জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - অধ্যায় ২৩

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-38842-post-3445736.html#pid3445736

🕰️ Posted on July 2, 2021 by ✍️ Lekhak is back (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1119 words / 5 min read

Parent
বিদিশার সাথে কথা বলার পরে ফোনটা ছেড়ে দিলাম। ঠিক তার পাঁচ মিনিট পরেই শুভেন্দুদের গলির মুখটায় একটা কালো রঙের ট্যাক্সি এসে দাঁড়ালো।  মাধুরী ট্যাক্সির আওয়াজ শুনেই দৌড় লাগালো। আমাদেরকে বললো, ‘বিদিশা এসেছে মনে হয়। আমি ওকে এখানে নিয়ে আসছি।’ ট্যাক্সি থেকে বিদিশা নামছে। আমি ঘরের জানলা দিয়ে বিদিশাকে দেখতে পাচ্ছিলাম। একটা ময়ুরকন্ঠী রঙের ছাপা শাড়ী পড়েছে বিদিশা। হাতে ওর সাদা রঙের একটা ভ্যানিটি ব্যাগ। গলির ল্যাম্পপোষ্টের উজ্জ্বল আলোতে বিদিশার মুখটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। মাধুরী ঘর থেকে বেরিয়ে ওর সামনে যেতেই বিদিশা ওকে জড়িয়ে ধরলো। দুজনের দুজনকে জড়িয়ে ধরেই কি যেন একটু কথা হল। দুজনে তারপর হেঁটে এগিয়ে আসতে লাগলো শুভেন্দুদের বাড়ীর দিকে।   ঘরের মধ্যে আমি শুভেন্দু আর রনি বসে। শুভেন্দু বললো, শোন দেব, ‘তোকে আর বিদিশাকে কিন্তু আমরা আধঘন্টার জন্য আলাদা ছেড়ে দেবো। তারপরে কিন্তু পুরো সময়টাই আমাদের। আজকে অনেক গল্প হবে, আনন্দ হবে। আর তুই কিন্তু ভালো ভালো কয়েকটা গান গাইবি। নইলে তোকে কিন্তু ছাড়বো না আজকে।’   আমি কিছু বলতে চাইছিলাম। রনি বললো, ‘ভ্যানতারা আর করিস না তো। বিদিশা কি তোর পালিয়ে যাচ্ছে? এই তো এলো। এবারে একেবারে তোর পার্মানেন্ট হয়ে গেলো।’   বারান্দা পেরিয়ে বিদিশা মাধুরীর সঙ্গে ঘরে ঢুকছে। আমি মুখটা একটু নিচু করে নিলাম। মনে হল, এই বুঝি বিদিশা ঘরে ঢুকলো। আর তার আগে থেকেই আমিও কেমন আড়ষ্ট মতন হয়ে গেলাম। মাধুরী বিদিশাকে ঘরে ঢুকিয়ে বললো, ‘দেখছো তো? ওখানে ওই সোফার ওপরে কে বসে আছে। চেনো লোকটাকে? চিনে বলো দেখি, ওই ভদ্রলোকটি কে? আমি মুখ তুলে বিদিশার মুখের দিকে তাকাতেই, বিদিশাও আমার মুখের দিকে তাকালো। প্রায় বেশ কিছু বছর পরে বিদিশাকে আবার খুব কাছ থেকে দেখছি, আমার মনে হল, সর্ব্বাঙ্গ সুন্দরী বিদিশা, চোখ দিয়ে যার সৌন্দর্য ও শরীরটাকে আকন্ঠে পান করা যায়, তাকে আবার এতো কাছ থেকে দেখছি আমি। আমার যেন সব স্বপ্নের মতন মনে হচ্ছে। ঠিক যেন চোখের সামনে এক রূপমাধুরী। অথচ প্রথমদিন ওর এই রূপ দেখে আমি কিন্তু ওর প্রেমে পড়িনি। বিদিশাই আমাকে প্রথম চিঠি দিলো। তারপরেই আমাদের প্রেম শুরু হল। মনের সঙ্গে মন মেলাতে লাগলো, দু একটা দিন। তারপরে যখন ওর রূপের প্রশংসা শুরু করলাম, বিদিশা বললো, ‘তাই বুঝি? আমি এতো সুন্দর? প্রথম দিনতো দেখে বলোনি আমাকে।’ প্রজাপতির মতো কোমল ওর সুন্দর ঠোঁটদুটোকে দেখছিলাম। কলেজে পড়ার সময় ছেলেমানুষি উচ্ছ্বাসে কতবার যে আমার গলা জড়িয়ে আমার গালে চুমু খেয়েছিল ওই ঠোঁট দিয়ে, তার ইয়ত্তা নেই। মনে হলো সৌন্দর্য ও মনের দিক থেকে বিদিশা যেন এখনো সেই তরুনীই আছে। তরুনী নারীর মতোই ভালোবাসার জন্য উন্মুখ, হয়তো আমাকেই আবার সুখী করার জন্য তার হৃদয় মনে এক উজাড় আকাঙ্খা। এই আকাঙ্খা অতীতের সেই আকাঙ্খার থেকেও তীব্র আরো উত্তপ্ত।  শুভেন্দু রনিকে বললো, ‘এই রনি, এদের দুজনের চোখদুটো যে দুজনের দিকে আটকে গেছে রে। আমরা ঘরে বসে আছি, অথচ এদের দুজনের কারুর খেয়ালই নেই। ব্যাপারটা কিছু বুঝতে পারছিস?’   রনি আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না রে দেব। বিদিশা আসছে বলে, তোকে আমরা বাড়ীতে ডাকলাম। তাই বলে তুই?-   মাধুরী বিদিশাকে বললো, ‘বসো না বসো। দাঁড়িয়ে আর কতক্ষণ থাকবে? পারো যদি ওই লোকটার পাশে গিয়ে বসো।’ বলে আমার দিকে আঙুল তুলে মাধুরী বিদিশাকে ইশারা করলো।   যেটা হয়তো হবারই কথা ছিল না। শুভেন্দু আর রনি এবার সেটাই করে দেখালো দুজনে। ওরা দুজন এগিয়ে গেলো বিদিশার দিকে। বিদিশার হাত দুটো দুপাশ থেকে দুজনে ধরলো, তারপর দুজনে ওকে টেনে নিয়ে এসে বসিয়ে দিলো আমার পাশে।   শুভেন্দু বললো, ‘নে, এবার তোরা দুজনে পাশাপাশি। এখন আর দুজনে দুজনের দিকে তাকাবি না। এখন আমাদের দিকেই তাকিয়ে থাকবি, আর আমাদের সাথেই কথা বলবি।’   মাধুরী রনিকে বললো, ‘তুমি আর ছোড়দা, তোমরা দুজনে এত হিংসুটে কেন গো? দেখোতো বিদিশা কি ভাবছে। আর দেবদার মুখটাও কেমন অন্যরকম হয়ে গেছে।’ শুভেন্দু বললো, ‘এই ছুড়ী, বাজে বকিস না। দেব কে আমি ভালো করেই চিনি। ওকে মানা করলেও ও ঠিক চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বিদিশার দিকে তাকাবে। আমাকে সামনে থেকে সব লক্ষ্য রাখতে হবে।’   রসিকতার মানে যে বোঝে, সে জানে। বুঝতেই পারছিলাম, এই শুরু হল এবার। শুভেন্দু আর রনি যা করবে, আমাকে আর বিদিশাকে, দুজনকেই এখন মেনে নিতে হবে।   শুভেন্দু বললো, ‘আচ্ছা দেব, বিদিশা তো ফিরে এলো। বড়সড় করে একটা পার্টী কবে দিচ্ছিস বল? আর বিয়ের ডেটটা যদি এখনি ঠিক করে ফেলিস। তাহলে কিন্তু বৌভাতের রিসেপশনটা ভালো করে দিতে হবে। মেনু কার্ডের আইটেম কি কি করবি, এখন থেকে ঠিক করে ফেল। ক্যাটারিং এর অর্ডারটা রনিকে দিয়ে দিচ্ছি। ও বিজলী গ্রীলের সাথে কথা বলে নেবে।’ মাধুরী বিদিশাকে বললো, ‘এই বিদিশা চা খাবে তো? সবার জন্য তাহলে চা করে আনছি।’   শুভেন্দু মাধুরীকে বললো, ‘এই দেবকেও ভালো করে একবার জিজ্ঞেসে করে নে। বাবু তো একজনের জন্য চা ছেড়ে দিয়েছিলেন অনেকদিন আগে, যার জন্য ছেড়েছিলেন, তিনি এখন তার পাশেই বসে আছেন। দেব এখন আবার তার সামনে চা খাবেন কিনা? বলেই ও আমার দিকে তাকালো।  