জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - অধ্যায় ২২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-38842-post-3445727.html#pid3445727

🕰️ Posted on July 2, 2021 by ✍️ Lekhak is back (Profile)

🏷️ Tags:
📖 863 words / 4 min read

Parent
শুভেন্দু ঘড়ি দেখছে, রনিও ঘড়ি দেখছে। নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ঠিক সাতটা বেজে পঁচিশ মিনিট। বিদিশা আসার কথা ছিল, সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ। অথচ এখনো অবধি এসে পৌঁছোলো না। মাধুরী তখন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আমার ছটফটানিটা ধরে ফেলেছে। শুভেন্দুকে বললো, ‘এই ছোড়দা, বিদিশাকে একবার ফোন করে দেখ না, এখনো এসে পৌঁছোলো না কেন? দেবদা চিন্তা করছে।’ শুভেন্দু বকা লাগালো মাধুরীকে। ওকে বললো, ‘ব্যস্ত কেন হচ্ছিস? ও ঠিক এসে পড়বে। বললাম তো, ট্যাক্সি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। হয়তো রাস্তা জ্যাম আছে। এসে পড়বে এক্ষুনি।’   আমি একটু উতলা মতন হয়ে শুভেন্দুর কাছে একটা সিগারেট চাইলাম। শুভেন্দু বললো, ‘একি রে দেব? তোর টেনশন হচ্ছে না কি? সিগারেট খাওয়া তো তুই কবেই ছেড়ে দিয়েছিস। আবার যে সিগারেট খেতে চাইছিস?   আমি শুভেন্দুর কথা শুনলাম না। জোর করে ওর প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে নিয়ে ঠোঁটে গুঁজলাম। একটা সিগারেট ধরাতে গিয়ে আমার এমন অবস্থা হল, যা জীবনে কোনোদিন হয় নি। দেশলাইয়ের সাত আটটা কাঠি নষ্ট হল। শুভেন্দু রনিকে বললো, ‘দেখ দেবের অবস্থা দেখ, এখনো সিগারেট ধরাতে পারছে না। ব্যাচারা।’   রনি বললো, ‘বুঝতে পারছি, বিদিশার আসছে শুনে দেবের ভেতরটা এখন কিরকম তোলপাড় চলছে। যতক্ষণ না ও এসে পৌঁছোবে দেবের এরকমই চলবে।’   জানি এতদিন বাদে বিদিশাকে দেখতে পাবো বলে মনের ভেতরে একটা অস্থিরতা কাজ করছে। কলেজের সেই পুরোনো স্মৃতিগুলো বারে বারে মনে পড়ছে আর আমি যেন আরো ব্যাকুল হয়ে উঠছি বিদিশার জন্য। জীবনে প্রেম আমি একবারই করেছি, শুধু এই বিদিশার সঙ্গেই। কলেজে পড়া, বিদিশার সঙ্গে একসাথে ঘোরাঘুরি করা। যখন কোনো তরুনের মন, স্বপ্নময় প্রেমের অজস্র রূপরেখার ভিড়ের মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চায়, প্রেমভাবনায় নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে চায়, আমি যেন সেভাবেই দিনগুলো অতিবাহিত করেছিলাম ঠিক স্বপ্নের মতই। বিদিশার চিন্তাকে আমি তাই মন থেকে দূর করতে পারিনা। মনে হয় ও নেই। তবুও ও যেন আমার কত কাছেই রয়েছে।   সিগারেটটা ধরিয়ে বেশ কয়েকবার জোরে জোরে টান দিলাম। ধোঁয়াটা গলায় আটকে গিয়ে খুক খুক করে কাশি হলো আমার। শুভেন্দু বললো, ‘এই তুই কি শুরু করলি বলতো?  না আমাকে দেখছি, এবার বিদিশাকে একটা ফোন করতেই হবে।’   সেলফোনটা হাতে নিয়ে শুভেন্দু সঙ্গে সঙ্গে কল করলো বিদিশাকে। দু’বার রিং হওয়ার পর, বিদিশাই ধরলো। শুভেন্দু, বিদিশাকে বললো, কিরে বিদিশা? এখনো এসে পৌঁছোলি না? কোথায় তুই?’  বিদিশা বললো, ‘আমি এসে গেছি। আর হয়তো বড়জোড় দশ মিনিট।’   শুভেন্দু বললো, ‘তোর জন্য এখানে একজন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, ভীষন উতলা হয়ে পড়েছে। তাড়াতাড়ি দেখা দে মা। আর কখন আসবি?’   বিদিশা বুঝতে পেরেছে, শুভেন্দু আমার কথাই বলছে। ওর কথা শুনে আমিও হাসবো না কাঁদবো, তাই ভাবছিলাম। শুভেন্দু বললো, জানিস বিদিশা, দেব আমার ওপরে রেগে কত খাপ্পা হয়ে রয়েছে। আমার দোষ কি? না আমি তোকে দেবকে ফোন করতে বারণ করেছিলাম। তুই শীগগীর আয়। নইলে দেব আর আমাকে আস্তো রাখবে না বলছে।’   