জীবনচক্র (নতুন আপডেট নং ৯) - অধ্যায় ১১
হুম, হ্যালো খালামনি, খবর খুব ভালো, স্যার রাজি হয়েছেন, হ্যাঁ স্যার সময় আর প্লেস জানিয়ে দিবেন, আর খালামনি বেশি সময় নিয়ো না প্লিজ, বুঝোইতো অনেক ব্যাস্ত মানুষ, আচ্ছা এখন রাখছি, পরে আমি জানিয়ে দিবো,
কল কেটে রিমার দিকে তাকিয়ে নুসরাত বলে, বল! এখন কেমন আছিস?
রিমা কানাডা থেকে নিয়ে আসা নুসরাতের কিটকাটে কামড় দিয়ে বলে, ভালো আছি, আর কোন খালামনির সাথে কথা বললি, কে কিসে রাজি হয়েছে?
আরে বুশরা খালামনির সাথে কথা বললাম, উনি আমার স্যারের সাথে দেখা করতে চান, উত্তর দেয় নুসরাত,
তোর স্যার মানে তো সাইকোলোজিস্ট, তো উনার সাথে বুশরা খালামনির দেখা করার কি দরকার? আমাদের মধ্যে তো সবচেয়ে হ্যাপি ফ্যামিলি বুশরা খালামনিরাই! জিজ্ঞেস করে রিমা,
জানি না, খালামনি আমাকে বলছে খুব আর্জেন্ট দেখা করা লাগবে, তাই স্যার কে অনেক রিকুয়েষ্ট করে রাজি করিয়েছি, কি জন্য দেখা করবে আমাকে কিছু বলে নি, উত্তর দেয় নুসরাত,
যার যা খুশি করুক, আমি কারো কিছু হই না, আমার কোনো আত্মীয়র ও দরকার নেই, একা আছি বিন্দাস আছি, চকলেট খেতে খেতে বলে রিমা,
আচ্ছা রিমা, আমি কানাডা থেকে ঘুরে এলাম, তারপরও তুই আন্টির কথা মানে তোর আম্মুর কথা একবারও জিজ্ঞেস করলি না, জিজ্ঞেস এর সুরে বলে নুসরাত,
আমার কোনো আম্মু নেই, আমি কি জিজ্ঞেস করবো ওই মহিলার কথা! কর্কশ সুরে উত্তর দেয় রিমা,
আন্টির সাথে দেখা করেছি কানাডায়, তোর কথা অনেক জিজ্ঞেস করেছে, তোর জন্য দুঃখ প্রকাশও করেছে অনেক, তুই নাকি একদম কথা বলা বাদ দিয়ে দিয়েছিস, একবার কল করতে পারিস তো, একবার কথা বল না আন্টির সাথে, আন্টির ভালো লাগবে, অনুরোধ করে নুসরাত,
দেখ নুসরাত এমন কোনো কথা বলবি না যাতে আমার মুড খারাপ হয়, তোর সাথে নাটক করলো আর তুইও বিশ্বাস করলি, যে নিজের সন্তান কে ফেলে ২০ হাজার কিলোমিটার দূরে চলে যেতে পারে অন্য লোকের হাত ধরে তার মনে অন্তত সন্তানের প্রতি কোনো আবেগ-ভালোবাসা নেই, এসব কথা খবরদার আমাকে বলবি না, আর আমার প্রতি করুনা দেখানোর কিছু নেই, আমি অনেক ভালো আছি, রাগে গজগজ করতে করতে বললো রিমা,
এমন সময় রিমার ফোন আসলে রিমা নিজেকে শান্ত করে কল রিসিভ করে,
হ্যালো, কি করছো? জিজ্ঞেস করে আকাশ,
কিছু না, চকোলেট খাই, কাজিন কানাডা থেকে নিয়ে এসেছে, উত্তর দেয় রিমা,
সব একাই খেয়ে ফেলছো? নাকি আমার জন্য কিছু রেখেছো, মজা করে আকাশ,
সব খেয়ে ফেলেছি, আমি তোমাকে কিনে দিব, এগুলো দেয়া যাবে না, অন্য মেয়ের দেয়া চকলেট খেলে আবার তোমার অন্য ফিলিংস কাজ করতে পারে, খোঁচা মারে রিমা,
আচ্ছা, আচ্ছা চকলেট লাগবে না, দুপুরে খেয়েছো? জিজ্ঞেস করে আকাশ,
না এখনো খাইনি,
খাও নি মানে কি, ৪ টা বাজে, এখনই খাবা, খেয়ে আমাকে কল দিবা, রাখছি এখন, খেয়ে নাও তাড়াতাড়ি, বলে ফোন রাখে আকাশ,
তুই ভাত খাবি নুসরাত?
