জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - অধ্যায় ৬৫

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-38842-post-3483033.html#pid3483033

🕰️ Posted on July 11, 2021 by ✍️ Lekhak is back (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1195 words / 5 min read

Parent
শুক্লা বলল, ‘গাও না শিখা। আমরা তো দেবের গানই শুনে এসেছি এতকাল ধরে। তোমার যখন গানের গলা ভাল, তখন তোমাকেও আজ ছাড়ছি না। শুভেন্দু বলেছ, তুমি না কি রবীন্দ্রসঙ্গীত দারুন গাও।’ শিখা একটু লজ্জ্বা পেল। বলল, ‘এই মরেচে। সবাই মিলে আমাকে চেপে ধরেছে। আমি এখন কি করি?’ বিদিশা বলল, ‘আমরা সবাই এখানে গানের খুব ভক্ত। সেই কলেজের সময় থেকেই গান শোনাকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছি। সেই সময় রোজই আমাদের গানের আসর বসতো। কলেজে তো কালচারাল ফাংশনও হত। আর এই যে দেখছো লোকটাকে, আমার পাশে বসে আছে। বলে আমার দিকে ইঙ্গিত করল বিদিশা। বলল, এ হল মধ্যমনি। ভীড়ের মধ্যে একজনই গায়ক। আর আমরা হল তার শ্রোতা। এর মত গলা, আর দ্বিতীয় কারুর নেই।’ শিখা যেন এবারে আরও ভয় পেয়ে গেল। বলল, ‘ও বাবা। তাহলে আমি কিছুতেই গাইবো না। দেবদার ধারে কাছেও কোনদিন পৌঁছোতে পারবো না।’ আমি আশ্বস্ত করলাম শিখাকে। বললাম, ‘ বিদিশা আমাকে একটু বেশিই ভালবাসে তো? তাই আমার সন্মন্ধে একটু বেশিই বলছে। আমি এমন কিছু গাই না। তুমি পরে আমার গান শুনলেই বুঝতে পারবে। আর তাছাড়া আমার আগের মতন গলা একেবারেই নেই। রেওয়াজ করি না। গলা একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে।’ শুভেন্দু সঙ্গে সঙ্গে ফোড়ণ কাটলো। বলল, ‘কি যাতা বলছিস। একটু আগেই তো গাইলি। তোর সাথে কারুর তুলনা হয়?’ আমি এবার ধমক লাগালাম শুভেন্দুকে। বললাম, ‘যাও বা মেয়েটাকে রাজী করালাম। দিলি তো সব ব্যাঘাত করে। আমি এখানে শিখার গান শুনবো বলে বসে আছি। আর তোরা কিনা আমার গান নিয়েই পড়ে আছিস।’   শুক্লা বলল, ‘গাও না শিখা। আমরা দেবের গানও শুনবো। তোমারটা বরং আগে শুনি।’ শিখা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এখনও একটু লজ্জ্বা লজ্জ্বা পাচ্ছে। মুখ নিচু করে বলল, ‘গাইতে পারি এক শর্তে। আপনাকেও কিন্তু একটা গান শোনাতে হবে। বড় আশা করে এসেছি।’ শুভেন্দু শিখার কথা শুনে বাহ্বা নিচ্ছে। ওকে বলল, ‘ ও ব্যাপারে চিন্তা কোরো না। দেবকে আমি একবার বললেই ও গাইতে শুরু করবে। আর তুমিও যখন রিকোয়েস্ট করেছো। ও তোমার কথা ফেলতে পারবে না। অলওয়েজ রেডী তো সিঙ। দ্য মিরাকেল ভয়েজ। আজকের যুগের সেরা গায়ক। তবে অ্যামেচার। একেবারেই প্রফেশনাল নয়।’   শুক্লা ধমক দিয়ে শুভেন্দুকে বলল, ‘এই তুই চুপ কর। আমাদের এবার শিখার গান শুনতে দে।’   মাধুরী শিখার কোল থেকে বাচ্চাটাকে আবার নিজের কোলে নিয়ে নিয়েছে। বাচ্চাটা হঠাৎই চিৎকার করতে শুরু করে দিল। মাধুরী ওর ঠোঁটে হাত দিয়ে বলল, ‘এই চুপচুপ। একদম চেঁচাবি না এখন। দেখছিস না? তোর নতুন মামী এখন আমাদের গান শোনাবে। খুব মিষ্টি মামীটা। শোন শোন। দেখ কি মিষ্টি গায় এই মামীটা।’   