জীবনচক্র (নতুন আপডেট নং ৯) - অধ্যায় ১০
এই শুনছো!! স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন মিসেস শিউলি,
হুম বলো,
কালকে রাতে খলিল ভাই ফোন করেছিলো, তোমার খবর নেয়ার জন্য, স্বামীকে জানালেন মিসেস শিউলি,
ওহ, আমাকে দিলে না তো, কথা বলতাম, অনেক দিন কথা হয় না খলিলের সাথে, চা এর কাপে চুমুক দিতে দিতে বললেন মজুমদার সাহেব,
আরে তুমি তো ঘুমিয়ে গিয়েছিলে, বললেন মিসেস শিউলি,
ওহ, এত রাতে কল দিয়েছিলো! অবাক হন মজুমদার সাহেব,
তোমার জন্য অনেক রাত, আজকাল রাত ১১ টা কোনো রাত হলো, আর উনি ব্যাবসায়ী মানুষ, সারাদিন কাজে ব্যাস্ত থাকে, রাতে যে ফোন করেছে এটাই তো অনেক, খলিল সাহেবের সাফাই গেয়ে বললেন মিসেস শিউলি,
তা ঠিক বলেছো, ওষুধগুলোর কারণে অনেক ঘুম পায়, তো আর কি বললো খলিল? জিজ্ঞেস করলেন মজুমদার সাহেব,
আরে আর বলো না, কথায় কথায় বলছি যে ধান সিদ্ধ করেছি, ওগুলো শুকাতে হবে, উনি বলছেন ধান উনি লোক পাঠিয়ে উনার মি'লে নিয়ে যাবেন, চাল পাঠিয়ে দিবেন, অনেক না করেছি, কিন্তু উনি শুনলো না, বলেছেন উনি লোক পাঠিয়ে নিয়ে যাবেনই, এ ব্যাপারে তুমি কি বলো? স্বামীর মতামত জানতে চাইলেন মিসেস শিউলি,
এটা তো ভালোই হয়, তবে একটা মানুষের কাছে কত সাহায্য নেয়া যায়? তোমারও অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে এদিকে, কিন্তু আমি ভাবছি পাড়া-প্রতিবেশীরা কি বলবে?
পাড়া-প্রতিবেশীরা কি বলবে মানে? স্বামীর কথার জবাবে উল্টো প্রশ্ন করেন মিসেস শিউলি,
এই যে তিনি এত সাহায্য করছেন, কি না কি মনে করে মানুষ, জবাব দিলেন মজুমদার সাহেব,
মানুষ জানবে কি করে, কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবো এ বছর তুমি অসুস্থ, তাই ধান বাড়িতে সিদ্ধ না করে মি'লে দিয়ে দিচ্ছি, বললেন মিসেস শিউলি,
যা ভালো মনে করো, করো, সময় খারাপ এখন আমাদের, এসব মেনে নিতেই হবে, হতাশ গলায় বললেন মজুমদার সাহেব,
স্বামীর কথায় কষ্ট পান মিসেস শিউলি, বলেন আহা, এভাবে বলছো কেন? উনি তো নিজ থেকে সাহায্য করতেছেন, আমরা তো কারো কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাতি নি তাই না, স্বামীকে শান্তনা দেন মিসেস শিউলি,
পা টা আরেকটু তাড়াতাড়ি সেরে উঠলে ভালো হতো, বুঝেছো শিউলি, দোকানটা তো এত দিন এভাবে ফেলে রাখা যায় না, স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন মজুমদার সাহেব,
তুমি শুধু শুধু এত চিন্তা করতেছো, জমি বিক্রি করলেই দেনা পরিশোধ হয়ে যাবে, আস্তে ধীরে সুস্থ হয়ে তুমি ভালোভাবে ব্যাবসাটা আবার শুরু করলেই সব কিছু আগের মত ঠিক হয়ে যাবে, এত টেনশনের কিছু নেই। সব কিছু ঠিক আছে যেন কিছুই হয় নি এমন ভাব করে বললেন মিসেস শিউলি,
তোমার মত নারী স্ত্রী হিসেবে পেয়েই আমার মত দুর্বল মনের মানুষও মনে কিছুটা সাহস পাই, তুমি আমার জিবনে না থাকলে যে কি হতো! বললেন মজুমদার সাহেব,
