জীবন সাধনা/কামদেব - অধ্যায় ১০

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-26667-post-1991182.html#pid1991182

🕰️ Posted on May 25, 2020 by ✍️ kumdev (Profile)

🏷️ Tags:
📖 454 words / 2 min read

Parent
।।১০।।           মাসের পর মাস পার হচ্ছে কিন্তু সংসারের চাকা যেন কাঁদায় আটকে গেছে।কিছুতেই চলতে চাইছে না। অন্ধকার দেখে দেবজয়ী। পাশপোর্টের জন্য তিন কপি ছবি দিয়ে এসেছে তারপর আর কলা নাট্যম-র দিকে যাওয়া হয় নি।সন্ধ্যে হতে চলল মা বেরিয়েছে সেলাই জমা দিতে, ফেরেনি এখনো।একটা পয়সা হাতে নেই, এত অসহায় বিপন্ন কখনো মনে হয়নি।জিদ করে ভবানীপুর ছেড়ে চলে এসেছে,সেটা কিভুল করল? মনে হল মা এল।ইস ঘেমে নেয়ে গেছে, এই বয়সে? নিজেকে অপরাধী মনে হয় জয়ীর।মা-র মুখে হাসি, দশটা টাকা এগিয়ে দিয়ে বলে,যা,কলা নাট্যম থেকে ঘুরে আয়, অনেকদিন যাস নি।জয়ী দ্রুত সরে গিয়ে চোখের জল আড়াল করে। কলানাট্যম-এ যাবে না সরাসরি আলিপুরে গুরুজির বাসায় যাওয়া স্থির করে।বাস থেকে নেমে হনহন করে হাটতে শুরু করে।জয়ীকে চেনে বাঁধা দেয় না দারোয়ান।বিশাল বৈঠকখানা সোফায় বসে আছেন শিবপ্রসাদ পট্টনায়ক যেন ধ্যানস্থ।চুপচাপ সামনে দাঁড়িয়ে থাকে জয়ী।কিছুক্ষন পর গুরুজি চোখ মেলে তাকালেন।উজ্জ্বল চোখের দৃষ্টি যেন হারিয়ে গেছে কোন দূর দিগন্তে।দৈববানীর মত ধ্বনিত হল গুরুজির কণ্ঠস্বর,ঠাকুর বলেছেন,খালি পেটে ধর্ম হয় না।অর্থ অনর্থের মুলকথাটা মিথ্যে নয়।তাহলেও অর্থের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না।একটু থামলেন গুরুজি। জয়ী ভাবে গুরুজি কি অন্তর্যামী ,নিজের কথা কিছু বলেনি।তাহলে গুরুজি এসব কথা বলছেন কেন?হয়তো সাধকদের অন্তর্দৃষ্টি মনের কথা মুখ ফুটে নাবললেও বুঝতে পারেন। –আমি তোমার আর্থিক অবস্থা জানি।শিক্ষার দীর্ঘপথ তুমি পেরিয়ে এসেছো।শিক্ষা কেন অর্থ ব্যতিরেকেজীবন ধারণও অসম্ভব। অনেক ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষা সম্পুর্ণ না করেই নিজেরা দল গড়ে উপার্জনের পথে নেমেছে। তাদের দোষ নেই,অর্থকে উপেক্ষা করা যায় না।লালজিকে নটরাজ করেছে শিক্ষা গ্রহণের অনুপযুক্ত। জন্ম থেকেই প্রতিবন্দী,শরীরের কোনো অঙ্গই সক্রিয় নয়।সেজন্য ইচ্ছে ছিল তোমাকে শিক্ষার প্রান্তসীমায় পৌছে দেব….।দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন গুরুজি। কি বলবে দেবজয়ী?মাঝখানে কথা বলা অনুচিৎ ভেবে চুপ করে থাকে। –আমি কি বলছি তুমি বুঝতে পারছো? প্রশ্নটা সরাসরি তাকে করা হয়েছে।এবার কিছু বলতে হয়,জয়ী বলে, গুরুজি আপনি কি আমার খাওয়াপরার কথা বলছেন? –না।আমি তোমার নিরাপত্তার কথা ভেবে বেশি বিচলিত।তোমার বয়স অল্প, সুন্দরী তার উপর বিবাহ-বিচ্ছিন্না।জনতার সামনে তুমি যখন কলা প্রদর্শন করবে,তখনই অসংখ্য লোভী শ্বাপদের দল লালসা রিরংসার লেলিহান শিখা ঘিরে ফেলবে তোমাকে।প্রথমে প্রশংসা করবে আর তারপর কাপড়ের নীচেশানিত করবে তাদের আদিম অস্ত্র। তোমার শান্তি তোমার সাধনা ছিন্নভিন্ন করবে। –গুরুজি তা হলে আমি কি করবো?ভেঙ্গে পড়ে জয়ী। –নৃত্যকলার জন্য যে ভার গ্রহন করেছো তার চেয়ে বেশি ভার নিতে পারবে? কি বলতে চাইছেন শিবপ্রসাদ? জয়ী মরীয়া হয়ে বলে,পারবো। –তুমি বিবাহ করো। গুরুজির পায়ে আছড়ে পড়ে বলে দেবজয়ী, নাচ ছাড়া আমি মরে যাব। শিবপ্রসাদ কাধ ধরে টেনে তুলে জিজ্ঞেস করেন,গুরুজিকে বাপুজি বলতে পারবে? কেঁপে ওঠে জয়ী।সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ দেখে ভয় পেলে চলবে না।যে করেই হোক তাকে পার হতে হবে সাগর। –পারবো গুরুজি,পারবো। –আমারপত্নী গুরুমা জাহ্নবিকে মাতাজি বলতে পারবে? –হ্যা মাতাজি বলবো। –তবে এসো।গুরুজি জড়িয়ে ধরলেন দেবজয়ীকে মাথায় চুম্বন করে বললেন, তোমাকে ‘তপোভঙ্গ’ শিক্ষা দেবো।বিদেশ থেকে ফিরে এসো দেবো আমার সব। পুলকিত মনে সেদিন দেবজয়ী বাড়ি ফিরে এল।মাথার উপর থেকে যেন নেমে গেছে দুর্বহ বোঝা।লালজীর সঙ্গে  বিয়ে হয়ে গেল বিদেশ যাত্রার আগে...। গুরুজী বললেন,বেটি লাল তোমাকে সহযোগ দিতে পারবে না কিন্তু কখনো তোমার সাধনায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না।
Parent