জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - অধ্যায় ৬৩

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-38842-post-3476624.html#pid3476624

🕰️ Posted on July 9, 2021 by ✍️ Lekhak is back (Profile)

🏷️ Tags:
📖 990 words / 5 min read

Parent
শুভেন্দু বলল, ‘পুরীতে ওটা ছিল আমাদের তৃতীয় দিন। গানের জন্য একটা পরিবেশ চাই। আমি তার আগেই জেনে নিয়েছি, ছোটবেলা থেকেই শিখা রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিম নিয়েছে। তাছাড়া ওর এত মিষ্টি গলা। আমার কেন জানি না ওকে দেখার পরই মনে হচ্ছিল, মেয়েটা বোধহয় গান জানে। সি বিচে বালির ওপর আমরা সেদিন বসে আছি পাশাপাশি দুজনে। শিখা বালিতে কি যেন এঁকে যাচ্ছে। আমাকে বলল, ছোটবেলায় বাবা মার সাথে একবার পুরীতে বেড়াতে এসেছিলাম।  কত কষ্ট করে এই বালি দিয়েই একটা ঘর বানিয়েছিলাম। একটা বড় ঢেউ এসে বালিঘরটা নিশ্চিন্ন করে দিয়ে চলে গেল। আমার সেকী কান্না। বাবা মা দুজনেই আমার কান্না থামাতে পারে না। অনেক কষ্টে বুঝিয়ে সুজিয়ে সেদিন দুজনে বলেছিল, ‘মা আমার কাঁদে না। এটা তো বালিঘর। আসল ঘর নাকি? তুই কেন মিছি মিছি কাঁদছিস?’   শুভেন্দু বলল, শিখা মাথা নিচু করেই বালিতে আঁচড় কাটতে কাটতে তখনও বলে যাচ্ছিল। ‘সেদিন আমার কান্নাটা থেমে গিয়েছিল। কিন্তু আসল মানেটা উদ্ধার করতে পেরেছিলাম, তারও চার পাঁচ বছর পরে।’   শুভেন্দু বলল, আমি তখন শিখাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কেন তখন আবার কি হলো? কোন সমস্যার উদয়?’   ঠিক যেন ভাবুকের মতন হয়ে আমরা সবাই শুভেন্দুর কথা শুনছি। শুভেন্দু বলল, শিখা আমার কথার জবাব দিচ্ছে না। আসতে আসতে কি যেন বলার চেষ্টা করলো। কিন্তু একটা আছড়ে পড়া ঢেউয়ের শব্দে আমি ওর কথা শুনতে পেলাম না। শিখাকে বললাম, চার পাঁচ বছর পরে কি হয়েছিল?   শিখা অনেক কষ্ট করে ভারী গলায় বলল, বাবা মা’র সম্পর্ক ক্রমশই তখন অবনতির দিকে। দুজনের ছাড়াছাড়ি হবার উপক্রম। আমি চোখে অন্ধকার দেখছি। দুজনকেই আমি মনে প্রানে খুব ভালোবাসি। আমি কাউকে কাছছাড়া করতে চাই না। হাউ হাউ করে সেদিন খুব কেঁদেছিলাম। শুধুমাত্র আমার চোখের জলের দিকে তাকিয়েই বাবা মার ডিভোর্সটা সেদিন হয় নি। নইলে-   একটা হতাশার সুরে শুক্লা বলে উঠল, ওফ। এখানেও? সবারই জীবনে দেখছি, কোন না কোন এরকম ঘটনা।   আমি বললাম, মেয়ের জন্য বাবা মা শেষ পর্যন্ত আলাদা হন নি। এটা তো ভাল খবর। শিখাকে এরজন্য ক্রেডিট দিতে হয়।   শুভেন্দু বলল, অবশ্যই। আসলে মেয়েটার মধ্যে ভীষন একটা সফট জায়গা আছে জানিস তো। ও যেমন নিজের দূঃখটা দেখতে পারে না, সহ্য করতে পারে না। তেমনি কারুর কষ্টের কথা শুনলে ওরও খুব কষ্ট হয়। ওর মনটা খুব নরম। সি ইজ ভেরী সফট মাইন্ডেড।   