জীবনচক্র (নতুন আপডেট নং ৯) - অধ্যায় ২৬
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে এক দৃষ্টিতে দেখছেন বুশরা আমান। সামনে থেকে নিজেকে কিছুক্ষণ দেখে সাইড থেকে দেখার জন্য অন্য পাশে হয়ে দাঁড়ালেন তিনি। মুখ ঘুরিয়ে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজের মধ্যেই একটা অহংবোধ আসলো তার। সারা শরীরে মেদের ছিটেফোঁটা না থাকলেও স্তন আর নিতম্ব পোশাক ফেটে বের হয়ে আসতে চায়।তার ৩৬, ২৮,৩৬ মাপের পার্ফেক্ট ফিগার দেখে যে কোনো নামী মডেল ও ঈর্ষান্বিত হয়ে পরবে। নিজের রুপ যৌবন তিনি সবসময় ঢেকে রেখেছেন। সেটা যতটা ধার্মিক কারণে ততটাই নিজের রুপের অহংকারে। জীবনে যত প্রেম বা বিয়ের প্রস্তাব পেয়েছেন সব এক বাক্যে না করে দিয়েছেন। কাউকেই তার যোগ্য মনে হয় নি নিজের জন্য।
ছেলে - মেয়েকে তৈরি করে দিয়ে নিজেও বোরকা পরে নিলেন বুশরা আমান। তার ও ইচ্ছে হয় একটু খোলামেলা চলতে, কিন্তু সবাই কিভাবে যেন তাকিয়ে থাকে। ওই সাইকিয়াট্রিস্ট তাকিয়ে ছিল কোনরকম খারাপ লাগে নি, তাই বলে রাস্তার কুলি, দিন মজুর, রিকশাওয়ালা রা তার শরীরের দিকে তাকিয়ে থাকবে এটা তিনি মানতেই পারেন না। ওদের কথা ভাবলেই ঘৃনায় গা কাটা দিয়ে উঠে তার।
বাচ্চাদের নিয়ে এপার্টমেন্ট থেকে নেমে যখন গ্যারেজে গাড়ির দিকে যাচ্ছেন তখন হোঁচট খেয়ে পরে যায় বুশরা আমানের ছোট ছেলে। ড্রাইভার তাড়াতাড়ি এসে বাচ্চাকে তুলে শরীর থেকে ধুলা ঝেড়ে দিতে থাকে, বুশরা আমান ছেলের কাছে গিয়ে ড্রাইভার কে বলে ছাড়ুন, আমি দেখছি, বাচ্চাদের গায়ে হাত দেয়া আমি একদম পছন্দ করি না। ড্রাইভার গাড়িতে ঢুকে গাড়ি স্টার্ট দেয়, ম্যাডামের এই নাক সিটকানো স্বভাবের কথা সে ভালো করেই জানে।
সাগর এখন শান্ত। মাছ ধরার ট্রলার হালকা দুলে দুলে সাগরের বুক চিড়ে এগিয়ে চলেছে। ট্রলারের পাটাতনে পা দুলিয়ে বসে আছে চাঁন মিয়া। মাছ ধরা শেষ, অন্য দিনের তুলনায় আজ বেশি মাছ উঠেছে তার ট্রলারে, তবুও অস্থির হয়ে আছে তার মন। মাছ ধরে ভালোই চলে তার সংসার। মাছ ধরার দক্ষতায় তার ধারে কাছে নেই তার পল্লির কোনো জেলে। কিন্তু সে টেকনাফ বা কক্সবাজারের কোনো জেলে পল্লির জেলের ছেলে হয়ে জন্মায়নি, এটাই তার দোষ। পদে পদে বাধা- বিপত্তিতির কারণে শুধু সংসার চলে তার। উন্নতির ছিটেফোঁটা নেই তার জীবনে। তবুও তিনি মানিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু একমাত্র মেয়েটার এই কঠিন রোগটার জন্যই তাকে অপরাধ জগত বেছে নিতে হয়েছে।
ওস্তাদ, কাম সারছে!! ট্রলারের আরেক কোন থেকে দৌড়ে এসে অস্থির হয়ে বললো কালু।
কি হইছে রে? চোখে মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট চাঁন মিয়ার।
ওস্তাদ, কোস্ট গার্ডের স্পিরিট বুট ( স্পিড বোট).....
