জীবনচক্র (নতুন আপডেট নং ৯) - অধ্যায় ৫
সরকারি হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগে নিয়ে যাওয়ার পরই শ্বাসকষ্টও শুরু হলো মজুমদার সাহেবের, কিছু মেডিসিন দেওয়ার পর ডাক্তার অনেকগুলো টেস্টের একটা লম্বা লিস্ট ধরিয়ে দিলো মিসেস শিউলির হাতে,
এই টেস্ট গুলো করাতে কেমন খরচ হবে ডাক্তার সাহেব?
বাহিরে যদি করান তাহলে আমার রেফার করা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে করালে ২৫% ছাড় পাবেন, আর এখানে সরকারিভাবে করাতে পারবেন, একটু কষ্ট হবে কিন্তু অনেক কম খরচে করিয়ে নিতে পারবেন, বলে ওয়ার্ডে অন্য রোগীর দিকে চলে গেলেন ডক্টর।
গ্রামের মেট্রিক পাশ সাদা-সিধা মিসেস শিউলি কিভাবে কি করবেন কিছু বুঝতেই পারছেন না,
এত চিন্তা করবেন না তো মিসেস মজুমদার, আমি সব ব্যাবস্থা করতেছি, বললেন খলিল চৌধুরী,
আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলতেছি ভাই,
কি যে বলেন, আপনারা আমার কাছের মানুষ, বিপদে পাশে দাঁড়াতে না পারলে নিজেকেই তো মাফ করতে পারবো না,
এখন সিদ্ধান্ত নিন কোথায় চিকিৎসা করাবেন, প্রাইভেটে নাকি
সরকারীতে? প্রশ্ন করলেন খলিল চৌধুরী,
অসুস্থ স্বামীর দিকে তাকিয়ে অসহায় ভাবে মিসেস শিউলি বললেন আমি তো এসব কিছু বুঝি না, আপনার কি পরামর্শ এ ব্যাপারে,
উনি বললেন দেখেন, এখন টেস্ট গুলো তাড়াতাড়ি করিয়ে প্রাইভেটেই কোনো ডাক্তার কে টেস্ট গুলো দেখিয়ে পরামর্শ নেই, যদি ভর্তি হতে হয় তাহলে পরে সরকারি তে আবার নিয়ে আসবো, চিকিৎসা যদি লং প্রসেস হয় তাহলে সরকারিতেই করতে হবে, প্রাইভেটে লং টাইম ট্রিটমেন্ট এর খরচ শিল্পপতিরাও কুলিয়ে উঠতে পারে না, আপনাকে যে টাকা গুলো দিয়েছিলাম ওগুলো আপনার সাথেই আছে না,
টাকার কথা মনে পরতেই মনে পরে আজকেই সুমন কে টাকা পাঠানোর কথা, ব্যাগে হাত দিয়ে টাকার পাশেই থাকা মোবাইল হাতে নিয়ে শিউলি বেগম দেখেন বাইশ মিস কল ভেসে আছে স্ক্রিনে, কল লিস্টে লাল হয়ে আছে সুমনের নাম,
সুমনের ফোনে রিংটোন বেজে উঠতেই ধরফরিয়ে কল টা রিসিভ করে সুমন।
কি ব্যাপার আম্মু! এত বার কল করতেছি রিসিভ করো না, আব্বুর ফোনও অফ, অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে সুমন,
সুমন তোর বাবা হটাৎ করে আজকে বেশি অসুস্থ হয়ে গিয়েছে,তোর বাবা কে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি,
কি হয়েছে আব্বুর? বাবার অসুস্থতার খবর শুনে বুকে মোচড় দেয় সুমনের।
বুকে ব্যাথা আর শ্বাসকষ্ট, ওষুধ দেওয়ার পর এখন কিছুটা ভালো আছে
তুমি কিভাবে গিয়েছো হাসপাতালে, কে আছে তোমার সাথে এখন, জিজ্ঞেস করে সুমন ।
তোর খলিল আঙ্কেল সাথে আছে, তুই কোন চিন্তা করিস না,
আমি এখনই রওনা দিচ্ছি, বললো সুমন,
হ্যালো সুমন, আমি তোমার খলিল আঙ্কেল বলছি, এখন তোমার আসার দরকার নেই, রাস্তায় অনেক জ্যাম হবে, একবারে কালকে সকালে রওনা দাও, তোমার সাথে আকাশ আছে? ওকে দাও তো ফোনটা,