না, খেয়ে এসেছি, জবাব দেয় নুসরাত,
বস আমি আসছি,
প্লেটে করে ভাত নিয়ে আসার পর নুসরাত বলে ছেলেটা কে রে? এক কথায় খেতে বসে পড়েছিস, কারো কথা শুনিস না, আর ও বলতেই এক সেকেন্ড ও লেট করলি না, ব্যাপার টা কি, জিজ্ঞেস করে নুসরাত,
কেউ না, জাস্ট ফ্রেন্ড, উত্তর দেয় রিমা,
বাহ ভালো তো, জাস্ট ফ্রেন্ড হয়েই এত কেয়ার নেয় তাহলে বুঝ জামাই বানালে তোর কেমন খেয়াল রাখবে, মজা করে নুসরাত,
ওর তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, আমার মত মেয়েকে ও বিয়ে করবে! উত্তর দেয় রিমা,
তারমানে তোর দিক থেকে তুই রাজি, আর তোর মত মেয়ে মানে কি বলতে চাস, তুই যথেষ্ট সুন্দরী আর ভদ্র একটা মেয়ে, জোর দিয়ে বলে নুসরাত,
সুন্দরী হতে পারি তবে ভদ্র নই, খেতে খেতে জবাব দেয় রিমা,
ফুপ্পি প্লিজ আর দিও না তো, আর খেতে পারবো না, পাপা এসে পড়বে, এয়ারপোর্টে যেতে লেট হয়ে যাবে আমার, খেতে খেতে বললো অনন্যা,
এখনো অনেক সময় আছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যাবি, ২০ মিনিট ও লাগবে না, আরো কিছুটা পোলাও অনন্যার প্লেটে দিয়ে বলে তার ফুপ্পি,
এসময় অনন্যার ফুপাতো ভাই এর বউ এসে বলে পাপা আসলে আর আমাদের দরকার নেই তাই না,
এভাবে বলতেছো কেন ভাবি? পাপা কতদিন পরে দেশে আসতেছে বলোতো, ভাবির কথার জবাব দেয় অনন্যা,
এই মেয়ে বলে কি, তোমার পাপা মাত্র ২ সপ্তাহ হয় কানাডা গিয়েছে, হেসে হেসে বলে ভাবি,
ভাবি পাপা না থাকলে আমার জন্য ২ সপ্তাহই অনেক টাইম, মন খারাপ করে বলে অনন্যা,
আরে মেয়ে মন খারাপ করছো কেন, আমি তো মজা করে বললাম, আরেকটা কথা, সাদী একদম পড়তে বসে না, এ বছর ৫ এ উঠে যাবে এখন তো হেলায় ফেলায় সময় নষ্ট করা যায় না, তো ওর জন্য একটা টিউশন টিচার ঠিক করে দাও না, অনন্যা কে নিজের ছেলের ব্যাপারে বলে ভাবি,
বুয়েটিয়ান,ঢা,বি, নাকি ঢাক মেডিকেলে পড়ুয়া স্টুডেন্ট লাগবে তোমার ছেলের টিউশন টিচার হিসেবে, জিজ্ঞেস করে অনন্যা,
এসব বুয়েটের, ঢা,বি বুঝি না আমি, ক্লাস ৪ এর বাচ্চাকে সবাই পড়াতে পারে, আমার এমন টিচার চাই যে সপ্তাহে ৫ দিন পড়াবে, উত্তর দেয় ভাবি,
কি বলো ভাবি, সপ্তাহে ৫ দিন কেউ পড়ায় নাকি, তারপর একটু চিন্তা করে অনন্যা বলে একজন আছে, আমাদের ভার্সিটিতে পড়ে, টপার বলতে পারো, ওর সাথে কথা বলে দেখতে পারি, ও রাজি হলে চলবে?
