জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - অধ্যায় ৫৩

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-38842-post-3470786.html#pid3470786

🕰️ Posted on July 7, 2021 by ✍️ Lekhak is back (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1134 words / 5 min read

Parent
ভাগ্যিস মা তখন ঘরে ঢোকেনি। ঢুকলে বেশ অপ্রস্তুতে পড়ে যেত। একটু খুনসুটি করেই বিদিশাকে আরো জাপটে ধরার চেষ্টা করছিলাম, এবার একটু ধমক দিয়ে জোর গলায় বিদিশা বলল, ‘খুব শক্তি দেখাতে ইচ্ছে করছে, তাই না? ছাড়ো বলছি, ছাড়ো।’ আমি ওকে ছেড়ে দিতেই বিদিশা বলল, ‘কি অসভ্যরে বাবা। বেশ শুয়েছিল চুপচাপ, আমাকে পেয়েই অমনি উঠে বসেছে। এক্ষুনি যদি মা’ এসে পড়ত কি হত বলোতো? ছিঃ। আমি বললাম, ‘আদর করার জন্য সবসময় ছাড় আছে। তুমি জানো না? এর আগে যখন তোমাকে আদর করতাম, মা তো কত ছাড় দিয়ে রেখেছিল। ঘরের মধ্যে তোমাকে চুমু খেতাম। তোমার গালে, কপালে, চিবুকে আর ঠোঁটে। ভুলে গেছ বুঝি? মা’ কি কিছু বলেছে?’ শুভেন্দু হাসছে আমার কথা শুনে। শুক্লাও তাই। বিদিশা রেগেমেগে বলল, ‘তুমি না একটা যা তা। তাই বলে এমন ভাবে কেউ করে? আচমকা। আমি কেমন ভয় পেয়ে গেছি।’ আমি বললাম, ‘ভয় তো তোমার কাটিয়ে দিতে চাইছি। আর তুমি বলছ, ভয় পেয়ে গেছ?’ বিদিশা বলল, ‘আর ওস্তাদি মারতে হবে না। শুয়ে পড় বলছি। এখুনি শুয়ে পড়। আবার উঠলেই কিন্তু খুব খারাপ হবে বলে দিচ্ছি।’ আমি আবার বাধ্য শিশুর মতন বিছানায় শুয়ে পড়লাম। বিদিশা আমার মাথায় হাত বোলাতে লাগল। দেখলাম ও এবার মুচকি মুচকি হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে। মুখটা গম্ভীর মতন করে বললাম, ‘আমাকে দিলে না তো আদরটা করতে। এই আমি শুলাম। আর কিন্তু উঠবো না বলে দিচ্ছি।’ বিদিশা বলল, ‘সেই ভালো। তোমার হাত পা দুটো দড়ি দিয়ে বেঁধে দিই। তাহলে তুমি জোর করেও উঠতে পারবেনা। কেমন?’ শুভেন্দু বলল, ‘ভাল প্রস্তাব। সেই ভালো। তাহলে পাশের ঘর থেকে দড়ি নিয়ে আসব নাকি? দেবকে বাঁধার জন্য?’ শুক্লা হাসছে। বিদিশাও মিচকি মিচকি হাসছে। আমি বললাম, ‘ভালই তো। আমি যাকে বেঁধে রাখতে চাইছি। সেই এখন আমাকেই বেঁধে রাখতে চাইছে। আমার কাজটা আরো সহজ হয়ে গেল। আমার আর চিন্তা কি? দেখ তোরা বিদিশাকে এবার একটু হেল্প কর।’ শুভেন্দু বলল, ‘আমি তো ভাবছি, তোদের দুজনকেই একসাথে বেঁধে রেখে দেবো। যাতে কোনদিন আর তোরা ছাড়াছাড়ি হয়ে যেতে না পারিস।’ বিদিশা লজ্জ্বায় আর অনুশোচনায়, মুখটাকে একটু নিচু করে নিল। আমি বললাম, বেশ তো মাথায় হাত বোলাচ্ছিলে, থামলে কেন? বোলাও।’ বিদিশাকে সহজ করার জন্য শুভেন্দু এবার শুরু করল পুরোনো কিছু স্মৃতিচারণা। হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাবে এমন সব ঘটনা। আমি হাসছি, শুক্লা হাসছে, বিদিশা হাসছে। শুভেন্দু নিজেও না হেসে থাকতে পারছে না।    