জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - অধ্যায় ৪০

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-38842-post-3456221.html#pid3456221

🕰️ Posted on July 3, 2021 by ✍️ Lekhak is back (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1503 words / 7 min read

Parent
আমি বললাম, ‘মা তো ঘরে নেই। তাহলে বস, আমি চা করে নিয়ে আসছি।’ কি বলতে কি বলে বসলাম, মিনুর দেখলাম, মুখটা বেশ খুশী খুশী হয়ে উঠল। মা’র ঘরে না থাকাটা ওর কাছে যেন হাতে চাঁদ পাওয়ার মতন। উঠে আমারই পেছন পেছন চলে এল মিনু। আমাকে বলল, ‘তুই একা কেন চা করবি? চল আমিও তোকে সাহায্য করছি।’ আমার রান্নাঘরে যেখানে স্টোভটা রাখা রয়েছে, মিনু আমার পিছন পিছন ঠিক ওখানটাই এসে দাঁড়ালো। অস্বস্তি হচ্ছে আমার। একে মা ঘরে নেই। মিনু জ্ঞানহারা হয়ে হঠাৎ যদি কিছু করে বসে আমার আফশোসের শেষ থাকবে না। বেয়ারাপনা শুরু করলে আর একে কেলেঙ্কারী। সুযোগের সদ্বব্যবহার করতে মিনুর কোন জুড়ি নেই। হঠাৎই পেছনে দাঁড়িয়ে মিনু বলল, ‘রীনার খুব মন খারাপ। তুই ওকে হ্যাঁ বলে আসিস নি। ও আর গান গাইবে না বলছে। রেওয়াজও বন্ধ করে দিয়েছে। বলছে, দেবদা যতক্ষণ না আমাকে আবার গান শেখাতে না আসছে, আমি আর হারমোনিয়াম ধরব না। এবার থেকে গান গাওয়া আমি ছেড়ে দিলাম।’ আমি বললাম, ‘দেখ, গান তো সেভাবে আমি কাউকেই শেখাই না। তুই জোর করেছিলিস, তাই রীনাকে গান শেখাতে আমি রাজী হয়েছিলাম। ওকে একটু বোঝানোর চেষ্টা কর। মাষ্টারের কি অভাব আছে? বেস টা তো ভালভাবে তৈরী হয়ে গেছে। তাছাড়া রীনার গলায় সুর আছে। গলাও মিষ্টি। আর আমি তো একজনের কাছে ওকে পাঠিয়েছিলাম। সেখানে যাওয়াই বা বন্ধ করে দিল কেন? থাকলে এতদিনে তো ভাল তৈরী হয়ে যেত।’ মিনু বলল, ‘আমি অনেক বুঝিয়েছি। কিছুতেই আমার কথা শুনছে না। তাই তো তোর কাছে ছুটে এলাম।’ মিনুকে এবার মুখের ওপর না ই বলে দিতে হল আমাকে। ওকে বললাম, আমাকে মাফ কর মিনু। আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়। আমার মাথার উপরে এখন অনেক দায়িত্ব। তাছাড়া সময়েরও খুব অভাব। কথা দিয়েও যখন কথা রাখতে পারব না। তখন শুধু শুধু আস্বাস দিয়ে কোন লাভ নেই। আমি পারব না। কিছুতেই পারব না।’ হঠাৎই মিনু আমার হাতটা ধরল। ওর এই হাত ধরার মানেটা আমার কাছে পরিষ্কার হল তখনই, যখন মিনু বলল, তোকে একবার রিকোয়েস্ট করব। তুই একবার অন্তত আমার বাড়ী আয়। রীনাকে তুই ই বোঝা। আমার দ্বারা ওটা সম্ভব নয়।’ আমি মিনুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। কিন্তু বরাতে যে আমার দূঃখ আছে। তখনো জানতাম না। কথায় বলে পৃথিবীর সব থেকে সুখী লোকও যেকোন মূহূর্তে দূঃখী বনে যেতে পারে। হঠাৎই বুদ্ধিসুদ্ধি লোপ পেয়ে যাবার মতন মিনুকে বলে বসলাম, ‘কবে যেতে হবে বল? আমি গিয়ে বোঝাবো রীনাকে। আশাকরি ও নিশ্চই আমার কথা ফেলবে না।’ মিনুর সঙ্গে আমার ব্যবধানটা যতটাই বেড়েছিল, ঠিক ততটাই আবার কমে গেল সেই মূহূর্তে। ওর ওই আমন্ত্রণের মধ্যে যে একটা রহস্য আছে, তখনো আমি নিশ্চিত নই। ধরেই নিলাম মিনু সত্যি কথাটা বলছে। অন্তত রীনার কথা ভেবে মিনুর বাড়ীতে আমার যাওয়া দরকার। মিনুকে চা করে খাওয়ালাম। একগাল হেসে মিনু বলল, ‘তোর ভারী ভয় শুধু আমাকে নিয়ে।  এতই তুই বিদিশাকে ভালবাসিস, অন্যকোন মেয়েছেলের সংস্পর্ষেও আসতে চাস না। আরে আমরা তো ভাল বন্ধু হতে পারি না কি? মিনু নয় তোর ভালবাসার পাত্রী হতে পারল না। কিন্তু বন্ধু হতে চাইলেও তুই কি না করবি আমাকে? কেন বিদিশার কি ছেলেবন্ধু একেবারেই নেই?’  মিনুকে বললাম, ‘আগে হয়তো ছিল। কিন্ত আমার সঙ্গে প্রেম শুরু করার পর থেকে, যতদূর জানি, বিদিশার কোন ছেলেবন্ধু নেই।’ হো হো করে হেসে উঠল মিনু। আমাকে বলল, তোর সাথে শুক্লারও তো খুব ভাল দোস্তী ছিল। তা বিদিশা সেখানে কোন আপত্তি করেনি? আমি বললাম, ‘শুক্লা নিজেই তো পরে সৌগতর সাথে প্রেম করেছে। আপত্তি থাকবে কেন? তাছাড়া শুক্লার সঙ্গে সেভাবে তো আমি কোনদিন মিশিনি। বিদিশা প্রথম প্রথম সেটা দেখে একটু অস্বস্তিতে ভুগলেও, পরে খুব সুন্দর মানিয়ে নিয়েছে। তাছাড়া শুক্লা, বিদিশা দুজনেই ওরা খুব ভাল বন্ধু। খামোকা বিদিশা রাগ করতে যাবে কেন? মিনু বলল, ‘এই আমিই কারুর ভাল বন্ধু হতে পারলাম না। তাই না? সবার দুচোখের বিষ হয়ে গেছি। আমার যেন কারুর কাছে মুখ দেখানোর আর জো নেই।’ মিনুকে বললাম, ‘এসব মন খারাপের কথা ছাড়। এবার তুই বল, তুই নিজে বিয়েটা কবে করছিস?’ একটা হতাশা আর আক্ষেপ নিয়ে মিনু যেন আমার মুখের দিকে তাকালো। আমাকে বলল, ‘আমি ভাবছি, এ জীবনে বিয়ে থা আর করব না। আমি বললাম, কেন রে? মিনু বলল, ‘আমার তো অনেক বদনাম আছে। বিয়ে করলেই কি বদনাম সব ধুয়ে যাবে? ওসব বিয়ে ফিয়েতে আমার বিশ্বাস নেই। ফটর ফটর করে কটা অজানা সংস্কৃত মন্ত্র পড়লেই কি সব হয়ে যায় নাকি? দাউ দাউ আগুনে হাত রাখলেই কী আর সতী হওয়া যায়? আমাদের এই মেয়েদের শরীরটাকে নিয়ে সব থেকে বড় জ্বালা, মনের অরণ্যে সবসময় জ্বলছে দাউ দাউ আগুন। তোরা যতই বলিস না কেন, মেয়েরা লজ্জ্বাবতী লতা। আমি তো বিশ্বাস করি না। বিধাতা আমাদের ওভাবেই তৈরী করেছে। বিশ্বে এমন কোন পুরুষ আছে কি যে আমাকে সেন্ট পার্সেন্ট খুশি করতে পারবে? আমার মনে হয়, কেউ বোধহয় এমনটা সুখী হয় না। সুখী সুখী মুখ করে বসে থাকে সব। এসব দের ন্যাকামি আমি পছন্দ করি না।’ ভাবছিলাম, আমার জায়গায় অন্যকেউ থাকলে ওকে হয়তো বলে বসত, জিও বেটি হাজার সাল। তোমার মুখে ফুল চন্দন পড়ুক। তুই শালি ঠিক কথা জেনেছিস তো। সত্যি এই পৃথিবীতে এমন কোনো আখাম্বা দন্ড নেই যা মেয়েদের একশো ভাগ সুখি করতে পারে। তবুও তো তার মধ্যে সুখ খুঁজে নিতে হয়। এক দন্ড থেকে আর এক দন্ডে নিরন্তর পরিভ্রমণ করতে হয়। দেখতে হয় কে সব থেকে বেশি আনন্দ দিতে পারে। মিনুকে দেখে আমার ওই মূহূর্তে তাই মনে হল। এ মেয়ে বিয়ে থা সত্যি আর করবে না। শুধু শুধু ঘনঘন বয় ফ্রেন্ড চেঞ্জ করবে। ভাগ্যিস আমার কপালটা এরকম নয়। আমাকে নিয়ে বিদিশা ছেনাল খেলা খেলবে না কোনদিন। কিছুদিন খেলাটা চলল, তারপর এঁটো পাতার মতো তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হল ডাস্ট বিনে। পরে দেখছি, কুকুরের কাড়াকাড়ি। জীবন নাটকের পরবর্তী অধ্যায় যে শুরু হচ্ছে তার একটু পরেই, তখনো জানি না। মিনু একেবারে হাত পা ছড়িয়ে আমার সাথে বসার ঘরে সোফায় বসে কথা বলছে। ঠিক তখুনি শুনলাম, দরজায় কলিংবেলের শব্দ। চমকে উঠলাম। এই সময় কে এল? দরজা খুললাম, দেখি বিদিশা দাঁড়িয়ে। আমার হাট বিটটা একটু বেড়ে গেল। ওর মুখটা দেখে কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম। হঠাৎ যেন ভূত দেখার মতন দেখছি। বিদিশাকে বললাম, ‘তুমি যে বললে বড় আসবে না? হঠাৎই চলে এলে? আমাকে তো জানালে না?’  চিরকালের যারা প্রেমিক প্রেমিকা হয়, জন্মজন্মান্তরেও যারা পরষ্পরকে ভালবাসে। ভগবান কখনো কখনো তাদের মধ্যে বাধার প্রাচীর তৈরী করে দেন। সেই মূহূর্তে বাঁধার প্রাচীরটি কে? সেটা অবশ্য বুঝতে অসুবিধে নেই।  কিন্তু আমি চাইলেও, বিদিশা যেন সেটা মন থেকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিতে পারল না। ঘরে ঢুকেই আমাকে বলল, ‘মিনু এসেছে, তোমার কাছে, এটাতো তুমি আমাকে আগে বলো নি।’ মিনু ততক্ষনে বিদিশাকে দেখে ফেলেছে। ওকে বলল, ‘এই তো বিদিশা। এতক্ষণ তোমার কথাই হচ্ছিল। অনেক দিন বাঁচবে তুমি। এসো এসো ভেতরে এসো। কতদিন তোমায় দেখি না।’ বিদিশার প্রচন্ড অস্বস্তি হচ্ছে। মুখ তুলতে পারছে না। আমি ব্যাপারটা সহজ করে দেবার জন্য বললাম, ‘আসলে মিনু, রীনার জন্যই আমার কাছে এসেছে। রীনা খুব ঝেমেলা পাকাচ্ছে বাড়ীতে। গানটান সব বন্ধ করে দিয়েছে। ওকে আমি যতক্ষণ না বোঝাচ্ছি, মিনু বলছে কোন কাজ হবে না। রীনাকে বোঝানোর জন্য আমাকে একবার অন্তত যেতেই হবে।’ বিদিশা মুখ তুলে একবার মুখের দিকে তাকালো। বুঝতেই পারলাম, কথাটা মনে ধরে নি ওর। যেন মিনুকে আমার ফ্ল্যাটে দেখে হঠাৎই ছন্দোপতন ঘটে গেছে। মনের মধ্যে জমে উঠছে অনিশ্চয়তার ইঞ্চি ইঞ্চি ধুলো। অথচ ওকে আমি কিছুতেই বোঝাতে পারছি না।  