হুম বাবা, ৫ দিন এসে পড়িয়ে গেলেই হবে, উত্তর দেয় ভাবি,
ভাবি ৫ দিন, সেলারী টা একটু বুঝেশুনে দিও, অনুরোধ করে অনন্যা,
আরে আমার নাতি কে যে পড়াবে তাকে কি কম দিব নাকি বলে উঠে অনন্যার ফুপ্পি,
ফুপ্পি, ভাবি, আমি গেলাম, পাপা কে নিয়ে পরশু আসবো, এখন যাই,টাটা,
কি রে তোর পাপা ফিরেছে দেশে? মিল্ক শেকে চুমুক দিতে দিতে অনন্যা কে জিজ্ঞেস করে সাদিয়া,
হুম কালকেই তো ফিরলো পাপা, উত্তর দেয় অনন্যা,
তোর পাপা ফিরলো, কিন্তু তোর বয়ফ্রেন্ড এখনো ফিরলো না, মিটমিট করে হেসে বলে সাদিয়া,
ছাড় তো, কে আমার বয়ফ্রেন্ড, যার কাছে আমার কোনো গুরুত্ব নাই তাকে বয়ফ্রেন্ড ভাবা যায় নাকি, মন খারাপ করে বলে অনন্যা,
কি বলিস, তুই না ওকে ছাড়া বাঁচবিই না, ওকে তোর লাগবেই, এখন এমন কথা বলছিস কেন, নাকি অন্য কারো প্রতি মন ঢলেছে? জিজ্ঞেস করে সাদিয়া,
দেখ সাদিয়া, তুই এটা কিভাবে বললি, তুই তো জানিস, ওর প্রতি আমি কেমন সিরিয়াস, জানিস সুমন যাওয়ার এক মাসের উপর হয়ে গিয়েছে একবার ফোনও করে নি ও, আসলে আমার প্রতি ওর কোনো টান কাজ করে না, শুধু শুধু জোর করে লাভ আছে বল, মন খারাপ করে বলে অনন্যা,
মন খারাপ করছিস কেন, আর হাল ছেড়ে দিচ্ছিস কেন, আর তুইও তো ফোন করতে পারতি, করলি না কেন?
সাদিয়ার প্রশ্নের জবাবে অনন্যা বলে ওর বাবা অসুস্থ তাই বাড়ি গিয়েছে, এমন সময় ফোন দিলে বিরক্ত হতে পারে, খারাপ কিছু হলেও তো একবার ফোন দিয়ে জানাতে পারতো, আসলে কাউকে তো আর জোর করে ভালো লাগাতে পারবো না, আমাকে পছন্দ না হলে আমার তো আর করার কিছু নেই,
দেখ তোকে পছন্দ না করার তো কিছু নেই, ক্লাসের সব ছেলে তোর জন্য পাগল, এমনও তো হতে পারে যে,সুমন যেভাবে চায় বা যেমন পছন্দ করে তুই ওভাবে ওর সামনে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারছিস না, অনন্যা কে বুঝায় সাদিয়া,
উপস্থাপন করা মানে? আর ওর পছন্দ-অপছন্দ আমি জানি নাকি, ও তো ঠিকমতো আমার সাথে কথাও বলে না, বিরক্ত হয়ে বলে অনন্যা,
মনে কর ড্রেস-আপ চলা ফেরা এসব আর কি, অনন্যাকে বলে সাদিয়া,
ড্রেস আপ কি করবো, এখন কি ওর সামনে আমার গা দেখানো সেক্সি ড্রেস পরে যেতে হবে নাকি ওর মন পাওয়ার জন্য? আরো বিরক্ত হয়ে বলে অনন্যা,
আসলে তুই একটা হাদারাম, একটু চিন্তা করে দেখ ও গ্রামের ছেলে, ও অন্য একটা সমাজ-কালচারে বড় হয়েছে, ওর পরিবার তো ওই সমাজে বাস করে, ও কিভাবে তোর মত ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়া এমন মর্ডান মেয়ে কে নিজের জীবনসঙ্গিনী হিসেবে চয়েস করবে বল তো? আর ছেলেরা সব মেয়েকে সেক্সী ড্রেস এ পছন্দ করলেও নিজেরটার বেলায় সহ্য করতে পারে না,
সাদিয়ার কথা শুনে অনন্যা বলে তাহলে কি তোর মত বোরকা, হিজাব পরবো?
