ঝর্ণা The Untold story ! সমাপ্ত - অধ্যায় ৭০

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-31677-post-2617925.html#pid2617925

🕰️ Posted on November 11, 2020 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1629 words / 7 min read

Parent
হোটেল আগে থেকেই বুক করা ছিল ! একই রকম সিস্টেম ! তবে এখানে রুমের সংখ্যা কম কিন্তু প্রতিরূমে বেডের  সংখ্যা বেশি ! এখানে প্রতি রুমে ৬ টি করে বেড এবং দুটি করে টয়লেট  ! আমাদের রুমে আমি ঘোষদা  লাহিড়ীদা জাভেদ সাহেব আর অর্জুন ! মেয়েরা মোটামুটি সবাই একই ভাবে রইলো ! এবার কিন্তু মঞ্জু কোনো ঝামেলা করলো না ! আমি রুমে ঢুকেই বাথরুমে চলে গেলাম ! পেট খালি করে রুমে আসতেই লাহিড়ীদা বললেন " চলো সবাই চা খেয়ে আসি !" কমলদা, ঘোষদা আর আমি এক পায়ে রাজি ! জাভেদ সাহেব শুধু বললেন একটু ঘুমাবেন ! অর্জুনও  আমাদের সাথে চা খেতে চললো ! বাইরে সবে ভোর হচ্ছে ! আমাদের হোটেলের সামনেই বোম্বে ভিটির ২১ নম্বর গেট ! সেই গেটের সামনেই একটা টি স্টল ! বেশ ভিড় আছে সেখানে ! এই ভোরেও কোনো চায়ের দোকানে ভিড় একমাত্র কোনো বোরো জংশন স্টেশনেই হতে পারে ! আমরা সবাই চা খেলাম ! বেশ ভালই লাগলো ! চা খেয়ে সবাই সিগারেট ধরালাম ! সিগারেট ধরাতেই দুটো পুলিশ কথা থেকে যে মাটি ফুঁড়ে উদয় হলো ! এসেই আমার হাত ধরে ফেললো  ! হয়তো ওরা  বোরো বলেই ওদের হাত ধরতে সাহস পায়নি ! - কি ব্যাপার হটাৎ আমাকে ধরছেন কেন ? (মাঝে কিউঁ পাকার রাহে হো ?) - ইয়ে  স্টেশন এরিয়া হয় ! ইহা সিগরেট পিনা মানা  হয় ! লাহিড়ীদা এগিয়ে এসে একটা পুলিশের হাতে কিছু গুঁজে দিলো ! সঙ্গে সঙ্গে সেই পুলিশ অন্য পুলিশকে ইশারা করলো ! ওর ইশারা পেতেই ও আমার হাত ছেড়ে চলে গেলো ! খুব রাগ হচ্ছিলো ! কিন্তু কিছুই করার নেই ! বিদেশ বিভুঁই ! কিছুই করতে পারবো না ! তাই চুপচাপ হজম করে নিলাম ! লাহিড়ীদা হেসে বললেন "সুনন্দ তোর বাবাও কিন্তু পুলিশ !" মনের রাগ মনেতেই পুষে নিয়ে সবাই হোটেলে ফিরে এলাম ! হোটেলের বাইরে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরালাম ! এটা  তো আর রেলের জায়গা নয় ! সিগারেট ধরিয়ে দুতিনটে  টান দিতেই দেখি মঞ্জু হোটেলের বাইরে দাঁড়িয়ে আমাকে একদৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে ! হাতের সিগারেট ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আমি মঞ্জুর কাছে এগিয়ে গেলাম ! - তুমি ঘুমাওনি? মঞ্জু আমার কথার উত্তর দিলোনা ! মুখ ঘুরিয়ে নিলো ! বুঝলাম মঞ্জু রাগ করে আছে ! আমি বিশেষ কোনো গুরুত্ব দিলাম না ! আমি ভিতরের দিকে এগুতে চাইলাম ! আমার হাতে হ্যাঁচকা টান পড়লো ! মঞ্জু আমার হাত ধরে টান দিয়েছে ! পুলিশের উপর রাগ তার উপর মঞ্জুর উপর রাগ ! কিন্তু মঞ্জুর মুখের দিকে তাকিয়ে সমস্ত রাগ কন্ট্রোল করতে বাধ্য হলাম ! মঞ্জুর দুচোখে জলের ধারা !  