শুভেন্দু বলল, ‘জানিস শুক্লা, দেব যখন খাবার টেবিলে খেতে বসত। মাসীমা অনেক দিন লক্ষ্য করেছেন, খাবার রয়েছে পাতে, অথচ ও হাঁ করে রয়েছে। দেখে মনে হবে, কোন অদৃশ্যহাত ওকে খাইয়ে দিচ্ছে মুখে টোপলা ভরে। মাসীমা দু তিনদিন এই ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছিলেন। আমাকে বললেন, দেব কে কি ভূতে ধরেছে? থালা ভর্তি ভাত নিয়ে বসে থাকে। আর থেকে থেকেই হাঁ করে, মুখটা বাড়িয়ে দেয় সামনের দিকে। দেখে মনে হবে কেউ ওকে খাইয়ে দিচ্ছে। কিন্তু ঘরে আর তো কেউ কোথাও নেই। তাহলে কে ওকে খাইয়ে দিচ্ছে? অদৃশ্য হাত। ওই হাতটা কার?’ শুক্লা বেশ চমকে গেছে শুভেন্দুর কথা শুনে। আমি হাসছি। বিদিশাও বুঝতে পেরেছে। চোখ বড় বড় করে শুভেন্দু শুক্লাকে বলল, ‘এখনও বুঝলি না?’ শুক্লা যেন সত্যিই বোঝেনি। সরলভাবে শুভেন্দুর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, কে ওটা? শুভেন্দু বলল, ‘আমাদের দেব বাবু, প্রতিদিনই যখন খেতে বসেন। সামনের চেয়ারে বসা উনি বিদিশাকে দেখেন। বিদিশাই ওই চেয়ারে বসে আছেন। প্রেমিকা তার প্রেমিককে নিজে হাতে খাইয়ে দিচ্ছেন, এটাই ওনার কল্পনা। মাসীমাতো এত কিছু বোঝেন না। দেবকে দু তিনদিন লক্ষ্য করেছেন। বাধ্য হয়েই বলে বসলেন, এ কি রে? তুই কার দিকে মুখ বাড়িয়ে রয়েছিস। খাবারটা ঠান্ডা করছিস কেন শুধু শুধু?’ শুক্লা বলল, তারপর? শুভেন্দু বলল, ‘তারপর আর কি? দেব বাবুর হোঁস ফিরল। উনি বুঝলেন, কল্পনা আর বাস্তবকে উনি এক করে ফেলেছিলেন একটু আগে। ওই চেয়ারে বিদিশা নেই। উনি মনে মনে বিদিশাকে কল্পনা করছিলেন।’ শুক্লা আমাকে বলল, ‘দেব, তোর কি রাত্রে শুয়ে শুয়েও এমন হত? কল্পনা করতিস না? বিদিশা তোর পাশে শুয়ে আছে।’ শুভেন্দু জবাবটা কেড়ে নিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ। ওই পাশবালিস। ওটাই তো বিদিশা। রাত্রে শোবার সময় সব ব্যাটাছেলেদেরই যেটা হয়।’ শুক্লার এবার হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাবার মতন অবস্থা। শুভেন্দু বলল, ‘আর একটা ঘটনা শুনবি?’ শুক্লা তখনও হেসেই যাচ্ছে। হাসতে হাসতেই বলল, ‘বল?’ শুভেন্দু বলল, ‘বলি তাহলে। মন দিয়ে শোন।’ এবারে শুভেন্দু পেটে কিভাবে খিল ধরায়, আমিও শুনছি। বিদিশাও মুচকি মুচকি হাসছিল। শুভেন্দু বলতে শুরু করল, ‘একদিন কলেজে গিয়ে দেখি বাবু মুখভার করে বসে আছেন। আমি কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কি রে? হলটা কি তোর? বিদিশা বুঝি আজ কলেজে আসেনি? ‘দেব’ গম্ভীর মুখে আমাকে জবাব দিল, আমি কি বিদিশার জন্যই মনটা খারাপ করছি নাকি?’ শুক্লা বলল, ‘দেব এই কথা বলেছে? আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।’ শুভেন্দু বলল, ‘আরে পুরোটাতো শোন। তারপরে বুঝতে পারবি।’ শুক্লা বেশ আগ্রহ নিয়ে শুনছে শুভেন্দুর কথাটা। শুভেন্দু বলল, ‘আমারো একটু অবাক লাগল বুঝলি? ‘দেব’ মুখটা উদাস করে বসে আছে, অথচ মুখে বলছে বিদিশার ওদিন কলেজে না আসাটাই ওর মুখ গম্ভীরের কারণ নয়। আমারো না ঠিক বিশ্বাস হল না দেবের কথাটা। তবে দেব মিথ্যে কথা খুব বড় একটা বলে না। তবু ভাবছি, শালা আমাকে পট্টি মারলো? বিদিশার জন্য ওর বুকের ভেতরটা হাউ হাউ করে উঠছে। ব্যাচারার কি কষ্ট। একদিন কলেজে বিদিশাকে দেখতে পাইনি, তাতেই বাবুর কিম্ভূতকি মার্কা দশা। তবু ও বলছে বিদিশার কলেজে না আসার জন্য ও মুখ ভার করে বসে নেই, আমার একটু দেবের ওপর রাগ হল। মনে মনে বললাম, পড়েছিস তো প্রেমে। কাঁঠালের আঠা এমন লেগেছে, এ সহজে ছাড়বে না। তুই মুখে স্বীকার না করলে কি হবে। আমরা তো সব বুঝি না? তুই বিদিশার প্রেমে অন্ধ হয়ে গেছিস।’ শুক্লা বলল, তারপর? শুভেন্দু বলল, ‘আমি আর কি করব? অগত্যা দেবকে বেশি আর ঘাঁটালাম না। ক্লাসে ঢুকে গেলাম। কিন্তু মাঝে মাঝেই ‘দেব’ কে আমি লক্ষ্য রাখছিলাম, দেখলাম তখনও ও স্বাভাবিক হয় নি। পরপর দুটো ক্লাস শেষ হল। দেবের দিকে আরো একবার ভাল করে তাকালাম, বুঝলাম এর মুখ দিয়ে আর মনে হচ্ছে, কথা আর ফুটবে না। সব ব্যাটাছেলে গুলোই এমন হয়। প্রেমরোগ শরীরে ঢোকা মানেই সব শেষ।’ শুক্লা বলল, ‘সেদিন কি আমি কলেজে ছিলাম? শুভেন্দু বলল, ‘না তুইও সেদিন ডুব দিয়েছিলিস। তবে কলেজে যদি সেদিন আসতিস, চাক্ষুস মজাটা টের পেতিস। আজকের এই গল্পটা বলার আর দরকার হত না। তবে সেদিন যেটা ঘটেছিল, আমি জীবনে কোনদিন ভুলব না।’ শুক্লার বেশ কৌতূহল বেড়ে যাচ্ছে। আমি তো ভালমতন বুঝতে পারছি, শুভেন্দু এবার কি বোমাটা ফাটাবে। বিদিশাও চুপ করে বসে আছে। হাটে হাড়ি ভাঙতে চলেছে শুভেন্দু। সেটা শুধু শোনার অপেক্ষায়। শুভেন্দু বলল, ‘এর কিছুক্ষণ পরেই দেখি। ‘দেব’ গায়েব। কলেজে আর ও নেই।’ শুক্লা বলল, ‘গায়েব? কোথায় গেল? বাড়ী চলে গেল?’ শুভেন্দু বলল, ‘কলেজে ওকে তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম। কোথাও পেলাম না। আমি আবার ভাবলাম, দেবের কি কোন বিপদ হল নাকি? কোন সমস্যায় পড়েছে? আমাকে খুলে বলল না কেন? আর এভাবে না বলেও চলে গেল। ও তো কলেজে এরকম কখনও করে না।’ বিদিশা সেইসময় কিছু বলতে যাচ্ছিল। শুভেন্দু বাঁধা দিয়ে বলল, ‘এই দাঁড়া দাঁড়া। আগে আমি বলে নিই, তারপর তুই বলবি।’ বিদিশা চুপ। শুভেন্দু এবার বলছে, আমাদের কলেজে একটা ছাদ ছিল মনে আছে তোর?’ শুক্লা বলল, ‘হ্যাঁ খুব বড় ছাদ ওটা। কিন্তু কেউ যেত না। কারণ ছাদে ঢোকার দরজাটায় সবসময় তালা দেওয়া থাকতো।’ শুভেন্দু বলল, যেখানে কেউ কোনদিন যায় না। যাবার কথা চিন্তাও করে না। সেখানে দেবের মত ছেলে গিয়ে বসে থাকতে পারে। না তুই কল্পনা করতে পারিস, না আমি পারি?’ শুক্লা পুরো কথাটা শেষ না হতে দিয়েই বলল, ‘দেব’ কলেজের ছাদে? বলিস কি রে? গেল কি করে? ওটা তো তালা দেওয়া।’  
Parent