আমি বললাম, ‘মনে রাখিস এটা। শিখাকে তোকে সারাজীবন সুখী রাখতে হবে।’   শুভেন্দু বলল, সেইজন্যই তো আমি এখন তোকে ফলো করি। তোর অ্যাটিটুডটা কপি করার চেষ্টা করি। আমি শিখার প্রতি ভালোবাসাটা প্রকাশ করতে সেদিন বিন্দুমাত্র দেরী করিনি। মনে হয়েছিল, এরপরেও যদি শিখাকে আমি বুঝতে কোন ভুল করি। অনেক দেরী হয়ে যাবে। ওর হাতের ওপর হাতটা রেখে সি বিচেই ওকে ভালো লাগার ব্যাপারটা প্রকাশ করে ফেললাম। হাতটা সরিয়ে নিতে পারেনি শিখা। আমার মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল। ওকে বলেছিলাম, শিখা আমি প্রেম করতে জীবনে কোনদিন শিখিনি। কিন্তু আমার এক প্রাণের বন্ধুকে দেখে শিখেছি, ভালোবাসার এই অক্সিজেনকে শতকষ্টের মধ্যেও কিভাবে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। বলতে পারো ‘দেব’  আমার জীবনে এক আদর্শ ব্যক্তিত্ব। হি ক্রিয়েটস অ্যান এক্সাম্পেল। আজ তারই আদর্শের বানীকে উদ্ধৃত করে তোমায় বলছি, এই শুভেন্দুর প্রেমকে তুমি স্বীকার করো। আমি তোমায় কথা দিচ্ছি। জীবনে কোনদিন, কখনও তোমাকে আমি দূঃখী হতে দেবো না।’  আমি অবাক হয়ে চেয়ে রয়েছি শুভেন্দুর দিকে। ওকে বললাম, ‘তুই করেছিস কি? এখানেও আমার উদাহরণ টেনেছিস?’   শুভেন্দু হাসতে হাসতে বলল, ‘তবে আর তাহলে বলছি কি? এতদিনে তুই আমায় শেষ পর্যন্ত এই চিনলি? সাধে কি ও তোর এখানে আসছে? তোকে দেখতে? ওর মনেও তো সেই কৌতূহল। যে মানুষটার সন্মন্ধে প্রেমিকের কাছ থেকে এত কথা শুনে এসেছে। এবার যাই। একবার চোখের দেখায় তাকে দেখে আসি। সত্যি মানুষটা কিরকম?’   আমি শুভেন্দুর কাছ থেকে দরাজ সার্টিফিকেট পেয়ে নিজে কিছুটা বিচলিত বোধ করছি। ভাবছি কি এমন কাজ করেছি, যার জন্য আমি আমার বন্ধুবান্ধবের কাছে একটা দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছি। আমি তো আমার করা ছোট্ট ভুলের একটা খেসারত দিয়ে এসেছি এতদিন। দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে গেছি। ভগবান সেই কারণেই আমার ওপর হয়তো সদয় হয়েছেন। আমি কি সত্যি কোন বড় মনের পরিচয় দিয়েছি? না, শুভেন্দু একটু বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলছে বোধহয়।   একবার তাকালাম বিদিশার দিকে, দেখলাম বিদিশাও চোখের ভাষাতে আমাকে সেই কথাই বোঝানোর চেষ্টা করছে। অর্থাৎ শুভেন্দু যা বলেছে, ঠিকই বলেছে। ওর কথার মধ্যে কোন ভুল নেই।   হেসে বললাম, ‘তা এরপর শিখা তোকে যে রবীন্দ্রসঙ্গীতটা শুনিয়েছিল, সেটা শোনালি না?’   