কাকিমাদের উপর প্রতিশোধ - অধ্যায় ২১

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-69880-post-6017710.html#pid6017710

🕰️ Posted on August 25, 2025 by ✍️ Abirkkz (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 3613 words / 16 min read

Parent
১৩.২ আমার ঘুম ভাঙে সন্ধ্যার পর। ঘরের জানালা দিয়ে বর্ষার মেঘলা আকাশের ম্লান আলো ঢুকে দেয়ালে ছায়া ফেলছে। বাইরে বৃষ্টি থেমে গেছে, কিন্তু জানালার কাচে জলের ফোঁটা এখনো লেগে আছে, হাওয়ায় হালকা কাঁপছে। ঘরে একটা পুরনো ক্যালেন্ডার ঝুলছে, তার হলুদ হয়ে যাওয়া পাতায় ধুলো আর বৃষ্টির ছিটে জমে আছে। বিছানার চাদরে ভেজা মাটির হালকা গন্ধ মিশে গেছে, বালিশে আমার ঘামের ছাপ। আমার শরীরে লুঙ্গির নরম স্পর্শ, কিন্তু ত্বকে দীর্ঘ জার্নির ক্লান্তি লেগে আছে। শহরের আমার ফ্ল্যাটে জানালা দিয়ে শুধু রাস্তার হর্ন আর ধোঁয়া ঢোকে, কিন্তু এখানে বর্ষার ভেজা হাওয়ায় ধানখেতের সবুজ গন্ধ আর পুকুরের জলের ঝিলিক ভেসে আসছে।  আমি চোখ মেলে দেখি রিমা আমার রুমে বসে আছে। তার শাড়ির আঁচল মেঝেতে হালকা ঘষছে, বর্ষার কাদায় সামান্য দাগ লেগেছে। তার চুলে সন্ধ্যার আলো পড়ে ঝিকমিক করছে, চুলে গোঁজা জুঁই ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে। তার মুখে একটা ম্লান হাসি, চোখে একটা গভীর দুঃখ। আমার বুকের ভিতরটা ধক করে ওঠে। রিমা! আমার ছোটবেলার ভালোবাসা, যার হাসির শব্দ আমার কানে এখনো গুঞ্জন তুলে, যার নরম হাত আমার স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করে। আমার মনে পড়ে, সে এখনো সেই রিমা, যার হাসি আমার জীবনের আলো ছিল। কিন্তু আমি কি তাকে আমার জীবনের অন্ধকারে টেনে আনতে পারি? আমার বুকের ভিতরে একটা ঝড় বয়ে যায়। রিমা আমার দিকে তাকিয়ে বলে, “ঘুম ভাঙলো অবশেষে!” তার গলায় একটা হালকা কৌতুক, কিন্তু তার চোখে একটা অভিমান। সে হাসতে হাসতে বলে, “শহরে নিশ্চয়ই অনেক মেয়ে তোমার পিছনে ঘুরছে!” তার হাসির পিছনে একটা লজ্জা, তার চোখে একটা অদ্ভুত আলো। আমি বলি, “তুমি যদি না ঘুরো, অন্য কেউ কেন ঘুরবে?” আমার গলায় একটা কৌতুক, কিন্তু আমার বুক মুচড়ে ওঠে। রিমা হঠাৎ চুপ করে যায়, তার গালে একটা হালকা লাল আভা। আমি লজ্জা পাই, মাথা নিচু করে বলি, “আরে, হ্যাঁ, অনেক ক্লান্ত ছিলাম। তুমি কখন আসলে?” আমার গলা ভারী, আমার চোখ তার মুখ থেকে সরছে না। তার শাড়ির নীল রঙে সন্ধ্যার আলো পড়ে একটা অদ্ভুত ছায়া তৈরি করছে। তার কপালে বৃষ্টির ফোঁটা শুকিয়ে একটা হালকা চিহ্ন ফেলেছে। আমার মনে পড়ে, ছোটবেলায় আমি তার চুলে ফুল গুঁজে দিতাম, তার হাসির শব্দ আমার বুকের ভিতর ঝড় তুলত। রিমা আমার পাশে বসে বলে, “আমি তো অনেকক্ষণ ধরেই বসে আছি, তোমার ঘুম ভাঙার অপেক্ষা করছি।” তার শরীর আমার কাছাকাছি, তার শাড়ির আঁচল আমার হাতে হালকা ঠেকছে। তার শরীরে সাবান আর জুঁই ফুলের গন্ধ, যেন আমার ছোটবেলার স্মৃতির একটা অংশ। আমার বুকের ধুকপুকানি বাড়ে। রিমা হঠাৎ বলে, “তুমি মনে করো, আকাশ? তুমি একবার বলেছিলে, আমরা বড় হলে একসাথে থাকব।” তার কথায় আমার মুখ গরম হয়ে ওঠে, আমি সেই প্রতিশ্রুতি ভুলে গিয়েছিলাম। আমি আমতা আমতা করে বলি, “আরে, সে তো ছোটবেলার কথা!” আমার গলায় একটা লজ্জা, কিন্তু আমার মনে একটা পুরনো