কি কস, কত দূরে???
দূরে আছে এহনো ওস্তাদ, কি করমু এহন?
অস্থির হইস না, ফালায়া দে সব……
কি কন ওস্তাদ, ওরা মাইরা ফালাইবো আমগোরে…..
মারলে মারবো, তবু এডি নিয়া ধরা খাইলে সারাজীবন জেলে পইচ্চা মরতে হইবো, খানকির পোলারা আর আওয়ার টাইম পাইলো না…..
কাঠের বক্স গুলো কালু এক এক করে সাগরে ফেলে দিচ্ছে, কালু জানে না এখানে ঠিক কত টাকার মাল আছে। কিন্তু মাদকের মাঝে মাঝে চকচক করা বিদেশী অটোমেটিক গান গুলো দেখে সে ঠিকই বুঝতেছে এমন রত্ন তারা সাগরের বুকে ফেলে দিচ্ছে সাগরের যেগুলোর কোনো প্রয়োজন নেই।
সব ফালায়া দিছি ওস্তাদ…..
সব ফালাইছস?
হ, ওস্তাদ….
এদিকে আয় তো…..
কালুর কোমরে হাত দিয়ে একটা ইয়াবার প্যাকেট পেল চাঁন মিয়া, সাগরে ছুড়ে ফেলে দিলো ওই প্যাকেট টা।
শালা মাদারচোদ, খুব শখ না, ওরা পাইলে তোর পুটকি দিয়া হান্দায়া দিবো এই সব…..
স্পিড বোট টা এখন খুব কাছে, কোস্ট গার্ডের সাদা পোশাক পরা মানুষ গুলো অনেকটা স্পষ্ট এখন চোখের সামনে। বোটের সামনে দুটো বন্দুকের নল বের হয়ে আছে। সেদিকে ফিরে দাঁড়ালেন চাঁন মিয়া। লুঙ্গি টা তুলে ধন বের করে পস্রাব করতে লাগলেন তিনি। শান্ত সাগরের পানিতে গিয়ে পরছে চাঁন মিয়ার হলদে পস্রাব। এমন ভাবে খাড়া হয়ে আছে তার বাড়া যেন কোস্ট গার্ডের বন্দুকের বিপরীতে তার বাড়া একটা ছোটখাটো কামানল।
অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কালু, ওস্তাদের বাড়া ও আগেও দেখেছে। এইরকম ধন হয় কোনো আদম সন্তানের! এইল্লাইগাই মনে হয় ওস্তাদের বউ আরেক বেডার লগে ভাগছে……
ঘুরতে বেরিয়েছেন নিজের মন ভালো করার জন্য। কিন্তু একটার পর একটা এমন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে তার সাথে যার জন্য মন মেজাজ আরো বিগড়ে যাচ্ছে বুশরা আমানের।
এয়ারপোর্টে এসে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ফ্লাইট দুই ঘন্টা লেট। তার উপর বিমানবন্দরের ডমেস্টিক সাইটের লোকগুলোর আচরণ পুরোপুরি অপেশাদার। ঠিক করে কথা বলতেও জানে না এরা। কক্সবাজার আগে থেকে বুক করা হোটেলের প্রবেশের ঠিক আগে একজন ভিক্ষুক এসে ভিক্ষা চাওয়ায় বিরক্ত হলেন বুশরা আমান। তবুও ব্যাগে হাত দিয়ে একটা ১০০ টাকার নোট বের করে ভিক্ষুক কে দিলেন তিনি। ভিক্ষুক মুখে দোয়া করতে করতে বড় মেয়ের মাথায় তার ময়লা হাত বুলিয়ে দিলো। এটা দেখে বুশরা আমানের রাগ এমন পর্যায়ে পৌঁছালো যে তিনি কোনো রিয়্যাকশন দিতে পারলেন না। হন হন করে বাচ্চাদের নিয়ে পাঁচ তারকা হোটেলটায় ঢুকে গেলেন তিনি।