খুব ব্যাথা পেলাম ! আমি তো কোনোদিন আমার মঞ্জুর চোখে জল দেখতে চাইনি ! তাহলে আজ কি করে মঞ্জুর চোখের জল দেখছি আমি !? নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিলাম ! ওর হাত ধরে টেনে নিলাম বুকের কাছে ! কিন্তু বুকের মধ্যে টানতে পারলাম না ! কারণ সকালের আলো ফুটে গেছে  ! সামনেই একটা ট্যাক্সি দেখতে পেয়ে হাত তুলে দাঁড় করলাম ! ট্যাক্সি কে হাত দেখাতেই মঞ্জু আমার হাত ছেড়ে দিলো ! ট্যাক্সি ড্রাইভার কে জিজ্ঞাসা করলাম কাছে পিঠে কোনো সমুদ্রের বীচ  আছে কিনা ! জানতে পারলাম নারীমান  পয়েন্ট ! ইশারায় মঞ্জুকে ট্যাক্সিতে উঠতে বললাম ! কোনোকথা না বলে মঞ্জু উঠে পড়লো ! আমিও মঞ্জুর পাশে বসে পড়লাম ! ৫ মিনিটের মধ্যেই নারীমান  পয়েন্ট এ পৌঁছে গেলাম ! ট্যাক্সিওয়ালা ১৫ টাকা চাইলো ! দিয়ে দিলাম ! এখানে কোনো বীচ  নেই ! সমুদ্রের ধারে  দুফুট উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা ! প্রচুর লোক ! কেউ মর্নিং ৩ওয়াক করছে আবার কেউ পাঁচিলের উপরে বসে সমুদ্রের শোভা  দেখছে ! আমি একটা ফাঁকা জায়গা দেখে মঞ্জু কে নিয়ে সমুদ্রের দিকে মুখ করে বসে পড়লাম ! মঞ্জুর দু চোখ উদাসী ! সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে ! ওই চোখদুটোই  আমার কাছে সমুদ্র মনে হচ্ছিলো ! ওই দুই চোখে সমুদ্রের অথৈ গভীরতা ! স্থির কিন্তু খুব চঞ্চল ! এই সমুদ্রে হয়তো ওতো  গভীরতা নেই যতটা আমি মঞ্জুর চোখে দেখতে পাচ্ছি ! বুঝতে পারলাম মঞ্জু এক বিরাট দুশ্চিন্তায় আছে বা জীবনের এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে সেখান থেকে কি করে আমাকে ফেরাবে তার চিন্তা ! আমি মঞ্জুকে জড়িয়ে ধরলাম ! ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে বললাম !"জীবনটা ততটা মসৃন নয় যতটা তুমি ভাব ! জীবনে যৌবনের খেলাটাই সব নয় মঞ্জু ! আমাদের একটা ভবিষৎ আছে ! আমাদের দুজনকে অনেকদূর যেতে হবে ! নিজেদের প্রতিষ্টা করতে হবে  ! তবেই আমরা এক হতে পারবো ! আমাদের রিলেশনটা যে কি সেটা তুমি ভালো করেই জানো ! তাই আমাদের সামনে এক কঠিন বাস্তব কঠিন লড়াই অপেখ্যা করে আছে ! সেই লড়াইয়ে আমাকে জিততে হবে মঞ্জু ! তবেই আমরা এক হতে পারবো ! - তুমি কেন তৃপ্তিদিকে সব বলেছো? - কেন বলবোনা ? উনি একজন গুরুজন ! আমাদের দুজনেরই শুভন্যাধ্যায়ী  ! আমাদের কত ভালোবাসেন সেটা তুমি জানো  ! আমি তোমাকে বোঝতে গেলে তুমি বুঝবে না  ! কিন্তু তোমাকে তো বোঝাতে হবে ? আর তৃপ্তিদিই  সেইজন যিনি তোমাকে বোঝাতে পারেন ! তুমি বুঝতেও পারবেনা যখন আমি তৃপ্তিদিকে সব বলেছিলাম ! উনি কতটা ঘৃণা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন ! আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন ! কারণ উনি