পরলে তো ভালোই, না হলে অন্তত সেলোয়ার কামিজ বা ট্রেডিশনাল বাঙালি ড্রেস এ ওর সামনে যা, ওর এক্সপ্রেশন দেখলেই তো বুঝবি ওর কাছে ভালো লেগেছে কিনা,
তাহলে চল আমার সাথে, দাঁড়িয়ে বলে অনন্যা,
কোথায় যাবো, জিজ্ঞেস করে সাদিয়া,
কোথায় আবার, ড্রেস কিনতে, তুই পছন্দ করে দিবি, চল এখন, তাড়া দেয় অনন্যা,
একটু আগেই না বললি ওকে তুই বয়ফ্রেন্ড ভাবিস না, এখন আবার বলছিস ড্রেস কিনতে যাবি, খোঁচা দেয় সাদিয়া,
আরে চল তো, সাদিয়া কে টেনে তুলে অনন্যা,
ক্যাম্পাস থেকে ফিরে ব্যাগটা টেবিলে ছুড়ে মারলো সুমন, সিগারেট ধরিয়ে আকাশকে বললো অনন্যার কোনো খোঁজ জানিস?
ক্যাম্পাসে গেলি তুই, আমি কিভাবে খোঁজ জানবো, উত্তর দেয় আকাশ,
আরে ক্যাম্পাসে আসে নি তো অনন্যা আজকে, দেখলাম না, তোকে ফোন করেছিলো এর মধ্যে আবার ও? জিজ্ঞেস করে সুমন,
না, আমাকে ফোন করে নি,
সুমনের খারাপ লাগে, একবারও ওর খবর নিলো না মেয়েটা, আবার নিজেই মন কে বুঝায় এটাই তো ভালো হয়েছে, ঝামেলা চুকে গেলো,
এমন সময় ক্লাস এর মেসেঞ্জার গ্রুপে সুমন কে মেনশন দিয়ে একটা ম্যাথ এর সমাধান চায় একজন,
কাগজ কলম নিয়ে ম্যাথ টা চোখের নিমেষে সমাধান করে পিকচার তুলে গ্রুপে দিয়ে দেয় সুমন,
গ্রুপে সুমনের মেসেজ দেখে অনন্যা বুঝে সুমন ঢাকায় ফিরেছে, তবুও ওকে একটা বার ফোন করলো না ও, রাগ লাগে অনন্যার,
অনন্যা সিন করেছে দেখে গ্রুপ মেম্বার এ গিয়ে অনন্যার নামের উপর ক্লিক করে ওর হাসি মাখা মুখটা দেখে সুমন,
নাহ একবার কল দিতেই হবে, আকাশের সামনে কল দিলে শালা মজা নিবে, ব্যালকনিতে গিয়ে অনন্যার নাম্বারে কল দেয় সুমন,
সুমুনের নাম্বার স্ক্রিনে দেখে খুব রাগ লাগে অনন্যার, প্রচন্ড অভিমান মেশানো এই রাগ,
অনন্যার মুখে হ্যালো শুনে কিছুক্ষণ চুপ হয়ে থাকে সুমন,
তারপর বলে কেমন আছো?
আমি কেমন আছি সেটা জেনে তোমার কোনো দরকার আছে?