বিদিশা একটু লজ্জা করছিল। শুভেন্দু বললো, ‘লজ্জ্বা কোরো না, লজ্জ্বা কোরো না। আমরা সবাই তোমাদের বন্ধু। তোমাদের পুরোনো ইতিহাসটা আমরা তো সবাই জানি। তাই বলছি।’ মাধুরী চুপ করে দাঁড়িয়েছিল হাঁ করে। বিদিশা বললো, ‘তুমি যাও তো মাধুরী। চা করে নিয়ে এসো। তোমার এই দাদার কথা শুনো না। তোমার দাদাটা ভীষন দুষ্টু।’ রনি হাসছিল দাঁত বার করে। শুভেন্দু কে বললো, ‘দেখলি? বিদিশা যেই হ্যাঁ বলে দিলো, অমনি দেবও না করলো না। কি গভীর প্রেম, একেবারে লায়লা মজনুর মতন।’ আমি রনিকে বললাম, ‘চা তো আমি খাই। তবে আগে যেরকম ঘনঘন খেতাম, সেটা এখন খাই না। সকালে একবার খাই। আর এই বিকেল বা সন্ধেবেলাটা একবার। শুভেন্দু বললো, ‘আগে ঘনঘন যখন খেতিস, তখন সেটাকে কমিয়ে দিলি কেন? কেউ তোকে বারণ করেছিলো। সেটা বল না?’ বলেই ও বিদিশার দিকে তাকালো। আমি বললাম, বয়স হলে, সবই কমাতে হয় আসতে আসতে। শরীরটার দিকেও তো খেয়াল রাখতে হবে। শুভেন্দু বললো, কত বয়স হয়েছে তোর? এমন ভাবে বলছিস, যেন তুই বুড়ো হয়ে গেছিস। এই তো কলেজ পাশ করলাম কয়েক বছর আগে। এখনো দিনগুলো সব মনে আছে। সেই কফি হাউস, শিয়ালদহর কাফেটরিয়া, বসন্ত কেবিন, কলেজ স্কোয়ারের পাশে শরবতের দোকানটা, কি যেন নাম? রনি বললো, প্যারামাউন্ট। প্যারামাউন্ট। ওখানে দেব, বিদিশাকে নিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে যেতো মনে নেই? শুভেন্দু বললো, হ্যাঁ কি না, বিদিশা শরবত খেতে খুব ভালোবাসে। তারপরে যখন আমরা সবাই মিলে একদিন ওদের পিছু নিলাম, দেবের তারপরের দিন থেকে কলেজ স্কোয়ারে যাওয়াই বন্ধ করে দিলো। ব্যাচারা খুব কষ্ট পেয়েছিল বিদিশার জন্য।’ শুভেন্দু আর রনি দুজনেই হো হো করে হাসতে লাগলো। বুঝলাম, দুটোতে মিলে যা শুরু করেছে, পুরোনো কাসুন্দী সব ঘেঁটে বার করছে। এবার না মিনুর কথাটাও আলোচনার মধ্যে এসে না যায়। বলতে বলতেই মাধুরী চা নিয়ে ঢুকলো। একটা বড় প্লেটে করে সবার জন্য চা নিয়ে এসেছে। বিদিশা বললো, সেকীরে? এত তাড়াতাড়ি চা হয়ে গেল? রনি বললো, ও খুব ফাস্ট। সব কিছুই খুব তাড়াতাড়ি করে। রান্নাটাও তাড়াতাড়ি সারে। সেই জন্য আমারো খুব সুবিধে হয়। থাক আর অত প্রশংসা করতে হবে না। এবার চা’ টা সবাই মিলে হাত বাড়িয়ে ধরো তো দেখি। বলেই মাধুরী সবার দিকে চা বাড়িয়ে দিতে লাগলো। বিদিশা হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপটা নিলো। কিন্তু কাপটা প্রথমে আমাকেই দিলো। শুভেন্দু উল্টো দিক থেকে সব লক্ষ্য করছিলো। আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো। তারপরেই বললো, দেব কিন্তু আজ গান শোনাবে বলেছে, তোরা সবাই মিলে ওকে আর একবার বল। আর বিদিশা, তুমিও একটু বলো। নইলে যে বাবু আবার- চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছি। বিদিশা আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো। আমাকে বললো, কি গাইবে না?   আমি বললাম, হ্যাঁ। গাইবো।
Parent