সত্যিই আমাদের স্নেহ করেন ! - ওনার আর কি ? তোমাকে দিয়ে মজা লুটে নিজের পেট বাঁধিয়ে বেশ সুখে আছে ! আমার বেলাতেই সব রেস্ট্রিকশন ? - মঞ্জু উ  উ। ... চেঁচিয়ে উঠে আমি মঞ্জুকে ঠেলে সরিয়ে দিলাম ! তোমার মুখে একটুও আটকালো না এইরকম কথা বলতে? আমি তোমাকে উদারমনা ভেবেছিলাম কিন্তু খুব ভুল ভেবে ছিলাম  ! তুমি না একজন নারী ? নারী যদি নারীর মন না বুঝতে পারে সে কি করে একজন পুরুষকে ভালোবাসবে ?তুমি কোনোদিনই একজন নারী হয়ে উঠতে পারবে না ! কারণ নারীসুলভ মমতা তোমার মধ্যে নেই ! এক ঝটকায় আমি উঠে দাঁড়ালাম ! বললাম এটাই হয়তো আমাদের শেষ কথা বলা ! যতদিন না আমি প্রতিষ্ঠিত হতে পারছি সেইদিন পর্যন্ত তোমার সাথে কথা বলবো না ! ততদিনে নিজেকে নারী হিসাবে প্রমান করো ! আমি তোমার জন্য অপেখ্যা করবো ! মঞ্জুর চোখে সমুদ্রের ঢেউ ! দু চোখ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের নোনাজল ! ওই জলে সমুদ্রের কিছু জল বাড়বে কি না সেটা আমি জানিনা ! কিন্তু মঞ্জুর ভিতরের কালিমা হয়তো কিছুটা কমবে ! মঞ্জুকে কাঁদতে দিয়ে একটু দূরে সরে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম ! আমার মনেতেও বয়ে চলেছে একটা বিরাট ঝড়  ! সত্যিই কি আমরা ভালোবেসেছি ? হয়তো আমি বাসি কিন্তু মঞ্জু ? যদি মঞ্জু আমাকে ভালোবাসতো তাহলে কি আজ পর্যন্ত আমার জীবনে যত ঘটনা ঘটেছে সেগুলো কি ঘটতে পারতো ? কি করে তৃপ্তিদির বিষয়ে এইরকম নোংরা কথা বলতে পারলো মঞ্জু  ! তারমানে কি ওর সব সৌন্দর্য সবটাই কি বাইরের? ওর মনে কি কোনো সৌন্দর্য নেই? নেই কোনো মমতা, ভালোবাসা নারীত্বের সম্মান ? আহলে কি আমি যৌবনের সর্বনাশা ডাকে সারা দিয়ে সেটাকেই ভালোবাসা বলে ভেবেছি ? চোখ দুটো খুব জ্বালা করতে লাগলো ! নিজেকে সামলাতে পারলাম না ! নিজের মনের অজান্তেই চোখের ভিতর থেকে ফল্গু বইতে শুরু করে দিলো ! প্রচন্ড রাগে অপমানে আমার বুকে কেমন যেন একটা যন্ত্রনা হতে শুরু করে দিলো ! কান্নাটা বেরুতে চাইলেও বেরুতে পারছে না ! গলায় দলা  পাকিয়ে আটকে আছে ! আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না ! বসে পড়লাম পাথরের উপর ! নিজের দুই হাঁটুতে মাথা গুঁজে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললাম ! কতক্ষন ঐভাবে বসে ছিলাম জানিনা ! মাথায় কারুর স্পর্শ পেয়ে মুখ তুলে তাকালাম ! মুখ তুলে দেখি তৃপ্তিদি আর অঞ্জলিদি আমার মাথায় হাত বোলাচ্ছে  -  তোমরা এখানে ? কি করে জানলে আমরা এখানে ?  - আমরাও চা খেতে যাচ্ছিলাম ! কিন্তু তোদের ট্যাক্সিতে উঠতে দেখে আমরা তোদের ফলো  করি ! সব শুনেছি ! কিন্তু আমি মঞ্জুকে দোষ  দিতে পারিনারে সুনন্দ ! তৃপ্তিদি আমাকে বললেন !  অঞ্জলিদি ধীরে ধীরে মঞ্জুর পাশে গিয়ে বসে ওকে সান্ত্বনা দিতে লাগলো !  