বিকেলে সমুদ্র দেখতে বের হবেন বুশরা আমান। বোরখার নিচে কি পরা যায় সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না তিনি। শাড়ি পরার থেকে টপস আর জিন্স পরলেই ভালো হবে। ব্রা হাতে নিয়েও রেখে দিলেন তিনি। টপস, তার উপর বোরখা, নিপল বোঝা যাবে না। শুধু শুধু ব্রা পরার দরকার কি। যদিও দুধ গুলো একটু দুলবে সেটাও বোরখার উপর দিয়ে খুব বেশি বুঝা যাবে না। তার দুধ এখনো যথেষ্ট টাইট।
বাচ্চাদের জন্য চিপস চকোলেট কিনে দোকান থেকে রাস্তার পাশে এসে দাঁড়ালেন বুশরা আমান। ছোট ছেলের আবদার এখনই তাকে চকোলেট খুলে দিতে হবে। নিচের দিকে তাকিয়ে প্যাকেট খোলার সময় এক মধ্যবয়স্ক লোক হন্তদন্ত হয়ে ছুটতে ছুটতে ধাক্কা খেলেন বুশরা আমানের সাথে।
বিশালদেহী লোকটার সাথে আচমকা ধাক্কায় টালমাটাল অবস্থা বুশরা আমানের। হাত থেকে চকলেটের প্যাকেট দূরে ছিটকে পড়ল। তিনি নিজেও পড়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু লোকটা কাকে জাপটে ধরে ফেলল। এমন পরিস্থিতিতে ওই লোকটারও নিজের উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিলো না। তার একটা হাত বুশরা আমানের বড় স্তনের উপর চলে যেতেই লোকটা না চাইতেও একটা চাপ পরে গেল তার নরম স্তনের উপর।
লোকটার শরীর যখন বুশরা আমানের শরীরের সাথে লেগে ছিল তখনই বুশরার নাকে লোকটার শরীরের মাছের তীব্র আঁশটে গন্ধ লাগলো। বোটকা এই গন্ধে বমি আসার জোগাড় হলো বুশরার। সামলে উঠে বুশরা যখন দেখলেন এই নোংরা লোকটার একটা হাত তার স্তনের উপর তখন রাগে ক্ষোভে তার শরীর কটমটিয়ে উঠলো। সোজা হয়েই সপাটে একটা চড় বসিয়ে দিলেন লোকটার গালে।
মাফ কইরা দেন আফা, আমি দেহি নাই…..
মেয়ে মানুষ দেখলে মাথা ঠিক থাকে না, ঘরে মা বোন নেই আপনাদের…….
মুহুর্তে কিছু মানুষ জড়ো হয়ে গেলো ঘটনাস্থলে। লোকগুলো কিছু না বুঝে শুনেই চড়াও হয়ে গেল বিশালদেহী লোকটার উপর। কিছু চড় ঘুষি খেয়ে নিজের শক্তি খাটিয়ে মানুষের জট থেকে বের হয়ে যেত পারলো লোকটি, কিন্তু ততক্ষনে নাকের নিচে রক্ত প্রবাহিত হওয়া শুরু হয়েছে তার।
ওস্তাদ, কি হইছে আমনের, এই অবস্থা হইলো কেমনে? চাঁন মিয়ার এবড়ো থেবড়ো মুখটা দেখে প্রশ্ন করলো কালু।
এক খানকির সাথে ধাক্কা খাইছিলাম, শালী মানুষ ডাকছে…
হ ওস্তাদ, ওগোর দেমাগ অনেক বেশী…..
মাগির দেমাগ আমি ঠিকই বাইর করমু….
