জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - অধ্যায় ৫৯

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-38842-post-3476579.html#pid3476579

🕰️ Posted on July 9, 2021 by ✍️ Lekhak is back (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1287 words / 6 min read

Parent
ষোলো কে বলবে আমি অসুস্থ? এক তো বহুদিন পরে বিদিশার প্রত্যাবর্তন। তার ওপর শুভেন্দু যেভাবে প্রেমের নতুন কাহিনী শোনাতে আরম্ভ করেছে, আমার মনে হচ্ছে প্রেম হল সব রোগের একমাত্র ওষুধ। যারা প্রেম করে তাদের শরীরে কোন রোগ ধরে না। এরই নাম প্রেম, এরই নাম প্রেম। হঠাৎই আমাকে একটু উত্তেজিত করে শুভেন্দু বলল, কি রে দেব? তোকে তো দেখে মনে হচ্ছে বিছানা ছেড়ে তোর এবার দৌড়াতে ইচ্ছে করছে।  যাবি না কি একটা লং ড্রাইভে? বল তাহলে, গাড়ীটাকে নিয়ে এসে যাচ্ছি সকালে তোর বাড়ীতে।  বিদিশা তো আছেই। আর যাবার পথে শিখাকেও গাড়ীতে তুলে নেব। সামনের সীটে আমি আর শিখা। আর পেছনের সীটে তুই আর বিদিশা। ওফঃ- -আহা। আমরা বুঝি বাদ? সব বাণের জলে ভেসে এসেছি। শুক্লা যেন হেই হেই করে উঠল। রনিও মুখটা কাচুমুচু করে বলল, একিরে? তুই আমার কথাও ভাবলি না? এ কেমন শালা রে? শালা- শুভেন্দুও দাঁত মুখ খেচিয়ে বলল, আচ্ছা মুশকিল তো। একটা গাড়ীর সীটে কজন ধরে? আমাকে বোঝা তো? তোরা না বড্ড না বুঝে কথা বলিস। আমাকে দেখছি, তাহলে একটা আস্তো বাস নিয়ে আসতে হয়। মাধুরীও মুখ ভার করে চুপচাপ বসে আছে। স্বামীকে তাল দিয়ে ছোড়দাকে মাধুরীও একটু খোচা দিল। -হ্যাঁ হ্যাঁ। তাই যাও। প্রেমের ফুল ফুটতে শুরু করেছে না সবে। এখন কি আমাদের কথা মনে পড়বে সহজে? বোনকে সান্তনা দেবার জন্য শুভেন্দু বলল, এই দেখো। দিলি তো সব মাটি করে? আমি বললাম, না না। সবাই মিলেই আমরা যাব। সেরকমই একটা ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু আমাকে পুরোপুরি সুস্থটা হতে দে।  তারপর দ্যাখ, ছোটখাটো একটা পিকনিকই হয়তো অ্যারেঞ্জ করে ফেলবো। বলতে বলতে বিদিশা আলু পরোটা প্লেটে করে নিয়ে ঘরে ঢুকেছে। মা’ও হাতে দুটো প্লেট নিয়ে বিদিশার পেছনে। বিদিশাই বলল, কোথায় যাবার প্ল্যান হচ্ছে তোমাদের? আমি বললাম, ভাবছি একটা পিকনিক করব, সবাই মিলে। শুভেন্দু বলছে, শিখাকেও সঙ্গে আনবে। আমাদের সারাটা দিন দারুন এনজয় হবে। বিদিশা বলল, বাহ্ তাহলে তো দারুন হবে। শুভেন্দু বলল, সবাই মিলে গেলে প্রেম তো আর হবে না। তখন শুধু হুল্লোরবাজী হবে। শুক্লা রেগে গিয়ে বলল, সেই ভাল। তুই আর দেবই বরং যা। জোড়ায় জোড়ায়। আমরা সাথে গেলে তোদের আবার প্রেম তো মাটি হয়ে যাবে। তাই না? শুভেন্দু হেসে বলল, আহা। রাগ করিস না, রাগ করিস না। আমি তো এমিন মস্করা করছি। আলুরদম আর পরোটা শুদ্ধু চারটে প্লেট মা আর বিদিশার হাতে। মাধুরী আর রনির দিকে প্লেটটা বাড়িয়ে দিল মা। আর বিদিশা দিল শুভেন্দু আর শুক্লাকে। আলু পরোটার ভোজ। শুভেন্দু পরোটা মুখে পুরে চেটেপুটে খেতে শুরু করেছে। মা’কে বলল, আহা মাসীমা, আপনার হাতের রান্না লা জবাব। কতদিন এমন পরোটা খাইনি। শুক্লা বলল, ব্যাচারা দেব। আমরা সবাই মিলে খাচ্ছি। আর ও ব্যাচারা কিছুই খেতে পারছে না। শুভেন্দু বিদিশাকে বলল, কি রে বিদিশা? তোরটা কোথায়? মা বলল, আমি বিদিশারটা নিয়ে আসছি। আর তোমাদের কারুর পরোটা লাগলে আমায় বোলো। শিখার বাকী অধ্যায়টা শোনবার জন্য আমি ভীষন ছটফট করছি। শুভেন্দুকে বললাম, এখনও কিন্তু ছাদের গল্পটা পুরোপুরি শোনা হয় নি।  