হ্যাঁ আব্বু বলো, ফোনটা নিয়ে বলল আকাশ,
তোর ব্যাংক একাউন্টে এক লাখ টাকা ট্রান্সফার করতেছি, তোর আর সুমনের সেমিস্টার ফি জমা দিয়ে দিস, সুমনকে চিন্তা করতে না করিস, সব ঠিক আছে, এখন টেস্ট করতে যাব, ফোন রাখলাম।
আরে চিন্তা করিস না, আব্বু বললোই তো এখন আঙ্কেল ভালো আছে, টেস্ট গুলো করুক, চল আমরা গিয়ে সেমিস্টার ফি জমা দিয়ে আসি,
সুমন বললো চল, বাসায় দম বন্ধ লাগতেছে এখন,
বাইকে বসতে বসতে আকাশ বললো তোর জন্য আমার লাভই হলো, আমি পরশুদিনই ম্যানেজারের কাছ থেকে সেমিস্টার ফির টাকা এনেছি, আজকে আবার পাঠালো, পুরোটাই লাভ ,
শালা তুই বলিস নি কেন যেন টাকা এনেছিস, যখন জানবে তখন প্যাদানি টা খাবি, বাইকের পিছনে বসে বলে সুমন।
টাকা খরচ হয়ে গেলে ওই টাকার হিসাবও শেষ, রিমাকে কিছু একটা গিফট করতে হবে, উত্তর দেয় আকাশ,
তার মানে আজকে ফ্ল্যাটে রিমাকে নিয়ে এসেছিলি, তোর মত লুচ্চা এই পৃথিবীতে নেই, কালকেই বললি এই মেয়ের সাথে আর জিবনে দেখাও করবি না আর আজকেই নিয়ে শুয়ে পরলি,
আরে রিমার বিষয়টা অন্যরকম, পরে তোকে বুঝিয়ে বলবো, জবাব দেয় আকাশ,
কিরে দোস্ত প্রেমে পড়ে গেলি নাকি?
আরে না তেমন কিছু না।
আম্মু, আম্মু ক্ষুধা লেগেছে, শিউলি বেগমের হাতে টান দিয়ে বলে তার ছোট ছেলে শাওন।
টেস্ট করার জন্য মজুমদার সাহেব কে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, ওয়েটিং জোনে বসে অপেক্ষা করছিলেন মিসেস শিউলি, খলিল চৌধুরী আর শাওন,
আপনি বসুন, আমি বাহির থেকে ওকে কিছু খাইয়ে নিয়ে আসি, বললেন খলিল চৌধুরী,
যাও আব্বু, আঙ্কেল এর সাথে গিয়ে খেয়ে আসো, শাওন কে খলিল চৌধুরীর এর দিকে এগিয়ে দিলেন মিসেস শিউলি,
আপনার জন্য কি আনবো, আপনি কি খাবেন? যাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করলেন খলিল চৌধুরী,
আমি কিছু খাবো না, আপনারা খেয়ে আসুন।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গিয়েছে, আনমনে ভাবতে থাকেন মিসেস শিউলি, তিনি কতটা ভালোবাসেন নিজের স্বামীকে, নিজের সন্তানের সেমিস্টার ফি, ছয় বছর বয়সী বাচ্চার খাওয়ার কথাও তিনি ভুলে গিয়েছেন স্বামীর অসুস্থতার কারণে,
চিন্তা করেন খলিল সাহেবের কথাও, লোকটা না থাকলে আজকে কি যে হতো, কি নিঃস্বার্থভাবে পরিশ্রম করছেন লোকটা আমাদের জন্য, আমরা তো তার কোন রক্ত সম্পর্কে আত্মীয় না, এমন কি দূরসম্পর্কের কেউও না, শুধুমাত্র তার ছেলের বন্ধুর পরিবার বলে এত কিছু করছেন। লোকটার প্রতি একটা ভালো লাগা, শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হয় শিউলি বেগমের মনে।
বাবু কি খাবে বলো, শাওন কে জিজ্ঞেস করলেন খলিল সাহেব,
গোশত দিয়ে ভাত খাবো, উত্তর দেয় শাওন,
আকাশের কথা মনে পরে খলিল সাহেবের, ওর মা মারা যাওয়ার পর থেকেই বাবা ছেলের সম্পর্ক টা অনেকটা টাকা দেওয়া নেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছে , অনেক দিন একসাথে ভাত খাওয়া হয় না,