ওস্তাদ এডি ছাড়েন এহন, মালের ডেলিভারির কথা কি কইবেন ওগোরে ওই চিন্তা করেন……
বুঝতাছি না কি করমু, ওগোরে বুঝায়া কইলেও ওরা বুঝবো না, শালারা গুলি কইরা দিবো….
ওস্তাদ, চলেন ভাগি এইখান থেইকা…..
পারবি না, ওরা ঠিকই খুইজ্জা বাইর করবো আমগোরে, তার থেইকা আমি ধরা দেই, কোনোমতে যদি বুঝান যায় ওগোরে, লাগলে ফ্রি কাম কইরা দেওয়ার অফার দিমু………
আমিও যামু ওস্তাদ…….
তোর যাওন লাগবো না, আমারে পাইলে ওরা তোরে খুঁজবো না……
কি কন ওস্তাদ, আমনেরে মরার সামনে থুইয়া আমি পালামু, তাইলে ছুডু থেইকা আমারে পাইলা বড় করলেন কেন!!!!!
একদম ভীড় লেগে থাকা পর্যটন কেন্দ্র গুলো তে ঘুরতে ভালো লাগে না বুশরা আমানের। যেখানে লোকসমাগম কম ওই সব জায়গায় নিরিবিলি বাচ্চাদের নিয়ে হাঁটতে ভালো লাগে তার। তাই সেন্টমার্টিন যাওয়ার আগে টেকনাফের অদুরে সুন্দর একটি নিরিবিলি পাহাড়ের পাদদেশে বাচ্চাদের বসে ছিলেন তিনি। সামনেই ছোট ছেলে একটা বল নিয়ে খেলছে। একটু নিচেই একটা টং দোকান আছে, ওখানে কিছু মানুষ চা বিড়ি খাচ্ছে।
এক জায়গায় বসে থাকতে ভালো লাগছে না বিধায় বাচ্চাদের নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়ের অনেকটা উপরে উঠে এলেন তিনি। যেদিকে রাস্তা তার উল্টো পাশে সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হয়ে গেলেন বুশরা আমান। গাছের ছায়ায় ঢাকা পরে আছে সব গুলো পাহাড়। এই সবুজের সমারোহের দিকে তাকিয়ে থেকে যুগের পর যুগ কাটিয়ে দিতে পারবেন তিনি।
পাহাড়ের এদিকটায় কোন মানুষ নেই। দূরে তাকিয়েও কোন লোকালয় বা গ্রাম চোখে পরছে না। সন্ধে ঘনিয়ে আসতেছে, তাই উপরে থাকা আর নিরাপদ মনে হচ্ছে না বুশরা আমানের। এমন সময় ছেলের বল টা গড়িয়ে গড়িয়ে নিচে যেতে থাকলো। বেশি নিচে না, ১০ গজ নিচে একটা কাটা গাছের কাঠে আটকে গেল বলটা।
মাম্মাম, বল টা এনে দাও…..
না বাবা, নতুন কিনে দিবো আরেকটা……
না মাম্মাম এটাই লাগবে। কান্না জুড়ে দিলো ছেলে।
অগ্যতা নিচে গিয়ে বলটা নেয়ার জন্য উপুর হতেই কেউ একজন একটা কাপড় দিয়ে তার মুখ ঢেকে ধরলো। কালো নিকাবে তার মুখ ঢাকাই ছিলো, কিন্তু এখন কাপড়ের আড়ালে তিনি কিছুই দেখতে পারছেন না। বাচ্চাদের চিৎকারের কোনো আওয়াজ ও তার কানে এলো না, কয়েক সেকেন্ড এই তিনি বুঝে গেলেন কত বড় বিপদ তাকে আর তাদের বাচ্চাদের গ্রাস করে নিয়েছে।
বুশরা আমান বুঝতে পারলেন তাকে একটা গাড়িতে উঠানো হয়েছে। কিন্তু গাড়িটা যে আগের যুগের টেম্পু টাইপ কোনো গাড়ি সেটা তিনি সিট আর ইঞ্জিনের বিকট শব্দে বুঝতে পারলেন। তার মুখে এমন ভাবে কাপড় দিয়ে বাধা হয়েছে যে তিনি কোনো আওয়াজ করতে পারছেন না। তার সব চিন্তা একিভুত হয়েছে তার সন্তান দের নিয়ে। তার ছেলে আর মেয়ে কোথায়, তাদের কেও কি এরা উঠিয়ে নিয়ে এসেছে। ওরা কেন কোনো আওয়াজ করছে না, তাহলে ওদের কেও কি এরকম শক্ত করে বেধে রেখেছে শয়তানগুলো?
