাহিরিদা আরও অনেকে বসে আছেন  যাদের আমি চিনি না !  আমাকে দেখেই পিশেমসাই আমাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন ! কিন্তু এখন আমি আর কাঁদতে পারছিনা ! কণ্ঠরুদ্ধ স্বরে জিজ্ঞাসা করলাম "মঞ্জু কোথায় ?" লাহিরিদা আমার পিঠে হাত রেখে বললেন " এখন মর্গে আছে ! কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ আসবে তারপর সমস্ত বডি ছাড়া হবে ! " আমার আর ত্বর সইছহিলনা ! " আমি এখনি দেখতে চাই ! আমাকে নিয়ে চলো প্লিস !!" - রাজু আর সমির আমাকে জোর করে ধরে বাইরে নিয়ে এলো ! জলের ধারায় চোখের সামনে সব ঝাপ্সা দেখছি ! হাসপাতালের বাইরে এসে রাজু আমার হাতে একটা সিগারেট ধরিয়ে দিয়ে বলল " নে খা ! আর মনটাকে শক্ত কর !! সিগারেট ধরিয়েছি সেটা খেয়াল ছিলোনা ! হাতের আঙ্গুলে গরম ছাঁকা পেতেই বাস্তবে ফিরে এলাম !  পুলিশ এসে গেছে ! সবাই মর্গের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম ! দরজা খুলে একে একে সমস্ত ডেড বডি বের করে সবার আত্মীয় দের তুলে দেওয়া হোল ! মঞ্জুর শরির বেড়িয়ে এলো পুরো সাদা কাপরে ঢাকা !আমি তারাতারি মুখের কাপর শরিয়ে মঞ্জুর মুখটাকে জরিয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পরলাম ! সবাই আমাকে সামলানোর চেষ্টা করতে লাগলো ! মাঞ্জুর মুখ যন্ত্রণায় বেঁকে আছে ! যে মঞ্জুকে আমি হাসি মুখে ছাড়া কোনোদিন কল্পনা করিনি আজ সেই মুখে যন্ত্রণার চিহ্ন আমাকে পাগল করে দিল ! ওর দেহকে জরিয়ে ধরলাম ! ওর মুখে চুমু দিয়ে ওর যন্ত্রণা লাঘব করার চেষ্টা করলাম ! সবাই আমাকে জোর করে ধরে মঞ্জুর দেহের থেকে আমাকে সরিয়ে দিল ! সমীর আর রাজু জোর করে আমাকে ধরে বাইরে নিয়ে যাবার চেষ্টা করতে লাগলো ! আমি তখন কাঠা পাঁঠার মতো ছহতফত করছিলাম আমার মঞ্জুর কাছে যাবার জন্য ! ! বাবা এসে আমাকে শক্ত হাতে ধরে গম্ভির গলায় বললেন " আর না ! অনেক হয়েছে ! আমাদের মান সম্মান মাটিতে মিশিয়ে দিও না ! নিজেকে শক্ত করো ! " বাবার গলার স্বরে এমন এক অমোঘ বানি ছিল আমাকে বেশ কিছুটা নিভিয়ে দিল !  যে পাঁচ জন মেয়ে মারা গেছিলো তাদের পরিবার তাদের গয়াতেই চিতা সাজানোর কথাবার্তা বলছিল ! পিসেমসাই এবং লাহিরিদাও সেইরকম চিন্তা করে ওদের সাথে ওখানেই মঞ্জুকে শেষ বিদায় দিতে !  আমি বেঁকে বসলাম ! " না এখানে আমি মঞ্জুকে ছেরে যাবো না ! যা হবে আমাদের ত্রিবেনিতে হবে " বাবা লাহিরিদা পিসেমসাই সবাই আমাকে বোঝাতে চেষ্টা করল ! কিন্তু আমি নাছরবান্দা ! আমি কিছুতেই মঞ্জুকে এখানে ছেরে যাবনা !  