আমার মনের ঝড় কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না ! তৃপ্তিদিকে জড়িয়ে আবার কেঁদে ফেললাম ! " আমি খুব ভুল করেছি তৃপ্তিদি ! জানিনা কি ভাবে এই ভুলকে শোধরাবো   " - ওরে পাগলা ! তোদের এই বয়সটাই তো ভুলের বয়স ! এই সময়েই দরকার সঠিক পথ পদর্শকের ! সেটা বাবাও হতে পারে মাও  হতে পারে আবার আমার মতো কোনো দিদি। .... - আমায় ক্ষমা করে দিও দিদি !  - এক শর্তে ক্ষমা করতে পারি ! যদি তুই নিজেকে শূদ্রে নিয়ে নিজেকে প্রতিষ্টা করার প্রমিস করিস তবেই ! তুই প্রতিষ্টিত হলেই মঞ্জু একটা নতুন জীবন পাবে ! কথা দে যে তুই নিজেকে প্রতিষ্টিত করবি সুনন্দ !  - কথা দিলাম দিদি !  একটু ম্লান হাসি হেসে তৃপ্তিদি বললেন " যা এবারে অভিমানিনীর মান ভাঙা ! " আমাকে মান  ভাঙাতে হলোনা ! জানিনা অঞ্জলিদি কি বলেছিলো মঞ্জুকে! মঞ্জু নিজেই এগিয়ে এসে তৃপ্তিদিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো !  "দিদি আমাকে ক্ষমা করে দাও ! আমি খুব বাজে মেয়ে ! প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও !  - ধুর পাগলী ! কেউ বাজে হয়না ! বাজে শুধ সময় হয় ! এই সময়টা তোদের মতো ছেলেমেয়ে সবার জন্যই খুব বাজে সময় ! তোরা যাতে বিপথে না যাস তাই তো আমরা আছি ! শুধু এটাই মনে রাখিস এই পৃথিবী খুব কঠিন ! এখানে বাঁচতে গেলে প্রতিনিয়ত লড়াই করে যেতে হয় !  মঞ্জু আমার দিকে তাকিয়ে বললো " প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও !" - একটাই শর্তে। ..... এরপর আমরা শুধু আমাদের বিয়ের সময় মিলিত হবো ! তার আগে নয় ! যদি তুমি কথা দিতে পারো তাহলেই। ..... - তাই হবে ! আমি আর ভুল করবো না !  - না চল চল এবার একটু চা খাওয়া যাক ! অঞ্জলিদি বলে উঠলো !  অঞ্জলিদির বলার ধরণে সবাই হেসে উঠলাম !  বেশ কিছু চা ওয়ালা ফ্লাস্কে চা নিয়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছিল ! তাদের একজনের কাছ থেকে চা কিনে সবাই খেলাম !  - চলো এবার যাওয়া যাক !  হ্যা চল ! তবে এইটুকু রাস্তা হেঁটে যাওয়াই ভালো ! তৃপ্তি দি বললো !  - তুমি কি এই অবস্থায় হাঁটতে পারবে ? - ওরে পাগলা ! এখনই তো একটু বেশি করে হাঁটার দরকার !  সবাই গল্প করতে করতে হাঁটতে শুরু করে দিলাম ! মঞ্জুর মুড্ এখন খুব ফ্রেশ ! কলকলিয়ে কথা বলে চলেছে ! হোটেলের সামনে বেশ ভিড় ! সবাই মোটামুটি দুশ্চিন্তা নিয়ে হোটেলের গেটে দাঁড়িয়ে ! আমাদের দেখেই লাহিড়ীদা বলে উঠলেন "ওইতো  ওরা  !" কমলদা একরকম ছুঁটে  এসে তৃপ্তিদিকে বকতে শুরু করে দিলো ! "এটা  কোন ধরণের ব্যবহার ? না বলে হুট্ করে সবাই গায়েব হয়ে যাও ?" - আমি কি একা  গেছি নাকি ?আমাদের সাথে সুনন্দ ছিল ! তোমরা সবাই ঘুমাবে তো আমরা কি করবো?  কমলদা আর কথা বাড়ালোনা ! কারণ তৃপ্তিদি এমন ভাবে ঝাঁজিয়ে বলেছে সেখানে কমলদা মতো সিংহও ইঁদুর হয়ে গেছে !  
Parent