স্মৃতি জেগে ওঠে। আমি গলা পরিষ্কার করে বলি, “তারপর কী অবস্থা তোমার? কেমন আছো?” রিমা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, “এই আরকি, বাবার অসুস্থতায় কী যে করবো কিছুই বুঝতে পাচ্ছি না। তা তোমার কী খবর, সেই যে গেলে আমাদের রেখে, আর তো কোনো খোঁজ নেই!” তার গলায় একটা অভিমান, তার চোখে একটা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। রিমা হঠাৎ বলে, “তুমি চলে যাওয়ার পর আমি প্রতি সন্ধ্যায় এই পুকুরপাড়ে এসে দাঁড়াতাম। ভাবতাম, তুমি হয়তো ফিরে আসবে।” তার কথায় আমার বুক মুচড়ে ওঠে। আমি আমতা আমতা করে বলি, “আরে না, মানে, ইয়ে, এই আরকি, কাজের ব্যস্ততা অনেক, তাই আরকি…” আমার কথা শেষ হয় না, আমার মুখ লজ্জায় গরম হয়ে ওঠে। রিমা ভ্রু কুঁচকে বলে, “তাই কি? তাই বলে কি কোনো খোঁজখবর নেওয়া যায় না?” তার গলায় একটা তীব্র অভিযোগ, তার হাত শাড়ির আঁচল শক্ত করে ধরে আছে। আমি বলি, “তোমরাও তো কোনো খোঁজ নাওনি, আমি চলে যাওয়াতে তো তোমাদের উপকারই হয়েছে।” আমার গলায় একটা ক্ষোভ, একটা পুরনো কষ্ট। আমার মনে পড়ে, বাবা-মা মারা যাওয়ার পর আমি এই বাড়িতে এসেছিলাম, কিন্তু কাকিমার চোখে আমি যেন একটা বোঝা ছিলাম। রিমা আমার দিকে তাকিয়ে বলে, “এটা আবার কী ধরনের কথা! তুমি জানো, তুমি চলে গেলে আমি কত কষ্ট পেয়েছি? আমি ভেবেছিলাম, তুমি আবার চলে আসবে আমাদের এখানে, কিন্তু আর আসলে না!” তার চোখ ভিজে আসে, তার গলা কেঁপে যায়। আমার বুকের ভিতরটা মুচড়ে ওঠে। আমার মনে পড়ে ছোটবেলায় রিমার সাথে পুকুরপাড়ে দৌড়ানো, তার হাত ধরে গাছের ছায়ায় বসা, তার হাসির শব্দ। আমি কিছু বলতে যাই, কিন্তু আমার গলা আটকে যায়। এমন সময় কাকিমা ঘরে ঢোকে। তার শাড়ির আঁচল মেঝেতে ঘষছে, বর্ষার কাদায় সামান্য দাগ লেগেছে। তার হাতে একটা পুরনো কাপড়ের ব্যাগ, তার মুখে ক্লান্তি, তার চোখে একটা অস্থিরতা। তার কপালে ঘামের ফোঁটা, তার হাত কাঁপছে। সে বলে, “বাবা আকাশ, আমাদের কিছু বাজার লাগবে।” তার গলায় একটা তাড়া, যেন সে আমার আর রিমার কথোপকথনের মাঝে ঢুকে পড়তে চায় না। হঠাৎ কাকিমা তীক্ষ্ণ গলায় বলে, “তুই কি ভাবিস, আমরা তোকে বোঝা মনে করতাম? তুই জানিস না, আমরা কত কষ্টে তোকে রেখেছি!” তার কথায় আমার বুক জ্বলে ওঠে, আমার মনে পড়ে তার তীক্ষ্ণ কথা—“আকাশ, বাজার করে আন!” কিন্তু সাথে মনে পড়ে, একবার আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। কাকিমা রাত জেগে আমার কপালে ভেজা কাপড় দিয়েছিলেন। সেই কাকিমা কোথায় হারিয়ে গেল? আমি চুপ করে থাকি, আমার গলা ভারী হয়ে আসে। কাকিমা আমাকে বাজারের ব্যাগ ধরিয়ে দেয়। ব্যাগটা ভারী, তার হাতল পুরনো, কাপড়ে ধুলো আর বৃষ্টির ছিটে জমে আছে। আমি ব্যাগটা হাতে নিয়ে বলি, “ঠিক আছে, কাকিমা, আমি যাচ্ছি।” আমি রিমার দিকে তাকাই, তার চোখে একটা অসমাপ্ত কথা ঝুলছে। আমার মনে একটা অপরাধবোধ জাগে, কিন্তু আমি কিছু না বলে বেরিয়ে পড়ি বাজারের উদ্দেশে। আমি অতি চেনা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাই। বর্ষার পর রাস্তায় কাদা জমে আছে, আমার জুতোয় কাদার দাগ লেগে যায়। পাশের গাছের পাতায় বৃষ্টির ফোঁটা ঝরছে, হাওয়ায় ভেজা মাটির গন্ধ মিশে আছে। রাস্তার পাশে পুরনো দোকানগুলো, তাদের কাঠের সাটারে