শুভেন্দু আবার একটু খক খক করে কেসে নিয়ে বলল, গাইবো? কিন্তু শিখার মতন কি অত ভালো গাইতে পারবো? আচ্ছা চেষ্টা করছি। বলে গাইতে শুরু করলো-   ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো-- তোমার  মনের মন্দিরে। আমার পরানে যে গান বাজিছে তাহার তালটি শিখো-- তোমার  চরণমঞ্জীরে॥   এইটুকু গেয়ে গান থামিয়ে দিল শুভেন্দু। আমাকে বলল, না না এর বেশি আর গাইতে পারছি না। বাকীটা তুই গা।   শুক্লা বলল, ওফঃ কি গান শুনিয়েছে রে শিখা তোকে। শুভেন্দু সত্যি তোর প্রেমিকার জবাব নেই।   আমি ঠিক সেই সময় অবাক হয়ে চেয়ে রয়েছি বিদিশার দিকে। ব্যাপারটা শুভেন্দু, রনি, শুক্লা, মাধুরী কেউই বুঝতে পারে নি। আসলে অনেক দিন আগে এই গানটাও আমি বিদিশার উদ্দেশ্যে একবার গেয়েছিলাম। সেদিনের সেই স্মৃতি বিদিশা আর আমার, দুজনের মনেই এখন ভাসছে। আমার সেদিনের গান শুনে বিদিশাও আমার সাথে গাইতে শুরু করে দিয়েছিল। কিন্তু আজ আমি শুভেন্দুর কথায় আবার গাইছি, বিদিশা আর গাইতে পারছে না। ও শুধু মুগ্ধ নয়নে শুনছে আমার গান-   ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো-- তোমার  মনের মন্দিরে। আমার পরানে যে গান বাজিছে তাহার তালটি শিখো-- তোমার  চরণমঞ্জীরে॥ ধরিয়া রাখিয়ো সোহাগে আদরে আমার মুখর পাখি-- তোমার প্রাসাদপ্রাঙ্গণে॥ মনে ক'রে সখী, বাঁধিয়া রাখিয়ো আমার হাতের রাখী-- তোমার কনককঙ্কণে॥ আমার লতার একটি মুকুল ভুলিয়া তুলিয়া রেখো-- তোমার অলকবন্ধনে। আমার স্মরণ শুভ-সিন্দুরে  একটি বিন্দু এঁকো-- তোমার     ললাটচন্দনে। আমার মনের মোহের মাধুরী মাখিয়া রাখিয়া দিয়ো-- তোমার অঙ্গসৌরভে। আমার আকুল জীবনমরণ  টুটিয়া লুটিয়া নিয়ো-- তোমার অতুল গৌরবে॥ ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো-- তোমার  মনের মন্দিরে।     আসতে আসতে বিদিশার চোখ দিয়ে এবার গড়িয়ে পড়ছে জলের ধারা। গান শেষ করে ওকে সান্তনা দিয়ে বললাম, ‘এই দেখো আবার কাঁদতে শুরু করেছে? আরে বাবা কাঁদছো কেন? আমি তো শুভেন্দু বলল, তাই আবার গেয়ে শোনালাম।’   ঠিক সেই সময় মা আবার ঢুকে পড়েছে ঘরে। বিছানার ওপর বিদিশাকে কাঁদতে দেখে মা’ও হতভম্ব। আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল, ওমা বিদিশা কাঁদছে কেন? তুই কি বকেছিস নাকি ওকে?’ এরপরে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘আচ্ছা, তোমাদের পরিচিত কারুর কি এখানে আসার কথা আছে? বারান্দা দিয়ে দেখলাম, একটা মেয়ে গাড়ী চালিয়ে এসে নামলো। আমাকে জিঞ্জাসা করলো, ‘এটা কি দেবদার বাড়ী?, আমি বললাম হ্যাঁ। তারপর বললো, আচ্ছা আমি উপরে আসছি। মেয়েটা আমাদের ফ্ল্যাটেই আসছে মনে হয়।’   ক্রমশঃ-  
Parent