আমি না থাকলে কি হতো মানে? তার মানে অন্য কেউ থাকতো, শখ কতো! অন্য কারো চিন্তা করো কিভাবে? মৃদু রাগ দেখিয়ে বললেন মিসেস শিউলি,
স্ত্রীকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে গালে, আর গলায় চুমু খেয়ে মজুমদার সাহেব বললেন, রাগ করো কেন? আমি কি তাই বলেছি নাকি, বলে নিজের মুখ টা স্ত্রীর চুলে ঘষতে লাগলেন তিনি,
এই কি করছো, ছাড়ো, ছেলে আছে বাড়িতে, বয়স বাড়তেছে আর প্রেম বাড়তেছে উনার, কপট রাগী গলায় বললেন মিসেস শিউলি,
এমন সময় শাওন ঘরে ঢুকতেই দূরে সরে গেলেন মিসেস শিউলি, আব্বু আম্মু কে অপ্রস্তুত অবস্থায় দেখে এক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে থেকে শাওন বললো আম্মু! একজন ভ্যানওয়ালা আসছে, বাহিরে আসো,
দেখো আব্বু! তুমি যাই বলো না কেন, তুমি নতুন বাসার কাজে যতদিন না হাত দিবে ততদিন আমি বাড়ি যাবো না,
বাজার থেকে ২ কি,লো ভিতরে এই পুরাতন বাসায় আমি যাব না বলে দিলাম, আমার সব বন্ধু-বান্ধব এর বাড়ি বাজারের আশে পাশে, রাগে একটানা ফোনে কথা গুলো বলল আকাশ,
আমি তো বলি নি যে বাসা করবো না, কিন্তু তান জন্য তো বাজারের পাশে একটা ভালো জমি কেনা লাগবে, যেখানে সেখানে তো ডুপ্লেক্স তুলে ফেললেই সেটা সুন্দর দেখাবে না, আকাশ কে বুঝাতে চেষ্টা করলেন খলিল চৌধুরী,
কি বললে? ডুপ্লেক্স করবে! সত্যি নাকি মজা করতেছো? অবাক হয় আকাশ,
করবো যখন ডুপ্লেক্সই করবো, তোর বিয়ের সময় হয়ে যাচ্ছে, ভালো বাসা না হলে আজকাল ভালো ফ্যামিলির মেয়ে পাওয়া যায় না, মজা করে বললেন খলিল চৌধুরী
তোমাকে কে বললো আমার বিয়ের সময় হয়ে যাচ্ছে? আর কে বলছে ভালো মেয়ে পেতে গেলে ভালো বাসা লাগবে, আমার জন্য তোমার মেয়ে খুঁজতে হবে না, বিরক্ত হয়ে বলে আকাশ,
তার মানে নিজেই খুঁজে নিয়েছিস, সেটা আবার আমাকে বলছিস, ঢাকা গিয়ে ভালোই উন্নতি হয়েছে তাহলে, গম্ভীর গলায় বললেন খলিল চৌধুরী,
আমি এটা কখন বললাম, সবসময় এক লাইন বেশি বুঝবে না তো, আর বলে দিলাম জমি কিনে যেদিন ফাউন্ডেশন দেয়ার লোক আসবে সেদিন আমি বাড়ি যাবো তার আগে না, টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে টাকা পাঠিয়ে দিও,
এখন রাখি, বলে কল কেটে দিলো আকাশ।
উঠানে এসে শিউলি বেগম দেখলেন ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রতন,
ভাবি! আমি রতন, খলিল ভাই পাঠালো, কিছু ধান নাকি নিয়ে যাওয়া লাগবে,
মিসেস শিউলি ধান গুলো দেখিয়ে দিলেন,
রতন একা হাতেই সব ধান বস্তায় ভরে ভ্যানে তুলে নিয়ে চলে গেলো মি'লে,
লোক পাঠিয়েছেন, সে এসে ধান নিয়ে যাবে এমনই কথা হয়েছে, খলিল চৌধুরী কে এটা নতুন করে জানানোর কিছু নেই, তবুও খলিল চৌধুরীকে কল করে জানানোর ইচ্ছা হলো মিসেস শিউলির,
আকাশের সাথে কথা বলে খলিল চৌধুরী ম্যানেজার কে বললেন আপনাকে যে বলেছিলাম জমির খোঁজ-খবর নিতে, কিছু সন্ধান করতে পেরেছেন?