অনন্যার ঝাঁজ মেশানো গলায় এই প্রশ্ন শুনে চুপ হয়ে থাকে সুমন,
আর কিছু বলবে? না বললে রাখছি,
দেখা করবে আমার সাথে একবার? অনুরোধ করে সুমন,
আমার কাছে তোমার কোনো প্রয়োজন নেই আমি জানি, আর আমারও কোনো দরকার নেই, দেখা করতে পারবো না, বলে ফোন কেটে দেয় অনন্যা,
সুমন ব্যালকনি থেকে আকাশের মেঘের দিকে তাকিয়ে ভাবে পরিস্থিতির শিকার হয়ে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে তার প্রথম ভালো লাগা,,
খলিল চৌধুরী বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর রাতের রান্না করার জন্য কিচেনে গেলেন মিসেস শিউলি, মাছ কুঁটতে কুঁটতে গুনগুন করে একটা গান গাইতে লাগলেন, তার গানের গলা যথেষ্ট ভালো, কিন্তু কখনো তিনি এভাবে মনের আনন্দে গান করেন না, আসলে ভিতর থেকে গান আসার জন্য মনের মধ্যে যে প্রফুল্লতা দরকার সেইরকমভাবে প্রফুল্ল হয়ে উঠে না কখনো তার মন, কিন্তু আজকে তার গলা ছেড়ে গান গাইতে মন চাচ্ছে, কেন চাচ্ছে সে কারণ তিনি খুঁজতে চান না,
রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে মিসেস শিউলি ফোন হাতে নিয়ে বলে উঠলেন সুমনটা এমন হইছে! আমি কল না করলে আম্মুকে একটা কলও করবে না,
অনন্যার সাথে কথা বলার পর থেকেই সারাদিন মনটা বিষন্ন ছিল সুমনের, তাই রাতে না খেয়েই শুয়ে পরলো সুমন, মোবাইল হাতে ফেসবুক স্ক্রল করার সময়ই তার মা'র ফোন আসলো,
হ্যালো সুমন! বাবা কেমন আছিস?
হুম আম্মু ভালো, তোমরা কেমন আছো? জিজ্ঞেস করে সুমন,
কিরে বাবা! তোর গলার আওয়াজ এমন লাগছে কেন! শরীর খারাপ করেছে নাকি? চিন্তিত গলায় বললেন মিসেস শিউলি,
আরে না আম্মু, এমনি শুয়ে পরেছিলাম তো, চোখে একটু ঘুম ঘুম এসে গিয়েছিলো, আব্বু আর শাওন কেমন আছে?
এমন সময় মিসেস শিউলির ফোনটা কেঁপে উঠলো, উনি তাকিয়ে দেখলেন খলিল চৌধুরীর কল,
হুম, তোর আব্বু আর শাওন ভালো আছে, উত্তর দেন মিসেস শিউলি,
আব্বুকে একটু দাও কথা বলি,
তোর আব্বু ঘুমিয়েছে কালকে কথা বলিস এখন রাখলাম, অন্য সবসময় মিসেস শিউলি কখনো সুমনের সাথে কথা বলার সময় নিজ থেকে ফোন কাটেন না, কিন্তু আজ নিজেই রাখছি বলে কল কেটে দিলেন, যেন খলিল চৌধুরীর কল বেশিক্ষণ ওয়েটিং এ রাখা যাবে না,
হ্যালো! শুয়ে পরেছেন? জিজ্ঞেস করেন খলিল চৌধুরী,
না, সুমনের সাথে কথা বলছিলাম,
ওহ তাহলে তো বিরক্ত করলাম, আচ্ছা আপনারা কথা বলুন,
আরে না, না, সুমনের সাথে কথা বলা শেষ, আপনি বলুন কি বলবেন, উত্তর দেন মিসেস শিউলি,
আমি আর কি বলব, আমি তো এমনি কোন কারণ ছাড়া আপনাকে ফোন দেই, বললেন খলিল চৌধুরী,
তাহলে রাখছি, কারণ ছাড়া কথা বলে কি লাভ,
আরে না, না, কারণ তো আছে, ফোন রাখবেন না প্লিজ, অনুনয় করেন খলিল চৌধুরী,
আচ্ছা ঠিক আছে, কাটবো না, কিন্তু তার আগে কারণ টা কি বলতে হবে, শর্ত দেন মিসেস শিউলি,
কারণ হচ্ছে, আপনার সাথে কথা বলতে আমার ভালো লাগে, উত্তর দেন খলিল চৌধুরি,
এটা কোনো কারণ হলো! মুচকি হেসে বলেন মিসেস শিউলি,
এটাই কারণ, কেন, আপনার ভালো লাগে না?প্রশ্ন করেন খলিল চৌধুরী,
জানি না, ছোট করে উত্তর দেন মিসেস শিউলি,
আমি জানি আপনার ভালো লাগে,
কিভাবে জানেন আমার ভালো লাগে?
