জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - অধ্যায় ৪৯

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-38842-post-3466823.html#pid3466823

🕰️ Posted on July 6, 2021 by ✍️ Lekhak is back (Profile)

🏷️ Tags:
📖 562 words / 3 min read

Parent
মনে মনে এটাও ভাবলাম, শুক্লার উপরই বা কেন চটছি? চোখ খোলার দায়িত্বটাও তো আমারই হাতে। আমি যদি এখন জোর করেই চোখটা খুলে ফেলি, তাহলে বিদিশাকে দেখব, সরাসরি চোখটা যাবে বিদিশার মুখের দিকে। আর শুক্লা মনে মনে গজরাবে, ব্যাটাকে এত করে বললাম, তাও আমার কথা রাখল না? ঠিক চোখ খুলে ফেললো? কি না ওর রাধা এসেছে কৃষ্ণের বাঁশি শুনবে বলে? শুভেন্দুর কথাটাই তাহলে ঠিক। বিদিশা কাছে থাকলে দেবের কাছে সবাই ফেউ। বন্ধু হিসেবে আমাদের সত্যি কোন মূল্য নেই। মা বলল, ‘বিদিশা চা খাবে তো?’ বিদিশা লজ্জায় কিছু বলতে পারছে না যেন। শুভেন্দু ফোড়ন কেটে বলল, ‘মাসীমা এই নিয়ে আপনার এটা কত নম্বর চা বানানো হচ্ছে?  দেবের কথাটা খেয়াল আছে তো?’ শুক্লা বলল, এই যাহ্। পাজী কোথাকার। মাসীমার সাথেও ইয়ার্কি? বিদিশাও কি ভাবছে বলতো? শুভেন্দু সঙ্গে সঙ্গে বলল, ‘সেটাই তো বলছি। সাধে কি আর বলছি? মাসীমার দশা দেখে বলছি। এটাই লাস্ট। কারণ এতদিন পরে বিদিশা এসেছে বলে। এরপর যেগুলো আসছে, সেগুলো সব ফেউ মাল। ওদেরকে চা করে খাওয়াতে খাওয়াতে মাসীমার আরও কষ্ট হবে। বিদিশা বলল, ‘কেন? কারা আসছে এরপরে?’ শুভেন্দু বলল, ‘ওই যে পুঁচকে দম্পতি। মাধুরী আর রনি। যাদেরকে তুই দেখলি সেদিন। আমাদের বাড়ীতে।’ বিদিশা বলল, ‘ওহ্। তা বলে ওরা কি পুঁচকে নাকি? ছেলে হয়ে গেছে যার, সে আবার পুঁচকে হয় কি করে? তাছাড়া রনি তো তোদেরই বন্ধু। মাধুরী শুধু আমাদের থেকে ছোট।’ শুভেন্দু বলল, ‘তোদের কাছে পুঁচকে না হলেও। আমার কাছে ওরা পুঁচকেই। তাছাড়া আমি তো তোদের সবার থেকে বড়। এখানে যারা বসে আছে, সবাই আমার থেকে ছোট। এমন কি দেবও।’ শুক্লা বলল, ‘ইস অত সস্তা? বুড়ো খোকা, তোমার এই গুল মারাটা এবার বন্ধ কর।’ শুভেন্দু বলল, শোন বুড়ো হলেও তোদের থেকে আমি অনেক বেশি চনমনে। বরঞ্চ তোরা আমার থেকে ছোট হয়ে বেশি বুড়িয়ে গেছিস।’ বিদিশা বলল, আমি অবশ্য দু ক্লাস জুনিয়র ছিলাম তোদের থেকে। তুই তোয়ার্ক্কিটা হয়ে গিয়েছিল কলেজে পড়ার সময় থেকেই। কিন্তু একজনকে বরাবরই আমি তুমি বলে এসেছি। সেই শুরু থেকেই।’ শুক্লা বোকার মতন বলে বসল, ‘কে সে?’ শুভেন্দু শুক্লাকে ধমক লাগিয়ে বলল, সে কী রে? সাতকান্ড রামায়ণ পড়ে এখন সীতা কার বাপ? বিদিশা কার কথা বলছে তুই এখনও বুঝলি না?’ যার মাথার কাছে তুই বসে আছিস, সেই লোকটা রে-’ শুক্লা যেই বলেছে, ‘ওহ্ তাইতো, ঠিকই তো।’ আমি সঙ্গে সঙ্গে ইচ্ছে করেই ঘুমের ঘোরে একটু কেশে উঠলাম। শুভেন্দু বলে উঠল, নিদ্রাভঙ্গ করে দিলি তো ব্যাচারার? এখন বিদিশাকে দেখেই যদি ব্যাচারার ঘুম ভাঙাবার কষ্টটা দূর হয়।’ শুক্লাকে বলল, ‘তুই ওঠ ওঠ। ওখান থেকে উঠে পড়। বিদিশাকে দেবের মাথার কাছে বসতে দে। কৃষ্ণ এবার তার রাধাকে দর্শন করুক।’ আমি চোখ বন্ধ অবস্থাতেই ভালো মতন বুঝতে পারছি। শুক্লা আমার মাথার কাছ থেকে এবার উঠে গেল।  বিদিশাকে যেন জোর করেই বসিয়ে দিল ঠিক ওই জায়গাতে। বিদিশা আমার মাথার কাছটায় বসেছে। আমি ভাবছি চোখ খুলেই আমি বিদিশাকে এবার দেখব। ও আমাকে এখনও স্পর্ষ করেনি। কিন্তু অনুভূত হচ্ছে মাথার কাছে ওর উপস্থিতি। না ছুঁয়েই এমন? ছুঁলে না জানি কি হবে। আমার অসুস্থ শরীরটার মধ্যে কে যেন আনন্দের বীজ পুতে দিল। একাকীত্বের বেদনা ঘুচিয়ে আমার স্নায়ুতন্ত্র এখন বেশ সবল। ঠিক এই মূহূর্তে বিদিশার মুখটা দেখাটাও বড় প্রয়োজন আমার কাছে। কিন্তু বিদিশাও কি আমার মতন মানসিক অস্থিরতা আর দূর্বলতা কাটিয়ে উঠেছে? ওর ওই উদাস, করুন মুখটা দেখে আমারও যদি আবার মন খারাপ হয়ে যায়? বিদিশা তুমি আমার ভালবাসার টানে আমার কাছে এসেছো। আমিও চেষ্টা করব বিদিশা, তোমাকে যতটা পারি শান্তনা দেবার। আমাকে একবার শুধু চোখটা খুলতে দাও- চোখটা খোলার আগেই শেষবারের মতন শুভেন্দু বলল, ‘এই দেব, চোখটা খোল না। এত ড্রামা করিস কেন? আমরা তো আগেই জানি তুই জেগে আছিস। নে চোখ খুলে এবার তোর দেবীকে দর্শন কর।’   ক্রমশঃ-
Parent