পরোটা আলুরদম খেয়ে বাকীটা শেয়ার কর। উই আর ওয়েটিং। শুভেন্দু বলল, ওই তো তারপরেই ভালোবাসা শুরু হল। নটেগাছটি মুড়োলো। আর আমার কথা ফুরোলো। শুক্লা পরোটা খেতে খেতে বলল, ধ্যাত। আবার ফাজলামী। কিছুই তো শেয়ার করলি না। শুধু ফাজলামীই মেরে গেলি। শুভেন্দু রসিকতা করে বলল, আচ্ছা সবকি তোদের ডিটেলস এ বলতে হবে নাকি? তাহলে তো অন্তরঙ্গ মূহূর্তগুলোও ডিটেলস এ বলতে হয়।  এই আমি শিখাকে একটু জড়িয়ে ধরলাম, শিখাও আমাকে। তারপর গালে একটা চুমু। ঠোঁটেও পরপর দুটো। শিখা কটা খেল, আমি কটা খেলাম। বলতে হবে নাকি? শুক্লা বলল, হ্যাঁ। সবই তো বলবে। আমাদের কাছে কিছু গোপণ রাখবে না। জানো না আমরা রেগে গেলে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারি। রনি বলল, বলে ফেল শুভেন্দু। নইলে শুক্লা তোকে আজ ছাড়বে না। শুভেন্দুও রসিকতা জারি রেখে চলেছে। পরোটা আর আলুরদম খেতে খেতেই বলল, দাঁড়া আগে মাসীমার কাছ থেকে আরো দুটো চেয়ে নিয়ে আসি। খেতে যা দারুন লাগছে না। ফ্যানটাসটিক। তারপর শিখার সাথে আমার রাতে শোওয়ার গল্পটাও তোদের শেয়ার করব। বলেই ফিক ফিক করে হাসতে লাগল। রনিও এবার হেসে ফেলেছে শুভেন্দুর কথা শুনে। শ্যালককে বলল, এই এই। এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। তুই শিখার সাথে মোটেই এখনও শুসনি। খামোকা কেন গুল মারছিস? শুক্লা তাহলে আরো রেগে যাবে। শুক্লা এবার চোখ বড় করে ফেলেছে। এক ধ্যাতানি দিয়ে শুভেন্দুকে বলল, সত্যি শুভেন্দু। সবকিছুরই একটা লিমিট আছে।  যা গুল মারা শুরু করেছিস না তুই। আমি আর কি বলব? মাধুরীও টিপ্পনি কেটে বলল, দেখো আবার, সত্যি শিখা বলে কোন মেয়ে আদৌ আছে নাকি। ওটাও গুল হতে পারে। ছোড়দা সব পারে। দিনকে রাত আর রাতকে দিন। নিজের বোনকে দাবিয়ে দিয়ে শুভেন্দু বলল, বলিস না ওভাবে বলিস না। শিখা জানতে পারলে দূঃখ পাবে। আমি তোর কথা ওকে কত বলেছিস জানিস? বলেছি আমরা চারভাই। কিন্তু আমাদের এই একটি মাত্রই আদরের বোন। বড় আদরের ছোটবোন। মাধুরী। মাধুরী বলল, বল না তাহলে। তুই তো সব খুলে বলছিস না। ওই জন্য তো, তোর ওপর আমরা সবাই মিলে রেগে যাচ্ছি। শুভেন্দু বলল, বলবো রে বাবা বলবো। সব তোদের খুলেই বলবো। তবে ওপেনলি তো সব কথা বলা যায় না। তাই একটু সেন্সর করে বলতে হবে। আমি শুভেন্দুর কথা শুনে হেসেই অস্থির। শুক্লা এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল, একটু আগে কেমন ঢং করছিল শুভেন্দু। যাহা বলিব সত্য বলিব। এখন কি রকম করছে দেখেছিস তো? রনি নেহাত আজকে সব ফাঁস করে দিল। নইলে এটাও আমাদের জানা হত না। মা বেশ কিছুক্ষণ পরে আবার পরোটা ভর্তি থালা নিয়ে ঢুকলো। সাথে বিদিশার জন্য একটা আলাদা প্লেট। সবাই বেশ তৃপ্তি করে খাচ্ছে। মা বলল, কে কটা নেবে বলো? এই ভাজতে ভাজতে আমার একটু দেরী হয়ে গেল। আমি বললাম, দাও দাও। শুভেন্দুকে আরো দুটো পরোটা দাও। ও নইলে শিখার গল্পটা পুরোটা আমাদের কাছে শেয়ার করবে না। শুভেন্দু বলল, না না। আমি এমনি বলব। আর এই পরোটা খাবার গল্পটাও শিখার কাছে গিয়ে বলতে হবে। ও শুনে দারুন খুশি হবে।  