বাবু, পোলাও দিয়ে খাবে? জিজ্ঞেস করে খলিল সাহেব,
পোলাওয়ের কথা শুনে চোখ চক চক করে উঠে শাওনের,
ও অবাক হয়ে বলে এখানে পোলাও আছে, তাহলে পোলাও খাবো,
ওয়েটার কে ডেকে শাওনের জন্য মোরগ পোলাও আর গরুর কালা ভুনা আর নিজের জন্য সাদা ভাত আর সবজি অর্ডার করলেন খলিল সাহেব।
আঙ্কেল তুমি পোলাও খাবে না, জিজ্ঞেস করে শাওন,
না বাবু তুমি খাও, তোমার আম্মুর জন্য কি নিয়ে যাবে, তোমার আম্মুও তো কিছু খায় নি,
আম্মু তো কিছু বলে নি আঙ্কেল।
আচ্ছা তোমার আম্মুর ফোন নাম্বার জানো তুমি বাবু, শাওন কে জিজ্ঞেস করলেন খলিল সাহেব।
গ্রামের সাদা-সিধা মহিলা হলেও এসব ব্যাপারে খুব সচেতন শিউলি বেগম, বাচ্চা কে তার এবং বাবার দুজনের নাম্বারই মুখস্থ করিয়ে দিয়েছেন শিউলি বেগম।
খুব আগ্রহের সাথে মায়ের ১১ ডিজিটের ফোন নাম্বার টা বললো শাওন,
নাম্বার টা টুকে নিয়ে খলিল সাহেব বললেন খাচ্ছো না কেন বাবু,
আরে এই পোলাও এমন লাগে কেন? আম্মুর পোলাও অনেক মজা, বিরক্তি নিয়ে বললো শাওন,
তোমার আম্মুর রান্না পোলাও এর থেকে মজা?
হুম আরো অনেক বেশি মজা,
আচ্ছা তাহলে ভাত দিয়ে খাও, ওয়েটার কে ভাত দিয়ে যেতে বলে শিউলি বেগমের ফোনে কল দেন খলিল সাহেব,
হ্যালো, আপনি কি খাবেন? খাবেন না, আরে কিছু না খেলে আপনিও অসুস্থ হয়ে যাবেন, পরে আমাকে দুই রোগী টানতে হবে, ভাত নিয়ে আসতেছি, কি খাবেন মাছ না মাংস? আচ্ছা মাছ নিয়ে আসতেছি।
ফোন রেখে মিসেস শিউলি ভাবতেছেন কত ভাবে লোকটা আমাদের জন্য।
প্রতিটা টেস্ট করাতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে, তার উপর একেকটা টেস্ট একেক জায়গায় করাতে হচ্ছে সময় লেগে যাচ্ছে খুব বেশি, রাত ৯ টার পর কোনো ডাক্তার ও পাওয়া যাবে না, খলিল সাহেব তার এক পরিচিত ডাক্তার কে অপেক্ষা করার জন্য অনুরোধ করেছেন। উনি কথা দিয়েছেন ৯ টা ৩০ পর্যন্ত তিনি থাকবেন।
সব টেস্ট শেষ করে যখন ডাক্তার এর চেম্বারে ঢুকলেন তারা তখন ঘড়িতে ৯ টা বেজে বিশ,
খুব মনোযোগ দিয়ে রিপোর্ট গুলো দেখে ডক্টর বললেন আসলে উনার রোগ অনেক, কিন্তু কোনোটাই খুব মারাত্বক পর্যায়ে না, মুল সমস্যা হচ্ছে ডায়েবেটিস কনট্রোলে থাকছে না,
ডায়েবেটিস রোগিদের সকাল বিকাল হাঁটতেই হবে এক ঘন্টা করে,।
কিন্তু উনি তো বেশি হাঁটতে পারেন না, জানালেন মিসেস শিউলি,
হুম জানি উনি হাঁটতে পারেন না বেশি, আপনাদের সমস্যা কি জানেন আপনারা কোন কিছু শুরুতেই গুরুত্ব দেন না, তারপর দোষ দেন চিকিৎসকদের চিকিৎসা পদ্ধতিকে, ভৎসনা করলেন ডক্টর,
এদিকে দেখুন, একটা রিপোর্ট দেখিয়ে ডক্টর বললেন দেখুন আপনার স্বামীর দুই পায়েই রক্তনালী তে ব্লক আছে, এখন সার্জারী ছাড়া উপায় নেই। দেখুন ডায়েবিটিস সকল রোগের মুল, এটা কন্ট্রোল এ না থাকলে অন্য রোগ গুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠবেই যেমন আজকে হলো, খাওয়া দাওয়া নিয়ম মাফিক করতে হবে, ভালো খেতে হবে, নিয়মিত হাঁটতে হবে,
