জীবনচক্র (নতুন আপডেট নং ৯) - অধ্যায় ১৪
এই, ক্যাম্পাসে যাবি তুই আজকে? সুমন কে জিজ্ঞেস করে আকাশ।
হুম যাব, কেন?
যাওয়ার দরকার নেই, রিমা আসতেছে, চল বাহিরে কোথাও থেকে ঘুরে আসি।
তোরা যা, আজকের ক্লাস টা করা লাগবে আমার। উত্তর দেয় সুমন।
ক্লাস করতে যাবি নাকি অনন্যা কে দেখতে যাবি? খোঁচা দিয়ে বলে আকাশ।
অনন্যা ক্যাম্পাসে আসতেছে না কয়েক দিন ধরে, আমি ঢাকা আসার পর একদিনও ক্যাম্পাসে আসে নি। মন খারাপ করে বলে সুমন।
শালা! এইজন্য কয়দিন ধরে মুখ ভার করে বসে আছিস? ফোন করিস নি অনন্যাকে? জিজ্ঞেস করে আকাশ।
করেছিলাম একবার, রাগ দেখিয়ে ফোন রেখে দিছে। উত্তর দেয় সুমন।
কবে?
২ দিন আগে।
তারপর আর ফোন দিস নি তুই? জিজ্ঞেস করে আকাশ।
না, উত্তর দেয় সুমন।
শালা বোকাচোদা!
একদম গালাগালি করবি না শালা, মন মেজাজ একদম ভালো নেই। বিরক্ত হয় সুমন,
আরে শালা! মেয়েরা ছেলেদের সাথে রাগ করার মূল কারণই হলো ছেলেরা তাদের রাগ ভাঙাবে, আর তুই একবারও পরে আর ফোন দিলি না। তোকে বোকাচোদা বলব না তো কি বলব?
আরে, কেমন আছে জিজ্ঞেস করেছিলাম, উত্তর দিয়েছে ও কেমন আছে সেটা জেনে আমার লাভ নেই, ওকে আবার কল দিব আরো বিরক্ত হবে, কিভাবে কল দেই আবার? উত্তর দেয় সুমন।
তোর সাত কপালের ভাগ্য যে অনন্যার মত একটা সুন্দরী মেয়ে তোকে পছন্দ করে, না হলে তুই বস্তির কোনো মেয়েকেও পটানোর যোগ্যতা রাখিস না। বিরক্ত হয়ে বলে আকাশ।
আমি কি বলছি আমাকে পছন্দ করুক ও, পটানোর যোগ্যতা নাই সিঙ্গেল থাকব, তাতে সমস্যা তো নাই কোনো। মন খারাপ করে বলে সুমন।
শোন সুমন, আমার কথা তুই সিরিয়াসলি নিবি না আমি জানি, তাও বলছি, মেয়েটা তোকে পছন্দ করে, আর অনন্যার প্রতিও তোর অনেক ফিলিংস কাজ করে। তুই স্বীকার করিস আর না করিস কিছু আসে যায় না। তুই এত কিছু না ভেবে অনন্যা কে প্রপোজ করে ফেল, তোর আর ওই টেনশন নাই যে অনন্যা তোকে রিজেক্ট করে দিবে, ও নিজেই বলেছে ও তোকে ভালোবাসে। একটু রাগ করেছে বলেই মন খারাপ করে আছিস, আর একবার ভেবে দেখ তোর এই অবহেলার সুযোগ নিয়ে অনন্যাকে যদি অন্য কেউ তার নিজের করে নেয় তখন সহ্য করবি কিভাবে? ভবিষ্যতে কি হবে পরে দেখা যাবে, মেয়েটার ফিলিংস টা নষ্ট করিস না।
চুপ করে শুধু শুনে যায় সুমন, কোনো উত্তর দেয় না।
চল, রিমা নিচে দাঁড়িয়ে আছে। সুমন কে বললো আকাশ।
তোরা ঘুরে আয় না, আমাকে টানছিস কেন?