মরিচা আর বৃষ্টির দাগ। দূরে ধানখেতে ঝিঁঝিঁর ডাক ভেসে আসছে, হাওয়ায় ধানের সবুজ পাতার শব্দ। আমার হাতে কাকিমার দেওয়া কাপড়ের ব্যাগ, তার হাতল পুরনো, কাপড়ে কাদার দাগ। শহরে আমার ফ্ল্যাটের কাছে শুধু ধোঁয়া আর কোলাহল, কিন্তু এখানে রাস্তার পাশে পুকুরের জলে বর্ষার কচুরিপানার ঝোপ, জলের কিনারে ভেজা মাটির গন্ধ। কতবার যে এই রাস্তা দিয়ে বাজারে গিয়েছি! তখন আমি ছিলাম আশ্রিত, একরকম কাজের লোকের মতোই গিয়ে বাজার করে আনতাম। কাকিমার তীক্ষ্ণ গলার আদেশ—“আকাশ, বাজার করে আন!”—আমার কানে বাজত। আমি মাথা নিচু করে ব্যাগ হাতে বেরিয়ে যেতাম, আমার বুকের ভিতরে একটা কষ্ট চেপে বসত। কিন্তু আজ আমি কি তাদের অভিভাবক! আমার মনে একটা অদ্ভুত অনুভূতি জাগে—একদিকে গর্ব, আরেকদিকে পুরনো কষ্টের ছায়া। বাজারে পৌঁছে আমার ধ্যান ভাঙে। বাজারের হট্টগোল, দোকানদারদের হাঁক, মাছের গন্ধ, আর পচা শাকসবজির হালকা দুর্গন্ধ বর্ষার ভেজা বাতাসে মিশে আছে। আমি একটা পুরনো চায়ের দোকানে গিয়ে বসি। দোকানের কাঠের বেঞ্চে কাদা আর ধুলো জমে আছে, টেবিলে চায়ের দাগ শুকিয়ে গেছে। দোকানদার দাদু, তার মুখে বয়সের রেখা, তার জামায় ধুলো আর বৃষ্টির দাগ। আমি তাকে বলি, “দাদু, একটা চা দাও।” সে চায়ের কেটলি থেকে ধোঁয়া ওঠা চা ঢালতে থাকে, তার হাত কাঁপছে। আসেপাশে অল্প কিছু মানুষ, কেউ চা-বিস্কুট খাচ্ছে, কেউ আমার মতো চায়ের অপেক্ষা করছে। একজনের জামায় কাদার দাগ, তার হাতে একটা পুরনো সিগারেট, ধোঁয়া বাতাসে মিশছে। আরেকজনের পায়ে বর্ষার কাদা লেগে আছে, তার হাতে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ। দাদু আমাকে চা দিতে দিতে বলে, “তোমাকে কেমন চেনা চেনা লাগছে।” তার চোখে একটা কৌতূহল, তার ভ্রু কুঁচকে আছে। আমি কাকার নাম বলে আমার পরিচয় দেই। সে এবার অবাক হয়ে বলে, “আরে আকাশ, তুমি এতদিন পর! হুট করে কোথায় ডুব মারলে, আর তো কোনো খোঁজখবর নেই!” তার গলায় একটা আন্তরিকতা, কিন্তু সাথে একটা আগ্রহ। আমি হেসে বলি, “কী করব বল, দাদু! এখানে যে আমি একটা বোঝা হয়ে ছিলাম! তাই আরকি, নিজের পায়ে দাঁড়াতে শহরে চলে গেলাম।” আমার গলায় একটা ক্ষোভ, আমার মনে পড়ে কাকিমার তীক্ষ্ণ কথা, তার চোখের ঠান্ডা দৃষ্টি। দাদু চায়ের কাপটা আমার সামনে রেখে বলে, “টা বাবা আকাশ, এতদিন পরে?” তার গলায় একটা উষ্ণতা, তার চোখে একটা পুরনো স্মৃতির ছায়া। আমি বলি, “কাকিমা খবর পাঠালো, কাকা নাকি অনেক অসুস্থ।” দাদু মাথা নাড়িয়ে বলে, “আর হ্যাঁ, তোমার কাকাদের অবস্থা বেশি ভালো না। টা এখন কিরকম দেখলে?” আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি, “ওই আরকি, খুব অসুস্থ।” আমার মনে কাকার কাশির শব্দ, তার দুর্বল হাত, তার বিছানার পাশে জমে থাকা ওষুধের শিশি ভেসে ওঠে। দাদু হঠাৎ গলা নামিয়ে বলে, “শোন বাবা, তুমি আসলে ইঁকদিন নেই এখানে, এদিকের খবর জানো না! তবে একটা কথা বলি, দেখতে এসেছ, দেখে চলে যাও, বেশি জোরিও না ওদের সাথে!” তার গলায় একটা সতর্কতা, তার চোখে একটা গভীর উদ্বেগ। আমি অবাক হয়ে বলি, “কেন দাদু, কী হয়েছে?” আমার বুকের ভিতরটা ধক করে ওঠে। দাদু চারপাশে তাকিয়ে, গলা আরও নামিয়ে বলে, “এত কিছু আমি বলতে পারব না, তবে ওদের থেকে সাবধান থাকবে।” তার কথায় একটা রহস্য, তার চোখে একটা