অদ্ভূত ভাবে চেঁচানি থামিয়ে মাধুরীর বাচ্চটাও শিখার দিকে তাকিয়ে রইল। যেন গান শোনার জন্য বাচ্চাটাও এবারে উদগ্রীব হয়ে পড়েছে। শুভেন্দু সব দেখেশুনে বলল, ‘বাহ্ আমার বোনপোটা তো বেশ। প্রথমদিনই ফ্যান হয়ে গেছে শিখার। দারুন দারুন। দেখে বড় ভালো লাগছে।   রনি এবারে একটু বাহবা নিয়ে বলল, ‘কার ছেলে দেখতে হবে না? ও হল আমার ছেলে। মাই সন। লাইক ফাদার লাইক সন। ভাবছি ওকেও বড় হয়ে আমি গায়কই বানাবো। আজ থেকে আমারও একটা গোল সেট হয়ে গেল।’  শিখা গান গাইবার জন্য এবারে তৈরী। শুরু করতে গিয়েও শেষবারের মতন আবার একটু লজ্জ্বা পেল। মুখ নিচু করে বলল, ‘ভীষন ভয় ভয় করছে। আপনি সামনে বসে আছেন। কি গাইতে কি গাইবো। যদি ভুলভাল কিছু হয়?’   আমি ওকে আস্বস্ত করলাম। ‘বললাম ভয় কি? শুরু করে দিন। আমি কথা দিচ্ছি। ভুল ধরবো না। মনের আনন্দে গান। আজ ভালো একটা দুটো রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনান। আমিও রবীন্দ্রসঙ্গীতের খুবই ভক্ত।’   গানটা যখন শুরু করলো শিখা। মনে হল সরস্বতী যেন সত্যি সত্যিই বিরাজ করছে ওর গলায়। কি অপরূপ গলা। গলায় শুধু যে মিষ্টতাই বিরাজ করছে, তাই শুধু নয়। একজন মন্ত্রমুগ্ধ শ্রোতার মতন মনটা কোথায় আচ্ছন্ন হয়ে যাবে। শিখাই নিয়ে যাবে শ্রোতাকে এক অন্য ভাবনার জগতে। মনে হবে এই পৃথিবীতে দূঃখ বলে সত্যি কিছু নেই। শুধু আনন্দ আর সুখ। এমন গলা শুনলে মূমূর্ষ রুগীও বাঁচার তাগিদ অনুভব করবে। শরীর জুড়ে অদ্ভূত এক প্রাণের পরশ লেগে যাবে। প্রেমিককে স্মরণ করবে প্রেমিকা। প্রেমিক স্মরণ করবে প্রেমিকাকে। মনে হবে পৃথিবীতে ভুল বোঝাবুঝি বলে কিছু আর নেই। যত দূঃখের, আজই হল তার অবসান। শুধু আমিই কেন? যে কেউ ওর গান একবার শুনবে। রীতিমতন শিখার ফ্যান হয়ে যাবে। আমি গ্যারান্টী দিয়ে বলতে পারি।   শুধু আমি কেন? শিখাটা গানটা শুরু করবার পর, সবাই যেন কেমন একটা আবেশের মধ্যে চলে গেল। মাধুরী হাঁ হয়ে গেছে শিখার গলা শুনে। শুভেন্দু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে থুতনীতে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে ঘাড় নাড়ছে। রনিরও চোখ বোজা। যেন অভিভূত হয়ে সেই আমেজটাকে গ্রহণ করছে। অদ্ভূত ব্যাপার। শুক্লা যেন শিখার গান শুনে রীতিমতন আশ্চর্য। ভাবতেই পারেনি এত দরদী গলা হতে পারে মেয়েটার।   আর আমি তো এতটাই তন্ময় হয়ে গেছি কিভাবে শিখাকে গান শেষ হলে সাধুবাদ জানাবো। ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। শুধু দেখছি বিদিশাই কেমন আনমোনা। অনুশোচনার ভারে আক্রান্ত। ভাবতেই পারছে না। শুধু একটা ছোট্ট ভুলে জীবনের বেশ কয়েকটা বছর ভালোবাসা ছাড়াই একাকী করে দিল দুজনকে। আমাকে ছেড়ে চলে গিয়ে নতুন আর একজনকে বিয়ে করে সত্যি জীবনে কোন সুখ পেলো কি বিদিশা? সেই তো  আমার কাছেই ওকে আবার ফিরে আসতে হল।   শিখা প্রথম যে গানটা ধরলো, সেটা হল, তুমি রবে নীরবে। হৃদয়ে মম। তুমি রবে নীরবে। নিবিড় নিভৃত পূর্ণিমানিশীথিনী-সম॥ তুমি রবে নীরবে। মম জীবন যৌবন মম অখিল ভুবন তুমি ভরিবে গৌরবে নিশীথিনী-সম॥ তুমি রবে নীরবে। হৃদয়ে মম। তুমি রবে নীরবে। জাগিবে একাকী তব করুণ আঁখি, তব অঞ্চলছায়া মোরে রহিবে ঢাকি। মম দুঃখবেদন মম সফল স্বপন তুমি ভরিবে সৌরভে নিশীথিনী-সম॥ তুমি রবে নীরবে। হৃদয়ে মম। তুমি রবে নীরবে।   শুক্লা বলে উঠল এক্সিলেন্ট। অসাধারণ। এটা নিশ্চই, শুভেন্দুর জন্য। এবার বিদিশার জন্যও একটা গান ধরো শিখা। দেখো ও কেমন তোমার গান শুনে অভিভূত হয়ে গেছে।   বিদিশা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে শিখার দিকে। সবাই ওকে জোর করছে। ‘হ্যাঁ। আর একটা আর একটা। প্লীজ শিখা গাও গাও। কি দূর্দান্ত গলা তোমার।’   শিখা প্রথমে একটু ইতস্তত করে বিদিশার জন্যই দ্বিতীয় গানটা ধরলো। আমি অবাক হয়ে চেয়ে রয়েছি শিখার দিকে। মাঝে মধ্যে বিদিশার দিকেও তাকাচ্ছি। বুঝতে পারছি শিখা এ বাড়ীতে আসার পর কেমন যেন অন্য রকম এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়ে গেছে। শুভেন্দু সব দেখেশুনে একটা হীরের টুকরো মেয়েকে জীবনসাথী হিসেবে বাছাই করেছে। ওর জীবন সত্যি ধন্য হয়ে গেছে।   দ্বিতীয় গান ধরলো শিখা। আমি মন্ত্রমুগ্ধ। পুরো গানটাই শিখা, বিদিশার মুখের দিকে তাকিয়ে গাইল। আমি অবাক। সত্যি এমন দরদী গলা জীবনে প্রথমবার এতো কাছ থেকে শুনছি।   তুমি কোন কাননের ফুল, কোন গগণের তারা। তোমায় কোথায় দেখেছি, যেন কোন স্বপনের পারা!! কবে তুমি গেয়েছিলে, আঁখির পানে চেয়েছিল, ভুলে গিয়েছি, শুধু মনের মধ্যে জেগে আছে ঐ নয়নের তারা!! তুমি কথা কয়োনা, তুমি চেয়ে চলে যাও, এই চাঁদের আলোতে তুমি হেসে গলে যাও। আমি ঘুমের ঘোরে চাঁদের পানে, চেয়ে থাকি মধুর প্রাণে তোমার আঁখির মতন দুটি তারা, ঢালুক কিরণধারা!! তুমি কোন কাননের ফুল, কোন গগণের তারা। তোমায় কোথায় দেখেছি, যেন কোন স্বপনের পারা!!   ওহ্। অসাধারণ। শুক্লা বলে উঠল। দেব তুই কিছু বলবি না শিখার গান শুনে। আমার তো সত্যি বলার মতন কোন ভাষা নেই।   বিদিশার মুখটা তখন নিচু। কি যেন চিন্তা করছে। ওর মাথায় এখন নানা চিন্তা। পুরোনো দিনগুলোকে আবার আঁকড়ে ধরবার চেষ্টা করছে। কিন্তু কোথায় যেন এখনও সেই পুরোনো ব্যাথা। ভেতর থেকে মাঝে মধ্যেই গুমড়ে গুমড়ে উঠছে। কষ্টটা চলে গিয়েও পুরোপুরি যেন যাচ্ছে না।   ওর হাতের ওপর হাতটা রেখে শিখা বলল, ‘আমি সবই শুনেছি ওর মুখে। কষ্ট পেও না। জেনে রেখো কষ্টটা সীমিত। আনন্দটা চিরদিনের।’   বিদিশা কোন কথা বলতে পারছে না। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে শিখা আবারো বলল, ‘ভগবান যাকে দূঃখ দেন, তাকে আনন্দও ভগবান দিতে জানেন। আমি তো সবসময়ই ভগবানকে বলি, তোমার আছে যত দূঃখ। তুমি এই ছোট্ট মেয়েটাকে দিয়ে দাও। আর যাতে যত সুখ। তুমি আমার এই ছোট্ট দিদিটাকেই শুধু দিয়ে দাও। আবার তোমার মুখে সেই পুরোনো হাসিটা আমরা দেখতে চাই। কাননের একটা সুন্দর ফুল তুমি। তারার মত তোমার চোখ। হাসি না দেখলে তোমাকে যে সত্যি মানায় না।
Parent