আরে ঘুরতে যাবো না, এমনি হাতিরঝিলের দিকে একটু হাঁটবো চল।
বিকালের দিকটায় হাতিরঝিলের এই রাস্তায় হাঁটতে আসে অনেক রকমের মানুষ, কোথাও দেখা যায় ছেলে বন্ধুদের আড্ডা, গিটার বাজছে, সিগারেটের ধোঁয়া হাওয়ায় মিশে যাচ্ছে। আবার মায়েরা ধুলো বালুর এই অসুস্থ নগরীতে তাদের বাচ্চাকে নিয়ে আসে একটু মুক্ত বাতাসের খোঁজে। কপোত-কপোতীরা খুব কাছাকাছি বসে থাকে, হকার, ভিখারী, টোকাই, সবকিছুই দেখা যায়। দেখার চোখ দিয়ে দেখলে অনেক কিছু, না হলে দেখার কিছুই নেই। যদিও কর্তৃপক্ষের অযত্ন-অবহেলা, সঠিক পরিচর্যার অভাবে হাতিরঝিল তার আসল সৌন্দর্য অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে। তবে আশে পাশের মানুষের বিকালের অবসর সময়টা এখানেই কাটে।
এই সুমন নাও, এই চকলেটগুলো তোমার জন্য, দুই হাত ভরে অনেকগুলো চকলেট সুমনের হাতে ধরিয়ে দিল রিমা।
এখন আমার গুলো দাও। রিমার দিকে তাকিয়ে বলে আকাশ।
তোমার জন্য কোনো চকলেট নেই, ঠোঁট উলটে জবাব দেয় রিমা।
মানে কি, সুমন কে চকলেট দিছো, আমাকে দিবা না, এটা তো ইনসাফ হতে পারে না।
হু, এগুলো আমার বোন এনেছে কানাডা থেকে, তোমাকে দেয়া যাবে না।
বাহ বাহ, সুমন কে দেয়া যায় আমাকে দেয়া যায় না, আমি কি তোমার বোনের সাথে গিয়ে লাইন মারবো নাকি, যে চকলেট দেয়া যাবে না আমায়। বিরক্তির সুরে বললো আকাশ।
এই শালা ধর, কয়টা খাবি খা, তবুও পাব্লিক প্লেসে এমন চিল্লাচিল্লি করবি না। আকাশের দিকে চকলেট বাড়িয়ে দেয় সুমন।
তোকে দিছে তুইই খা।
আকাশের রাগ দেখে মিটমিট করে হাসে রিমা।
রিমা! কি খাবে, চটপটি নাকি ফুচকা? জিজ্ঞেস করে সুমন।
আকাশ যা খাবে আমিও তাই খাবো, তাই না আকাশ?
হয়েছে আর দরদ দেখাতে হবে না, সুমন তুই চটপটি দিতে বল মামাকে, ঝাল বাড়িয়ে দিতে বলিস।
চটপটি খাওয়ায়ার সময়ই একটা ছেলে ওদের দিকে এগিয়ে এসে বললো আরে রিমা! কেমন আছো? এদিকে আসছো খবর দিলে না যে।
রিমা চটপটির বাটিটা বসার টুলে রেখে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে, তারপর বলে এমনি ২ বন্ধুর সাথে ঘুরতে এসেছিলাম, তুমিও বসো না।
না, তোমরা খাও, আমার কাজ আছে, বলে ছেলেটি চলে গেলো।
ছেলেটি কে? ভ্রু-কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করে আকাশ।
কেউ না, এমনি পরিচিত আর কি, উত্তর দেয় রিমা।
এমনি পরিচিত, আর ওকে এইভাবে জড়িয়ে ধরলে?