ভয়। আমার মনে একটা অস্থিরতা জাগে। আমি কিছু বলতে যাই, কিন্তু দাদু হাত নেড়ে বলে, “এই আরকি, তুমি তো শহরে থাকো, কিভাবে থাকো এখন? নিশ্চয় শুধু রুটি খেয়ে কাটাও না!” তার গলায় একটা কৌতুক, কিন্তু আমার গলা ভারী হয়ে আসে, আমার চোখে কান্না চলে আসে। আমি কান্না চেপে বলি, “না দাদু, এখন অবস্থা অনেক ভালো।” আমার গলা কেঁপে যায়, আমার হাত চায়ের কাপের উপর শক্ত হয়ে চেপে আছে। চা শেষ করে আমি উঠে পড়ি। আমি দাদুর হাতে কয়েকটা বড় নোট গুঁজে দিই। দাদু অবাক হয়ে বলে, “আরে কী করছ, তোমার কোনো বিল দেওয়া লাগবে না!” তার চোখে একটা বিস্ময়, তার হাত কাঁপছে। আমি হেসে বলি, “দাদু, এটা তোমার জন্য সামান্য উপহার! বিল তো আমি আগেও দেইনি, এখনো দেব না!” আমি তাকে ফেলে চলে আসি। দাদু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, তার হাতে নোটগুলো ধরা। আমার মনে পড়ে, অনেক সময় কাকিমা আমাকে খাবার দিত না। তখন এই দাদুর দোকান থেকে চা, রুটি, মুড়ি, কখনো একটা গরম ডিমভাজা খেয়ে খুদার জ্বালা মিটাতাম। আমার এত সামর্থ্য ছিল না, দাদু আমার কাছ থেকে কোনো টাকা নিত না। সে বলত, “খা বাবা, যা ইচ্ছা খা।” তার হাসির শব্দ আমার কানে বাজত, তার দোকানের চায়ের গন্ধ আমার নাকে ভরে থাকত। আজ হয়তো অনেকগুলো টাকা দিয়ে এসেছি, কিন্তু তার সেই ঋণ তো শোধ হবে না! আমার চোখ ভিজে আসে, আমার বুক মুচড়ে ওঠে। আমি বাজারের ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়ি। দোকানদারদের হাঁক, মাছের গন্ধ, পচা শাকসবজির দুর্গন্ধ বর্ষার ভেজা বাতাসে মিশে আছে। আমি কাকিমার দেওয়া তালিকা থেকে জিনিস কিনতে থাকি—ডাল, চাল, আলু। ব্যাগ ভারী হয়ে ওঠে, আমার কাঁধে ব্যথা ধরে। আমার মনে পড়ে, ছোটবেলায় এই বাজার থেকে ব্যাগ ভরে জিনিস নিয়ে যেতাম, কাকিমার তীক্ষ্ণ কথা আমার কানে বাজত—“দেরি করিস না, আকাশ!” আমি মাথা নিচু করে হাঁটতাম, আমার বুকের ভিতরে একটা কষ্ট জমে থাকত। কিন্তু আজ আমি তাদের অভিভাবক নাকি? আমার মনে একটা অদ্ভুত দ্বন্দ্ব জাগে। দাদুর সতর্কবাণী আমার মাথায় ঘুরছে—“ওদের থেকে সাবধান থাকবে।” আমার মনে রিমার কথা ভেসে ওঠে, তার অভিমানী চোখ, তার কান্না ভেজা গলা। আমি বাজারের ভিড়ের মধ্যে হাঁটতে থাকি, আমার মনের ভিতর একটা অস্থিরতা জাগে। সেই রাতে আমরা সবাই একসাথে বসে খাবার খাই। কাকার বাড়ির পুরনো খাওয়ার ঘরে ম্লান আলোর বাল্ব জ্বলছে, দেয়ালে বর্ষার ভিজে দাগ আর ছায়া পড়ছে। টেবিলের কাঠের উপর ধুলো আর বৃষ্টির ছিটে জমে আছে, থালাগুলোতে পুরনো মরিচার দাগ। বাতাসে ভাতের গরম বাষ্প, ডালের হলুদের তীক্ষ্ণ গন্ধ, আর মাছের ঝোলের হালকা ঝাঁঝ মিশে আছে। কাকিমা আমার পাশে বসে, তার শাড়ির আঁচল মেঝেতে ঘষছে, তার কপালে ঘামের ফোঁটা। রিমা আমার সামনে, তার চোখে একটা ম্লান দৃষ্টি, তার হাতে চামচটা কাঁপছে। কাকা বিছানায় শুয়ে, তার দুর্বল কাশির শব্দ ঘরে ভেসে আসছে। তার অবস্থা আগের মতোই, বেশি ভালো মনে হচ্ছে না। তার বিছানার পাশে ওষুধের শিশি ছড়িয়ে আছে, একটা পুরনো প্রেসক্রিপশন মেঝেতে পড়ে আছে, বর্ষার কাদায় সামান্য ভিজে গেছে। আমার বুক ভারী হয়ে আসে। তবে তারা রাতের খাবারে আমার ভালোই যত্ন করে। কাকিমা আমার থালায় মাছের ঝোল ঢেলে দেয়, তার হাত কাঁপছে, তার শাড়ির হাতায় ডালের দাগ লেগে আছে। রিমা