মিনু আর কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে আসেনি। এসেছে শুধু রীনার জন্যই। বিদিশা হয়তো যেটা ভাবছে, সেটা ভুল। ঠিক সেই মূহূর্তে মিনু হয়ে গেল বিদিশার কাছে বিভীষিকার মতন। হঠাৎ আমাকে বলে বসল, আমি তাহলে যাই? তুমি মিনুর সঙ্গে গল্প করছ, জানলে আসতাম না।’ মিনু খুব চালাক। সঙ্গে সঙ্গে ও উঠে পড়ল। বিদিশাকে বলল, ‘না, না, একি? তুমি যাবে কেন? এই তো এবার আমিই যাব। টাইম হয়ে গেছে। দেব তাহলে আমি আসি। টা টা বাই। তুই কিন্তু রীনার কথাটা মনে রাখিস। ভুলে যাস না।’ মিনুকে বিদায় দিয়ে আমি এবার বিদিশাকে নিয়ে পড়ে গেলাম। ওকে বললাম, ‘কি হয়েছে? মিনুকে দেখে খারাপ ভাবছ? আরে বাবা, আমি তো ওকে ডাকিনি। ও নিজেই এসেছে। হঠাৎ করে দরজা খুলে দেখি মিনু দাঁড়িয়ে। কি করব বল? ঘরে এসে বলল, রীনার জন্য আমাকে একবার নাকি যেতে হবে।’ বিদিশা বলল, এখন কি মনে হচ্ছে জানো? এই পৃথিবীতে আমি বুঝি আর সুখী নই। আমি বললাম, ‘কেন এ কথা বলছ বিদিশা? বিদিশা বলল, ‘সুখ নামের একটা সুখপাখীকে হৃদপিন্ডের মধ্য বন্দী করতে চাইছিলাম। সেই পাখিনী ভীষন চালাক। হঠাৎই খাঁচা খুলে ফুড়ুত করে উড়ে যেতে চাইছে নীল আকাশে।’ ভীষন খারাপ লাগল ওর কথা শুনে। বললাম, ‘কেন আমাকে অবিশ্বাস করছ বিদিশা? আমি তো সত্যি কথাই বলছি।’ বিদিশা বলল, ‘তোমাকে বলেছিলাম না। ওকে বেশী প্রশ্রয় দিও না। সাতঘাটে জল খাওয়া একটা মেয়ে। ওকে তুমি বিশ্বাস করো?’ আমি বললাম, ‘আমিও করি না বিশ্বাস। বলছি তো। ও নিজে থেকেই আমার কাছে এসেছে।’ বিদিশা বলল, ‘তাহলে কথা দাও, ওর বাড়ীতে কোনদিন যাবে না। ও ডাকলেও যাবে না।’ বিদিশাকে বললাম, কথা দিলাম। বিদিশা বলল, ‘আমার মাথায় হাত রেখে বলো, সত্যি।’ আমি ওর মাথায় হাত রেখে বললাম, সত্যি, সত্যি, সত্যি। এই তিন সত্যি করলাম তোমার কাছে।’    হঠাৎ পুরোনো কথা চিন্তা করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেছে। ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরের বারান্দাটায় এলাম। জানি মা ঘুমিয়ে পড়েছে। খাবারটা টেবিলে রাখা রয়েছে। আমাকে খেয়ে নিতে হবে।  আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম চাঁদটা সরে গেছে। কোথা থেকে একরাশ মেঘ এসে চাঁদটাকে ঢেকে দিয়েছে।  অসময়ের কুচকুচে কালো মেঘ। এ মেঘকে যে আমি এসময় দেখবো আশাই করিনি। বেচারী চাঁদ হবো হবো সন্ধে থেকেই দুহাতে দু মুঠো জোৎস্না ছড়িয়ে ছিল চারপাশে। চাঁদ বোধহয় অকালেই ঝরে পড়ল। মাঝরাতেই ঢলে পড়েছে চাঁদ। তাহলে কি আমার জীবনটাও তাই?- মনে পড়ছিল, বিদিশাকে একদিন অনেক রাত অবধি একা পেয়ে একটা গান গেয়েছিলাম, ‘এখনি বিদায়, বোলো না। এখনো আকাশে চাঁদ জেগে আছে। কোন কথা তো এখনো হল না। এখনি বিদায় বোলো না।’ বিদিশা আমাকে বিদায় দিয়ে চলে গেল। আর যখন ফিরেই এল। সেই চাঁদটাকে কিন্তু আমি আর দেখতে পাচ্ছি না।
Parent