মানে, কারো সাথে দেখা হলে হাগ তো করাই যায়।
না, কোনো মেয়ে এইভাবে যাকে তাকে জড়িয়ে ধরতে পারে না। রাগী গলায় বলে আকাশ,
আরে তুমি এভাবে বলছো কেন? এটা জাস্ট একটা নরমাল হাগ।
বাহ, দেখা হওয়ার সাথে সাথেই কাউকে জড়িয়ে ধরবে আর বলবে একটা নরমাল হাগ!! রাগী আর উঁচু গলায় বললো আকাশ।
সুমন বুঝলো পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, এদের মধ্যে ওর না থাকাই ভালো, একটু দূরে গিয়ে সিগারেট ধরালো সে।
এভাবে কথা বলতেছো কেন তুমি আকাশ আমার সাথে?
তো কিভাবে কথা বলবো তোমার সাথে?
আমি কাকে হাগ করবো আর কাকে করবো না সেটা তোমার কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে করতে হবে, তুমি কি আমার বয়ফ্রেন্ড, এভাবে উঁচু গলায় আমার সাথে কথা বলতেছো, একটা নরমাল হাগের জন্য এভাবে কথা বলবা তুমি,? আর তারচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমার সাথে এভাবে কথা বলার তোমার কোনো রাইট নেই। বিরক্তি আর রাগের সুরে কথা গুলো বলল রিমা,
যতটা উত্তেজিত হয়ে পরেছিলো আকাশ রিমার কথা শুনে ততটাই মিইয়ে গেল সে, মাথা টা নিচু করে বললো সরি রিমা, অনাধিকার চর্চা করে ফেলেছি। আমি সরি, আসলেই তোমার সাথে এভাবে কথা বলার কোনো অধিকার আমার নেই।
আকাশ খুব শক্ত হৃদয়ের ছেলে, কোনো কিছুতেই ওর আবেগ বেশি একটা কাজ করে না, রিমার সাথে কয়েক দিনের চলা ফেরা, ওর অসুস্থতার সময় ওর প্রতি রিমার যত্ন নেয়া, এসব কিছু মিলিয়ে রিমার প্রতি ওর একটা ভালো লাগা তৈরি হয়ে গিয়েছে, খুব আপন মনে হয় রিমাকে ওর, কিন্তু এখন যখন রিমা মুখের উপর বলে দিলো এভাবে কথা বলার কোনো অধিকার নেই তোমার তখন আকাশের মনে রিমার প্রতি সুপ্ত ভালোলাগাটুকু তার আবেগেও হালকা নাড়া দিলো। পানিতে ভিজে উঠতে চাচ্ছে আকাশের চোখ, কিন্তু নিজেকে সামলে নিল ও।
আচ্ছা সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে, চল এখন ফিরে যাই, না হলে তোমার আবার রাত হয়ে যাবে। রিমা কে এই কথা বলেই উঠে দাঁড়ালো আকাশ।
আকাশ-রিমার মধ্যে যখন উত্তপ্ত বাক্য-বিনিময় হচ্ছিলো তখন অনন্যাকে ফোন দেয় সুমন,
হ্যালো, কেমন আছো? জিজ্ঞেস করে সুমন।
আমি কেমন আছি তা জানার কি খুব বেশি দরকার তোমার? উত্তর দেয় অনন্যা।
না, ভাবলাম ক্যাম্পাসে আসছো না হয়তো শরীর খারাপ।
না আমি ভালো আছি….
তাহলে আমার উপর রাগ করে ক্যাম্পাসে আসছো না? জিজ্ঞেস করে সুমন।
তুমি কে? যে তোমার উপর রাগ করে ক্যাম্পাসে আসবো না! উত্তর দেয় অনন্যা।
তা ঠিক বলেছো, আমি তেমন কেউ না, বিরক্ত করার জন্য সরি, মাফ করে দিও, আর বিরক্ত করবো না।
অনন্যা ভাবে সুমন একটা গাধা, ও জিবনেও বুঝবে না যে ও অভিমান করে এমন রাগ দেখাচ্ছে, তাই নিজে থেকেই বললো
সুমন,
অনন্যার ডাক শুনে ফোন কাটতে গিয়েও কাটলো না সুমন,শুধু উত্তর দিলো, হুম
কেমন আছো? জিজ্ঞেস করলো অনন্যা,
আমি তো ভালোই আছি, তুমি কেমন আছো সেটা বললে না, অবশ্য আমাকে বলতে হবে তেমন কেউ নই আমি। উত্তর দেয় সুমন.
