জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - অধ্যায় ৭০
আমি বললাম, এই দাঁড়া, অত তাড়াহূড়ো করিস না। শিখার মনোভাবটাও তোর বোঝা একান্তই দরকার। আর তাছাড়া বিয়ে তো করেই নিবি আর কিছুদিন পরে। এখনই তুফান এক্সপ্রেস ছোটাতে চাইছিস?
শুভেন্দু বলল, বিয়ে করে সবাই তো বউকে পাশে নিয়ে শোয়। আর যে বিয়ের আগেই শোয়, সেই তো আসল খিলারী।
আমি অবাক হয়ে শুভেন্দুর কথা শুনছিলাম। এই কদিনেই ওর মধ্যে কত পরিবর্তন। আমাকে আশ্চর্য করে আরও বলল, শোন না? আমি একটা ফুটবল টীম বানাবো ভাবছি। আমার আর শিখার বছর বছর একটা করে সন্তান হবে। এগারো বছরে এগারো জনের ফুটবল টিম।
মনে মনে ভাবলাম, এত সুন্দর ফুলের মতন মেয়েটাকে বাচ্চা পয়দা করবার মেশিন ভাবছে। এই ছেলেটার হলো টা কি?
আমাকে অবাক করে শুভেন্দু বলল, আমি কি মূর্খ? ভীমরতি ধরেছে আমাকে? তোর সাথে রসিকতা করে তোকে পরখ করছিলাম। শুভেন্দু ভালমতনই জানে, একার ইচ্ছে তে কিছু হয় না। জোড়া সিদ্ধান্তই আসল।
আমি বললাম, তা, শিখা তোকে আর কিছু বললো?
শুভেন্দু বলল, তোদের দুজনেরই খুব প্রশংসা করছিল। বিদিশা আর তুই। মাসীমার কথাও বলছিল। আর তোর কথা বিশেষ আলাদা করে। দেব দার মতন মানুষ হয় না।
আর তোর গানের গলার তো ভরপুর প্রশংসা। শিখা তো তোর রীতিমতন ফ্যান হয়ে গেছে।
-যাই হোক। মেয়েটার যত্ন করিস। ভালই দেখভাল করিস। খুব ভাগ্য করে পেয়েছিস।
শুভেন্দু বলল, বিদিশা তো তোর পাশেই ছিল। কোথায় গেল? দে একবার কথা বলি।
বিদিশা পাশের ঘরে গেছে। শুভেন্দুকে বললাম, ও এই পাশের ঘরে গেল। মা’ ঘুম থেকে উঠেছে কি না দেখার জন্য।
শুভেন্দু ফোনটা ছাড়ার আগে, শেষ কথা বলল, কিছুতেই বিদিশাকে আজ বাড়ি ফিরতে দিস না। তাহলে কিন্তু সব মাটি হয়ে যাবে। আজই সুদে আসলে সব উশুল করে নে।
কি যে বলে ছেলেটা? বিদিশার কাছ থেকে কিছু সুদে আসলে উশুল করবার দরকার পড়ে না কি? আমার অতীতের এতগুলো বছরকে যে এক নিমেষে ভুলিয়ে দিয়েছে। সূর্যের মতন আমাকে আবার তেজোদৃপ্ত করেছে। আমার জীবনের আকাশ এখন ঘন নীল, সেই আগের মতন। ফুলের গন্ধ, বর্ণ সব যেন হারিয়ে বসেছিলাম। আজ আবার ফিরে পেয়েছি বিদিশারই দৌলতে। আবার আমি নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। আবার আমি আশাবাদী। জীবনের পথ চলা নতুন করে শুরু। বিদিশাকে সম্বল করে আমি ভবিষ্যতের সুখ স্বপ্নের ছবি আঁকছি। পৃথিবীর এমন কোন সুখ নেই। যা আমার এই সুখের সাথে পাল্লা দিতে পারে।
শুভেন্দু ফোনটা ছেড়ে দেবার পর চিন্তা করছিলাম, আজ অনেক্ষণ গল্প করবো বিদিশার সঙ্গে। ওর ভেতরে জমে থাকা কষ্টটা আমাকে আরও ভাল করে জানতে হবে। বিদিশাকে আরও সাহস যোগাতে হবে। ও যেন কিছুতেই নিরাশ হয়ে না পড়ে। সমস্যা যেমন আছে, তেমন সম্ভাবনাও আছে। পৃথিবীর এমন কোন শক্তি নেই। যা আমাদের দুজনকে আবারও আলাদা করে দিতে পারে। এই বাঁধা বিপত্তি থেকে যে করেই হোক আমাদের বেরিয়ে আসতে হবেই।
বিদিশা ঘরে ঢুকে বলল, তুমি এখন কিছু খাবে? সারাদিন তো শুয়ে শুয়েই কাটিয়ে দিলে। খিদে পাচ্ছে না।
ওকে বললাম, পাশের ঘরে গিয়েছিলে? মা’ কে কি দেখলে? ঘুম থেকে উঠেছে? না এখনও ঘুমোচ্ছে।
-মা বলল, ঘুমোয় নি। শুধু চোখটা বন্ধ করে আলতো বিশ্রাম নিচ্ছিল। আমাকে শুধু জিজ্ঞাসা করলো, তুমি আজ থাকবে বিদিশা? বাড়িতে বলে এসেছো?