আমার দিকে তাকিয়ে একটা ম্লান হাসি দেয়, তার চোখে একটা অস্থিরতা। আমি খেতে থাকি, কিন্তু আমার মনে পড়ে ছোটবেলায় কাকিমার হাতে খাওয়া সুস্বাদু খাবার—মুরগির ঝোল, পোলাও, আর মিষ্টি। কিন্তু বাবা-মা মারা যাওয়ার পর কাকিমার খাবার সুস্বাদু হলেও তার মুখের ভাষা তীক্ষ্ণ ছিল, আমার মনের গভীরে বিঁধে যেত। আমি চুপচাপ খাই, আমার গলা ভারী হয়ে আসে। খাওয়া শেষ হলে কাকিমা থালা-বাসন তুলে নিয়ে যায়। তার পায়ের শব্দ মেঝেতে গুঞ্জন তুলছে, তার শাড়ির আঁচল ধুলোমাখা মেঝেতে ঘষছে। রিমা আমার দিকে তাকিয়ে বলে, “চলো, একটু হাঁটি।” তার গলায় একটা আমন্ত্রণ, তার চোখে একটা অসমাপ্ত কথা। আমি মাথা নাড়ি, আমার বুকের ভিতরটা ধক করে ওঠে। আমরা বাইরে বেরিয়ে পড়ি। উঠানে বর্ষার কাদা জমে আছে, আমার জুতোয় কাদার দাগ লেগে যায়। রাতের আকাশে তারার ম্লান আলো, মেঘের ফাঁকে চাঁদের হালকা আভা। গাছের পাতায় বৃষ্টির ফোঁটা ঝরছে, দূরে ধানখেতে ঝিঁঝিঁর ডাক। রাস্তার পাশে পুরনো ল্যাম্পপোস্টের আলো ম্লান হয়ে জ্বলছে, তার নিচে কাদা আর পোকা জমে আছে। রিমার শাড়ির আঁচল হাওয়ায় উড়ছে, তার চুলে জুঁই ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে। আমার মনে পড়ে ছোটবেলায় আমরা এই রাস্তায় হাঁটতাম, তার হাত ধরে পুকুরপাড়ে যেতাম, তার হাসির শব্দ আমার বুকের ভিতর ঝড় তুলত।  রিমা হাঁটতে হাঁটতে বলে, “শহরে থাকো তুমি, গার্লফ্রেন্ড আছে নিশ্চয়ই।” তার গলায় একটা কৌতুক, তার চোখে একটা কৌতূহল। আমি হেসে বলি, “আমার মতো গরিবের আবার গার্লফ্রেন্ড!” আমার গলা ভারী, আমার মনে পড়ে আমার শহরের জীবন—একটা ছোট্ট ফ্ল্যাট, দেয়ালে ফাটল, জানালায় ধোঁয়া আর ধুলো। রিমা ভ্রু কুঁচকে বলে, “কেন? তুমি গরিব নাকি? আমি তো ভেবেছিলাম শহরে খেয়ে-পরে তোমার দিনকাল ভালোই কাটছে।” তার শাড়ির আঁচল হাওয়ায় উড়ছে, তার হাতে একটা পুরনো চুড়ি ঝনঝন করছে। আমি বলি, “টা চলে যায় আরকি, কোনোমতে। একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকি, নিরিবিলি।” আমার কথায় একটা লজ্জা, আমার মনে পড়ে আমার ফ্ল্যাটের পুরনো বিছানা, মেঝেতে ধুলোর দাগ। রিমা থমকে দাঁড়ায়, তার চোখে একটা অভিমান। সে বলে, “কেন? একা থাকো কেন? একটা বিয়ে করে ফেলো।” তার গলায় একটা তাড়া, যেন সে আমার জীবনের শূন্যতা বোঝে। রিমা হঠাৎ বলে, “আকাশ, তুমি যদি না চলে যেতে, তাহলে হয়তো সবকিছু অন্যরকম হতো।” তার কথা শেষ না করে সে মাথা নিচু করে ফেলে, তার শাড়ির আঁচল হাওয়ায় উড়ছে। আমার বুকের ভিতরটা ধক করে ওঠে। আমি হেসে বলি, “আমাকে কে মেয়ে দেবে? কী আছে আমার?” আমার গলায় একটা ক্ষোভ, আমার মনে পড়ে আমার ছোটবেলার দিনগুলো, যখন আমি কাকিমার বাড়িতে একটা বোঝা ছিলাম। রিমা আমার দিকে তাকিয়ে বলে, “আরে কী যে বলো, যেকোনো মেয়ে তোমাকে দেখে পছন্দ করবে।” তার চোখে একটা উষ্ণতা, তার হাসিতে একটা পুরনো স্মৃতি। আমার বুকের ভিতরটা ধক করে ওঠে। আমি বলি, “তুমি তো করোনি।” আমার কথায় একটা পুরনো কষ্ট, একটা অভিমান। রিমা থমকে দাঁড়ায়, তার চোখে একটা বিস্ময়। সে বলে, “কী বললে?” তার গলায় একটা অবিশ্বাস, তার ভ্রু কুঁচকে আছে। আমি বলি, “তুমি আমার থেকে দূরে দূরে থাকতে, যখন আমি তোমাদের এখানে থাকতে আসলাম, তখন থেকে।” আমার গলায় একটা তীক্ষ্ণতা, আমার