ঝর্ণা The Untold story ! সমাপ্ত - অধ্যায় ৭২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-31677-post-2622031.html#pid2622031

🕰️ Posted on November 12, 2020 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags:
📖 973 words / 4 min read

Parent
একটা এক লিটারের শিভাস রিগালের অর্ডার দেওয়া হলো ! সাথে রাবা বাগদা ! (মিডিয়াম চিংড়ি বেসন মাখিয়ে ভাজা !) গ্রীন স্যালাড ! বেশ ভালোই জমলো আমাদের আসর !  অনেক গল্প গুজবের মধ্যেই আমাদের আগামীকালের প্রোগ্রাম ঠিক করা হয়ে গেলো ! কাল আমরা বোম্বের  সমস্ত দর্শনীয় জায়গা ঘুরবো ! আমাদের হোটেল থেকেই বোম্বে দর্শণের ব্যবস্থা আছে ! ওরা  ব্যবস্থা করে দেবে ! পরশু দুপুর দুটোয় আমাদের ট্রেন ভিটি থেকে ! তাই আমাদের কোনো অসুবিধা নেই !  কিন্তু ট্রেনের রসদ এখন থেকেই তুলতে হবে ! না হলে তিনদিনের রাস্তা খুব খারাপ ভাবে কাটবে ! কথা হলো কাল বিকাল বেলাতেই সমস্ত ব্যবস্থা  করে নিতে হবে ! দুপুরের লাঞ্চ সিভিল রেস্টুরেন্ট থেকে করে সবাই আমরা স্টেশনে চলে যাবো ! গল্প করতে করতেই আমাদের বোতল শেষ হয়ে গেলো ! লাহিড়ীদা বিল মিটিয়ে দিলে আমরা সবাই বেরিয়ে এসে সিভিল রেস্টুরেন্টে খেতে ঢুকলাম ! জীবনে প্রথম বাটার চিকেন খেলাম এখানে ! (বাটার চিকেন অনেক খেয়েছি ! এইরকম বাটার চিকেন কোনোদিন খাইনি !) বোনলেস চিকেন কে এতো সুন্দর বাটার দিয়ে বানানো হয়েছে যে বলার কথা নয় ! সবার পেট ভরলেও মন ভরলো না ! ঠিক করা হলো পরশু রাতের খাবার হিসাবে আমরা বাটার চিকেন আর রুটি এখন থেকেই প্যাক করিয়ে নেবো ! অদ্ভুত তৃপ্তিতে আমাদের সবাইকার  মন ভরে  গেলো ! সবাই হোটেলে ফিরে এলাম ! তৃপ্তিদির ঘর থেকে আমার ডাক এলো ! আমি তৃপ্তিদির ঘরে গেলাম ! - এই সুনন্দ আমাদের জন্য কি একটা আলাদা রুমের ব্যবস্থা করতে পারবি ? - কেন কি হলো ? - এইসময় অনেক প্রব্লেম হয় ! তোর কমলদা অনেক কিছুই সামলে নেয় ! কিন্তু এখানে সবাই ছোট ! কেউ কিছুই বোঝেনা ! তাই বলছিলাম।...... - ঠিক আছে দেখছি !  রুম  থেকে বেরিয়ে এসে আমি কমলদাকে  ডেকে নিয়ে হোটেলের রিসেপশনে গেলাম ! -আমাদের একটা সেপারেট রুম চাই ! - সে রকম রুম  তো আমাদের কাছে এখন খালি নেই ! আমি তাদের তৃপ্তিদির অবস্থা বুঝিয়ে বললাম !  ভদ্রলোক বেশ কিছুক্ষন চিন্তা করে বললেন "ঠিক আছে ! একটা রুমের ব্যবস্থা করছি ! সেটা কিন্তু ৪ বেডের  ! আপনাদের একটু বেশি পয়সা দিতে হবে ! - কোই বাত নেহি ! আপ ইন্তেজাম করিয়ে ! কমলদা বললো ! কিছুক্ষনের মধ্যেই রুমের ব্যবস্থা হয়ে গেলো ! শুধু তৃপ্তিদি বললো ঝর্ণা আমাদের সাথেই থাকবে ! সেই মতোই ব্যবস্থা হলো ! হটাৎ রাত  তখন দেড়টা ! আমাদের দরজায়  টোকা ! অনেক কষ্টে ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে দেখি কমলদা বিভ্রান্ত  চেহেরা নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ! কমলদার চোখমুখের অবস্থা দেখে আমি ঘাবড়ে গেলাম ! - কি হয়েছে কমলদা ? বেশ উৎকণ্ঠার সাথেই আমি প্রশ্ন করলাম ! - তৃপ্তি। ..... - কি হয়েছে তৃপ্তিদির ? - চোখ খুলছে না ! কান্নায় ভেঙে পড়লো কমলদা ! তাড়াতাড়ি আমরা সবাই কমলদাদের  রুমে গিয়ে দেখি নিথর তৃপ্তিদির দেহ বিছানায় পরে আছে আর ঝর্ণা তৃপ্তিদির বুকে পাম্প করে যাচ্ছে ! খুব অসহায় মনে হলো নিজেদের ! কিন্তু ঝর্ণার উদ্যম দেখে আমায় আমার সম্বিৎ ফিরে পেলাম ! যদি ঝর্ণা এখনো তৃপ্তিদিকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে পারে তাহলে আমি কেন পারবো না? তাড়াতাড়ি রিসেপশনে এসে ওদের ঘুম থেকে তুলে সমস্ত ঘটনা বললাম !  