হুম ভাইজান, দেখেছি, বাজারে জানাজানি হয়ে গিয়েছে আপনি জমি কিনবেন, সবাই এখন বেশি চায় দাম,
দেখেন কিছু বেশি দিয়ে নেওয়া যায় কিনা, অতিরিক্ত চাইলে কথা বাড়াবেন না, কথা বলুন তাড়াতাড়ি,
খলিল চৌধুরী অনেক টাকার মালিক, বাজারের আশে পাশে যে কোনো জমি উনি চাইলেই দশগুন বেশি টাকা দিয়ে কিনে নিতে পারেন, কিন্তু তিনি তা করবেন না, সঠিক জিনিস সঠিক দামে কিনতে পারেন বলেই তিনি জীবনে এত উন্নতি করেছেন,
খলিল চৌধুরীর ফোনে কল আসলো, তাকিয়ে দেখলেন মিসেস শিউলি ফোন করেছে, উনি তো নিজ থেকে কখনো কল দেন না, আবার কোনো বিপদ হলো না তো?
আপনি এখন যেতে পারেন, ম্যানেজার কে বলে কল রিসিভ করলেন খলিল চৌধুরী,
হ্যালো, হটাৎ ফোন দিলেন, কোনো সমস্যা হয় নি তো? ফোন কানে নিয়েই জিজ্ঞেস করলেন খলিল চৌধুরী,
কেন,কোন সমস্যায় পরলেই আপনাকে ফোন করা যাবে, এমনি ফোন করা যায় না? বললেন মিসেস শিউলি,
মিসেস শিউলির মুখে একথা শুনে একটা ভালো লাগা কাজ করে খলিল চৌধুরীর মনে,
বললেন, আরে না না, ফোন করতে পারবেন না কেন? এমনি আপনি নিজে থেকে কখনো কল করেন না তাই জিজ্ঞেস করলাম,
হুম বুঝেছি, আপনার লোক এসে ধান নিয়ে গিয়েছে, এটা জানাতেই ফোন করেছি, এখন রাখছি, বললেন মিসেস শিউলি,
আরে এত ব্যস্ত হচ্ছেন কেন? ফোন যখন করেছেন একটু কথা বলি, আবদার করলেন খলিল চৌধুরী,
এখন কিভাবে কথা বলবো, সুমনের বাবা তো সজাগ,উত্তর দিলেন মিসেস শিউলি,!
