জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - অধ্যায় ২১

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-38842-post-3445722.html#pid3445722

🕰️ Posted on July 2, 2021 by ✍️ Lekhak is back (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1161 words / 5 min read

Parent
সাত   শুভেন্দু বললো, ‘বিদিশার সঙ্গে আমার দেখা হয়ে যাওয়াটা বিরাট একটা ভাগ্যের ব্যাপার, জানিস তো দেব। একে তো আমার ফোন নম্বর বিদিশার কাছে নেই। কলকাতায় এতদিন বাদে ও ফিরে এসেছে, পুরোনো এক কলেজ বন্ধুর সঙ্গে হঠাৎই গড়িয়াহাট মোড়ে তার দেখা হয়ে যাবে, না বিদিশা ভেবেছিলো, না আমি ভেবেছিলাম। আমি শুভেন্দুকে বললাম, বিদিশা, তোকে দেখতে পেয়েছিল? না তুই বিদিশাকে? শুভেন্দু বললো, ‘বিদিশা যখন তোর সাথে প্রেম করতো, তখনো আমি তোর সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিলাম। আর এখনো তোর সাথে আমার সেই সম্পর্কটাই রয়েছে।। আমাকে বিদিশা দেখে স্বভাবতই খুব খুশি। জানে শুভেন্দুর সাথে দেখা হওয়া মানে দেবের খবর শুভেন্দুই তাকে দিতে পারবে।  একটা দোকানে দাঁড়িয়ে আমি তখন কিছু জিনিষ কিনছি, হঠাৎই শুনলাম, পেছন থেকে কে যেন আমাকে ডাকছে, গলাটা খুব চেনা চেনা। মনে হল এ ডাক বিদিশার না হয়ে অন্যকারুর হতেই পারে না।’ আমি খুব আগ্রহ নিয়ে শুনছিলাম শুভেন্দুর কথা। ওকে বললাম, তারপর? শুভেন্দু বললো, ‘তারপর আর কি? শুরুটা করলো এইভাবে। প্রথমেই আমাকে বললো, ‘কতদিন বাদে তোকে দেখলাম রে শুভেন্দু। আমাকে দেখে চিন্তে পারছিস?   ‘আমি তো ওকে দেখে একেবারেই অবাক। ভাবতেই পারিনি বিদিশাকে এতদিন বাদে দেখবো। আমার কাছে এগিয়ে এলো বিদিশা। আমাকে বললো, এই ‘দেব’ কেমন আছে জানিস? আগে যে বাড়ীটায় ওরা থাকতো, দেব কি ওখানেই এখন থাকে? না অন্য কোথাও? শুভেন্দু বললো, ‘বিদিশার মুখে তোর নামটা শুনে আমি কেমন প্রফুল্ল মতন হয়ে গেলাম। আহা, সেই যে কত মিষ্টি মিষ্টি করে কলেজে তোকে নাম ধরে ডাকতো, একেবারে সেইরকম। আমি হাসতে হাসতে বললাম, তারপর? শুভেন্দু বললো, ‘বিদিশাকে দেখে আমি সত্যি অবাক। এতবছর পরে ওর সঙ্গে দেখা, কিন্তু এখনও ওর সৌন্দর্যে একটুকুও ভাটা পড়েনি, বিদিশার যে রূপ, সেই রূপ তার অক্ষত। কি সুন্দর লাগছিল ওকে দেখতে। আমি তো কোন ছার, যে কেউ প্রেমে পড়বে ওর ওই মিষ্টি হাসিটা দেখলে। মনে হল, আমি কি ঠিক শুনছি? এতদিন বাদে ও তোর কথা জিজ্ঞাসা করছে, তোর খোঁজ খবর নিচ্ছে, বিদিশার কি লাভ এসব জেনে? তারপরেই মনে হল, ‘দেব’ হচ্ছে এমন একটা ছেলে, যাকে ভুলেও কেউ ভুলতে পারবে না সহজে। বিদিশা প্রথমেই আমাকে বলো, এই দেবের ফোন নম্বরটা আমাকে দিবি? ভীষন দরকার।’ শুভেন্দু বললো, ‘আমি তো আরোই অবাক ও তোর ফোন নম্বর চাইছে দেখে। বিদিশাকে বললাম, কি হবে তোর দেবের ফোন নম্বর নিয়ে? তুই তো কবেই ওকে ছেড়ে চলে গেছিস। ব্যাচারাকে ফোন করবি, আর ও আবার তোর কথা ভেবে পাগল হবে।’   