আমি ভালো আছি, তুমি জানো তুমি কে, আমি তোমাকেই আমার সব কথা বলতে চাই তুমিই শুনতে চাও না আমার কথা। মন খারাপ করে বলে অনন্যা,
আমি সরি অনন্যা, অনেকদিন তোমায় ফোন দেয়া হয় নি। কোনো অজুহাত দিবো না, আমি চাইলে ঠিকই তোমাকে ফোন দিতে পারতাম, ক্ষমা করে দাও আমায়। তুমি এভাবে কথা বললে আমার খারাপ লাগে খুব।
আচ্ছা বাদ দাও, আঙ্কেল কেমন আছেন এখন?
হুম ভালো আছে।
অনন্যা তুমি ভালো আছো তো? আবার জিজ্ঞেস করে সুমন।
হুম ভালো আছি আমি।
তাহলে ক্যাম্পাসে আসছো না যে?
আরে এমনি আমার একটু মেয়েলি সমস্যা ছিলো। উত্তর দেয় অনন্যা, পিরিয়ড চলছিলো তার, যাকে ভালোবাসে তাকে ইশারায় এই কথা বলাই যায়।
মেয়েলি সমস্যা মানে? জিজ্ঞেস করে সুমন।
সুমন, তুমি একটা গাধা, মেয়েলি সমস্যা বলার পরও যে ছেলে বুঝে না সে একটা গাধা।
অনন্যার মুখে গাধা শুনে একটুও খারাপ লাগে না সুমনের। কিন্তু সে বুঝতে পারে সমস্যাটা আসলে কি।
এখন তো আর কোনো সমস্যা নেই?
না।
কালকে তাহলে একবার দেখা করবে আমার সাথে? জিজ্ঞেস করলো সুমন,
কালকে তো ক্লাস নেই,......
ক্যাম্পাসে না, অন্য কোথাও………
কেন?
তোমাকে দেখতে মন চাইছে খুব,
সুমনের আকুতি শুনে চোখের পাতা ভিজে উঠে অনন্যার।
আচ্ছা আসবো, উত্তর দেয় অনন্যা,
আচ্ছা কালকে দেখা হবে, ভালো থেকো। ফোন কেটে দেয় সুমন, নিজেকে অনেক হালকা লাগছে এখন। অনন্যা তার সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলেছে। অন্যদিকে আকাশের মন ভারি হয়ে আছে রিমার বলা কথা গুলোর কারণে।
চল, বাসায় যাবো। পিছন থেকে আকাশের পিঠে চাপড় দিয়ে বলে আকাশ।
রিমা কই?
রিমা চলে গেছে, ভালো লাগছে না, বাসায় চল, রিকশা ডাক।
প্রতিদিন রাতের বেলা রিমাকে ফোন দেয় আকাশ, আজকে দিলো না, আমি কি ওর বয়ফ্রেন্ড নাকি, ওকে নিয়ম করে কল দিবো, খারাপ লাগাটা এখন রাগে রুপান্তরিত হয়েছে আকাশের।
সুমন, চল।
এত রাতে কোথায় যাবি?