তো কি হয়েছে আপনি এমন ভাবে বলছেন যে, আমরা দু'জন সদ্য হাই-স্কুলে উঠা দুই ছেলে মেয়ে,যারা নিজের বাবা মা কে লুকিয়ে প্রেম করছে,
একথা শুনে ফিক করে হেসে উঠলেন মিসেস শিউলি, বললেন আপনিও না খলিল ভাই, এমন মজা করতে পারেন,
আপনি হাসতেও পারেন? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন খলিল সাহেব,
কেন,হাসতে পারব না কেন, আমার তো হাসার জন্য দাঁত, ঠোঁট দুটোই আছে, হাসতে কি সমস্যা? জিজ্ঞেস করলেন মিসেস শিউলি,
না, কখনো হাসতে দেখি নি তো, আজকেও অবশ্য দেখি নি, শুধু শুনলাম, আর দেখবোই বা কি করে, ছিলামই তো একদিন আপনার সাথে, আর তখন হাসার মত অবস্থাও ছিল না, তো ম্যাডাম, কষ্ট করে আপনার উজ্জ্বল দাঁত আর পাতলা ঠোঁট গুলো ব্যাবহার করে একটু হাসলেও তো আমার মত একা মানুষ একটু সুখ পায়, দিল মন শান্ত হয়, অনেকগুলো কথা বলে ফেললেন খলিল চৌধুরী,
এমন প্রশংসামূলক কথা শুনে ভালো লাগে মিসেস শিউলির,
মিসেস শিউলি আবার মৃদু আওয়াজে হেসে বললেন, কি যে বলেন খলিল ভাই, আমি হাসলে আপনার সুখ হবে কিভাবে, আর দিল-মনই বা শান্ত হবে কেন?
আপনার সাথে কথা বললেই আমার অন্তরে প্রশান্তি বিরাজ করে, এখন তার সাথে যোগ হয়েছে আপনার ভুবন ভোলানো হাসি, দিল-মন শান্ত হয়ে এখন আবার উত্থাল -পাতাল করছে মন, আপনার হাসিটা একটা বার সামনে থেকে দেখার জন্য, আপনি এমনিতেও অনেক সুন্দর হাসলে না জানি কত সুন্দর লাগবে,
মন্ত্র মুগ্ধের মত ফোন কানে নিয়ে খলিল চৌধুরীর কথা গুলো শুনতে লাগলেন মিসেস শিউলি, শাড়ির আঁচল এ কামড় দিয়ে বললেন আপনি মনে হয় ওই যে পাম নাকি কি যেন বলে মানুষ, ওটা দিচ্ছেন,
আপনি যা মনে করেন তাই, তবে আমি সুন্দর কে সুন্দর না বললেও সুন্দর সুন্দরই থাকবে, আর সৌন্দর্যের প্রশংসা না করলে সেই পাপে পাপী হয়ে যাব আমি, খলিল সাহেব যেন সদ্য প্রেমে পরা নবাগত কবি হয়ে গিয়েছেন,
হয়েছে, হয়েছে, আপনার এসব উঁচুমানের কথার আগা-মাথা কিছুই আমি বুঝতে পারি না, এখন রাখছি, আপনার সাথে কথা বলার পাল্লায় পরে সব কাজ গোল্লায় গেলো আমার, প্রশ্রয়ের সুরে বললেন মিসেস শিউলি,
সবসময় রাখছি বলেই ফোন কেটে দেন মিসেস শিউলি, কিন্তু এখন কাটলেন না,
এত কাজ করে কি হবে বলেন তো, প্রশ্ন করলেন খলিল চৌধুরী,
তো সব কাজ ফেলে রেখে শুধু সারাদিন আপনার সাথে কথা বলবো নাকি? হাসেন মিসেস শিউলি,
আপনি আমার সাথে সারাদিন কথা বলবেন এমন কপাল নিয়ে তো আমি জন্মাইনি, আফসোস করে বললেন খলিল চৌধুরী,
