জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - অধ্যায় ৩৩

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-38842-post-3454915.html#pid3454915

🕰️ Posted on July 3, 2021 by ✍️ Lekhak is back (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1424 words / 6 min read

Parent
শু্ক্লাকে বললাম, ‘না রে কাল বাড়ীতে ফিরে মার সাথেও কথা বলিনি। সোজা বিছানায় গিয়ে উঠেছি, আর সেই যে সকালে ঘুম ভেঙেছে, তারপরেই অফিস। তোর ফোন এসেছিল, আমি খেয়ালও করিনি।’ আমাকে বসিয়ে রেখে শুক্লা ভেতরে চলে গেল। বলল, ‘এই যা ভুলে গেছি। বস, তোর জন্য আমি চা টা করে নিয়ে আসি।’ মনে হল, আমাকে যেন ধাঁধায় ফেলে রেখে দিয়েছে, শুক্লা। এতকিছু বলছে, অথচ আমাকে এখানে ডাকার কারণটা কিন্তু ও খুলে বলছে না। ঠিক দশ মিনিট পরে শুক্লা চা করে নিয়ে এলো। প্লেট ভর্তি সিঙ্গার নিমকি আর চানাচুর এনেছে।  ওকে বললাম, করেছিস কি? এত কে খাবে? পাগল নাকি? শুক্লা জোর করল আমায়। আমি তবুও প্লেট থেকে একটা করে সিঙ্গারা আর নিমকি তুলে দিলাম। ওকে বললাম, ‘এখন আর এত বেশী খেতে পারি না। জানিস তো আমার পেটের সেই রোগ। একবার শুরু হলে, ভীষন কষ্ট দেয়।’ সিঙ্গারা খেতে শুরু করলাম, সেই সাথে চায়ের কাপেও ঠোঁট ছোঁয়ালাম। শুক্লা চায়ের কাপটা মুখের কাছে ধরে আমার মতন চা খেতে লাগল। কিন্তু ওর দৃষ্টি আমার চোখের দিকে। দৃষ্টিটা আমি ভাল করে পড়তে পারছি না। কিন্তু বারে বারে একই প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ও আসলে আমায় কি বলতে চাইছে? শুক্লা বলল, ‘দেব তোর মনে আছে, আমাদের সেই পিকনিকের কথা? টাকী বসিরহারটে আমরা পিকনিক করতে গিয়েছিলাম। সৌগত জেদ ধরল, ডায়মন্ডহারবারে যাবে। আর তুইও গোঁ ধরে বসলি, পিকনিক হলে টাকীতেই যাবি। শেষ পর্যন্ত তোরই জিত হল। আর আমরা হৈ হৈ করে পিকনিকটা সেরে এলাম।’ শুক্লাকে বললাম, হ্যাঁ মনে আছে। সেদিন তুই আর সৌগত আমাদেরকে ছেড়ে কোথায় চলে গেলি। শেষমেষ খুঁজে পাই না। শুভেন্দু, রনি সবারই খুব চিন্তা লেগে গিয়েছিল সেদিন।’ শুক্লা বলল, ‘হ্যাঁ জায়গাটা অত সুন্দর। সৌগতও আগে ভাবেনি। ও ভেবেছিল ডায়মন্ডহারবারের থেকে ভালো বোধহয় কিছু হয় না। নিজের চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করে না। মাঝে একটা নদী, এদিকে এপার বাংলা ওদিকে ওপার। চারিদিকে সারি সারি শুধু নারকেল গাছ, এত মনোরম, এতো সুন্দর, এমন একটা পিকনিক স্পট। না এসে পারা যায় না। সারাটা রাস্তা সৌগতর যে রাগটা ছিল, ওখানে গিয়ে একেবারে জল হয়ে গেল। আমাকে বলল, চলো না হাঁটতে হাঁটতে দুজনে একটু ওদিকটায় যাই। তোরা সেই সময় আড্ডা দিচ্ছিলি। ঠিক সেই সময় সৌগত আমাকে নিয়ে বেশ কিছুটা দূরে চলে গেল। আমি যত বলছি, আর যেও না। ওরা চিন্তা করবে। ও ততই দূরে নিয়ে যাচ্ছে আমাকে।’ শুক্লাকে বললাম, ‘সৌগত তোকে ইচ্ছে করেই আমাদের থেকে দূরে নিয়ে গিয়েছিল। লুকিয়ে তোকে আদর করবে বলে। ডায়মন্ডহারবার হলে সেই সুযোগটা পেত না।’ শুক্লা বলল, ‘হ্যাঁ সেদিন সৌগত সত্যিই খুব উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিল। কাছে পিঠে যে এমন সুন্দর একটা জায়গা আছে ও জানতই না।’ আমি সাথে থাকা মানে ও তখন অন্যমানুষ। গালফ্রেন্ড প্রেমিকা বলে কথা।  ঠিক যেন সুযোগ সন্ধানী পুরুষ। আমাকে বলল, জানো শুক্লা, আমার মনে হচ্ছে, ফ্যামিলি প্ল্যানিংটা আজ এখানেই আমরা সেরে ফেলি। তোমার যদি আপত্তি না থাকে? আমি শুক্লার কথা শুনছিলাম আর হাসছিলাম। শুক্লা বলল, ‘কি অসভ্য বলতো? আমাকে বলল, এদিকটা ফাঁকা। কেউ আসবে না। চলো তুমি আর আমি কাজটা সেরে ফেলি।’  শুক্লাকে বললাম, আসলে সৌগত বরাবরই খুব ডেসপারেট ছিল। আসলে আমাকে আর বিদিশাকে প্রেম করতে দেখে, ওর মধ্যে এই জেদটা চেপে গিয়েছিল। বিদিশা আর আমি- কথাটা বলেই আমি হঠাৎ থেমে গেলাম। শুক্লা বলল, কি হল থামলি কেন? বল- আমি বললাম, না তুই বল, আমি শুনছি। শুক্লা বলল, আমার খুব ভুল হয়েগিয়েছিল দেব, জানিস তো। অকারণে সৌগতকে আমি সন্দেহ শুরু করলাম। ওই অবাঙ্গালী মেয়েটাকে নিয়ে ওর আদিখ্যেতা সহ্য করতে করতে আমারও একদিন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল। শুক্লাকে বললাম, জীবনের এই ভুল গুলোই তোকে এখন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। সবাই কিছু ভুল করে। আমিও করেছি। তার ফল ভোগ করছি এখন। শুক্লা বলল, ‘তুই তো কোনো ভুল করিস নি দেব। আমি তো মনে করি তুই ই এতদিনে সঠিক আছিস। তোকে যে ভুল বোঝার সে তোকে ভুল বুঝে ছেড়ে চলে গিয়েছিল।’ তারপর নিজেই বলল, না না আমি ভুল বললাম। বিদিশা ভালো মেয়ে। ও তো তারপরেও ভুল বুঝেছিল। কিন্তু সৌগত তো সেভাবে আমাকে- আমি বেশ অবাক হলাম। শুক্লাকে বললাম, কেন সৌগত তো তোকে- -ভালবাসত? তাহলে আমাকে ও জোর করল না কেন? আমার কথাটা মেনে নিল না কেন? আমার ভুলটাকে ভাঙানোর চেষ্টা করল না কেন? নিজের ইগোকে বজায় রেখে, ও বিয়ে করে বসলো আর একটা সুন্দরী মেয়েকে। সত্যিকারের ভালোবাসার এই কি দাম? আমি ভুল করে বসলাম। তার জন্য সৌগত আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করল না? আমাকে এভাবে শাস্তি দিল? মানুষ সবসময় ভালো কিছু পেতে চায়। যখন ভালোর থেকে খারাপই কিছু জোটে, তখন ভাবে যেটা আমার ছিল, সেটাই বোধহয় ভালো ছিল। শুক্লা হয়তো ভেবেছিল, মাসীর পছন্দ করা সুপাত্রই বোধহয় ওর জীবনে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেবে। কপালের দোষে সেটাও যখন হল না, তখন শুক্লার জীবনে নেমে এল কালো ছায়া। চরম এক আফসোস, এর থেকে সৌগতই বোধহয় পাত্র হিসেবে ওর সন্মন্ধ করা বরের থেকে ভালো ছিল।   