জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - অধ্যায় ৪৮

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-38842-post-3466809.html#pid3466809

🕰️ Posted on July 6, 2021 by ✍️ Lekhak is back (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1248 words / 6 min read

Parent
বিদিশা এসেছে। মা’র মুখ থেকে বিদিশার নামটা শুনেই, আমার ভেতরটা কেমন যেন হয়ে গেল। শুভেন্দু তখন উঠে গেছে দরজা খুলে বিদিশাকে ফ্ল্যাটে ঢোকাবে বলে। আমি শুক্লার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। শুক্লাও আমার দিকে। কিছুক্ষণ চুপচাপ, দুজনের মুখেই কোন কথা নেই। শুক্লা বলল, ‘কি রে দেব? এবারে তুই খুশি তো? বিদিশা তো এসেছে।’ আমি বললাম ‘হ্যাঁ। এসেছে। এই হতভাগাটাকে দেখতে এসেছে।’ শুক্লা বলল, ‘নিজেকে হতভাগা বলছিস? আরে তুই তো খুব ভাগ্যবান। নইলে যে মেয়েটা কবে তোকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। আবার তার তোর কাছেই ফিরে আসা, এগুলো সব গল্পে হয়। কিন্তু বাস্তবে? আমি তো ভাবতেই পারি না। মনে কর, আজ থেকে তুই পৃথিবীর সব থেকে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি। যার জীবনে দূঃখ বলে কিছু নেই।’ আমি কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। শুক্লাকে বললাম, ‘সময়টা মনে হচ্ছে আবার ভাল হয়ে গেল। তাই নারে শুক্লা?’ শুক্লা বলল, ‘ভালো মানে? মনে কর, এটাই তোর জীবনের সেরা সময়। তাছাড়া তুই তো কোন অন্যায় করিস নি। ভগবান তোকে শুধু শুধু কষ্ট দিতে যাবে কেন?’ আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললাম। শুক্লাকে বললাম, ‘হ্যাঁ। ঠিক তাই। ভগবান অকারনে কাউকে কষ্ট দেয় না।’ শুক্লা একটু খুনসুটি মেরে আমাকে বলল, ‘এই দেব, আমি কিন্তু একটু মজা করব। তুই কিন্তু চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকবি। বিদিশা ঘরে ঢুকবে। আমি বলব, দেব এখন ঘুমোচ্ছে। ডাক্তার বলে গেছে ওর ঘুম না ভাঙাতে। তারপর ওর সাথেও খুনসুটি করব। তুই চোখ বন্ধ করে সব শুনবি।’ আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম। শুক্লা আমাকে বাঁধা দিয়ে বলল, ‘না, না, আজ কোন কথা আর শুনছি না। আরে বাবা আমরাও তো একটু আনন্দ করব, তাই নয় কি? তোর আনন্দ মানে তো আমাদেরও আনন্দ।’ আমি বললাম, ‘সে ঠিক আছে। কিন্তু শুভেন্দু তো জানে। ওই দেখবি, বিদিশাকে সব বলে দেবে। দেব ঘাপটি মেরে শুয়ে আছে। তুই তখন খারাপ হবি, আর সেই সাথে আমিও।’ শুক্লার কি খেয়াল হল, হঠাৎই উঠে গেল বিছানা ছেড়ে। শুভেন্দু তখন আমাদের ফ্ল্যাটের মেন দরজাটা খুলে ওয়েট করছে বিদিশার জন্য। বিদিশা সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসছে। শুক্লা শুভেন্দুর কাছে গিয়ে কানে কানে কিসব বলে এল। মা’কেও বলেদিল খুনসুটি করবার ফন্দীটা। ঘরে ঢুকে বলল, ‘শুভেন্দুকে বলে দিয়েছি, সেই সাথে মাসীমাকেও। বিদিশা কিছু বুঝতেই পারবে না।’ আমি বললাম, ‘দেখিস, বিদিশাও কিন্তু খুব ঝেমেলায় আছে। মজা করতে গিয়ে শেষকালে আবার ও যেন কোন ব্যাথা না পায়।’ শুক্লা বলল, ‘আরে না না, ওটাতো পাঁচ মিনিট থেকে দশমিনিটের জন্য। তারপর তুই নিজেই চোখ খুলবি। যেন তোর ঘুম ভেঙেছে, এইভাবে। চোখ খুলেই বিদিশাকে বলবি, ও বিদিশা? তুমি এসেছো? কখন এলে? তার আগের কোন কথাই তুই শুনতে পাসনি।’ ফন্দীটা উগড়ে দিয়ে শুক্লা খিলখিল করে হাসতে লাগল। তারপর নিজেই আবার চুপ হয়ে বলল, ‘এই এই এই বিদিশা এসে গেছে। আমি ওর গলার আওয়াজ পাচ্ছি। তুই চোখ বন্ধ কর, আমি মুখটা গম্ভীর করে নিচ্ছি।’ আমি বললাম, ‘আরে তোরা জোরে জোরে কথা বললে তো আমার এমনিই ঘুম ভেঙে যাবে। তখন?- শুক্লা বলল, ‘আরে না না। আমরা আসতে আসতেই কথা বলব। যাতে তোর ঘুম না ভাঙে। তুই চিন্তা করিস না। এবার চোখটা বন্ধ করো তো। বাবা লক্ষ্নী ছেলে।’ লক্ষ্নী ছেলের মতন আমিও চোখটা বন্ধ করে নিলাম। শুক্লা আমার মাথার কাছেই সেই ঠাই বসে রইল। চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলাম। বিদিশা ঘরে ঢুকে আমাকে দেখবে, অথচ আমি ওকে দেখতে পাব না। আমার মুখের দিকে হয়তো কিছুক্ষণ তাকিয়েও থাকবে। কিন্তু আমি ওর মুখের অভিব্যক্তিটা বুঝতেই পারব না। বিদিশা হয়তো আমার মাথার কাছে এসে বসতে চাইবে। আমার মাথায় হাত বুলোতে চাইবে। কিন্তু আমি ওর হাতের স্পর্ষ পাব না। ইস কি জ্বালায় পড়েছি। শুক্লার মন রাখতে গিয়ে আমাকে এখন ঘুমোবার অ্যাকটিং করতে হচ্ছে। আমি চোখটা পুরোপুরি বন্ধ করে ফেলেছি। আমাকে অবাক করে শুক্লা বলল, ‘চিন্তা করিস না। আমি এখন যেখানে বসে আছি। বিদিশা ঘরে ঢুকলে ঠিক তোর মাথার কাছটাতেই ওকে বসাব। যাতে চোখ খুলে তুই প্রথম ওকেই দেখতে পাস।’ শুক্লা যেন আমার মনের ইচ্ছাটা আগে থেকেই বুঝতে পারে। চোখ বন্ধ করে ওকে বললাম, ‘ঠিক আছে, ঠিক আছে। তুই বসে থাকনা এখন। কে তোকে মানা করছে?’ শুক্লা হাসতে লাগল, খুব আস্তে আস্তে। যেন খুব মজা পেয়েছে। তারপরেই চুপ করে গেল। কারণ বিদিশা তখন শুভেন্দুর পেছন পেছন ঘরে ঢুকেছে। আমি চোখ বন্ধ অবস্থাতেই ওর উপস্থিতি টের পাচ্ছি। ঘরে ঢোকার পরে শুক্লা প্রথম যে কথাটা বিদিশাকে বলল, শুনে আমার মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেল। শুক্লা ওকে বলল, ‘একিরে বিদিশা? কি চেহারা করেছিস। কেমন উসখো খুসকো দেখাচ্ছে তোকে। তোরও কি শরীর খারাপ নাকি?’ বিদিশা কোন জবাব দিল না। মনে হল আমার খাটের উল্টোদিকের চেয়ারটায় বসল বিদিশা। যেখানটায় শুভেন্দু এতক্ষণ বসেছিল। শুক্লা বলল, ‘আয় আয় আয়। তুই বরং এখানে এসে বস। দেবের মাথার কাছে। তবে হ্যাঁ। দেব এখন ঘুমোচ্ছে। আমি এসেছি, সেই থেকে দেখছি ঘুমোচ্ছে। ডাক্তার বলে গেছে একটু রেস্ট দরকার। আমি আর শুভেন্দু আসতে আসতে কথা বলছিলাম। দেবকে সেভাবে ডিস্টার্ব করিনি।’ বিদিশাও বলল খুব আসতে আসতে। ‘এখন কেমন আছে ও?’ শুক্লা বলল, ‘ভালো। এই তো ঘুমের মধ্যেই এতক্ষণ বিড় বিড় করছিল। তোর নাম করছিল। তুই যে এখানে আসছিস ও জানে না।’ মনে হল বিদিশা শুভেন্দুকে কিছু বলতে চাইছে। শুভেন্দুও নিজে থেকে বলল, ‘হ্যাঁ আমিও কিছু বলিনি। ব্যাপারটা সারপ্রাইজ থাক। ও চোখ খুলে তোকে দেখুক। কি বল শুক্লা?’ শুক্লা বলল, ‘হ্যাঁ তাই তো। দেব কিন্তু চোখ খুলে তোকে দেখলে খুব খুশি হবে। বিদিশা ছাড়া দেব যেন কত মনমরা হয়েছিল এতদিন। রাধা ছাড়া কৃষ্ণের বাঁশি শুনতে কি আর ভাল লাগে? এত দরাজ কন্ঠ, এত মিষ্টি গান। এ গান কার জন্য? একজনই তো আছে দেবের একমাত্র প্রেমিকা।’ শুভেন্দু সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, ‘ঠিকই বলেছিস। আর আমরা হলাম সব ফেউ। যত উলুখাগড়ার দল। না আমরা দেবের কোন উপকারে আসব, না বিদিশার জায়গাটা কোনদিন নিতে পারব।’ শুক্লা শুভেন্দুকে বলল, ‘না না তুই ও কথা বলিস না। তুই দেবের জন্য অনেক করিস। দেব নিজেও সেটা স্বীকার করে। তোর মতন বন্ধু হয় না।’ শুভেন্দু আবার হেঁড়ে গলায় গান শুরু করল, ‘এমন বন্ধু আর কে আছে? আমার মত মিষ্টার?’ শুক্লা সঙ্গে সঙ্গে বলল, ‘এই এই এই। দেবের ঘুম ভেঙে যাবে। অত জোরে চিল্লাস না।’ শুভেন্দু বলল, ‘জাগা না ওকে। বিদিশা এসেছে। একবার চোখ খুলে, নয়ন মেলে দেখুক। আহা কি আনন্দ আজ আকাশে বাতাসে।’ বিদিশাও বলল, ‘না না ও ঘুমোচ্ছে। ওকে জাগাতে হবে না। এই তো আমি ওর কথা সব তোদের কাছে শুনছি।’ মা সেই সময় ঢুকলো ঘরে। শুভেন্দু নিজেকে একটু নিয়ন্ত্রণ করে নিল। ঘরে ঢুকেই বিদিশার দিকে তাকিয়ে মা বলল, ‘ভালো আছো বিদিশা? কতদিন পরে তোমায় দেখলাম।’ বিদিশাও এই প্রথম এতদিন পরে মাকে দেখল। চেয়ার ছেড়ে উঠে মা’কে প্রনাম করল পা ছুঁয়ে। মা বলল, ‘থাক থাক। ভালো থাকো মা। আশীর্ব্বাদ করি।’ শুক্লা তখন বুড়ো আঙুল দিয়ে আমার গায়ে একটু ঠেলা মেরে আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে, মায়ের চরণ ছুঁয়েছে বিদিশা। কিন্তু আমি চোখ বন্ধ অবস্থাতেই সব বুঝতে পারছি। একটু চোখটা অল্প বিস্তর ফাঁক করে পিট পিট মতন করে লুকিয়ে চুরিয়ে দেখছি, সত্যি বিদিশার মুখ যেন কত বিষাদে ভরা। যেন চিন্তায় চিন্তায় সারা রাত ঘুম হচ্ছে না ব্যাচারার। তার ওপর আমার শরীর খারাপের খবরটা পেয়েছে। দৌড়ে চলে এসেছে আমার কাছে। মনে মনে বললাম, ‘বিদিশা তুমি এসো কাছে। পারলে এখুনি শুক্লার জায়গাটা দখল করো।  এই শুক্লা, তুই উঠে যা না? বিদিশাকে আমার মাথার কাছে বসতে দে না? কেন কেন শুধু শুধু তোরা ওকে বুঝতে দিচ্ছিস না? আমিতো জেগেই আছি। মিছি মিছি ঘুমোবার ভাণ করে তোদের সব কথা শুনছি। শুক্লা? তুই কি এভাবেই আমার মাথার কাছে বসে থাকবি? তাহলে বিদিশা এখানে এসে বসবে কি করে? শুভেন্দু সেই সময় বলল, ‘আচ্ছা শুক্লা এমন তো নয়? দেব হয়তো জেগেই আছে।  আমাদের সবকথা শুনছে? ওর গায়ে একবার ঠেলা মেরে দেখ না? সত্যি ঘুমোচ্ছে কিনা?’ শুক্লাও তেমনি। জবাবে বলল, ‘ না না। দেব এখন অঘোরে ঘুমোচ্ছে। এইসময় জাগানোটা ঠিক হবে না। এত ব্যস্ত হচ্ছিস কেন? বিদিশা তো এই সবে এল। ও কি পালিয়ে যাচ্ছে না কি?’ আমার শুক্লার উপর খুব রাগ হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল এই দশ মিনিট সময়টাই যেন অনেক লম্বা সময়। আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। এই মেয়েরা কেন এত অবুঝ হয় বুঝি না। পুরুষের মন বোঝে না। দূঃখ কষ্ট বোঝে না? ব্যাচারা এল এত কষ্ট করে, আমার শরীর খারাপের খবর পেয়ে। তাকে আর আমাকে নিয়ে এখন শুক্লার মজা। মজা আমি বার করছি।      
Parent