জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - অধ্যায় ৩৪

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-38842-post-3454917.html#pid3454917

🕰️ Posted on July 3, 2021 by ✍️ Lekhak is back (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1399 words / 6 min read

Parent
শুক্লা বলল, ‘বল না দেব? কাল কি হল? বিদিশা এসেছিল?’ আমার ভেতরে তখনো একটা কিন্তু কিন্তু বিরাজ করছে। বিদিশাকে নিয়ে শুক্লার এখনো এত আগ্রহ? ওর মনোভাবটা ঠিক পরিষ্কার হচ্ছে না আমার কাছে। আমি বললাম, ‘ছাড় না ওসব প্রসঙ্গ। তুই তোর কথা বল। ভালোই তো লাগছিল শুনতে।’ শুক্লা বলল, ‘আমার কথা শুনতে বুঝি তোর ভালো লাগবে? কি একটা জীবন নিয়ে এতকাল অতিবাহিত করে দিলাম। আমার আবার জীবন কাহিনী বলে কিছু বাকী আছে নাকি?’ আমি বললাম, ‘তোর বরের কথা একটু শুনি। বেশ ভালই তো হয়েছিল বিয়েটা। হঠাৎ ভেঙে গেল কেন?’ শুক্লা বলল, ‘জোড়া লাগানোর আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু আমার স্বামী আমাকে সেই সুযোগটা দেয় নি।’ কারণটা জানতে শুক্লা বলল, ‘আসলে আমার হাজব্যান্ড হল, বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। জামশেদপুরে ওদের আদী বাড়ী। চাকরীর দরুন, কলকাতাতেই অনেকদিন ছিল। হঠাৎই আমার শাশুড়ী এসে সব গুবলেট করে দিল।’ আমি বললাম, ‘সেটা কিরকম?’ শুক্লা বলল, ‘আমি তখন অলরেডী ফ্ল্যাটের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে লোন স্যানকসন্ পেয়ে গেছি। ও আর আমি বিয়ের পর ভাড়াবাড়ীতে থাকতাম। শ্বাশুড়ি মায়ের আপত্তি হল, জামশেদপুরে যখন নিজেদের বাড়ী রয়েছে, তখন লোন টোন নিয়ে আবার এসব ফ্ল্যাট কেনা কেন? তাহলে তো ওই বাড়ীটাও শেষমেষ দেখার কেউ থাকবে না। আমার শশুড় শাশুড়ীর যখন জামশেদপুরে বাড়ী রয়েছে, তখন এসব ফ্ল্যাট ট্যাট কেনার কোন দরকার নেই। আমার বর প্রথমে মায়ের কথাটার কোনো গুরুত্ব দেয় নি। পরে দেখি ও মায়ের কথায় তাল দিচ্ছে। ভীষন রাগ হল আমার। বললাম, আপনারা নিজেদের কথা চিন্তা করেন। আমার বাবা মায়ের জন্যও তো আমাকে কিছু ভাবতে হবে। মা বাবা এতকাল ধরে ভাড়া বাড়ীতে রয়েছেন, তাদেরকে যদি আমি নিজের ফ্ল্যাটে এনে তুলি। অসুবিধেটা কি?’ শাশুড়ী বলল, তার মানে তুমি ফ্ল্যাট নিতে চাইছ নিজের বাবা মায়ের জন্য? নিজেদের কথা ভেবে নয়? ভীষন রাগ হল আমার। বললাম, বাবা মা কি চিরকাল থাকবেন? তারপর তো ওই ফ্ল্যাট আমাদেরই হবে। এই সহজ কথাটা কেন বুঝতে চাইছেন না? আমার শাশুড়ী তারপরেও বিশ্রী ভাবে বেঁকে বসলো। আমি শুক্লাকে বললাম, ‘এটাই কি তোদের বিচ্ছেদের কারণ?’ শুক্লা বলল, না, এরপরেও জল অনেকদূর গড়ালো। ও হঠাৎই জামশেদপুরে চলে গেল কয়েকদিনের জন্য। অফিস থেকে ছুটী নিল। বলল, বাবা মা দুজনেরই খুব শরীর খারাপ। আমাকে ওনাদের পাশে থাকতে হবে। আমি বললাম, আমি কি যাব তোমার সাথে? ও বলল, না তুমি থাকো। তাহলে তোমাকেও তো আবার ছুটী নিতে হবে। আমি শুক্লাকে বললাম, তারপর? শুক্লা বলল, সেই যে গেল, তারপরে দেখি আর আসার নামই করে না। আমি এদিকে রোজ ফোন করছি, ওর কাছে খবরাখবর নিচ্ছি। সেই একই কথা। না আমার এখন কলকাতায় ফেরার কোন ইচ্ছা নেই। আমি বললাম, সেকী? তোর প্রতি ওর টানটা তাহলে চলে গেল? বিয়ে কেন করেছিল? শুক্লা বলল, সেটাই তো কথা। বাবু চাকরি ছেড়ে একেবারে বাবা মায়ের কাছে গিয়ে হাজির হয়েছেন। ওসব শরীর টরীর খারাপ মিথ্যে কথা। মোদ্দা কথা হল, উনি চাকরী আর করবেন না। জামশেদপুরে দোকান খুলে ব্যাবসা করবেন।  আমি বললাম, তারপর? শুক্লা বলল, তারপর আর কি? আমার এদিকে চিন্তা বাড়ছে। বাবা মাও চিন্তা করছে আমাকে নিয়ে। ফ্ল্যাটে আমি একা। রোজ শুধু অফিস করছি, কিন্তু মন আমার একেবারেই ভাল নেই। ঠিক করলাম ভাড়া বাড়ীটা আমি ছেড়ে দেবো। বাবা মায়ের কাছেই আবার ফিরে যাব।  ততদিনে সল্টলেকের আমার এই নতুন ফ্ল্যাটটাও তখন তৈরী হতে শুরু করেছে। আমি বায়নাও অলরেডী করে দিয়েছি। ঠিক করলাম, ফ্ল্যাট কমপ্লিট হয়ে গেলে বাবা মাকে নিয়ে আমি এখানে চলে আসব। আমি বললাম আর তোর বর? শুক্লা বলল, ‘শেষ চেষ্টা একটা করলাম। ওকে ফোন করে আমি ট্রেন ধরে একাই চলে গেলাম জামশেদপুর। ভেতরে ভেতরে রাগটাকেও আমি প্রশমিত করে ফেলেছি। একবার ওকে অন্তত বোঝানোর চেষ্টা করব,এই আশা নিয়ে আমি জামশেদপুর রওনা দিলাম। সারাটা রাত্রি আমার ট্রেনে ঘুম এল না। কি হয় কি হয় একটা দুশ্চিন্তা মনে কাজ করছে। আমার সব আশায় জল ঢেলে দিল, আমার শশুড় শাশুড়ী। আমার বরও তখন তার বাবা মায়ের কবলে। কিছুতেই সিদ্ধান্ত পাল্টাতে রাজী হল না। উল্টে আমাকে বলে বসল, তুমি চলে এসো জামশেদপুরে। দরকার হলে ট্র্যানস্ফার নিয়ে নাও। চাকরী ছেড়ে দাও। কলকাতার প্রতি তোমার অত মায়া কেন? আমি চেয়ে আছি শুক্লার মুখের দিকে। শুক্লা বলল, তুই বল দেব? বাবা মাকে একা ফেলে, ওনাদেরকে ছেড়ে এভাবে কি চলে যাওয়া যায়? বিয়ের আগে আমি শর্তই করে নিয়েছিলাম। বাবা মাকে ছেড়ে আমি অন্য কোথাও কিন্তু যেতে পারব না। সেটা সম্ভব নয়। সব শর্তে রাজী হল। অথচ বিয়ের পর, তিনি একেবারে পাল্টে গেলেন। শু্ক্লাকে বললাম, কতবছর ঘর করেছিলিস তোরা? শুক্লা বলল, মাত্র একবছর। আমি