বার এ যাব।
পাগল হয়েছিস, ড্রাংক হয়ে ফিরার সময় পুলিশ এমন প্যাদানি দিবে, যে তোমার বাপ খলিল চৌধুরী এসেও ব্যাথা কমাতে পারবে না। এখন ঘুমা, সকাল বেলা এমনিতেই তোর রাগ কমে যাবে।
দুপুরে অনন্যার সাথে দেখা করার জন্য বের হয়ে গিয়েছে সুমন। ফোন হাতে নিয়ে রিমা কে ফোন করতে গিয়েও করলো না আকাশ।
ওদিকে দুপুর পার হয়ে যাওয়ার পর রিমা অপেক্ষা করতে থাকে আকাশের কলের, কিন্তু আকাশ আজকে কল দিচ্ছে না, আকাশ প্রতিদিন এই টাইমে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে ও খেয়েছে কিনা? রিমা ফোনটা হাতে নিয়ে ভাবতে থাকে, কই কেউ তো প্রতিদিন আমাকে ফোন দিয়ে খেয়েছি কিনা জিজ্ঞেস করে না, আব্বু আম্মুর সাথে তো কথাই হয় না, আর বাকি ফুপ্পি-খালামনি এমন কি কাজিনরাও না, কত ছেলের সাথে মিশেছি, সেক্স পর্যন্ত করেছি, কিন্তু সেক্স হয়ে যাওয়ার পর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় নি, তারাও তো কেউ আমার খোঁজ নেয় না,
আকাশ কি আমাকে ভালোবাসে? এই জন্য অন্য ছেলেকে জড়িয়ে ধরাতে ওরকমভাবে রেগে গিয়েছিলো? ও কি আমাকে শাষন করতে চাচ্ছিলো? একা একা উশৃংখল জীবন পার করা আমি বুঝি নাকি এসব শাষনের মধ্যে মিশে থাকা ভালোবাসার মানে? আমি না হয়, না বুঝে রিয়্যাক্ট করে ফেলেছি তাই বলে আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিবে ও?
আমার আপন কেউ নেই, যে আপন হতে চায় তাকেও কি দূরে ঠেলে দিলাম, বালিশ জড়িয়ে ধরে রিমা, চোখের পানিতে ভিজে উঠে বালিশের কাপড়।
কিছুক্ষন পর রিমা চোখ মুছে চিন্তা করে আমিই একবার কল দিয়ে সরি বলি।
হ্যালো আকাশ! কি করো, কাল থেকে একবারও কল দিলে না যে? জিজ্ঞেস করে রিমা।
কেন, আমি কি তোমার বয়ফ্রেন্ড নাকি? আর নিয়ম করে রুটিন অনুযায়ী কোনো মেয়েকে কল দিতে হলেও একটা অধিকার লাগে, ওই অধিকার আমার নেই।
রিমা বুঝতে পারে, গতকালকে অন্য ছেলেকে জড়িয়ে ধরে সে আকাশ কে কষ্ট দিয়েছে, আর “তার সাথে ওভাবে কথা বলার কোনো রাইট আকাশের নেই” বলে কষ্টটা সে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
হুম, ঠিক বলেছো আকাশ! তোমার কোনো অধিকার নেই, আমার প্রতি কারোরই কোনো অধিকার নেই। এই পৃথিবীতে আমিই একমাত্র মুক্ত বিহঙ্গ।
রিমা! তুমি কাঁদতেছো?
নিজেকে ধরে রাখতে পারে না রিমা, ছেলেটা সব বুঝে যায়, শব্দ করেই কেঁদে ফেলে ও।
রিমা, কেঁদো না, আমি আসছি, অপেক্ষা করো।
পার্কের একটা বেঞ্চে দূরত্ব বজায় রেখে বসে আছে অনন্যা আর সুমন, পৌষের কোমল রোদে অনন্যার মুখ ট আরো উজ্জল দেখাচ্ছে। সেলোয়ার-কামিজ পরা অনন্যা কে দেখেতে একটু অদ্ভুত লাগছে সুমনের, সুন্দর লাগছে, কিন্তু সবসময় ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরা অবস্থায় দেখে এখন একটু অন্যরকম লাগছে। অনন্যার দিকে তাকিয়ে থাকতে মন চাচ্ছে সুমনের।
সুমন, কালকে বলেছিলে আমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে তোমার!