গাড়ি থেকে নামিয়ে কিছুদূর হাঁটানো হলো বুশরা আমানকে। পায়ের নিচে ডাল-পাতা পরার কারণে তিনি বুঝতে পারলেন কোনো বনের ভিতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাকে। হটাৎ পায়ে পানির ছোঁয়া পেলেন তিনি। তারপর তাকে তুলে ধরে একজায়গায় বসিয়ে দেয়া হলো, ইঞ্জিন এর বিকট শব্দ আবার কানে আসায় তার বুঝতে বাকি রইলো না এটা একটা ট্রলার।
ওস্তাদ, ওরা কি আমগোরে এইনেই মাইরা ফালাবো?
একটা বাঁশের বেড়ার ঘরে হাতমোড়া করে বাধা অবস্থায় বসে আছে চাঁন মিয়া আর কালু। ঘরটা পুরো অন্ধকার, কিন্তু একটা ছিদ্র দিয়ে বিকেলের শেষ আলোর কিছুটা ঢুকে একটু আলোকিত করে রেখেছে।
তোরে তো আগেই কইছিলাম তুই আসিস না আমার সাথে, এখন ডরাইতাছস কেন?
ডরাইতাছি না ওস্তাদ, তয় আমগোরে না মাইরা আটকায়া রাখছে কেন?
মারবো না, মারলে এতক্ষনে ঠিকি মারতো…. যখন এই ঘরে আমগোরে আনলো তখন কিছু শুনছিলি?
না তো ওস্তাদ, কি শুনার কথা কন?
আজকে রাইতে ওরা কিছু একটা করবো, এই শালারা বহুত খারাপ আছে….
মাইর লাগবো ওস্তাদ, কিন্তু কাগোর লগে মাইর করবো?
ওরা ওরাই লাগবো দেখিস, এগুলা অস্ত্র নিয়া নিজেরাই ঝামেলা লাগায়া ফেলছে……
একটা মাচা ঘরে আটকে রাখা হয়েছে বুশরা আমানকে। চোখ খুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু দুই হাত পিছনে আড়মোড়া করে বাধা। নিজের সন্তানদের কোথাও দেখতে পাচ্ছেন না তিনি। বাহির থেকে কিছু মানুষের চাপা আর উত্তেজিত গলার আওয়াজ ভেসে আসছে। কিন্তু সেটা বাংলা না, বুঝাই যাচ্ছে পাহাড়ি আদিবাসীর কোনো গোষ্ঠী হবে হয়তো, গাড়ো, মারমা, বা এ জাতীয় কিছু।
দুইজন খাটো আদিবাসী এসে চাঁন মিয়া আর কালু কে দেশী বন্দুকের নলা দিয়ে আঘাত করে তাদের নেতার ঘরের দিকে নিয়ে চললো। নেতার সামনে হাঁটু গেড়ে বসানো হলো দু'জনকেই।
শোন, আজকে আমরা একটা অপারেশনে যামু, তোরা দুইজন আগে যাবি, অপারেশন শেষ হওয়ার আগে যদি পালাইছস ওইনেই গুলি কইরা দিমু…..