আল্লাহ সব ঠিক করে দিবেন, এখন সার্জারীর প্রস্তুতি নিতে থাকুন,
এত রাতে হাসপাতালের শুধু একটা সিঙ্গেল কেবিনই খালি পাওয়া গেল, কেবিনে গিয়ে মজুমদার সাহেব কে শুইয়ে দিয়ে মিসেস শিউলি পাশের সোফায় বসলেন, খুব ক্লান্তিবোধ করছেন তিনি, অথচ সব দৌড়াদৌড়ি করেছেন খলিল সাহেব
আপনারা বসুন আমি খাবার নিয়ে আসি বলে বেরিয়ে গেলেন খলিল সাহেব।
খলিল সাহেব বের হয়ে যাওয়ার পর মজুমদার সাহেব বললেন বুঝলে সুমনের মা খুব লজ্জা লাগছে আর নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে, ব্যাস্ত লোকটাকে সারাদিন কত কষ্ট দিলাম আমার জন্য।
এভাবে ভাবছো কেন তুমি, উনি সাহায্য করতে পেরে খুশিই হয়েছেন, স্বামীকে শান্তনা দেন মিসেস শিউলি।
খেতে খেতে মজুমদার সাহেব বললেন খলিল তুমি আমার অনেক ছোট, আজকে যা করলে তার জন্য তোমার পা ছুঁয়ে সালাম করা উচিত আমার,
আরে ভাই সাহেব কি যে বলেন, এখন খাওয়া দাওয়া করে ঘুমান, আর টাকা পয়সা নিয়ে কোনো চিন্তা করবেন না, যখন যা লাগে সব আমার ম্যানেজার পাঠিয়ে দিবে। পরে যখন হয় দিয়ে দিবেন আবার, কালকে সুমন আসতেছে, সব কাজে সুবিধা হবে আকাশকেও পরে আসতে বলব,
খলিল চৌধুরী বাথরুমে যাওয়ার পরই মজুমদার কে মিসেস শিউলী বললেন উনি তোমার থেকে অনেক ছোট বলছো কেন?
আমাদের সুমন আর উনার ছেলে আকাশের বয়স তো সমান,
হুম আমাদের ছেলেদের বয়স সমান, কিন্তু আমি আর ও তো একবয়সে বিয়ে করি নি, অনেক কম বয়সেই বিয়ে করেছে খলিল।
সিঙ্গেল বেডে বাবার পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে ছোট্ট শাওন,
পাশে সোফায় বসে থাকলেন মিসেস শিউলি আর তার কাছে এখন ফেরেশতাতুল্য মানব খলিল চৌধুরী।
সোফায় বসে দুজনেই সারাদিনের ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমের কোলে ঢলে পড়লেন।
এভাবে বসে ঘুমালে যা হয়,যখন তখন ঘুম ভেঙে যায়, মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর খলিল চৌধুরী দেখলেন ঘুমের ঘোরে তার কাধে হেলান দিয়ে আছেন মিসেস শিউলি।
ডিম লাইটের আবছা আলোয় রহস্যময়ী সুন্দরী লাগছে তাকে,
সারাদিনের ক্লান্তি তার চেহারার সৌন্দর্য একটুও ম্লান করে দিতে পারে নি, চেহারা থেকে যেন দ্যুতি ছড়াচ্ছে,
মিসেস শিউলির বাম স্তন টা লেগে আছে খলিল চৌধুরীর ডান বাঁজুতে, ছুঁয়ে দিতে মন চায় খলিল চৌধুরীর, কিন্তু না, ইনি রতনের স্ত্রী রেশমা না, তার ছেলের বন্ধুর সম্মানিত মা, এখন তার একটা অসভ্য স্পর্শ তার সারাদিনের সকল ভালো কাজ এর মর্যাদা ধুলোয় মিশিয়ে দিবে, নিজের রিপুকে সামলে নেন খলিল চৌধুরী, মিসেস শিউলির মাথা টা হালকা করে সরিয়ে দেন তিনি, মিসেস শিউলিও ঘুমের মধ্যেই সরে যান, বাথরুম থেকে ঘুরে এসে আরেকবার মিসেস শিউলির দিকে তাকিয়ে আবার ঘুমিয়ে যান তিনি।