এই রাতে তো কথা হবেই, এখন রেখে দেই, আবদারের সুরে বললেন মিসেস শিউলি,
না কাটলে হয় না ফোনটা? জিজ্ঞেস করলেন খলিল চৌধুরী,
অনেক কাজ পরে আছে যে, খলিল চৌধুরী কে বুঝাতে চেষ্টা করেন মিসেস শিউলি,
আচ্ছা তাহলে একবার হাসি দিয়ে ফোন রাখুন, আবদার করেন খলিল চৌধুরী,
ধুর কোনো কারণ ছাড়া হাসা যায় নাকি? বলেই ফিক করে হেসে দিলেন মিসেস শিউলি,
এই তো হেসেছেন, আপনি কারণ ছাড়াই হাসবেন, আমার জন্য হাসবেন, সবসময় হাসবেন, হাসলে ভালো লাগে আপনাকে,
খলিল সাহেবের একথা শুনে মিসেস শিউলি শুধু বললেন আচ্ছা, বলেই ফোন রেখে দিলেন, মুখে তার এক গাল মুচকি হাঁসি,
কম বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়া মিসেস শিউলির জীবনে কখনো প্রেম আসে নি, বিয়ের পর যতদিন শাশুড়ী বেঁচে ছিলেন তার ভয়েই তটস্থ থাকতেন তিনি, সব কিছু ঠিকভাবে করলেও কটু কথা শুনতে হতো মিসেস শিউলির, তার গায়ে হাত ও তোলা হয়েছে, সব কিছু নিরবে সহ্য করেছেন, কিছু করারও ছিলো না, তখন এখনকার মত এত কড়া নারী নির্যাতন আইন ও ছিল না , আর দশটা মা ভক্ত ছেলের মতই মজুমদার সাহেবও এসবের তেমন কোনো প্রতিবাদ করতেন না তখন, নারী হলে এসব একটু আধটু সহ্য করতেই হবে বিষয়টা যেন এমনই, তবে মা অসুস্থ হওয়ার পর নির্যাতিত এই কম পড়াশোনা জানা মহিলাটাই যখন দিন রাত এক করে শাশুড়ীর সেবা করতে শুরু করলেন, বিছনায় শয্যাশায়ী হয়ে যখন বিছানা নষ্ট করা শুরু করলেন তার মা সেটাও কোনো ঘৃনা ছাড়াই পরিষ্কার করা শুরু করলেন তখন মজুমদার সাহেব বুঝেছেন এই মানুষটা ছাড়া আসলে তিনি সামনে এক কদমও ফেলতে পারবেন না, এসব নিয়ে অনুতাপ ও কাজ করে মজুমদার সাহেব এর মধ্যে, কিন্তু কখনো মুখ ফুটে মাফ চান নি তিনি, যদিও এখন মাঝে মাঝেই চিন্তা করেন, কখনো তার স্ত্রী এসব নিয়ে তার কাছে অভিযোগ করেন নি, এমন কোনো কিছু আবদার করেন নি যেটা পূরণ করতে মজুমদার সাহেব এর কষ্ট হয়ে যায়, স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাইতে মন চায় তার, কিন্তু কখনো মুখ ফুটে বলতে পারেন নি,
তাই খলিল চৌধুরীর এসব মন ভোলানো কথা-বার্তা তার কাছে একদম নতুন, কারণ স্বামী এখন তার প্রতি অনেক দায়িত্বশীল হওয়া সত্ত্বেও সাদামাটা মজুমদার সাহেব এর মুখ দিয়ে এমন কথা বের হয় না,
এই শাওন! আজকে কিন্তু বেশি ঠান্ডা পরেছে, শীতের কাপড় পরে নে, সন্ধার একটু আগে শাওন কে বললেন মিসেস শিউলি,
আম্মু আজকে পিঠা বানাও না! আবদার করে ছোট্ট শাওন,
উম আমার আব্বুটা পিঠা খাবে, কি পিঠা বানাবো আব্বু?