আমি বিদিশাকে বললাম, কি উত্তর দিলে তুমি?
বিদিশা বলল, আমি কিছু বলার আগেই মা’ বলল, থাকো না আজ রাতটুকু আমার ছেলের পাশে। তোমাকে পেয়ে ও খুব খুশি হয়েছে। আমি কতদিন বাদে দেবকে প্রাণ খুলে হাসতে দেখছি। শুধু মন মরা হয়ে থাকতো। আর সারাদিন শুধু লেখালেখি আর মন উদাস করে থাকা। কি যে হয়ে গিয়েছিল ছেলেটা। মা’ বলেই আমি ওর কষ্টটা বুঝি।
বিদিশা বলল, মাথা নিচু করে মায়ের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলাম, বললাম, হ্যাঁ মা। আমি থাকবো। বাড়িতে বলেই এসেছি।
দুহাত বাড়িয়ে বিদিশাকে কাছে টেনে নিজের পাশে বসালাম। বললাম, এবার বসোতো দেখি। তোমার সাথে একটু গল্প করি।
দাঁড়াও, আগে কিছু খেয়ে নাও। সারাদিন কিছুই তো খাও নি।
না, এখন কিছু খাবো না।
খাবো না বললেই হবে? পেটে পিত্তি পড়ে যাবে তখন কি করবে?
বিদিশা কিছুতেই বসতে চাইছিল না। বলল, আমি তোমার জন্য মুড়ি জল নিয়ে আসি। মা বলেছে তোমাকে মুড়ি জল খাওয়াতে। পেট ঠান্ডা থাকবে। মা’ কে আর কষ্ট দেবো না। আমি নিজেই করে নিয়ে আসছি।
বিদিশার হাত ধরে বললাম, বসো তো এখন। পরে যেও। রাতে শোবার আগে খেয়ে নেবো।
-এই তুমি কিন্তু আর জড়িয়ে ধরবে না। মা জেগে গেছে। এখুনি ঘরে চলে আসতে পারে।
- আচ্ছা আমি কি তোমাকে ঘনঘন জড়িয়ে ধরতে পারি না?
- কি আবদার বাবুর? পারবে আমাকে সারাজীবন এভাবে জড়িয়ে ধরে রেখে দিতে?
আমি বললাম, কেন তোমার আমার ওপর ভরসা নেই?
আমার ওই দুষ্টু বরটা যদি আমাকে ডিভোর্স না দেয়? তোমার সব প্রচেষ্টা মাটি হয়ে যাবে।
মুখটা একটু উদাস করে বললাম, এমন কথা বোলো না। তোমাকে আমি সাথে করে নিয়ে কোথাও পালিয়ে যাবো।
-পালিয়ে যাবে? সে কি? কোথায়?
যেদিকে মন চাইবে সেইদিকে। তোমার ওই দুষ্টু বর আমাদের হদিশও পাবে না।
আর মায়ের কি হবে? মা’ বুঝি সারাজীবন একা থেকে ছেলের কষ্টে শেষ জীবন কাটাবে?
আমি বললাম, মাকেও সাথে করে নিয়ে যাবো।
ঠিক সেই মূহূর্তে মা ও ঘরে ঢুকেছে। বলল, কোথায় পালাবার কথা হচ্ছে?
আমি সামলে নিয়ে বললাম, কোথাও না। এই একটু ইয়ার্কী মারছিলাম বিদিশার সঙ্গে।
ক্রমশঃ