ভালো না লাগলে এত সময় আমার সাথে কথা বলতেন? প্রশ্ন ছুড়ে দেন খলিল চৌধুরি,
জানি না ঠিক, হয়তো ভালো লাগে , আর না হয়তো আপনার ভালো লাগে তাই আপনাকে সঙ্গ দেই, উত্তর দেন মিসেস শিউলি,
মিসেস শিউলির মুখ থেকে ভালো লাগে এই কথা শোনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টায় খলিল চৌধুরী বলেন, ভালো লাগে বলেই তো সঙ্গ দেন,
আচ্ছা যান, ভালো লাগে, উত্তর দেন মিসেস শিউলি,
কি ভালো লাগে?
আপনার সাথে কথা বলতে,
আমাকে ভালো লাগে না? মজা করে জিজ্ঞেস করলেন খলিল চৌধুরী,
আপনাকে ভালো লাগার না লাগার তো কোনো কারণ নেই, আপনাকে সম্মান করি, উত্তর দেন মিসেস শিউলি,
আচ্ছা, যাই হোক বাদ দেন, রাতে কি খেলেন আপনারা?
জিজ্ঞেস করেন খলিল চৌধুরী,
মাছ আর শুটকি রান্না করেছিলাম, উত্তর দেন মিসেস শিউলি,
ইশ,শুটকি আমার খুব পছন্দের, রাতে খেয়ে আসলেই ভালো হতো,
আপনাকে তো বলেছিলাম রাতে খেয়ে যান, কিন্তু আপনি চলে গেলেন, আপনি বাসায় গিয়ে খেয়েছেন বড় মাছ, গোশত, এসব শুটকি মাছ আপনার রুচিতে জূটবে না বলেই তো চলে গেলেন, বললেন মিসেস শিউলি,
এহ! আপনিও তো আরো জোর করতে পারতেন, একবার বললে খেয়ে আসা যায় নাকি, সুযোগ পেয়ে খোঁচা দিলেন খলিল চৌধুরী,
তাহলে কালকে এসে খেয়ে যান,
না কালকে আসা যাবে না, অন্য দিন আসবো,
আচ্ছা, উত্তর দেন মিসেস শিউলি,
দেখলেন এবারো আপনি একবার বললেন, আমি না করেছি কোথায় আরো কয়েকবার রিকুয়েষ্ট করে খাওয়ার দাওয়াত দিবেন তা না করে আচ্ছা বলে দিলেন, আবারো খোঁচা দিলেন খলিল চৌধুরী,
আচ্ছা বাবা খেয়ে যাবেন, খেয়ে যাবেন, খেয়ে যাবেন, একশ বার বললাম, হাজার বললাম কালকে খেয়ে যাবেন, উত্তর দেন মিসেস শিউলি,
কি খেয়ে যাব?
আপনি যা খেতে চান,
ধুর, আমি যা খেতে চাই সেটা আপনি খাওয়াবেন নাকি,
কেন কি খেতে চান?