চিতই পিঠা, ছোট করে জবাব দেয় শাওন,
আব্বুর কাছে গিয়ে বসো, আমি পিঠা বানাচ্ছি, তারপর খেয়ে কিন্তু পড়তে বসবে, না হলে কিন্তু আম্মু অনেক রাগ করব,
আচ্ছা আম্মু, তুমি পিঠা বানাও, আমি গেম খেলব,
আব্বুর পাশে বসে গিয়ে খেলো যাও,
রান্না ঘরে বসে পিঠার সব কিছু ব্যবস্থা করে এখন পিঠা চুলোতে দিবেন মিসেস শিউলি, এমন সময় শাওন এসে বললো, আম্মু, আম্মু! খলিল আঙ্কেল এসেছে,
কি বলো আব্বু, যাও আঙ্কেলকে বসতে বলো, গিয়ে বলো আম্মু আসতেছে,
মিসেস শিউলি কে দেখেই উঠে দাঁডালেন খলিল চৌধুরী,
বসুন বসুন খলিল ভাই, আপনি হটাৎ আসলেন, বলে আসবেন তো, বললেন মিসেস শিউলি,
আসলে শহরে গিয়েছিলাম, এদিক দিয়ে ফিরছি, ভাবলাম মজুমদার ভাইকে অনেক দিন দেখে যাওয়া হয় না একটু দেখে যাই, আর এগুলো রাখুন,
বিভিন্ন ধরনের ফল-মুল আর কয়েকটা মিষ্টির প্যাকেট,
এগুলো আবার আনতে গেলেন কেন শুধু শুধু কষ্ট করে,
প্যাকেট গুলো নিতে নিতে বললেন মিসেস শিউলি,
এখন মজুমদার ভাই কেমন আছেন? জিজ্ঞেস করলেন খলিল চৌধুরী,
জ্বি ভালো, শাওন আঙ্কেলকে আব্বুর রুমে নিয়ে যাও, খলিল ভাই! আপনি আপনার ভাইয়ের সাথে কথা বলুন, আমি চা করে আনছি,
খলিল চৌধুরীকে দেখে শোয়া থেকে বসতে চাচ্ছিলেন মজুমদার সাহেব,
আরে ভাই বসা লাগবে না, বসা লাগবে না, বললেন খলিল চৌধুরী,
তবুও উঠে বসলেন মজুমদার সাহেব, বললেন বসতে পারি, কোনো সমস্যা হয় না,
তো ভাই সাহেব এখন কেমন আছেন? জিজ্ঞেস করলেন খলিল চৌধুরী,
আগের থেকে অনেক ভালো, এখন নিজে থেকে হাঁটতে পারলেই আর কোনো সমস্যা হবে না, জবাব দেন মজুমদার সাহেব,
আমি বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে আছি, এমন সময় আপনাদের পাশে থাকতে পারছি না,
খলিল সাহেবের কথার উত্তরে মজুমদার সাহেব বললেন কি যে বল খলিল! তুমি যা করেছো আমাদের জন্য তার কোনো জবাব হয় না, তারপরও এখন নিজ থেকে খোঁজ নিচ্ছো,
আচ্ছা মজুমদার ভাই, বাজার আর মেইন রোডের পাশে যে একটা পুকুর ওই জমির মালিক কি আপনার সম্পর্কে কিছু হয়? জিজ্ঞেস করলেন খলিল চৌধুরী,
হুম ও তো আমার চাচাতো ভাই, উত্তর দেন মজুমদার সাহেব,
আসলে ওই জমিটা আমি কিনতে চাচ্ছি, একটা বাসা বানানো দরকার, যদি কথা বলে একটু রাজি করাতে পারতেন, তাহলে উপকার হতো আসলে, দাম নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না, বললেন খলিল চৌধুরী,
আচ্ছা আমি কথা বলবো, দাম তো একটু বেশিই চাইবে, ভালো জমি, পুকুর টা সহ কিনতে চাও নাকি?