বিদিশা কি বলতে চাইছিল, শুভেন্দু বললো, ‘নে তোর এক্সলাভারের সাথে একটু কথা বল। দেবও তোর সাথে কথা বলে একটু শান্তি পাক।’   নিজের সেলফোনটা হঠাৎই আমার হাতে ধরিয়ে দিল শুভেন্দু।  আমার বাঁ হাতে তখন জ্বলন্ত সিগারেট। আচমকা ফোনটা ওভাবে বাড়িয়ে দেওয়াতে সিগারেটটা আমার হাত ফস্কে পড়ে গেল হঠাৎই। কোথায় পড়েছে বুঝতে পারছি না। মাধুরী চেঁচিয়ে উঠে বললো, ‘এই দেবদা ওঠো, ওঠো। তোমার জামার ওপরে পড়েছে সিগারেট। এখুনি জামাটা পুড়ে যাবে।’ সোফা থেকে তড়াক করে লাফিয়ে উঠলাম। এবার জামা থেকে সিগারেটটা মাটিতে গিয়ে পড়লো। রনি বললো, ‘বিদিশা আসুক। আজ তোর হবে। যা শুরু করেছিস তুই।’   ফোনটা কানের পাশে নিয়ে বিদিশাকে কি বলবো, তাই ভাবছি। ভাবলাম, শুরুটা এরকম ভাবে করি, বিদিশাকে বলি, ‘তুমি কেমন আছো বিদিশা? বিদিশাও তখন আমাকে বলবে, আগে বলো তুমি কেমন আছো? আমি জবাবে কিছু একটা বলবো। এই ভেবে ফোনটা কিছুক্ষণ কানের পাশেই ধরে রাখলাম। শুভেন্দু বললো, ‘হ্যা রে। আবার ভাবুক হয়ে গেলি তুই? বল কিছু, ও তো ফোনটা ধরেই আছে তোর জন্য।’   অনেকদিন বাদে বিদিশাকে ফিরে পেয়েছি, ভাবলাম, বিদিশাকে বলি, বিদিশা তুমি ফি্রে এসেছো। কত ভালো লাগছে। সেই পুরোনো আনন্দের দিনগুলো, ভালোবাসার মূহূর্তগুলো। বিদিশা কলেজের দিনগুলোর কথা তোমার মনে আছে? তুমি যে আমাকে ভুলে যেতে পারবে না আমি জানতাম, বিদিশা ও বিদিশা। শুনতে পারছো আমার কথা? বিদিশা- এবার শুভেন্দুর মুখ থেকে একটা বড় ধ্যাতানি খেলাম। চেঁচিয়ে উঠে বললো, ‘কিছু বলবি তো? তখন থেকে ফোনটা কানে ধরে শুধু বসে আছিস। যা বলার বিদিশাকে সব বলে ফেল। মনের মধ্যে কিছু রাখিস না।’ অতজোড়ে ধ্যাতানি খাবার পর আমার যেন চেতনা ফিরলো। মুখ দিয়ে শুধু বেরিয়ে এলো, হ্যালো। বিদিশা বললো, ‘কখন এসেছো?’  -‘এই কিছুক্ষণ আগে।’   -’অনেক কষ্ট পেয়েছো না? এইকটা দিন।?  বিদিশাকে শুধু খারাপ ভেবেছো।’   - ‘না ভাবিনি। কেন ভাববো? তুমি তো খারাপ নও।’   -’শুনে খুশি হয়েছো? আমি ফিরে এসেছি বলে।’   -’তা তো হয়েছি কিছুটা।’   -’কিছুটা কেন? অনেকটা নয়?’   -’হ্যাঁ অনেকটাই। আমি ভীষন খুশি হয়েছি।’   -’আমার কথা কেউ বলেছে তোমাকে?’   -হ্যাঁ। শুভেন্দু বলেছে, শুক্লাও বলেছে।’   হঠাৎই ফোনের ও প্রান্তে বিদিশার গলাটা কেমন আস্তে হয়ে গেল। মনে হল বলতে গিয়ে ওর গলাটা অনুশোচনায় কেমন কেঁপে গেলো। আমাকে বললো, ‘দেব’ তুমি কি আমাকে সেই আগের মতই ভালোবাসো? যে ভালোবাসার দাম দিতে না পেরে আমি তোমাকে ছেড়ে একদিন চলে গিয়েছিলাম।’   বিদিশাকে বললাম, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি, এই কথাটা জীবনে কোনদিন তোমাকে ছাড়া আর কাউকে কখনো বলিনি। হয়তো প্রতিদানে যেটা পেতে চেয়েছিলাম, সেটা পাইনি ওটা আমার ভাগ্যের দোষে। কিন্তু তোমাকেও আমি দোষ দিতে চাইনি। ভালোবাসাটাকে বুকের মধ্যেই আঁকড়ে ধরে রেখেছিলাম এতদিন। ভেবেছিলাম, হয়তো যদি তুমি কোনদিন, আমার কাছেই আবার ফিরে আসো। বিদিশার প্রতি দেবের ভালোবাসা এখনো যে তাই মরেনি।’   মনে হল,অনুতপ্ত হয়ে বিদিশা যেন ফোনেই কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে। গলাটা ভারী ভারী করে বললো, ‘দেব? তুমি এখনো সেই আগের মতন? তোমাকে যেমনটি আমি দেখে গিয়েছিলাম?   বিদিশাকে বললাম, ‘এই বোকা মেয়ে কাঁদছো কেন? তাড়াতাড়ি এসো। আমি তো তোমার জন্যই অপেক্ষা করছি।’  
Parent