খাওয়া দাওয়া এবারে শেষ। শুভেন্দুর প্রেম কাহিনী শোনবার জন্য সবাই তখন উদগ্রীব। শুভেন্দু এবার শুরু করল একমাত্র বক্তা হিসেবে। আমরা বাকীরা তখন শ্রোতা।  মা’কে কায়দা করে আমিই ভেতরের ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছি। মা জানে এখন অনেক রসিকতাই হবে। মায়ের সামনে সবকথা তো আর অকপটে বলা যায় না। শুভেন্দু অনেক ফ্রী হয়ে বলতে পারবে। আরো এক প্রস্থ চা বানাবে বলে মা নিজেই চলে গেল।  শুভেন্দু শুরু করল এইভাবে। -দ্যাখ তোরা বিশ্বাস করই বা না কর। তবে আমার প্রেমটাকে অত খাটো করে দেখিস না। হতে পারে এটা অনেকদিনের প্রেম নয়। বিদিশা আর দেবের মতন। তবে আমার প্রেমের মধ্যে একটা বেশ রোমান্টিক রোমান্টিক ভাব আছে।  ঠিক যেমন বিদিশা আর দেবের বেলায় ঘটেছিল। চিরকাল তো ওই লোকটাই প্রেমের অমৃতবানী আমাদের শুনিয়ে এসেছে। আমি ছিলাম উল্টো পথের যাত্রী। তোরা যেদিক দিয়ে এতদিন হেঁটেছিস, আমি হেঁটেছি উল্টো পথে।  কিন্তু কেন জানিনা, এই শিখাই আমাকে সঠিক রাস্তাটা চেনালো। সেই হিন্দীতে একটা কথা আছে না। ‘তুমকো ভটকনে নেহী দুঙ্গা মেরী জান। ম্যায় আ গ্যায়ী হু না। তুমহারা জান। শিখা।’ শুক্লা শুনে বলল, বাহ বা বাহ বা। তারপর? শুভেন্দু বলল, শিখা মানে কি? হিন্দীতে এর মানে হল রোশনী। আর শিখাকে নিয়ে আমার শায়েরীটা হল, ভটক রাহা থা অন্ধরোমে এক রোশনীকে লেকর। কাহাসে শিখা নাম কি এক চাঁদ নিকাল আয়া চাঁদনী লেকর। শুক্লা আবার বলল, বাহ বা, বাহ বা। ক্যায়া বাত। তারপর? আমিও হেসে বললাম, বারে শুভেন্দু। তুই তো আসর একেবারে গরম করে দিলি। শুভেন্দু বলল, দাঁড়া দাঁড়া। আমাকে বাঁধা দিস না। তাহলে সুর তাল সব কেটে যাবে।  অনেকদিন পরে আমিও সত্যি কথাটা বলছি তো। তাই বেশ একসাইটমেন্ট ফীল হচ্ছে। আমি হাসছি ওর কথা শুনে। শুভেন্দু বলতে থাকলো, শিখাকে কিন্তু কলকাতায় আমি প্রথম দেখিনি। ওর সাথে আমার প্রথম দেখা পুরীতে। তারপর কোনারক মন্দিরের সামনে হাতে হাত ধরে অনেকটা পথ চলা। প্রেম সেখানেই শুরু। বাড়ীর ছাদের গল্পটা তো অনেক পরে। যেটা রনি জানে। পুরী আর কোনারকের গল্পটা রনিও জানে না। আমি অতি আগ্রহ নিয়ে বললাম, বল বল। শুনি। শুভেন্দু বলতে থাকল, অনেক মেয়েই আছে তোতা পাখীর মত শুধু বকবক করে অবান্তর কথা বলে যেতে পারে। কিন্তু বলার ভঙ্গীমাটা যদি সুন্দর আর বুদ্ধিদীপ্ত হয়, তাহলে পুরুষ মানুষের চোখকে তা মুগ্ধ করে তোলে। আমি অবাক। অচেনা একটা লোকের সাথে কি করে এত সহজ হয়ে যেতে পারল মেয়েটি? ও যেন সত্যি সুন্দর। পুরীতে যে হোটেলটায় উঠেছিলাম, বাবা মা’কে সঙ্গে করে ও পুরীতে সেই হোটেলটাতেই উঠেছিল। হোটেলের বারান্দায় দাঁড়িয় দাঁড়িয়ে ওর অপরূপ সৌন্দর্য শোভা দেখছি। সত্যি কথা বলতে কি বিদিশার পর এত সুন্দর মুখশ্রী আমিও জীবনে প্রথমবার দেখছি। আমি বললাম তারপর?              
Parent