মনে পড়ে সেই দিনগুলো—কাকিমার তীক্ষ্ণ কথা, তার চোখের ঠান্ডা দৃষ্টি, আর রিমার দূরত্ব। আমি মাথা নিচু করে হাঁটতাম, আমার বুকের ভিতরে একটা কষ্ট জমে থাকত। রিমা আমার দিকে তাকিয়ে বলে, “এটা তুমি কী বললে! আমি তখন ছোট ছিলাম, আমি কি এত কিছু বুঝতাম নাকি! আর মা তো রাগ করত তোমার সাথে মিশলে!” তার গলায় একটা অভিমান, তার চোখে একটা পুরনো কষ্ট। তার শাড়ির আঁচল হাওয়ায় উড়ছে, তার হাতে চুড়ি ঝনঝন করছে। আমি গলা পরিষ্কার করে বলি, “ঠিক আছে, বুঝেছি। তা এখন কী চাও তুমি?” আমার গলায় একটা তাড়া, আমার চোখ তার মুখের উপর স্থির। রিমা মাথা নাড়িয়ে বলে, “আমি জানি না।” তার গলা ভারী, তার চোখ মাটির দিকে নামিয়ে ফেলে। তার শাড়ির আঁচল পুকুরের পাশে কাদায় ঘষছে, তার হাত কাঁপছে। আমি বলি, “তোমার নাকি কোথায় বিয়ে ঠিক হয়েছিল?” আমার গলায় একটা কৌতূহল, কিন্তু সাথে একটা কষ্ট। রিমা আমার দিকে তাকিয়ে বলে, “সেটাও জেনে গেছ!” তার চোখে একটা বিস্ময়, তার মুখে একটা ম্লান হাসি। আমি বলি, “হ্যাঁ, কী হয়েছিল?” আমার বুকের ধুকপুকানি বাড়ে, আমার হাত শক্ত হয়ে চেপে আছে। পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে দেখি, বর্ষার পর জলের কিনারে কচুরিপানার ঝোপ। হাওয়ায় ভেজা মাটির গন্ধ মিশে আছে, দূরে ধানখেতে ঝিঁঝিঁর ডাক। পুকুরের জলে চাঁদের ম্লান আলো ঝিকমিক করছে, জলের উপর হাওয়ায় হালকা ঢেউ খেলছে। পাশে পুরনো বটগাছের পাতায় বৃষ্টির ফোঁটা ঝরছে, হাওয়ায় পাতা ঝরার মৃদু শব্দ। রিমা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, “আসলে তুষার হলো, আমার বান্ধবী দোলার ভাই। ওদের বাড়ি যেতাম মাঝেমাঝে, তখন তুষার আমাকে দেখে পছন্দ করে, আমাকে বিয়ের জন্য প্রোপোজ করে। আমি প্রথমে মানা করে দেই…” তার কথা থেমে যায়, তার চোখে একটা পুরনো স্মৃতি ভেসে ওঠে। আমি বলি, “তারপর?” আমার গলায় একটা তাড়া, আমার মনে একটা অস্থিরতা। রিমা বলে, “বলছি, বলছি। আমি তাদের বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দেই, তবে দোলা আমাকে রাজি করানোর চেষ্টা করে। বলে, তার ভাই অনেক ভালো ছেলে, সে নাকি আমাকে অনেক পছন্দ করেছে, আমাকে বিয়ে করলে মাথায় উঠিয়ে রাখবে। বলে, তুষারের চাকরি ভালো, সে নাকি আমার জন্য সব করতে রাজি। আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে, আমার পছন্দের শাড়ি কিনে দেবে, আমার জন্য একটা সুন্দর সংসার গড়বে। ইত্যাদি আরো অনেক কিছু।” তার গলায় একটা ক্লান্তি, তার হাত শাড়ির আঁচল শক্ত করে ধরে আছে। আমার মনে পড়ে রিমার হাসি, তার চোখের দীপ্তি, যা আমি ছোটবেলায় দেখতাম। আমি বলি, “তারপর কী? বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেলে?” আমার গলায় একটা কৌতূহল, কিন্তু সাথে একটা অজানা ভয়। রিমা মাথা নাড়িয়ে বলে, “আরে না না, আমি তোমার কাকিমাদের জানাই, তারা তুষারদের ফ্যামিলির সাথে কথা বলে। সবাই রাজি, চল বিয়েতে। শুধু তুষারের মা আমাকে বেশি পছন্দ করেনি, তবুও তুষারের কথা ভেবে রাজি হয়।” তার গলায় একটা কষ্ট, তার চোখে একটা পুরনো অভিমান। আমি বলি, “তারপর? বিয়ে করলে না কেন?” আমার বুকের ধুকপুকানি বাড়ে, আমার হাত কেঁপে যায়। রিমা বলে, “আর আমি তো বিয়েতে রাজি ছিলাম না, কিন্তু বাবা-মার দিকে চেয়ে