কালু আর চাঁন মিয়ার হাতে দুইটা দেশী কাটা বন্দুক ধরিয়ে দেয়া হলো।
দেখলি কালু, এগুলা হইলো মাথা, আমগোরে নিজেরা না মাইরা আরেক পার্টি দিয়া মারাইবো, আমরা মরমু, ওদের কোনো ঝামেলাও হইবো না……
ওস্তাদ, পালাইবেন নাকি……
দেহি, সুযোগ পাইলে তুই পালাইবি, আমিও ভাগমু……
বাহিরের চাপা আওয়াজের উত্তেজিত কথা গুলো বাড়ছে, বুশরা আমান এই প্রচন্ড শীতেও ঘেমে যাচ্ছেন দুশ্চিন্তায়। নিজের জীবনের মায়া তিনি ত্যাগ করে ফেলেছেন, শুধু একবার জানতে চান তার সন্তানরা কোথায় আছে, কি উদ্দেশ্যে কারা তাদের তুলে এনেছে এসব হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তার মনে।
হটাৎ বাহিরের শোরগোল বেড়ে গেল। মানুষের চিৎকার আর বিকট আওয়াজ হচ্ছে, এগুলো কিসের আওয়াজ? গুলি চলছে নাকি? কোথায় এসে পরলাম এটা!!!
কালু আর চাঁন মিয়া এই তুমুল মারামারির মধ্যে কোনোরকম গা বাঁচিয়ে চলছে। দরকার না হলে কারো গায়ে আঘাত করছে না তারা। নেতা ওদের কে বলে দিয়েছে সুযোগ পেলে যেন ঘরে আগুন দেয়, একটা ঘরে আগুন দিতে গেল কালু, চাঁন মিয়া বললেন খাড়া, আগে দেইখা আয় ভিতরে কেউ আছে নাকি….
ঘরে ঢুকে তৎক্ষনাৎ বের হয়ে এলো কালু।
ওস্তাদ, ভিতরে দুইটা বাইচ্চারে বাইন্ধা রাখছে….
ঘরের ভিতরে ঢুকে বাচ্চাদের দেখেই কেমন চেনা চেনা মনে হলো চাঁন মিয়ার, কোথায় দেখেছে এদের। এত দামী পোশাক পরা কোনো বাচ্চাদের তো সে চিনে না। হটাৎ মনে হলো এরা তো ওই মহিলার সাথে ছিল, যে তাকে গণপিটুনি খাইয়েছে।
ওস্তাদ কি করমু……
দাড়া! বড় মেয়েটার মুখ খুলে দিল চাঁন মিয়া,
মা তোমরা এইনে কেন? তোমার আম্মা কই?
ভয়ে একদম কুঁকড়ে গিয়েছে মেয়েটা, কিছুই বলতে পারলো না সে…..
কালু, তুই বাইচ্চা দুইটা নিয়া ভাগ, কই যাইবি বুঝছস তো, আমি দেহি এদের আম্মারে বাইর করতে পারি নাকি….
হটাৎ বুশরা আমান যেই ঘরে বন্দী ওই ঘরের বাশের দরজা টা নড়তে লাগলো, ভয়ে গুটিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু যে লোকটা ঘরে ঢুকলো তাকে দেখে তিনি পুরো অবাক, এই লোকটাকেই থাপ্পড় মেরেছিলেন তিনি। চাঁন মিয়া ঘরে ঢুকেই আঙুল ঠোঁটের কাছে ধরে বুঝালেন চুপ থাকতে। কাছে এসে বুশরা আমানের হাতের বাধন খুলে দিলেন চাঁন মিয়া…
আমার বাচ্চারা কোথায়??? গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না বুশরা আমানের।
ওগোরে আগেই পাঠায়া দিছি, আমগোরও ভাগতে হইবো, আমার পিছনে পিছনে আয়েন।
যাকে একদিন আগেই পাবলিকের হাতে মার খাইয়েছেন, ওই লোকটাকে কি বিশ্বাস করা ঠিক হবে? আবার বলছে তার বাচ্চারাও নাকি তার কাছে আছে, এখন বিশ্বাস করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই, অন্ধকার রাত্রিতে চুপচাপ চাঁন মিয়াকে অনুসরণ করতে লাগলেন তিনি।
**পরবর্তী অংশ পরের পোস্টে **