ওরা বললো  রাস্তার অপোজিটেই বিএমসির হাসপাতাল ! ওখানে গিয়ে দেখতে ! কোনো কিছুই আমার মাথায় ঢুকছিল না ! আমি কোমলদাদের ঘরে ঢুকে অর্জুন কৈলাশ আর কমলদাকে  বললাম বেডের  কোন ধরে সামনের হাসপাতালে নিয়ে যেতে ! বেড টাকে স্ট্রেচারের মতো ব্যবহার করে আমরা হোটেলের বাইরে বেরিয়ে এলাম ! হোটেলের কর্মীরাও আমাদের সাথে হাসপাতালে চলতে শুরু করলো ! হোটেলের ম্যানেজার ছুঁটে  হসপিটালে পৌঁছে ডাক্তারদের  সমস্ত বলে দিয়েছিলো ! তাই হসপিটালের গেটে পৌঁছতেই ওরা  তৃপ্তিদিকে এমার্জেন্সি তে ঢুকিয়ে নিলো ! আমাদের সবার অবস্থা খুব খারাপ ! কমলদা কান্নায় ভেঙে পড়েছে ! মঞ্জু আর ঝর্ণা সমানে কেঁদে চলেছে ! আমার সারা শরীর কাঁপছে ! পুরো হোটেল হাসপাতালে ! হোটেলের সমস্ত কর্মীরা আমাদের সাথে  ! এমার্জেন্সি থেকে নার্স বেরিয়ে এলো ! হাতে একটা চিরকুট "এখুনি এই ইনজেকশন চাই !" হোটেলের ম্যানেজার বললেন আমাকে দিন আমি নিয়ে আসছি ! বলেই ছোঁ মেরে নার্সের হাত থেকে স্লিপ টা  নিয়ে দৌড় দিলো ! শুধুই প্রহর গুনে যাচ্ছি  আর ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে যাচ্ছি ! "হে ভগবান ! আমাদের তৃপ্তিদিকে বাঁচিয়ে দাও ! পনেরো মিনিটের মাথায় হাঁপাতে হাঁপাতে ম্যানেজার ফিরে এলো হাতে একটা ইনজেকশনের প্যাকেট নিয়ে ! এমার্জেন্সির দরজায় টোকা দিতেই নার্স ঝাঁজিয়ে বলে উঠলো "এতো দেরি হলো কেনো ?" ওর হাত থেকে ইনজেকশনটা একপ্রকার ছিনিয়ে নিয়ে তিনি ভিতরে চলে গেলেন ! প্রতীক্ষার প্রহর ! কিছুতেই কাটতে চায়না ! মঞ্জু ঝর্ণা অঞ্জলিদি সবাই কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে ! লাহিড়ীদা সবাইকে ধমক দিলেন ! কি হচ্ছে টা  কি ? এখনো দিদিমনি মরে  নি ! ভগবানের কাছে প্রার্থনা করো ! জাভেদ সাহেব আর নিজাম সাহেব হাসপাতালের চত্বরে নিজেদের গামছা বিছিয়ে নামাজ পড়তে শুরু করলেন ! জীবনে কোনোদিন এইরকম পরিস্থিতিতে পড়িনি ! বিহ্বল হয়ে গেছি ! কমলদাকে  আর আমাকে টেনে লাহিড়ীদা বাইরে নিয়ে এলেন ! ঘোষদা আমাদের সাথেই ছিলেন ! বাইরে এসে এই প্রথম লাহিড়ীদা সবাইকে সিগারেট অফার করলেন ! -চিন্তা কোরোনা  ! সব ঠিক হয়ে যাবে ! লাহিড়ীদার গলার গম্ভীরতায় বিশ্বাস না করলেও বিশ্বাস করতে মন চাইলো ! একঘন্টার উপর হয়ে গেছে কিন্তু ভিতর থেকে কোনো খবর পাচ্ছিনা ! সবার উৎকণ্ঠার সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে ! তাহলে কি আমরা আমাদের প্রিয় দিদিকে হারাতে চলেছি ! কম বেশি সবাই কেঁদে চলেছি ! মঞ্জু গুমরে গুমরে কাঁদছে ! ওকে কিছুতেই থামানো  যাচ্ছে না ! আজ এই হসপিটালে বুঝতেই পারছিনা কে বিহারি, কে বাঙালি আর কেই বা মারাঠি ! এখানে আমরা সবাই মানুষ  ! হোটেলের প্রতিটি স্টাফের মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ ! অর্জুন আমার কাছে এসে বললো " চিন্তা করোনা সুনন্দ ! সব ঠিক হয়ে যাবে !" আর চিন্তা ! মাথায় লক্ষ্য লক্ষ্য ভ্রমর গুনগুনিয়ে আমার মাথার বোঁটা বাজিয়ে দিচ্ছে ! সহ্য করতে পারছিনা ! হটাৎ এমার্জেন্সির দরজা খুলে নার্স আওয়াজ দিলেন ! " বি পজেটিভ ব্লাড চাই !" সবাই এগিয়ে এলো আমার টা  নিন ! আমার টা  নিন ! যেহেতু আমরা সবাই ড্রিংক করেছিলাম তাই। ........ রাত আড়াইটের  সময় তৃপ্তিদি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন ! সবাই কান্নায় ভেঙে পড়লাম ! সকালে আমরা তৃপ্তিদিকে শেষ বিদায় জানালাম ! বুঝলাম জীবন মানে শুধুই বাঁচা নয় ! মরাও  একটা নতুন জীবন ! কিন্তু যে প্রাণ তৃপ্তিদির শরীরে বাসা বেঁধেছিলো তার দোষ  কি সেটাই বুঝতে পারলাম না ! 
Parent