প্রতিদিনের মত আজকেও ভোরেই ঘুম ভাঙে মিসেস শিউলির, সজাগ হওয়ার পর আবিষ্কার করেন তিনি খলিল চৌধুরীর কাধে মাথা দিয়ে আছেন, লজ্জায় তাড়াতাড়ি সরে গেলেন উনি, তাকিয়ে দেখেন খলিল চৌধুরীর বুকের কাছে সাদা পাতলা গেঞ্জিটা ভিজে আছে, মিসেস শিউলির ঘুমের মধ্যে মুখে লালা আসে না, এভাবে কাৎ হয়ে ঘুমানোর কারণেই হয়তো আজকে পরেছে, নিজের শাড়ির আঁচলটাও জায়গা মত নেই, লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে মিসেস শিউলির, টিস্যু দিয়ে যে জায়গাটা মুছে দিবেন তার উপায়ও নেই এত পাতলা গেঞ্জিটা,
অবশ্য পাঞ্জাবির নিচে মানুষ এমন গেঞ্জিই পর,উনি না পাঞ্জাবি পরে ছিলেন, কুঁচকে যাওয়ার ভয়ে হয়তো খুলে রেখেছেন,
যা হওয়ার হয়েছে, ফ্রেশ হওয়া লাগবে, কেবিনের লাইট অন করে ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় মিসেস শিউলির দৃষ্টি পরে খলিল চৌধুরীর উরুসন্ধির মাঝখানে, স্বভাবজাত ভাবে তার অস্বাভাবিক বড় বাড়াটা দাঁড়িয়ে জানান দিতে চাচ্ছে সকাল হয়ে গিয়েছে, কিন্তু আন্ডারওয়্যার রাজপ্রহরীর মত সেটা আটকে দেয়ায় বাঁকা হয়ে পায়জামার উপর দিয়ে তার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে, মিসেস শিউলি দেখলেন কি বাজে ভাবে ফুলে আছে উনার ওখানটা, কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে তিনি দ্রুত ওয়াশরুমে চলে যান, আয়নার সামনে কিছুক্ষণ থ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ভাবতে থাকেন ছি: ছি: এমন বিশ্রীভাবে উনি কিভাবে তাকালেন ওটার দিকে, যে লোকটা নিস্বার্থ ভাবে সারাদিন খাটলেন, উনার দিকে এভাবে তার নজর গেলো কেন? ওদিকে তার অসুস্থ স্বামী শুয়ে আছেন, তাহলে কি অস্বাভাবিক বড় বলেই তিনি ওভাবে তাকিয়ে ছিলেন? চোখ সরাতে পারছিলেন না ওটা থেকে, সত্যিই কি বড়, উনার স্ত্রী কিভাবে নিতো এটা!!
আবারো সম্বিত ফিরে মিসেস শিউলির, ছি: নিজের উপর ঘৃনা হয় তার, তার স্বামী এমন অসুস্থ আর তিনি কিনা এমন নোংরা চিন্তা করতেছেন!!
এমন সময় অজানা আশংকায় কেঁপে উঠলেন মিসেস শিউলি,
হাত টা শাড়ীর ভিতরে ঢুকাতে ঢুকাতে তিনি প্রার্থনা করেন উনি যেটা ভাবছেন সেটা যেন না হয়,
হতাশায় চোখটা বন্ধ করে ফেললেন মিসেস শিউলি, উনার মাসিক তো আরো ৩/৪ দিন পরে হওয়ার কথা, এখনই কেন?
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে হয়তো এমন হয়েছে, প্যান্টি টা ভিজে যাচ্ছে ধীরে ধীরে,
সকাল সকালই ডাক্তার এসে একবার দেখে গিয়েছেন, অবস্থা দেখে নতুন কিছু মেডিসিন যুক্ত করেছেন আবার কিছু বাদও দিয়েছেন, সাথে কিছু দিকনির্দেশনা।
ডাক্তার চলে যাওয়ার পর খলিল সাহেব বললেন যাই কিছু নাস্তা নিয়ে আসি, কেবিন থেকে বের হয়ে খলিল সাহেব ভাবলেন মিসেস শিউলি কে সকাল থেকে কেমন অন্যমনস্ক লাগছে, ডাক্তার রোগীর অবস্থা ভালো বলার পরও উনার অস্বস্তি ভাবটা কাটে নি, অন্য কোনো সমস্যা হয়েছে কি? আবার ঘুরে দরজায় দাঁড়িয়েই তিনি মিসেস শিউলি কে ডাকলেন, এই যে শুনেন!
দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে খলিল চৌধুরী জিজ্ঞেস করলেন আপনাকে অন্যরকম লাগছে কোনো সমস্যা হয়েছে?
না, না কিছু না, আমি ঠিক আছি,
আপনি শিউর?
হুম,
মিসেস শিউলি ভাবলেন সুমন আসতে আসতে সন্ধে হয়ে যাবে,
অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাবে, অবশেষে লজ্জার মাথা খেয়ে বলেই ফেললেন, আসলে আমার স্যানিটারি ন্যাপকিন দরকার পরে গিয়েছে হটাৎ করে,
ওহ আচ্ছা, এটা আর এমন কি, আচ্ছা নিয়ে আসবো,
মিসেস শিউলি চিন্তা করলেন কাপড় এনেছেন মাত্র এক সেট এখনই প্যান্টি নষ্ট হয়ে গিয়েছে, কাপড়ে লাগলে আর কিছু করার থাকবে না, আর ইউটিউবে জরায়ূ ক্যান্সার নিয়ে সতর্কতামূলক ভিডিও দেখে এসব নিয়ে একটা ভয় ও ঢুকে গিয়েছে,
মিসেস শিউলি আবার সাহস করে জিজ্ঞেস করলেন এদিকে কোনো কাপড়ের দোকান আছে?
হুম, শহর এটা থাকবেই তো উত্তর দিলেন খলিল চৌধুরী।
আসলে আমার আন্ডার গার্মেন্টসও লাগতো!!
খলিল চৌধুরী বুঝতে পারলেন খুব লজ্জা পাচ্ছেন ভদ্রমহিলা, শুধু পরিস্থিতিতে পরে বলতে বাধ্য হচ্ছেন,
উনি জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলেন আপনার সাইজ কত? কিন্তু এভাবে বললে ভদ্রমহিলা লজ্জায় মরেই যাবে, আর নিজের আত্বমর্যাদাবোধ ও আর বাকি থাকবে না খলিল চৌধুরীর,
তাই তিনি এভাবে জিজ্ঞেস করলেন, কোন মাপের আনবো?
এটা শুনেই লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে ফেললেন মিসেস শিউলি, অস্পষ্ট ভাবে বললেন ৩৪,
থাকা লাগবে আরো কয়েকদিন, ঘেমেছেনও কালকে অনেক, বলছি উপরের টা কত মাপের আনবো?
না, না সেটার দরকার নেই,
আরে বলেন তো, যেতে যখন হবেই একবারে নিয়ে আসলেই হবে, জোর দেন খলিল চৌধুরী।
জ্বী, 36 D বলেই কেবিনের ভিতর ঢুকে গেলেন মিসেস শিউলি।
খুব তো বলে আসলেন, কিন্তু এখন নিজেরই এই বয়সে এসব আন্ডারগার্মেন্টস এর দোকানে ঢুকতে লজ্জা করছে, তার উপর পরিচিত কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ, বউ নাই তার, উল্টাপাল্টা ভেবে বসে থাকবে, বাঙালি জাতকে খুব ভালো চেনা আছে উনার,
৩৪ সাইজের প্যান্টি আর ৩৬ ডি এর ব্রা দিয়েন তো, দোকানদারকে বললেন খলিল চৌধুরি,
কি কালার নেবেন স্যার,
একটা দিলেই হবে,
ভাবীর একটা পছন্দ আছে না স্যার,
আচ্ছা লাল দাও,
কোন টাইপ ব্রা দিবো স্যার,
ব্রার আবার টাইপ ও হয় নাকি? তার বউকে তো তিনি সারাজীবন একরকম ব্রাই পরতে দেখেছেন, ছেলেটা কি মজা নিচ্ছে তাকে নিয়ে?
ব্রার আবার টাইপও হয় নাকি, জিজ্ঞেস করলেন খলিল চৌধুরী।
হয়তো স্যার, যেমন ধরেন, পুশ-আপ, স্ট্রেপলেস, স্পোর্টস, আরো অনেক রকম হয় দেখাবো স্যার?
