জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - অধ্যায় ৭২
বাহ্ এই তো দারুন হচ্ছে। গাও
বিদিশা বলল, এ মা তুমিও গাও। আমি একা পারি না কি?
বিদিশাকে সাহস যোগাতে এবার আমিও দ্বৈত কন্ঠে শুরু করলাম,
কাটবো প্রহর তোমার সাথে,
হাতের পরশ রইবে হাতে
রইবো যেদিন মুখোমুখি মিলন আগ্রহে
স্বপ্ন মধুর মোহে…..
এই বনেরই মিষ্টি মধুর
শান্ত ছায়া ঘিরে
মৌমাছিরা আসর তাদের জমিয়ে দেবে জানি
গুঞ্জরনের নীড়ে আসর জমিয়ে দেবে জানি
অভিসারের অভিলাষে রইবে তুমি আমার পাশে
জীবন মোদের যাবে ভরে
রঙের সমারোহে
স্বপ্ন মধুর মোহে…..
এই তো হেথায় কুঞ্জ ছায়ায়,
স্বপ্ন মধুর মোহে
এই জীবনে যে কটা দিন পাবো
তোমায় আমায় হেসে খেলে
কাটিয়ে যাবো দোঁহে
স্বপ্ন মধুর মোহে……...
চমৎকার, দারুন। মা বলল, বিদিশাকে এবার তুই গানটা ভাল করে শেখা দেব, ওর ও গানের গলা আছে।
বিদিশা মুখ টিপে টিপে হাসছে। আমি বললাম, একটু আগে শিখা যখন এসেছিল তখন ঘাপটি মেরে বসেছিল। শিখা শুনলে অবাক হয়ে যেত।
মা’ শিখার দিকে তাকিয়ে বলল, সত্যি বলছি। তুমি চেষ্টা করো। দেবের কাছ থেকে তালিম নাও। দেখবে তুমিও গাইতে পারবে।
বিদিশা বলল, এতদিনে তো গানটা শিখেই নিতে পারতাম। কি যে ভুল করলাম।
মা বলল, যা হয়ে গেছে, তা গেছে। পুরোনো কথা আর মনে রাখতে নেই। ভবিষ্যতের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকতে হয়। অতীত কখনও বাঁচার পথ দেখায় না। এই আমাকে দেখছো না? আমি কেমন তোমাদের দুজনকে দেখে সব কষ্ট ভুলে গেছি।
আমি বললাম, তাহলে একটু আগে কাঁদছিলে কেন তুমি?
মা বলল, সন্তানের কষ্টে মা য়ের যেমন চোখে জল আসে, তেমনি সন্তানের আনন্দেও চোখ দিয়ে জল পড়ে। ন’ মাস আমি তোকে পেটে ধরে রেখেছিলাম, আমি কাঁদবো না তো কে কাঁদবে?
আমি আর বিদিশা দুজনেই উঠে গিয়ে মা’ কে দুপাশ থেকে জড়িয়ে ধরলাম। মা’ য়ের গালে দুপাশ থেকে চুমু খেলাম। মা বলল, হয়েছে হয়েছে। এবার দুজনে মিলে গল্প করো তো দেখি। আমি পাশের ঘরে যাই।
আমি আর বিদিশা দুজনেই মা’ কে আটকানোর চেষ্টা করছিলাম। মা নিজেই শুনলো না। যাবার আগে শুধু বলল, বেশি রাত্রি জাগিস না। তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়িস দুজনে।
ঘর থেকে আপাতত প্রস্থান করলো মা। আমি আসতে আসতে বিদিশার কাছে এগিয়ে গেলাম। বিদিশা বলল, কি ভয় পেয়ে গেছিলাম। আমাকে গাইতে বলছে মা। আমি কি পারি?
আমি বললাম, কেন ভালই তো গাইলে। শিখার থেকেও কোন অংশে কম কিসের?
দূর তুমিও রসিকতা করো। শিখা রীতিমতন রেওয়াজ করে। আমি কি রেওয়াজ করি?
-তুমি কখনও একা গাইতেই পারবে না। রেওয়াজও নয়। আমি পাশে না থাকলে।
-তাই বুঝি? আর তুমি তখন হারমোনিয়াম বাজাবে? আমার সাথে গলা মেলাবে?
- আমি তোমার হাতে হাত ধরে তোমাকে হারমোনিয়াম বাজাও শেখাবো।
- উম। বুঝেছি, আর কি কি করবেন গায়ক মশাই?
-কেন? গাইতে গাইতেও প্রেম করবো, তোমাকে আদর করবো। তোমার গলায় চুমু খাবো। তোমার শরীর স্পর্ষ করবো। আর কত কি?
- হু বুজেছি। গান শেখানোটা একটা বাহানা। ওই কাজগুলোই আসল।
হেসে বললাম, পৃথিবীতে প্রেমের কোন বিকল্প আছে কি? সব কিছুতেই প্রেম বিরাজমান। জীবন মানেই প্রেম ময়।
-থাক আর প্রেম করতে হবে না।
বিদিশা একটু দূরে চলে যাচ্ছিল। ওর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে আমি শচীন দেব বর্মনের একটা গান ধরলাম।