বললাম, মাত্র একবছরেই সব শেষ হয়ে গেল? শুক্লা বলল, আমি শেষ করে দিতে চাইনি দেব। ওই আমাকে বাধ্য করল। কোর্ট থেকে আমাদের ছমাস সময় দিল। এই ছমাসেও তিনি মনোভাব চেঞ্জ করলেন না। বাধ্য হয়েই মিউচাল ডিভোর্সটা আমাদের করে নিতে হল। একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুক্লা বলল, দেখ, এতকিছু করলাম। সেই বাবা মায়ের জন্যই আমি এত লড়াই করলাম। অথচ বাবা আর মা, দুজনকেই আমি শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারলাম না। আমার জীবনটা পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে গেল। আমি শুক্লার চোখে আবার জল দেখলাম, যেন ভাঙাচোরা একটা জীবনের মতন জীবনটাকে জোড়া লাগানোর সব প্রচেষ্টাই শুক্লার ব্যর্থ হয়ে গেছে। নতুন ভাবে বাঁচার উৎস খুঁজছে। কিন্তু অসুখী নারীমন তাকে যেন চরম বিশাদে ভরিয়ে তুলেছে। আমার দিকে চেয়ে অনেক কষ্টে মুখে আবার হাসিটা ফেরত আনার চেষ্টা করল শুক্লা। আমাকে বলল, ‘আমি কিন্তু তোর বিয়েতে খুব আনন্দ করব দেব। বিদিশার সঙ্গে যদি তোর বিয়েটা হয়, তাহলে খুব মজা করব, গাইবো নাচবো। তোকে আর বিদিশাকে নিয়ে খুনসুটী করব। সারারাত হৈ হুল্লোর হবে। বাসরে মজা হবে। এই শু্ক্লাকে দেখে তুই তখন চিন্তেই পারবি না। কি আমি ঠিক বলছি তো দেব?’ আমি অবাক চোখে চেয়ে আছি শুক্লার দিকে। ভাবছি, জীবনের নানা রং দেখতে যারা অভ্যস্ত। তারা কি এই রংয়ের সাথে কোন রংকে মেলাতে পারবে? এ আমি কি দেখছি? ভালোবাসার রং কি এরকমও হয়? না, আমার মাথা আর কোনো কাজ করছে না। এবারে মনে হচ্ছে, শুক্লাকেই আমাকে পরিষ্কার করে আসল কথাটা জিজ্ঞাসা করতে হবে। শুক্লা তাহলে কি তুই?-  মনে হল, শুক্লা আপ্রাণ চেষ্টা করছে, ওর প্রতি আমার যে ধারনাটা তৈরী হয়েছে সেটাকে নির্মূল করার। যেন অভিনয় নয়, ভেতর থেকে খুশি আর আনন্দ ফেটে পড়ছে। আমার মনের মধ্যে যাতে কোন আশংকা বাসা না বেঁধে থাকে, তার জন্য নিজেই এবার প্রাণখুলে হাসতে লাগল শুক্লা। হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে, আর বলতে লাগল, ‘আমি কিন্তু তোর রকমটা খালি দেখছিলাম। যেই তোকে ভালবাসার কথা বলেছি, অমনি তোর মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেল। আরে বাবা। আমি কি অতই বোকা? যে বিদিশার জায়গাটা শুধু শুধু নিতে যাব? তুই বুঝি বিদিশাকে ছেড়ে আমাকে ভালবাসতে শুরু করে দিবি? আর আমার কথাটাও সত্যি মেনে নিবি। ওতো আমি এমনি বলছিলাম। তোকে একটু পরখ করে দেখছিলাম, আর কি? তোর সাথে একটু মজা করব না তো কি করব বল? কলেজের দিনগুলোর কথা কি তুই ভুলে গেলি?’ মনে মনে বললাম, সব কিছু যে মজা করে হয় না শুক্লা। তোর মনের মধ্যে একটা অস্বস্তি কাজ করছে এখন। তুই যেটা বলতে চেয়েছিলিস, সেটা বলেও তুই কথাটা ঘুরিয়ে নিয়েছিস। তোর মনের ইচ্ছাটা আমি তখুনি বুঝে নিয়েছি। শুক্লা আবার আমার কাছে এল। আমাকে বলল, ‘বিদিশার কথা কিছু একটু বলবি তো? কাল শুভেন্দুদের বাড়ীতে বিদিশা এসেছিল কিনা তাও বললি না। শুধু এড়িয়ে যাচ্ছিস আমাকে? কেন আমাকে বলতে কি তোর কোন অসুবিধে আছে?’ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আমি কিছুক্ষণ চিন্তা করলাম। তারপরে বললাম, ‘শুক্লা, আমাকে বড় বিপদে ফেলে দিলি তুই। এ তুই কি করলি বলতো? আমাকে বাড়ীতে ডেকে এনে মনের কথাটা বলে ফেললি। কোনদিন ভেবে দেখেছিস? আমি তোকে সেভাবে, কখনো- শুক্লা আমাকে বাঁধা দিয়ে বলল, ‘আমি জানি দেব। জোর করে কিছু হয় না। ভালবাসা প্রেম এগুলো তো ছেলেখেলা নয়। এই করলাম, আবার ছেড়ে দিলাম। আবার করলাম, আবার ছেড়ে দিলাম। ওই ভুল আমি জীবনে একবারই করেছি। কিন্তু তুই কেন করতে যাবি দেব? আমার জন্য তুই বিদিশার ভালবাসাটাকে ভুলে যাবি? এতদিন বাদে যে বিদিশা ফিরে এল, তার কি কোন দাম থাকবে না তোর কাছে? ও আমি ভুল করে ফেলেছি, দেব। একেবারে নির্বোধের মতন কাজ করে ফেলেছি। তুই প্লীজ আমাকে ক্ষমা করে দে। আমি সরি ভীষন সরি। প্লীজ দেব।’ আমি আবার চেয়ে রইলাম শুক্লার মুখের দিকে। শুক্লা বলল, ‘কাল কি জানি কি মনে হল, বোকার মতন শুভেন্দুকেও কিছু খারাপ কথা বলে দিলাম, বিদিশার সন্মন্ধে। পরে নিজেরই আমার অনুশোচনা হল। ভাবলাম, এ আমি কি করলাম? শুভেন্দু নিশ্চই খারাপ ভাবলো আমাকে।’ আমি বললাম, কি বলেছিস তুই শুভেন্দুকে? বিদিশা সন্মন্ধে কিছু বলেছিস? শুক্লা আবার এড়িয়ে যেতে লাগল, আমার কাছে। আমাকে বলল, ‘না আমি বলব না। কিছুই বলব না। তুই খালি আমাকে খোঁচাচ্ছিস। জানিস তোর মনের কি অবস্থা হবে এটা শুনলে। আমি তোর চোখে আরো খারাপ হবো। এটাই কি তুই চাস?’ এমন একটা শর্তে ফেলে দিল শুক্লা। আমার শোনার আগ্রহটা পুরোপুরি চলে গেল। মনে হল, যে ঝড়টা আমার মনের ভেতর দিয়ে এখন বইছে, আমি সত্যি বিদিশার সন্মন্ধে কোন খারাপ কথা শুনতে পারব না। যেটা সত্যি সেটাও মানতে পারব না। হয়তো মুখ ভার করে এক্ষুনি আমাকে চলে যেতে হবে শুক্লার এখান থেকে। আর কোনদিন শুক্লার মুখদর্শনও আমি করব না। ও বলল, ‘জেনে রাখ দেব, বিদিশা যতই ভুল করুক। বা যতই তোর ভালবাসাকে ঠুকরে সে চলে যাক। এতদিন বাদে সে যখন ফিরে এসেছে। তাকে তাকে ক্ষমা করে দিতেই হবে। আমি যদি বিদিশার জায়গায় থাকতাম, তুই করতিস না?’
Parent