হুম,
কেন? আমাকে দেখার কি হলো?
আগে বলো তুমি আমার উপর রাগ করে নেই।
আমি তোমার উপর রাগ করে থাকতে পারি না সুমন।
সুমন, তোমাকে একটা কথা বলি, সরাসরি উত্তর দিবে?
হুম বলো,
দেখ সুমন, আমি তোমায় ভালোবাসি, সেটা ভার্সিটি লাইফের প্রথম সেমিস্টার থেকেই, কিন্তু তোমার কাছ থেকে কোনোরকম প্রস্তাব না পেয়ে আমি মেয়ে হয়ে নির্লজ্জের মত তোমাকে প্রপোজ করেছি। তুমি জানো? ক্লাসের অন্য মেয়েরা আমাকে নিয়ে টিপ্পনী কাটে, তোমার কাছে পাত্তা পাই না বলে, অনেকে অনেক কিছুই বলে আড়ালে। সেগুলো আমার কানে আসে, আমি কিছু মনে করি না। তুমি মাঝে মাঝে এমন আচরণ করো যেন তুমি আমাকে পছন্দ করো, এই যেরকম কালকে বললে আমায় তোমার দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে, তখন তোমার প্রতি ভালোলাগা আমার আরও বেড়ে যায়, এভাবে চলতে থাকলে তোমার প্রতি আমার টান আরো বেড়ে যাবে, তখন তুমি দূরে সরে গেলে কষ্ট আরো বেশি পাবো। তার চেয়ে ভালো তুমি আজই আমাকে সরাসরি না করে দাও, আমি আর তোমার সামনে ভালোবাসার ঝুলি নিয়ে আসবো না, না করে দাও আমাকে, এক্ষুনি। কথা গুলো বলে দম নেয় অনন্যা।
এখানে বসো একটু, আমি আসছি, বলে উঠে চলে গেল সুমন।
কিছুক্ষণ পর অনন্যার সামনে এসে দাঁড়ালো সুমন,
অনন্যা, আমি অন্য ছেলেদের মত খুব ইউনিক বা রোমান্টিক ভাবে বলতে পারবো না, এই গোলাপ টা রাখো।
গোলাপ কেন? জিজ্ঞেস করে অনন্যা।
গোলাপ টা অনন্যার হাত থেকে আবার নিজের হাতে নিয়ে গোলাপটা অনন্যার দিকে বাড়িয়ে ধরে সুমন বললো, অনন্যা! আমার খারাপ সময়গুলোতেও আমার পাশে থাকবে তো?
ফুলটা নিয়ে মাথা নিচু করে কাঁদতে থাকে অনন্যা। এখন কি করতে হবে বুঝতে পারে না সুমন। অনন্যার পাশে বসলো ও, না আগের মত দূরত্ব বজায় রেখে না, একদম কাছে বসে বললো, পাগলি কাঁদতেছো কেন? মানুষ দেখলে উল্টাপাল্টা ভাববে তো।
চোখের পানি মুছতে মুছতে অনন্যা বললো মজা করছো আমার সাথে?
অনন্যার হাতটা নিজের হাতের মুঠিতে নিয়ে অনন্যার অশ্রুভেজা চোখের দিকে তাকিয়ে সুমন বলল আই লাভ ইউ অনন্যা।
আবারো কাঁদতে থাকে অনন্যা।
তুমি কিছু বলবে না অনন্যা?
আমি কি বলবো, আমি তো অনেক আগেই বলে দিয়েছি,
এখন শুনতে মন চাচ্ছে আমার….