দাঁড়াও আসছি আমি, বলে দোকান থেকে বের হয়ে গেলেন খলিল চৌধুরী,
শপিং মলের বেঞ্চে বসে ভাবলেন মিসেস শিউলির সাথে একটু মজা করাই যায়, এত চিন্তা করে লাভ নেই, সকাল হওয়ার কারনে মলে তেমন মানুষও নেই বেশি,
মাত্রই সুমন কল দিয়ে জানিয়েছে ও রওনা দিয়েছে, ফোন হাতেই ছিলো, আবার রিংটোন বেজে উঠায় রিসিভ করে ফোনটা কানে নিলেন মিসেস শিউলি।
বলছি কি রংয়ের ব্রা আনবো সেটা তো বললেন না,
খলিল চৌধুরীর মুখে এই কথা শুনে লজ্জায় কান লাল হয়ে গেলো মিসেস শিউলির,
একটা আনলেই হবে উত্তর দিলেন মিসেস শিউলি,
তারপরও বলেন না কোন কালারের আনবো?
আপনার পছন্দমত নিয়ে আসেন, একথা বলে জিহ্বে কামড় দিলেন মিসেস শিউলি, কি বললেন এটা উনি, ছি :ছি:
ব্রা প্যান্টি কি একই কালারের আনবো নাকি ভিন্ন ভিন্ন কালারের?
প্রচন্ড লজ্জা লাগছে মিসেস শিউলির, কিন্তু লোকটার উপর রাগ হচ্ছে না তার, কি আশ্চর্য!
জ্বি এক কালার, ছোট্ট করে উত্তর দেয় মিসেস শিউলি,
কোন টাইপের ব্রা আনবো?
বললাম তো আপনার পছন্দ মত আনুন, আবার একই ভুল করলেন মিসেস শিউলি, নাকি এবার ইচ্ছে করেই বললেন তিনি,
তার পছন্দ মত নিতে বলেছেন মিসেস শিউলি, খুশিতে নাঁচতে ইচ্ছে করছে খলিল চৌধুরীর, বয়স কম হলে হয়তো একচোট নেঁচেই নিতেন,
দোকানদার ছেলেকে বললেন ২ জোড়া দাও নরমাল ব্রা পেন্টি, কালার হবে, লাল আর কালো, আর কিছু ছোট এক্সক্লুসিভ ডিজাইন দেখাও, ছোটো টাইপ কিছু আরকি,
অনেক গুলো দেখে ১ টা ট্রান্সপারেন্ট ব্রা, আর একটা থাং প্যান্টি নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা হলেন তিনি,
লিফট দিয়ে উপরে উঠার পর মনে হলো, যা শালা স্যানিটারি ন্যাপকিন আনতেই তো ভুলে গিয়েছি, আবারো গ্রাউন্ড ফ্লোরের বাটনে কমান্ড দিলেন তিনি।
খলিলের এত দেরি হচ্ছে কেন বলোতো? শাওনের বাবা জিজ্ঞেস করলেন তার স্ত্রীকে,
হয়তো কোনো কাজে আটকে গিয়েছে, কেন তোমার বেশি ক্ষুধা পেয়েছে? কলা পাউরুটি দেই?
না, না, এমনি বললাম, খলিল আসুক,
আম্মু আমি কলা খাবো, বলে উঠলো শাওন,
শাওন কলা খাওয়ার সময়ই খলিল চৌধুরী কেবিনে ঢুকলেন,
খাবার গুলো টেবিলে রেখে মজুমদার সাহেবের আড়াল করে একটা ব্যাগ দিলেন মিসেস শিউলি কে,
তোমরা বসো আমি খাবার রেডি করছি বলে প্লেট আর ব্যাগটা নিয়ে ওয়াশরুমে গেলেন মিসেস শিউলি, এক এক করে দেখতে লাগলেন ব্রা গুলো, অনেক ভালো কোয়ালিটি, এমন দামি ব্রা তিনি পরেন নি কখনো, ওমা এটা কি, থাং প্যান্টিটা দেখে চক্ষু চড়াকগাছ মিসেস শিউলির, তারপর তার হাতে উঠে এলো ট্রান্সপারেন্ট ব্রা, ইশ এটা পরলে তো সবই দেখা যাবে, অসভ্য একটা, ঠোঁটের কোনে তার মুচকি হাসি।
বাসে উঠে কেন জানি অনন্যাকে বাবার অসুস্থতার খবর জানাতে মন চাইলো সুমনের, এত সকালে হয়তো ঘুম থেকেই উঠে নি, কালকে রাগ করে চলে গিয়েছে মেয়েটা,
মেসেঞ্জারে টেক্সট করলো সুমন "অনন্যা কালকের আচরণ এর জন্য সরি, আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পরেছে হটাৎ, দোয়া করিও, বাড়ি যাচ্ছি, বাসে উঠেছি"
সাথে সাথেই টেক্সটটা সিন হয়ে গেলো, মুহূর্তের মধ্যেই সুমনের ফোনে আসলো অনন্যার কল,
রিসিভ করতেই অনন্যা বললো কি হয়েছে আঙ্কেলের?