রাজি হয়ে গেলাম। বিয়ের দিন-তারিখও ঠিক হয়ে গেল।” তার গলা ভারী, তার চোখ মাটির দিকে নামিয়ে ফেলে। আমি বলি, “বাহ বাহ, তোমার বিয়ে পর্যন্ত ঠিক হয়ে গেল, আর আমি কিছুই জানি না, আমাকে একবারো জানানোর প্রয়োজন মনে করোনি কেউ!” আমার গলায় একটা অভিমান, আমার মনে একটা তীক্ষ্ণ কষ্ট। রিমা আমার দিকে তাকিয়ে বলে, “আসলে আমি ছোট মানুষ! আমি তো আর বাবা-মাকে বলতে পারি না তোমার কথা!” তার গলায় একটা অসহায়তা, তার চোখে একটা কষ্ট। আমার বুক মুচড়ে ওঠে। আমি বলি, “আচ্ছা, বুঝলাম। তারপর কী হলো?” রিমা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, “বিয়ে ঠিক হয়, আমরাও প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। কিন্তু এর মাঝেই বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে! আমরা বাবাকে নিয়ে একটু ব্যস্ত হয়ে পড়ি। ওদিকে তারা এর মাঝে যৌতুক চেয়ে বসে!” তার গলায় একটা ক্ষোভ, তার হাত কাঁপছে। আমি অবাক হয়ে বলি, “আরে কী বলো? তোমাকে এত পছন্দ করে, আবার যৌতুক চাইলো কেন?” আমার গলায় একটা বিস্ময়, আমার মনে একটা অজানা রাগ। রিমা বলে, “কী জানি, মানুষের মন বোঝা কঠিন।” তার গলা ভারী, তার চোখে একটা ক্লান্তি। আমি বলি, “যাইহোক, কাকা কি রাজি হলো?” রিমা বলে, “তারা রাজি ছিল, কিন্তু আমি ভাবলাম, এটা হতে পারে না। বাবার অনেক কষ্ট হয়ে যাবে, চিকিৎসার খরচ অনেক। এর পাশে যৌতুক দিতে গেলে আমরা পুরো ফকির হয়ে যাব! আমি ভাবলাম, তুষারের সাথে দেখা করে বুঝাব তাকে।” তার গলায় একটা দৃঢ়তা, কিন্তু সাথে একটা কষ্ট। আমি বলি, “আর তোমার বান্ধবী? সে কী বলল?” রিমা বলে, “আমি তুষার ও দোলার সাথে বসে কথা বলি। তারা জানায়, আসলে তাদের মা যৌতুকের জন্য চাপ দিচ্ছে, অন্যথায় তাদের যৌতুক নেওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই! আমি বলি, আমার বাবার এই অবস্থায় কোনো যৌতুক দিতে পারব না। তুষার বলে, সে তার মাকে রাজি করাবে।” তার গলায় একটা অসহায়তা, তার চোখে একটা পুরনো ব্যথা। আমি বলি, “তারপর কী হলো?” রিমা বলে, “আমি ভেবেছিলাম তুষার আমাকে আসলেই পছন্দ করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা বিয়েটা ভেঙে দেয়! আমিও অনেক কষ্ট পাই তাদের এই আচরণে! কে বলছিল তাদের নিজে থেকে আমাকে বিয়ে করতে চাইতে, আবার নিজে থেকেই বিয়ে ভেঙে দিতে!” তার গলা কেঁপে যায়, তার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। রিমা কাঁদছে। তার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে, তার কাঁপা কাঁপা গলা আমার বুকের ভিতরে বিঁধছে। আমি তাকে জড়িয়ে ধরে বলতে চাই, “আমি আছি তোমার পাশে,” কিন্তু আমার হাত কাঁপছে, আমার মুখে কথা আসছে না। আমি শুধু তার দিকে তাকিয়ে থাকি, তার চোখের জল আমার হৃদয়ে ঝড় তুলছে। আমার খুব ইচ্ছা হয় তাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেই। আমার হাত তার দিকে উঠে যায়, কিন্তু আমি নিজেকে কন্ট্রোল করি। আমি নিজেকে বলি, “আকাশ, তুই তার যোগ্য নয়।” আমার হৃদয় তার কাছে ছুটে যেতে চায়। আমার বুকের ধুকপুকানি বাড়ে, আমার হাত কাঁপছে। আমি গলা পরিষ্কার করে বলি, “আহা রিমা, কেঁদো না তো, তোমার অনেক ভালো ছেলের সাথে বিয়ে হবে।” আমার গলায় একটা উষ্ণতা, কিন্তু সাথে একটা অজানা