মনে হল, শুভেন্দুকে বলি, ‘চাইলো যখন, তুই বিদিশাকে আমার ফোন নম্বরটা দিতে পারতিস। বিরহের জ্বালায় এতদিন মরছিলাম। ফোনটা পেলে মনে একটা শান্তি আসতো।’  শুভেন্দু নিজে থেকেই বললো, আমি জানি, বিদিশাকে তোর ফোন নম্বর না দিলে তুই আবার আমার ওপরে রেগে হম্বিতম্বি করবি। এতদিন ধরে তোকে দেখে আসছি, তোর দূঃখ কষ্টটা বোঝার মতন ক্ষমতা তো আমার হয়েছে, আমি এই ভুলটা কিছুতেই করবো না। ওকে তোর ফোন নম্বরটা দিলাম। আশ্চর্য, বিদিশা তখুনি তোকে ফোন করতে চাইছিল।   আমি শুভেন্দুকে বললাম, তাই? কই এই কথাটাতো তো তুই আমাকে আগে বলিসনি। তাহলে তো আমি আগে থেকেই সব জেনে যেতে পারতাম।   শুভেন্দু বললো, ‘এটার জন্য অবশ্য তুই আমাকে গালাগাল দিতেই পারিস। কারণ আমিই বিদিশাকে তখন বারণ করেছিলাম।’   মনে হল, শুভেন্দুকে কাঁচা গিলে খাই, ওকে বললাম, কেন? তুই ওকে বারণ করলি কেন?   শুভেন্দু বললো, ‘সব কথা বিদিশার মুখ থেকে শোনার পর, আমার কেন জানি মনে হচ্ছিলো, তোর জন্য এটা তাহলে একটা সারপ্রাইজ থাক। বিদিশা তোর কাছে আসবে, কিন্তু একটা চমক হয়ে আসবে।  তুই যেন আগে থেকে কিছু জানিস না। আমি ওকে সেইভাবেই রাজী করালাম। বিদিশাকে বললাম, ‘তোর কথা দেবকে আমি আগে থেকে কিছু জানাবো না। তুইও এখন ফোন করিস না। তুই যে ফিরে এসেছিস, এটা দেব তোকে নিজের চোখেই দেখুক।’ আমাকে অবাক করে দিয়ে শুভেন্দু বললো, আচ্ছা দেব, বিদিশা যদি তোর বাড়ী নিজে থেকে চলে যেতো, তোর কেমন লাগতো? হঠাৎই কলিংবেলের শব্দ শুনে তুই ই দরজাটা খুললি। দেখলি বিদিশা দাঁড়িয়ে আছে তোর সামনে। সেই হারিয়ে যাওয়া মুখ, মনকাড়া চাউনি, সেই আকূলতা। দেবকে পাওয়ার জন্য যার এত ছটফটানি। এতদিন বাদে একেবারে তোর বাড়ীর দোরগোড়ায়। তোর মনে হত না এ আমি কি দেখছি সামনে?   শুভেন্দু এমন ভাবে কথাটা বললো, আমার মনে হল বিদিশা যেন সত্যি আসতে চেয়েছিল আমার বাড়ীতে। শুভেন্দুকে বললাম, তুই ওকে না করলি কেন? শুভেন্দু বললো, ‘আমি না করিনি। না করবোই বা কেন? যে মেয়েটার মধ্যে একটা অনুশোচনা রয়েছে। একদিন তোকে ভুল বুঝে সে ছেড়ে চলে গিয়েছিল, আবার সে ফিরে এসেছে। তোর সাথে দেখা করতে চাইছে। মনের মধ্যে একটু লজ্জ্বাও রয়েছে। কিন্তু তবু যেন তোর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে বলে তারমনে কোনো দ্বিধাবোধ নেই।  এতবছর পরে বিদিশার মধ্যে যেন সেই কলেজে পড়ুয়া বিদিশাকেই আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম। আমাকে নির্দ্ধিদায় ও বললো, আমি দেবের বাড়ীতে যেতে চাই, শুভেন্দু। ওর সাথে দেখা করতে চাই। তুই কি আমার মনে একটু সাহস জোগাবি শুভেন্দু? দেব আমাকে দেখলে রেগে যাবে না?’ শুভেন্দু বললো, আমি বিদিশাকে বললাম, এক কাজ কর, তুই বরং আমার বাড়ীতেই চলে আয়। আমি ওখানেই দেবকে ডেকে নিচ্ছি। একসাথে সবাই মিলে আড্ডা দেবো। আবার মজা হবে, সেই কলেজের মতন। রনি আর মাধুরীকেও আসতে বলছি।  