কেমন আছেন এখন উনি?
এখন ভালো, হাসপাতালে আছে, গিয়ে বিস্তারিত বুঝবো,
আচ্ছা সাবধানে যেও,
আচ্ছা রাখছি এখন,
সুমন শোনো!
হুম বলো,
কালকের জন্য আমি অনেক অনেক সরি, তোমাকে চড় মারার কোনো অধিকার নেই আমার, খুব খারাপ লাগছিলো, সারারাত ঘুমাতে পারি নি আমি, তোমার কাছে তো কোনো টাকাও ছিল না, বাসায় গিয়েছিলে কিভাবে, কান্নাজড়িত গলায় একটানা কথা গুলো বললো অনন্যা।
আরে আকাশকে ফোন করেছিলাম ও এসে নিয়ে গিয়েছে, মিথ্যা বললো সুমন, ও গিয়েছে হেঁটে,
আচ্ছা সুমন! মাফ করতে পারবে তো আমায়, এবার অনন্যার গলায় স্পষ্ট কান্নার আওয়াজ,
আরে কাঁদছো কেন, ভুল তো আমারই ছিল, আমি রাগ করি নি, রাগ করলে মেসেজ দিতাম তোমায়?
না তবুও বলো মাফ করেছো আমায়, প্লিজ, প্লিজ,
আচ্ছা বাবা, মাফ করেছি, হয়েছে এখন?
হুম, সাবধানে যেও, বাসে বমি হয় না তো আবার তোমার?
না এসব নোংরা কাজ আমি করি না, আচ্ছা রাখছি এখন,
এসব কান্না বাদ দিয়ে ঘুমাও এখন, পাগলী!
আচ্ছা!
ফোনটা রেখেই বালিশটা বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে অনন্যা ভাবলো সুমন পাগলী বলেছে ওকে,
খুব খুশী লাগছে তার, আবার বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো অনন্যার মন, সারা জীবন ডাকবে তো পাগলী?
ডাকতেই হবে, ওকে আমি হারিয়ে যেতে দিব না, আর কি বললো জার্নিতে বমি করা নোংরা কাজ? আমিও তো বমি করি, তাহলে আমি কি নোংরা?
তবেরে! হানিমুনে যাওয়ার সময় তোমার কোলে বমি করবো শয়তান কোথাকার!
এই যে! আমি কি জানালার সাইডের সিটটায় বসতে পারি?
সুমন তাকিয়ে দেখলো একটি অপরুপা সুন্দরী তার দিয়ে তাকিয়ে রিকোয়েস্ট করছে জানালার পাশের সিটের জন্য,
বসতে দিতে পারতাম, কিন্তু আপনার মত কোনো মেয়ের জন্য সিট ছেড় দিকে একজন খুব কষ্ট পাবে।
পাশের সিটে বসতে বসতে মেয়েটি বললো খুব ভালোবাসেন ওকে?
আমি বাসি না ও বাসে! ছোট করে জবাব দেয় সুমন,
তাহলে এত খেয়াল করছেন যে ওর ব্যাপারে?
ও বলেছে আমি ওকে ভালো নাই বাসতে পারি কিন্তু তার ভালোবাসার মর্যাদা দিতে হবে,তাই মর্যাদা দেই,
তাহলে একদিন ভালোও বাসবেন, মেয়েটি মুচকি হেসে বলে,
আপনি কিভাবে জানেন?
কারণ আমার উনিও এমন ছিলেন,
আপনি ম্যারিড?
অফকোর্স আই এম,
তাহলে আপনি এদিকে বসতে পারেন, বমির অভ্যাস নাই তো আপনার? জানালার পাশে বসতে চাইলেন যে, তাহলে আমি পিছনে গিয়ে বসবো চিন্তিত হয়ে বলে সুমন,
আমার চিন্তা বাদ দিয়ে ওর চিন্তা করো, ওর অভ্যাস আছে নাকি, আমার সাথে তো একবারই জার্নি করবে ওর সাথে সারাজীবন করা লাগবে, মেয়েটা এবার তুমি করে বললো সুমন কে, বুঝে নিয়েছে জুনিয়র ও,
সুমন কি ভেবে যেন অনন্যাকে আবার টেক্সট করলো জার্নির সময় বমি করো তুমি?
রিপ্লে আসলো, শয়তান, অসভ্য, সাথে বড় একটা এংরি স্টিকার।