কষ্ট। রিমা আমার দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি এসব আমার মন ভালো করার জন্য বলছো।” তার গলা কেঁপে যায়, তার চোখে জল টলমল করছে। আমি বলি, “আরে, সত্যি বলছি।” আমার গলায় একটা দৃঢ়তা, কিন্তু আমার মনে একটা অস্থিরতা। রিমা মাথা নাড়িয়ে বলে, “সেটা পরে দেখা যাবে। অনেক রাত হয়েছে, ঘুমিয়ে পড়ো।” তার গলায় একটা ক্লান্তি, তার শাড়ির আঁচল কাদামাখা মাটিতে ঘষছে। আমি মাথা নাড়ি, আমার বুক ভারী হয়ে আসে। আমরা ফিরে চলি, রাস্তার পাশে পুরনো ল্যাম্পপোস্টের আলো ম্লান হয়ে জ্বলছে, তার নিচে কাদা আর পোকা জমে আছে। হাওয়ায় গাছের পাতার শব্দ, দূরে একটা রিকশার ঘণ্টির আওয়াজ। আমার মনে রিমার কান্না ভেসে ওঠে, তার চোখের জল আমার বুকের ভিতরে বিঁধছে। আমি বাসায় চলে আসি। ঘরের ম্লান আলোর বাল্ব জ্বলছে, দেয়ালে বর্ষার ভিজে দাগ। বিছানার চাদরে ভেজা মাটির গন্ধ, বালিশে আমার ঘামের হালকা ছাপ। আমি ঘুমের আগে কাকার সাথে দেখা করি। কাকার ঘরে ওষুধের শিশি ছড়িয়ে আছে, মেঝেতে একটা পুরনো প্রেসক্রিপশন পড়ে আছে, বর্ষার কাদায় সামান্য ভিজে গেছে। তার বিছানার পাশে একটা পুরনো কাঠের টেবিল, তার উপর একটা গ্লাসে জল। কাকার মুখে ক্লান্তি, তার চোখে একটা দুর্বল আলো। আমি বলি, “এখন কী অবস্থা, কাকা?” আমার গলায় একটা উদ্বেগ, আমার হাত কাঁপছে। কাকা দুর্বল গলায় বলে, “এই তো, একটু ভালো লাগছে। তুই কী সিদ্ধান্ত নিলি?” তার গলায় একটা আশা, তার চোখে একটা প্রশ্ন। আমি বলি, “আমার আরো ভেবে-চিন্তে বুঝতে হবে। কিন্তু রিমার জন্য তোমরা আরো ভালো ছেলে দেখো। আমাকে এর মধ্যে আর না জড়ালেই ভালো হবে।” আমার গলায় একটা দ্বিধা, আমার মনে রিমার কান্না ভেসে ওঠে। কাকিমা ঘরে ঢোকে, তার শাড়ির আঁচল মেঝেতে ঘষছে, তার কপালে ঘামের ফোঁটা। সে বলে, “এসব কী বলছিস, আকাশ? তোকে জড়াব না মানে! তুই কি আমাদের নিজেদের মানুষ না? তুই আমার আপন চির মতোই।” তার গলায় একটা তীক্ষ্ণতা, কিন্তু সাথে একটা আন্তরিকতা। তার হাতে একটা পুরনো তোয়ালে, তার শাড়ির হাতায় কাদার দাগ। আমার বুক মুচড়ে ওঠে, আমার মনে পড়ে কাকিমার তীক্ষ্ণ কথা—“আকাশ, বাজার করে আন!” আমি বলি, “না, মানে, সেটা বলিনি। তোমরা থাকো, পড়ে দেখা যাবে এসব নিয়ে।” আমার গলায় একটা লজ্জা, আমার চোখ মাটির দিকে নামিয়ে ফেলি। আমি চলে আসি। আমি আমার ঘরে ফিরে একা একা শুয়ে ভাবতে থাকি। ঘরের ম্লান আলোর বাল্ব দেয়ালে ছায়া ফেলছে, জানালা দিয়ে বর্ষার ভেজা হাওয়ায় ধানখেতের গন্ধ উড়ে আসছে। বিছানার চাদরে ভেজা মাটির গন্ধ, বাইরে গাছের পাতায় বৃষ্টির ফোঁটা ঝরার শব্দ। রিমার বিয়েটা কি শুধু যৌতুকের জন্যই ভাঙলো? রিমা যেহেতু চেয়েছিল বিয়েটা টিকাতে, এর মানে সেও চাচ্ছিল বিয়েটা হোক। এখন কি আমি তাকে বিয়ে করব? কিন্তু আমার অন্ধকার জীবনের কী হবে? রিমা যদি ওসব জানতে পারে, তাহলে কি আমাকে কখনো ক্ষমা করবে? আমার মনে একটা দ্বন্দ্ব জাগে, আমার বুক ভারী হয়ে আসে। আমার মাথায় একটা অদ্ভুত চিন্তা আসে। আমি ঠিক করি, আমি একা একা সেই তুষারদের বাসায় যাব, তার সাথে রিমার বিয়েটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করব! আমার মনে একটা অজানা কষ্ট জাগে, কিন্তু আমি নিজেকে বোঝাই—রিমার ভালোর জন্য এটাই ঠিক। আমি ঘুমিয়ে পড়ি।
Parent