বলা যাবে না, বুঝে নিন,
যান, ভারি অসভ্য আপনি, বলেই ফোন কেটে দিলেন মিসেস শিউলি,
আরে চৌধুরী সাহেব যে! আসুন আসুন, চেয়ার থেকে উঠে দরজা পর্যন্ত চলে আসলেন গ্রামের কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রিন্সিপাল,
বসুন প্লিজ, খলিল চৌধুরীকে চেয়ার টেনে দিলেন প্রিন্সিপাল নিজে,
পিয়ন কে ডেকে নাস্তা, আর চা দিয়ে যেতে বললেন তিনি,
জ্বি চৌধুরী সাহেব, আপনি হটাৎ স্কুলে, কাউকে ভর্তি করানো প্রয়োজন আছে নাকি? জিজ্ঞেস করলেন প্রিন্সিপাল সাহেব,
না, এমনিতেই এলাকায় একটাই মাত্র স্কুল কিন্ডারগার্টেন, তাই খোঁজ খবর নিতে আসলাম, কেমন চলছে আপনাদের স্কুল,
এই চলছে আর কি, অভিভাবকরা মাসিক ফি-বকেয়া রেখে দেয়, তেমন কিছু বলাও যায় না, বললে রাগ করে সন্তান কে গিয়ে সরকারি স্কুলে দিয়ে দেয়, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন দিতেই হিমশিম খাচ্ছি, হতাশ গলায় বললেন প্রিন্সিপাল সাহেব,
ওহ আচ্ছা, তা শুনলাম শিক্ষা-সফরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন? জিজ্ঞেস করলেন খলিল চৌধুরী,
পরিকল্পনা তো ছিলোই, কিন্তু এবারও আর হয়ে উঠবে না, কিছু অভিভাবক টাকা জমা দিয়েছে শুধু, বাকিদের তেমন আগ্রহ নেই, একটা বাস না হলে তো আর হয় না,
কিভাবে আগ্রহ দেখাবে বলুন, যেখানে নিয়ে যাচ্ছেন সে হিসেবে চার্জ আপনারা অনেক বেশি ধরেছেন, লাভ এর আশা একটু কম করেন তাহলে তো লাভ পাবেন, এখন তো কিছুই পাচ্ছেন না, প্রিন্সিপাল কে উদ্দেশ্য করে বললেন খলিল চৌধুরী,
আসলে সব কিছুর যে দাম, আর তেলের দাম দুই দফা বাড়ানোর পর যান-বাহনের ভাড়াও এত বেড়েছে যে এর কম করা সম্ভব না, উত্তর দিলেন প্রিন্সিপাল সাহেব,
আপনার কি মনে হয় জিনিসের দাম, আর তেলের ব্যাপারে না জেনেই আমি বলেছি আপনারা বেশি টাকা নিচ্ছেন, একটু জোর গলাতেই বললেন খলিল চৌধুরী,
কাচুমাচু হয়ে যাওয়া প্রিন্সিপাল সাহেব এর দিকে কাগজে মোড়ানো একটা টাকার বান্ডিল দিয়ে বললেন এখান থেকে সবার সেলারী দিয়ে দিয়েন, আমি বাস মালিক-সমিতি কে বলে দিব, ওরা বাস পাঠাবে, আর খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে যা বাজার-সদাই করবেন আমার নাম বলে নিয়ে নিবেন, এক দুই দিনের মধ্যেই শিক্ষা-সফর করে আসুন, প্রতি বছর ছোট বাচ্চাদের কে আশা দিয়ে হতাশ করেন আপনারা এটা তো হতে পারে না, আজ উঠি, একটানা কথা গুলো বললেন খলিল চৌধুরী,
চৌধুরী সাহেব আপনিও চলুন না আমাদের সাথে, কৃতজ্ঞতার সুরে খলিল চৌধুরী কে বলেন প্রিন্সিপাল স্যার,
দেখি, অবসর থাকলে যেতেও পারি, বলে প্রিন্সিপাল এর কামরা থেকে বের হয়ে গেলেন,
শিক্ষকদের ডেকে সুখবর টা জানিয়ে দিলেন প্রিন্সিপাল স্যার,
দুইজন এন.জি.ও তে চাকরি করা পার্ট টাইম শিক্ষক বলে উঠলো ব্যাপার কি বলেন তো, নিজে থেকে এসে টাকা দিয়ে গেলেন আবার পিকনিকের খরচ ও দিচ্ছেন, মতলব টা কি?
আরেক জন উত্তর দিলো দেখেন গিয়ে সামনে চেয়ারম্যান নির্বাচন করবে, কিছু টাকা খরচ করে যদি গম-চালের মালিক হওয়া যায় মন্দ কি,
প্রিন্সিপাল স্যার ওদের দিকে চোখ পাকিয়ে বললেন, এই জন্যই আমি স্থানীয় ছাড়া কাউকে শিক্ষক হিসেবে নিতে চাই না, কোথায় কি বলা লাগে কোনো ধারণা নেই, চিনেন আপনারা উনাকে, এমন চারটা পাঁচটা চেয়ারম্যান তিনি কিনে রেখে দিতে পারেন, যান ক্লাসে যান এখন, ঝাড়ি দেন প্রিন্সিপাল স্যার,
ভাই কেমন আছেন এখন? বসতে বসতে প্রশ্ন করলেন মজুমদার সাহেবের চাচাতো ভাই,
হুম ভালো আছি, বস এখানে, উত্তর দিলেন মজুমদার সাহেব,
তোর ওই বাজারের পাশের জমিটা পুকুর সহ কিনতে চায় খলিল, বুঝছিস?