হ্যাঁ, ওটা হলে আরো ভালো হয়, উত্তর দেন খলিল চৌধুরি,
এমন সময় চা আর পিঠা নিয়ে রুমে ঢুকেন মিসেস শিউলি,
খলিল ভাই, আপনি না জানিয়ে আসলেন, কিছুই করতে পারলাম না আপনার জন্য, পিঠা এগিয়ে দিতে দিতে বললেন মিসেস শিউলি,
মুরগির গোশতের ঝোল দিয়ে পিঠা মাখিয়ে মুখে নিয়েই খলিল চৌধুরী বললেন, আহ, কি রান্না করেছেন আপনি, আপনার হাতের রান্নার তুলনা নেই, এই জন্যই তো বলি মজুমদার ভাই এত এত তাড়াতাড়ি সুস্থ হচ্ছেন কিভাবে, এমন খাবার খেলে তো আরো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন,
আর বলবেন না খলিল ভাই, অসুস্থ হওয়ার পর থেকে এখন আরো খেতে পারে না, ভয় পায়, ডায়েবিটিস এর জন্য, বললেন মিসেস শিউলি,
আম্মু! আমাদের স্কুল থেকে পিকনিকে নিয়ে যাব, আমিও যাব, সাথে তোমাকেও যেতে হবে, বলে উঠলো শাওন,
তাই নাকি বাবু, কোথায় নিয়ে যাবে তোমাদের? জিজ্ঞেস করলেন খলিল চৌধুরী,
পাহাড়ে নিয়ে যাবে,
ছাড়েন তো এদের কথা, সুমন যখন পরে তখন থেকেই প্রতি বছর শিক্ষা সফরে নিয়ে যাবে বলে, একবারও যায় নি, গ্রামের অভিভাবকরা কি এত টাকা ফি দিয়ে বাচ্চাদের পাঠাবে নাকি, বললেন মিসেস শিউলি,
আজ তাহলে উঠি, উঠে দাঁড়ালেন খলিল চৌধুরী,
কি বলেন রাতে খাবেন না, খেয়ে যান, অনুরোধ করলেন মিসেস শিউলি,
না না, দেখেন এবছর কত তাড়াতাড়ি শীত পরে গেলে, যখন হাসপাতালে ছিলাম তখনও কত গরম ছিল, শীতের কোনো কাপড় ও পরি নি, দেরি হলে ঠান্ডা লাগবে, মজুমদার ভাই, ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করবেন, আর ওষুধগুলো খাবেন নিয়ম করে, আর জমির ব্যাপারটা একটু দেখবেন, আজ যাই,
রুম থেকে বের হলেন খলিল চৌধুরী আর মিসেস শিউলি, শাওন গেম খেলায় ব্যাস্ত, আজ আর পড়তে বসবে না ও,
একটু সোফায় বসুন, আপেল কেটে আনি বলেই মিসেস শিউলি আপেল কাটতে গেলেন,
এই নিন খলিল ভাই খান, টেবিলে আপেল রেখে বললেন মিসেস শিউলি,
আপনিও বসুন না, এদিকে বসুন, জায়গা করে দেন খলিল চৌধুরি,
আপেল খেতে খেতে খলিল চৌধুরী বললেন আপনি খাচ্ছেন না কেন? এটা খান বলে কাটা চামচে এক টুকরো আপেল বাড়িয়ে ধরলেন, উনার হাত থেকেই খেতে মন চেয়েছিলো মিসেস শিউলির, কিন্তু তিনি চামচ থেকে আপেলটা টান দিয়ে নিজের হাতে খেলেন,
উঠোনের টিনের গেট এ দাঁড়িয়ে খলিল চৌধুরী বললেন যেটার জন্য এসেছি সেটা কিন্তু এখনো পাই নি, মুচকি হেসে বললেন খলিল চৌধুরী,
কেন? আপনার ভাইয়ের সাথে তো দেখা হলোই, আর কি চান? ভনিতা করে বললেন মিসেস শিউলি,
ওই যে ফোনে বললাম আপনার হাসি-মুখটা দেখতে চাই, হাসুন না একটু,
আপনি না খলিল ভাই, কি যে পাগলামি করেন, বলে মুচকি হাসলেন মিসেস শিউলি,
একবুক ভালো লাগা নিয়ে গেট দিয়ে বের হলেন খলিল চৌধুরী,