আমি খুব আগ্রহ নিয়ে শুভেন্দুর কথাগুলো শুনছিলাম। মাধুরী একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। আমাকে বললো, সত্যি দেবদা। এখনো তুমি বিদিশাকে কত ভালোবাসো। তোমার মত কজনে হয়? রনি বললো, দেব হচ্ছে, সত্যিকারের প্রেমিক। ও ব্যর্থ প্রেমিক নয়। বিদিশার কপাল ভালো, দেব ব্যাচারা বিয়ে করেনি। নইলে- শুভেন্দু বললো, দেব হচ্ছে এমন একটা ছেলে, যতক্ষণ নিজে থেকে কেউ ভুলটা না বুঝতে পারছে, ও জোর করে কারুর ভুল ধরাতে যাবে না। এই বিদিশাকেই দেখ, যখন নিজের ভুলটা বুঝতে পারলো, তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। আমি বললাম, ছাড় ছাড়। আমার সন্মন্ধে আর অত ভালো কথা বলতে হবে না। বিদিশা কখন আসছে, তাই বল। শুভেন্দু হেসে বললো, ‘দেখেছিস তো, বিদিশার কথা শুনে এবার তোর কেমন ছটফটানিটা শুরু হয়ে গেছে। আসছে আসছে অত ব্যাকূল হোস না। একটু পরেই এসে পড়বে। বিদিশাকে আমি ফোন করেছিলাম একটু আগে, ও  ট্যাক্সি নিয়ে রওনা দিয়ে দিয়েছে।  হয়তো এসে পড়বে আর দশ মিনিটের মধ্যেই।’ মাধুরী বললো, ‘এক কাজ করলে হয় না? বিদিশা আসার আগে, আমরা বরং দেবদাকে অন্য কোথাও লুকিয়ে রাখি। ও এসে দেবদাকে খুঁজে পাবে না। আর দেবদার মত বিদিশাও একটু ছটফট করবে। মজা হবে একটু।’ শুভেন্দু বললো, ‘আইডিয়াটা মন্দ নয়। তবে দেব কি তাতে রাজী হবে? দেখ ওর মুখের দিকে চেয়ে দেখ। এখনই কেমন ফ্যাকাসে মতন হয়ে গেল। ব্যাচারা বিদিশাকে না দেখতে পেলে, নিজেই যে কষ্ট পাবে।’ ওরা সবাই হাসতে লাগল।  শুভেন্দুকে রনি বললো, ‘আজ হচ্ছে ঐতিহাসিক দিন। দুটি প্রেমিক প্রেমিকা এতদিন পরে আবার কাছাকাছি হচ্ছে দুজনে। এই ঐতিহাসিক দিনে আমরাও আজ উপস্থিত। দেব আর বিদিশার পুনর্মিলন কি জয় হোক।’ মাধুরী বললো, ‘হ্যাঁ দেবদা। এবারে কিন্তু বড়সড় একটা পার্টী দিতে হবে তোমাকে। পার্কস্ট্রীট বা বড় কোনো রেস্টুরেন্টে দেওয়া চাই। অনেক নোট খসবে তোমার। তৈরী থেকো। মনে হল, দম নিঃশ্বেস হওয়া ঘড়িকে যেমন দম দিয়ে আবার শক্তির যোগান দেওয়া হয়।  ঠিক তেমনি বিদিশার আগমনের খবরটাও আমার ভেতরের শক্তিটাকে যেন অনেক বর্দ্ধিত করে দিয়েছে। ঠিক যেন জীবনের মরুভূমিতে বৃষ্টিপাতের মতন। সেই উদ্দামতা, সেই আবেগ আবার ফিরে পাচ্ছি। বিদিশা এখনো এসে পৌঁছোয়নি, কিন্তু ওর উপস্থিতি, ওর আবির্ভাব, শরীরে শরীরের স্পর্ষ আমি যেন আগে থেকেই টের পাচ্ছি। মনে হচ্ছে, বিদিশা যেন আমার ঠিক পাশেই বসে রয়েছে, আর আমাকে বলছে, ‘কি গো তাকাবে না আমার দিকে? রাগ করেছো বুঝি। দেখো আমি তো তোমার কাছেই আবার ফিরে এসেছি।’ জীবন খাতার প্রতি পাতায় বিদিশার নামটা লিখে রাখবো বলে আমি ঠিক করে রেখেছিলাম। আমার জীবন থেকে বিদিশা কোথায় হারিয়ে গেল। পাতাগুলোও সব শূন্য থেকে গেল। আজ আবার বিদিশাকে আমি ফিরে পেলাম। মনে হল শূন্য পাতাগুলোকে ভরাট করার জন্য আমি যেন আবার পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠলাম।  
Parent