জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - অধ্যায় ৪৩

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-38842-post-3460875.html#pid3460875

🕰️ Posted on July 5, 2021 by ✍️ Lekhak is back (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1397 words / 6 min read

Parent
আসলে বিদিশাকে দিয়ে গান গাওয়ানোর আইডিয়াটা আমারো মাথায় আসেনি। তাছাড়া বিদিশা তো শুধু গান শুনতে ভালবাসে। ও কি গাইবে? তাছাড়া জোর করে সুযোগ দিলে পক্ষপাতীত্বর একটা ব্যাপার চলে আসে। সবাই বলবে, ও যেহেতু বিদিশা দেবের সাথে প্রেম করে, সুতরাং ওরজন্য একটা গোটা স্টেজ তুলে দিয়েছে দেব। আদিখেত্যা ছাড়া আর কি? আমি বললাম, ‘বিদিশা তোরই মতন। একটু ভীতু টাইপের। অল্পতেই ভয় পেয়ে যায়। প্রথমেই আমাকে ও না বলবে। তারপর জোরাজুরি করলে কান্নাকাটি শুরু করে দিতে পারে। তার চেয়ে বরং ওকে একটা কবিতা পাঠ করার জন্য বলব।’ শুভেন্দু বেশ আগ্রহ নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বিদিশা কবিতা পাঠ করবে? সত্যি করবে? উফঃ। দারুন হবে কিন্তু তাহলে ব্যাপারটা।’ তারপরেই আবার মুখটা উদাস মতন করে ও বলল, ‘কিন্তু তোর জন্য তার মন এখন খুব খারাপ। দেবের শরীর খারাপের খবর শুনে তিনি বিষন্ন হয়ে পড়েছেন। এই তোর কাছে এলো বলে। কালই কলেজে আমাকে বলেছে, ওর জন্য আমার ভীষন খারাপ লাগছে। কিছু ভাল লাগছে না। ওর শরীর খারাপ। আমাকে এখুনি ওর কাছে যেতে হবে।’ বিদিশা এল, শুভেন্দু থাকাকালীনই। এসেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, চোখে মুখে উৎকন্ঠার ছাপ। অসুখ থেকে সেরে না ওঠা পর্যন্ত বিদিশা ভীষন চিন্তিত হয়ে পড়েছে আমার জন্য। আমাকে গাদা গাদা উপদেশ দিয়ে কতকিছু একনাগাড়ে বলে গেল বিদিশা। - ‘শোনো, এই অবস্থায় নিজেকে একদম নেগলেট করবে না। নিয়ম করে ওষুধ খাবে বুঝেছো? আর ডাক্তারের কথার একদম অমান্য করবে না। শরীর তাড়াতড়ি সুস্থ না হলে, আমাদের তখন কি হবে বলোতো? তুমি আমাকে কত চিন্তায় ফেলে দিয়েছো জানো?’ শুভেন্দুও ঠিক পাশেই বসে আছে। দেখছে, বিদিশা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। হেসে বলল, ‘এই তো বিদিশা এসে গেছে। তোর আর চিন্তা নেই। তুই এমনি ভাল হয়ে যাবি।’ বিদিশাকে বলল, ‘শোন, তুই এই কদিন দেবের এখানেই থেকে যা। দেবের আদর যত্ন করবি। ওকে সেবা শুশ্রসা করবি। ওর শরীর সুস্থ হওয়াটা দরকার। সামনেই অ্যানুয়াল ফাংশন আছে না।’ বিদিশা মুখ বেঁকিয়ে বলল, ‘গুলি মারো অ্যানুয়াল ফাংশন।  এদিকে আমার বরটার শরীর খারাপ। আর সবাই ফাংশন নিয়ে পড়েছে। আগে ওর শরীর সুস্থ হবে। তারপর ওসব ফাংশন নিয়ে কথা।’ বিদিশা আমার চুলে হাত বোলাতে বোলাতে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে হঠাৎ। আবেগ অনুভূতি নয়। দেখছি, আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার কানের কাছে মুখটা নিয়ে এসে বলছে, ‘তুমি সুস্থ হয়ে যাও গো। ভগবান, তুমি আমার বরটাকে সুস্থ করে দাও। সুস্থ করে দাও ভগবান। প্লীজ প্লীজ। শুভেন্দু হাঁ করে বসে দেখছে বিদিশার কান্ড। পরে আমাকে খুব সিরিয়াসলি একদিন বলেছিল। ‘দেব সত্যিকারের ভালবাসা মানুষ বোধহয় একবারই বাসতে পারে। গভীর ভালবাসার সত্যি কি কোন বিকল্প হয়? যে সব মানুষ উদভ্রান্তের মতন বারে বারে প্রেমে পড়েন, দুর্বিবাকের মতন প্রেম যাদের জীবনে বারে বারে আসে। সত্যিকারের মহান প্রেমিক তাদেরকে বলা যায় কি? তোকে আর বিদিশাকে দেখে মনে হয়, সত্যি তোরা জীবনে আর কাউকে কোনদিন ভালবাসতে পারবি না। তোদের এই মহান প্রেমের জয় হোক। আমি সেদিন জানতাম না। প্রেম হল মানুষের জীবনে এক বজ্রপাত। এই প্রেমের বজ্রপাত একবার ঘটলে হৃদয়ভূমির সবকিছুই জ্বলে পুড়ে নিঃশ্বেস হয়ে যেতে পারে। আর যেটুকু অবশিষ্ট থাকে তাতে আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখার বা নতুন করে প্রেমতরু অঙ্কুরিত হয়ে ওঠার কোনো অবকাশ থাকে না।  আমি মানুষটা এমন নই। যে জীবনে বহুবার কোন না কোন নারীর প্রেমে পড়তে পারি আর প্রতিবারই মনপ্রাণ ঢেলে তাকে বিদিশার মতন ভালবাসতে পারি। এই বিদিশাই আমার জীবনে প্রথম ও শেষ প্রেম। আমার জীবনে দ্বিতীয় প্রেম আসা তাই অসম্ভব। সবাই যেটা মনে প্রাণে চেয়েছিল, চেয়েছিলাম আমিও অন্তত। সেটা কিছুতেই সফল হল না। শুভেন্দুকে বলেছিলাম, ‘আমার যখন যখন পঞ্চাশ বছর বয়স পেরিয়ে যাবে, তখনও দেখবি বিদিশার সাথে আমার প্রেম অটুট থাকবে। ও এমনি করেই আমাকে ভালবাসবে।’ হেসেছিল শুভেন্দু। আমাকে বলেছিল, ‘ভগবান করুক, তাই যেন হয়। এমন প্রেম জীবনে আসা মানে সেটা স্বপ্ন সমান। পঞ্চাশ বছর পরেও এক গভীর ও জীবন্ত প্রেমের মাঝে ডুবে থাকা যে সৌভাগ্যের কথা। এমন প্রেমের পূজো যে করতে পারে, তার জীবন যে কি সুখের আর আনন্দের হয়, তা তো বলাই বাহুল্য। তোদের এই অমর প্রেমের জয় হোক।’   শুয়ে শুয়ে এতক্ষণ ধরে পুরোনো কথাগুলো চিন্তা করছিলাম। মা বললো, ‘আবার তুই পুরোনো কথা ভাবছিস, আর মনকে কষ্ট দিচ্ছিস? বললাম না শুভেন্দু একটু পরেই এসে পড়বে। অত কি চিন্তা করছিস?’ আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললাম। মাকে বললাম, ‘মা শুভেন্দু আসবে বলেছে। খবর পেয়ে বিদিশাও আসবে। আমার মন তাই বলছে। তুমি দেখে নিও।’ জানি এগুলো আমার মনের আশা ছাড়া কিছুই নয়। বিদিশাকে এখনও ভালবাসি, তাই ভাবি বিদিশা বোধহয় আমার শরীর খারাপের খবর শুনলেই আসবে।  দৌড়ে আসবে। ব্যাকুল হয়ে ছুটে আসবে। তারপর এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরবে। হয়তো বুকে মুখ গুঁজে কিছুক্ষণ ধরে একনাগাড়ে কেঁদে কেটেও ভাসাতে পারে। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে, বুকেও বোলাবে, আমার কষ্ট দেখলে হয়তো ওর মন ভেঙে যেতে পারে। কি জানি, প্রেমিকার আদর পেলে নাকি যন্ত্রণার অনেক উপশম হয়ে যায়। আমি যদি বিদিশাকে পেতাম। কি ভালই হত। আমার এই বাজে রোগটা হয়তো কবেই সেরে যেত। একটা সুখের সংসার গড়ে আমরা এতদিনে মিষ্টার এন্ড মিসেস। যেন একটা হ্যাপি কাপল। তা না কোথায় কিছু না, সব যেন তার ছিড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। আমার এত কষ্টের মধ্যেও আমি বিদিশাকে পাচ্ছি না। ভীষন কষ্ট হচ্ছে। যেন কষ্ট আরো বেড়ে যাচ্ছে। আচ্ছা ওষুধে আমার শরীরটা ঠিক হয়ে যাবে তো? না আমার বিদিশাকেই চাই। ও না এলে মনে হয় কিছুই ঠিক হবে না।   মা ঘর থেকে বেরিয়ে গেছিল। হঠাৎ ঘরে ঢুকে দেখল, আমার চোখে জল। কাছে এসে আমায় বলল, ‘দেব তুই কাঁদছিস? এ কি রে?’ তাড়াতাড়ি হাত দিয়ে চোখটা মুছে বললাম, ‘কোথায় কাঁদছি? না না ও তুমি ভুল দেখেছো।’ আমি জানি, হঠাৎ মনের কষ্টের কথা চিন্তা করলেই চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে যায়। চোখের সাথে মনের একটা যোগসাজস আছে। মন তার ভেতরের কষ্টটা অনুভব করে কিন্তু প্রকাশ করতে পারে না। সেটা প্রস্ফুটিত হয় অশ্রুধারার মাধ্যমে। মায়ের কথা শুনে মনে হল, সত্যি তাই। বড্ড কষ্ট দিচ্ছি নিজেকে। একটু পরেই সবাই হয়তো এক এক করে এসে পড়বে। এই ছোট্ট ফাঁকা ঘরটাই তখন ওদের আগমনে গমগম করে উঠবে। একটার পর একটা হাসির কথা তুলে শুভেন্দু যেভাবে পেটে ব্যাথা ধরিয়ে দেয়, আমারো পেটে খিল ধরে যাবে।  কান্না নয়, হাসি চেপে রাখতে না পেরে আমি নিজেই হয়তো তখন অবাক হয়ে যাব। দূঃখের স্মৃতি থাকবে না আর পেছনে। কে বলতে পারে, তারপরেই বিদিশা এসে হয়তো আমাকে নতুন করে আবার স্বপ্ন দেখাবে।  মা আমার মাথার কাছে বসে, চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, ‘শুভেন্দুকে আবার ফোন করে দেখবো? আসতে বলব তাড়াতাড়ি? ও এলে তোর মন ভাল হয়ে যাবে।’ আমি বললাম, ‘না মা, তার দরকার নেই। ও তুমি ফোন না করলেও আসবে। আমার জন্য ব্যস্ত হয়ো না। বলে নিজেই একটু হাসলাম। মা বলল, ‘জানিস, শুভেন্দু আমাকে কি বলেছে?’ চুপ করে শুয়ে শুয়ে শুনছি মায়ের কথা। মা বলল, ‘কালরাতে শুভেন্দু চুপচাপ বসেছিল অনেক্ষণ। ডাক্তার তখন চলে গেছে। আমি ঘরে ঢুকে দেখি, ও চেয়ারে বসে ঢুলছে।  বললাম, বাড়ী যাবে না শুভেন্দু? আর তো বিপদ নেই। ডাক্তার ঘুম পাড়ানির ওষুধ দিয়ে গেছে। দেব এখন অনেক্ষণ ঘুমোবে। তুমি বরং বাড়ী যাও। অনেক কষ্ট করে এসেছো।’ শুভেন্দু বলল, ‘জানেন, মাসীমা, আমি খুব একটা রাত জাগতে পারিনা। আসলে সারাদিন ব্যবসার নানান ঝেমেলায় ব্যস্ত থাকি। দেবের মত অত আমার রাত জাগার অভ্যেস নেই। তবে যদি কোনদিন এমন হয়, আমার এই প্রিয় বন্ধুটির জন্য আমাকে রাতের পর রাত জাগতে হচ্ছে আমি জাগবো। কষ্ট হলেও জাগবো। দেবের জন্য আমার জান হাজির।’ তারপরেই মা বলল, ‘কি ভাল ছেলে রে।’ আমি হাসলাম, বললাম, শুভেন্দু আমার জন্য পাগল। ও আমাকে খুব ভালবাসে তাই বলেছে।’ মা বলল, ‘আর তুই কার জন্য পাগল? বিদিশার জন্য?’ আমি এবার হাসব না কাঁদবো তাই ভাবছি। প্রসঙ্গটা ঘুরিয়ে মাকে বললাম, ‘মা, শুক্লা কি বলল? আসছে? মা বলল, ‘ওতো ফোনে আমাকে পুরো কথাটাই বলতে দিল না। তার আগেই বলে বসল, মাসীমা আর বলতে হবে না। আমি বুঝে নিয়েছি দেবের কি হয়েছে। আমি এখুনি আসছি। ওখানে গিয়ে বাকীটা শুনবো।’ দেখ হয়তো এখুনি এসে পড়ল বলে।’ মনে মনে ভাবলাম, শুক্লাও এখুনি আসবে। আর শুভেন্দুও হয়তো এসে পড়বে। দুজনে দুজনকে ভূত দেখার মত না দেখলেও শুভেন্দুর তো কিছুটা অস্বস্তি হবেই। কারণ শুক্লা যে আমার প্রতি একটু দূর্বলতা দেখিয়েছে সেটা শুভেন্দু ধরে ফেলেছে। কিন্তু শুভেন্দু তারপরের ঘটনাটা জানে না। শুক্লা মেনে নিয়েছে, বন্ধুত্ব কখনো ভালবাসায় পরিণত হতে পারে না। হার জিতের খেলা নয়। একে অপরের মনকে বোঝার মতন দৃঢ় মানসিকতা। বন্ধুত্বের মান রেখেছে শুক্লা। নিজেকেও ছোট করেনি, আর আমার ভালবাসাকেও খাটো করেনি। মাকে বললাম, ‘মা এরা সব এক এক করে আসবে, তোমার কষ্ট হবে না তো?’ মা বলল, কিসের কষ্ট? আমি বললাম, ‘তুমি কিন্তু দফায় দফায় চা করা, ওদের আতিথেয়তা করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়া। এসব একদম করবে না কিন্তু। সবাই সুবিধে অসুবিধের কথাটা বোঝে। এরা সবাই আমার খুব ভাল বন্ধু।’ মা বলল, ‘তুই এবার বিয়েটা করে ফেল, আর আমায় ছুটী দিয়ে দে। তাহলে আমি আর ব্যস্ত হবো না। কেউ এলে তাকে খাতির যত্নও করতে আসবো না। সব তোর ওই বউই তখন করবে।’ মনে ননে ভাবলাম, সত্যি কি জ্বালা। সব মায়েরাই ভাবে, ছেলের বউ একটু মনের মতন হবে। সব দায়িত্ব একাই কাঁধে তুলে নেবে। সংসার সুখের হবে রমনীর গুনে। কিন্তু আজকালকার মেয়েরা এখন আর এরকম কই? যদি বিদিশার সাথে সত্যি আমার বিয়েটা হত। তাহলে অবশ্য-
Parent