শুক্লাকে বললাম, তোর বিয়ের পরবর্তী ঘটনাটা আমি জানি না।  তবে চোখের সামনে যা সব ঘটছে, এখন মনে হচ্ছে বিয়ে থা না করে এভাবেই জীবনটা আমি কাটিয়ে দেবো। বলা যায় না, আমার জীবনেও যদি এরকম কিছু ঘটে যায়। শুক্লা বলল, বল তুই একজনকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবি না, তাই তো? আমি বললাম, সেই একজনটা কে? সেটাই তো জানবার চেষ্টা করছি। শুক্লা বলল, কেন? বিদিশা? যে তোর জীবনে আবার ফিরে এসেছে। কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম, আমার মুখে কোন কথা নেই। শুক্লা এগিয়ে এল আমার দিকে, আমার হাতদুটো ধরে বলল, সরি দেব, আমি জানি, বিদিশার কথা তুললেই, তুই কিরকম অন্যরকম হয়ে যাস। আমি বিদিশার কথা আর তুলবো না। এই আমি কান ধরছি।’ মুখের সামনেই ওভাবে দুটো কান ধরছে দেখে, ওকে বললাম, কি পাগলামো করছিস? আমি কিছু মনে করিনি। বল তুই কি বলছিস, আর কান ধরতে হবে না। হাতটা নামা। যা বাজে লাগছে। শুক্লা বলল, ‘দেব একটা কাজ করবি, পুরোনো প্রেমকে কিভাবে আবার চাগাতে হয়, আমাকে একটু শিখিয়ে দিবি? আমি তো চেষ্টা করে যাচ্ছি, কিন্তু মনে ঠিক বল পাচ্ছি না। তোর তো তাও একটা উৎস আছে, একটা প্রেরনা আছে। এতদিন বাদে একটা হারিয়ে যাওয়া রাস্তাটা খুঁজে পেয়েছিস। কিন্তু আমি কাকে পাই? আমারো যে কাউকে দরকার, যে আমাকে শক্তি যোগাবে, প্রেরণা যোগাবে। সেরকম তো কাউকে পাচ্ছি না।’  আমি কি ওর কথার উত্তর দেবো বুঝতে পারছি না। হাঁ করে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছি।  দেথছি, শুক্লা ছলছলে চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর দৃষ্টিতে প্রাণ আছে, কিন্তু প্রাণটা এই মূহূর্তে দেহ থেকে বেরিয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। মুখে কোনো ভাষা নেই। যেন একটা শরীর দলা পাকিয়ে দুমড়ে মুচড়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। আমাকে ছলছলে চোখ নিয়েই বলল, দেব আমাকে মরার একটা উপায় বলে দিবি। এভাবে বাঁচতে আমার আর ভালো লাগছে না। তোকে মনের কথাটা এতক্ষনে বললাম। চোখ দিয়ে টসটস করে জল গড়িয়ে পড়ছে। ওর কাঁধে হাত দিয়ে বললাম, এ কি রে? তুই এত আপসেট হয়ে পড়েছিস? কেন কাঁদছিস তুই? এভাবে কাঁদিস না। শুক্লা- শুক্লা এবার কাঁদতে আমার গায়ে ঢলে পড়ল। একটা সান্তনা দেবার মতন ওর পিঠটাকে ধরলাম। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। শুক্লাকে বললাম, কাঁদিস না।  দেখ তুই আমাকে বাড়ীতে ডেকে আনলি, আমারই খারাপ লাগছে। হাত দিয়ে ওর শরীরটাকে ধরে ওকে তুলে বসাতে যাব, দেখলাম, শুক্লা ওই কান্না নিয়েই আমার বুকে মুখ ঘসছে।  কিছু হারাবার ভয়ে, ওই ভাবে মুখ ঘষে নিজেই নিজের সান্তনা খুঁজছে।  আমি শুক্লাকে নিয়ে কি করব বুঝতে পারছি না।  হঠাৎই বলে বসল, ‘দেব, বিদিশার জায়গাটা তুই কি আমাকে দিতে পারিস না? আমার শরীরটা হঠাৎই কেমন কেঁপে কেঁপে উঠল। আমার বুকে ঠোঁট ছুঁয়ে আলতো প্রলেপ দিয়ে যাচ্ছে শুক্লা। ঠিক এই মূহূর্তে ওকে সান্তনা দিতে দিয়ে আমি নিজেই নিজের রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিনা। পাগলের মত আমার বুকে মুখ ঘষে আর চুমু খেয়ে শুক্লার যেন নিজেরই হোশ ফিরলো। আমাকে বলল, এই যা। দেখ তো ইমশোনাল হয়ে পড়ে কিসব করে ফেললাম তোর সঙ্গে? দেব আমি সরি, ভীষন সরি, তোর সাথে এমনটা করলাম, আমার ভীষন খারাপ লাগছে। বলেই শুক্লা আমাকে ছেড়ে দিয়ে এবার বেশ কিছুটা দূরে চলে গেল। কেমন যেন ঘরের মধ্যে একটা স্তব্ধতা বিরাজ করছে। আকস্মিক শুক্লার আচরণে আমি স্তম্ভিত। বুঝতে পারছি শুক্লার মনে এখন শান্তি বলে কিছু আর অবশিষ্ট নেই। কিন্তু মানসিক ভাবে আমিও কিছুটা বিপর্যস্ত। যাকে কোনদিন প্রেমিকা হিসেবে আমি ভাবিনি, বিদিশার জায়গায় যাকে কোনদিন চিন্তা করিনি, সে আমাকে এক গভীর সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। শুক্লাকে আমি কি বলব, নিজেই বুঝতে পারছি না। মানুষ আবেগের বশে অনেক কিছু করে বসে। পরিনতির কথা চিন্তা না করে সে তখন নিজের ইচ্ছেটাকেই বেশী প্রাধান্য দেয়। স্বভাবে, আচরণে তার পরিবর্তন ঘটে। কোন কিছু পাওয়ার আশায় সে ছটফট করে ওঠে। ভেতরে ভেতরে তার অস্থিরতা ফুটে উঠে। শুক্লা মুখে আমাকে সরি বললেও, ওর ভেতরে আমাকে নিয়ে যে একটা প্রবল চিন্তা সেটা আমি ভাল করেই উপলব্ধি করতে পারছি। কিছুটা দূরে গিয়ে শুক্লা বলল, ‘দেখ, তুই আবার আমাকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলি। এই আমার হয়েছে বড় জ্বালা। কখন কি যে করে বসি। তোকে সব পুরোনো কথা বলতে গিয়ে নিজেই ইমোশনাল হয়ে পড়লাম। এই দেব, কি ভাবছিস? তুই সত্যিই চিন্তায় পড়ে গেলি নাকি আমাকে নিয়ে? আমি কোনো কথা বলছি না দেখে শুক্লা বলল, ‘আজ থেকে শুক্লা খারাপ হয়ে গেল তো তোর কাছে? দেখ আমার কিন্তু বন্ধু বলে কেউ আর রইলো না। সবাই আমার থেকে দূরে সরে গেল। তুইও সরে গেলি।’ নিজের মনের মধ্যে কেমন একটা দুশ্চিন্তা তৈরী হচ্ছে শুক্লাকে নিয়ে। ওর কাছে সেভাবে কঠোর হতে পারছি না। কিন্তু নরমও হতে পারছি না। কেমন যেন ডামাডোলে আমি দুলছি।
Parent