আসলে আমি মঞ্জুকে ছাড়তে ছাইছিলাম না ! আরও যতক্ষণ সম্ভব হয় মঞ্জুকে আমার কাছেই রাখতে চাইছিলাম !  শেষে লাহিরিদা পুলিশকে জিজ্ঞাসা করলেন "যদি এখান থেকে এম্বুলেন্স করা যায় তাহলে কতক্ষনে আমরা কলকাতা পৌঁছে যাবো ? পুলিশের লোকটি বললেন " কম করে ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা !! কিন্তু রাস্তায় যেতে যেতে বডিতে পচন ধরে যেতে পারে !" ঠিক হোল একটা কফিনে বরফ রেখে মঞ্জুকে রাখা হবে ! একটা এম্বুলেন্স আর একটা গারি ভারা করে আমরা মঞ্জুকে নিয়ে বেড়িয়ে যাবো !  পুলিশের লোকটিই সমস্ত ব্যবস্থা করলেন ! " যতক্ষণ এই সমস্ত ব্যবস্থা চলছে তার মধ্যেই বাবা সবাইকে বললেন কিছু খেয়ে নিতে ! কাল রাত থেকেই কারুর কিছু খাওয়া হয়নি ! ওনারা বাবার কথায় সায় দিলেন ! বাবা আমার হাত শক্ত করে টেনে নিয়ে চললেন হাসপাতালের সামনের হোটেলে ! খাবার ইচ্ছা একেবারেই ছিলোনা ! কিন্তু জোর করে ঘুগনি আর পাউরুটি খেতে বাধ্য হলাম ! সকাল ১০ টা বেজে গেছে ! বাইরে এসে আমি সমিরকে বললাম "একটা মালের বোতল জগার করতে পারবি?" সমির কোন কথা না বোলে চলে গেলো !  ঠিক হোল আমি রাজু আর সমির আম্বুলেন্সের পিছনে বসব ! লাহিরিদা সামনে ! অন্য গাড়িতে বাবা আর পিসেমসাই !  লাহিরিদা বাবাকে বললেন "আপনারা আগে বেড়িয়ে যান ! ওখানে গিয়ে সমস্ত জোগাড় যন্ত্র করে রাখুন ! এখনও এখান থেকে বডি নিয়ে বেরুতে দুই তিন ঘণ্টা সময় লাগবে ! যতক্ষণে আমরা স্টার্ট করব ততক্ষনে আপনারা অনেক দূর চলে যেতে পারবেন ! বাবা শুধু বললেন "একটু দেখবেন ! সুনন্দ যেন ছেলেমানুষি বা পাগলামি না করে ! " - সেটা আমি দেখে নেবো !  ১২ টা নাগাদ এম্বুলেন্স ছাড়ল ! আমার সামনে কফিনে ঢাকা দেওয়া মঞ্জুর দেহ ! কফিনের উপরেই মাথা রেখে কফিনটাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে উঠলাম ! রাজু আর সমির আমাকে জোর করে কফিন থেকে সরিয়ে দিল ! গারি চলছে আর সমানে ঝরে যাচ্ছে আমার চোখের জল ! আমাকে বসিয়ে সমির আমার হাতে মদের বোতল ধরিয়ে দিল ! রাজু তিনটে প্লাস্টিকের গ্লাস নিয়ে এসেছিলো ! তার একটায় আমার গ্লাসে মাল ধেলে জল মিশিয়ে দিল ! এক চুমুকেই সবটা শেষ করে দিলাম ! বুক জ্বলে যাচ্ছিলো ! কিন্তু মনের জ্বলনের কাছে সেই জ্বলন কিছুই নয় ! গ্লাস খালি করেই রাজুর দিকে গ্লাস বাড়িয়ে দিলাম ! রাজু চুপচাপ আমার গ্লাসে মাল ঢালতেই সঙ্গে সঙ্গে শেষ করে দিচ্ছিলাম ! কফিনের উপর মাথা রেখে কখন ঘুমিয়ে পরেছি জানতে পারিনি !          
Parent