কোন খলিল? খলিল চৌধুরী? জিজ্ঞেস করলেন মজুমদার সাহেবের ভাই,
হুম, ভালোই দাম পাবি, দামের থেকে বেশিই পাবি, বিক্রি করে দিয়ে ভালো করে ব্যাবসা শুরু কর, ওটাই ভালো হবে,
আচ্ছা ভাই, চিন্তা করে জানাচ্ছি, এখন যাই দোকান খোলা রেখে আসছি,
আরে চা খেয়ে যা,
না ভাই, আরেকদিন খেয়ে যাব, বলে উঠে চলে গেলেন তিনি,
এই খলিল ভাই খেতে আসবে দুপুরে আজকে, কি রান্না করি বলো তো, স্বামীকে বললেন মিসেস শিউলি,
হাঁস জবাই করে ফেলো একটা, আর মাছ, সবজি এসব করো,
আচ্ছা, তুমি রেস্ট নাও আমি গিয়ে রান্না করি,
হুম একটু বাথরুমে যাব,
চলো,
না একাই যেতে পারবো আজকে, দেখ, স্ত্রীকে বললেন মজুমদার সাহেব,
কোনো দরকার নাই, আমি নিয়ে যাচ্ছি,
মিসেস শিউলির কথা না শুনে ধীরে ধীরে আজ একাই বাথরুমে গেলেন মজুমদার সাহেব,
স্বামীর সুস্থ হয়ে উঠা দেখে খুশি মন নিয়ে রান্না করতে যান মিসেস শিউলি,
দুপুরে একসাথে খলিল চৌধুরী সহ খেতে বসলো মমজুমদার সাহেবের পরিবার,
আম্মু! পরশু দিনই আমরা পিকনিকে যাব, সবাইকে স্কুল থেকে ফ্রি নিয়ে যাবে, অভিভাবক সাথে না গেলে যেতে দিবে না, তোমার কিন্তু যাওয়া লাগবে, বলে উঠে শাওন,
না বাবা যাওয়া লাগবে না, দেখছো না আব্বু অসুস্থ, সামনের বার যেয়ো,
মিসেস শিউলির কথা শুনে মন খারাপ হয়ে যায় শাওনের, খলিল চৌধুরীর মন ও খারাপ হয়ে গেল, এত টাকা খরচ করেছেন শুধু মিসেস শিউলির সাথে একটা দিন ঘুরার জন্য, সব মাটি হয়ে গেল,
আরে, সমস্যা নাই, রান্না করে রেখে যাবা, আমি খেয়ে নিব, এখন তো ধীরে ধীরে হাঁটতে পারি, যাও, শিক্ষা-সফরের দরকার আছে বাচ্চাদের, বলে উঠলেন মজুমদার সাহেব,
না তারপরও একা রেখে যাব না আমি তোমাকে, উত্তর দেন মিসেস শিউলি,
আরে একা কেন হবে? আমার কাজের মহিলা কে আপনাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিব, সারাদিন থাকবে, সমস্যা হবে না, বললেন খলিল চৌধুরী,
অবশেষে শাওনের পীড়াপীড়িতে যাওয়ার জন্য রাজি হলেন মিসেস শিউলি,
খাওয়া শেষে খলিল চৌধুরী কে এগিয়ে দিতে উঠোনের গেট পর্যন্ত এলেন মিসেস শিউলি,
শুনুন পিকনিকের দিন কিন্তু নীল শাড়ি আর একটু সাজ-গুজ করবেন, বললেন খলিল চৌধুরী,
কেন, আপনি তো আর যাচ্ছেন না, আমার নীল শাড়ী পরা লাগবে কেন?
কে বলল আমি যাচ্ছি না, আপনি যাচ্ছেন আর আমি যাব না, আপনি আমার গাড়িতে যাবেন,
যা, তা হয় নাকি! ছেলের সাথে পিকনিকের বাসে যেতে হবে তো,
সে পরশু দেখা যাবে, বলে বেরিয়ে গেলেন খলিল চৌধুরী,