আই লাভ ইউ টু….., সুমন জড়িয়ে ধরতে চায় অনন্যা কে, সরে যায় অনন্যান
সরি সরি, ধরবো না তোমায়, চিন্তা করো না। ফিক করে হেসে দেয় অনন্যা।
অনন্যা একটা কথা বলি, যদি কিছু মনে না করো।
হু,
বলছি ওড়না টা একটু নামিয়ে দাও, সামনের ছেলেগুলো তাকিয়ে আছে।
এহ, এখনই খবরদারি শুরু করে দিয়েছো?
আচ্ছা থাক লাগবে না, তোমার যেভাবে ভালো লাগে সেভাবেই রাখো।
আড়চোখে সুমন দেখলো ওড়না গলা থেকে বুকে নামিয়ে নিলো অনন্যা।
একটু আফসোস হয় সুমনের, দেখতে ভালোই লাগছিলো অনন্যার উন্নত স্তন জোড়া, শালার ছাপড়ি পোলাপানের জন্য ও নিজেও বঞ্চিত হলো।
কলিং বেল দেয়ার পর রিমার খালা দরজা খুলে দিলো।
রিমা কোথায় আন্টি? জিজ্ঞেস করে আকাশ।
রিমা রুমে, ডেকে দিব?
না আন্টি, আমি যাচ্ছি রুমে।
রিমার রুমে নক না করেই ঢুকে যায় আকাশ।
রিমার চোখগুলো লাল হয়ে আছে। আকাশ বুঝে এতক্ষন ধরে কাঁদছিলো মেয়েটা।
কি হয়েছে রিমা?
কই, কিছু না তো, তুমি বসো আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি।
রিমা উঠে দাঁড়াতেই রিমার হাত ধরে আটকে দেয় আকাশ।
কি হয়েছে রিমা? আমার উপর রাগ করে আছো? আচ্ছা যাও কালকের ঘটনার জন্য আমি সরি, তুমি যা খুশি করো, আমি কিছু বলব না।
আকাশের দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে রিমা বলে কেন বলবে না?
আমার অধিকার নেই, তাই বলবো না। উত্তর দেয় আকাশ,
আমি চাই আমি ভুল কিছু করলে তুমি আমাকে কালকের মত বকা দিবে, শাষন করবে, আমি কিছুই বলবো না তোমায় আকাশ, শুধু তুমি আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিও না।
রিমার এই কথা শুনে আকাশ বলে তাহলে আমাকে বকা দেয়ার, শাষন করার অধিকার দাও।
অধিকার কিভাবে দিব?
রিমাকে টেনে নিজের বুকের মধ্যে নিয়ে আকাশ বললো,
আই লাভ ইউ রিমা।
আকাশের মুখের দিকে তাকিয়ে রিমা বললো এটা হয় না আকাশ, আমি খুব খারাপ মেয়ে, খুব।
আমি এই খারাপ মেয়েটাকেই ভালোবাসি, আমি তোমার থেকেও খারাপ ছেলে। এই খারাপ ছেলেটাকে ভালোবাসতে পারবে রিমা?
ফুপিয়ে কেঁদে উঠে রিমা, কথা বলতে পারে না ও, শুধু মাথা নাড়িয়ে বলে “হ্যাঁ “
রিমার ঠোঁটে লম্বা চুমু একে দেয় আকাশ। ঠোঁট সরিয়ে রিমা বলে খালা আছে বাসায়।
আমি গিয়ে টিভি দেখছি, তুমি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নাও, কোথাও গিয়ে লাঞ্চ করি, ক্ষুধা লেগেছে অনেক, কিছুই খাইনি সকাল থেকে।
তুমি বাহিরে গিয়ে বসো, আমি ৫ মিনিটের মধ্যে রেডি হচ্ছি।
বাথরুমের দিকে যাচ্ছিলো রিমা, পিছন থেকে আকাশ বললো, আর হয়েছে ৫ মিনিট, মেয়েদের ৫ মিনিট আমার জানা আছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কেটে বাথরুমে ঢুকে গেলো রিমা।