মায়া - আমরা সবাই বাঁধা যেখানে (সমাপ্ত) - অধ্যায় ১৬

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-46310-post-4771734.html#pid4771734

🕰️ Posted on April 20, 2022 by ✍️ nextpage (Profile)

🏷️ Tags:
📖 887 words / 4 min read

Parent
পর্ব- ষোল                                                                                   পোষ্টার- বাবান দা মন কারও কথা শুনে চললেও শরীর তো সেটা শুনে চলে না। কিন্তু দোলনের সেই ক্ষমতাও আছে, ও ফিরে আসার পর থেকে নিলয়ের শরীরটা এখন ভালই ওর কথা শুনতে শুরু করেছে। আর না শুনে যাবে কোথায়, ওর মত শাসনে আজ অব্দি কেউ রাখে নি। দোলনের চোখ রাঙানি থেকে বাঁচতে হলেও নিলয়কে নিয়ম মেনে চলতেই হয়। নিলয়ে অবিভাবকের মতই আচরণ করে সবসময়ই। একদিকে নিজের খেয়াল রাখতে হচ্ছে অন্যদিকে তথার দিকেও কড়া নজর রেখে চলেছে নিলয়। একদম চোখের আড়াল করে নি তথাকে এতদিনে। মাঝে মাঝে ভাবে হয়তো একটু বেশিই শাসন করছে ওকে, হতে পারে এটা ওর অনাধিকার চর্চা। কিন্তু ওমন একটা ঘটনার পর আর কোন রিস্ক নিতে চায় না নিলয়। স্যারকে দেয়া কথা রাখতে পারলেই ওর মুক্তি। তথারও আর আগের মত রাগচটা ভাব টা নেই। নিলয় যেটা বলে সেটাই মেনে নেয়, আগে হলে সেটা নিয়ে বাদানুবাদ করতো কিন্তু এখন আর তেমন কিছুই করে না। ওর এই শান্ত ভাব ভালো লাগে নিলয়ের কাছে, এক বাচ্চার মত আচরণ করে আজকাল তথা। আজ কাজের চাপ একটু কম, দুপুর দিকে একটা চা স্টলে বসে আছে নিলয়। চা খেতে খেতে চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে। জীবনটা হঠাৎ এত ব্যস্ত হয়ে গেল যে আশপাশটা আর ভাল করে দেখাই হয় না। সেও অনেকদিন হলো  মাঘের শেষ দিয়ে বিদায় নিলো শীত, ফাগুনের শুরুতে এল বসন্ত। প্রকৃতি পাল্টিয়েছে তার রূপ, পাল্টিয়েছে তার রঙ। চারিদিকে আজ বসন্তের ছোঁয়া। আকাশ জুড়ে কালো মেঘের খেলা সাথে হালকা কুয়াশা।  ঝির ঝির বইছে শীতল বাতাস। এতকিছুর মাঝে হঠাৎ করে দুষ্টুমির ছলে উকি দিয়ে যায় সূর্যি মামা। কি অপরূপ প্রকৃতির লীলা খেলা। আমি মুগ্ধ, আমি বিমোহিত, আমি হারিয়েছি আমার মন।  এই বিশাল বাংলার বুকে হারিয়েছি নিজেকে। শান্ত হয়ে দাড়াও চোখ বন্ধ কর আর উপলব্ধি কর এই মূহূর্তটাকে। নিজেকে খুঁজে পাবে এসব কিছুর মাঝে। একমনে ভেবে চলেছে নিলয়। ভাবনার জগতে কত কি আঁকিবুঁকি করা যায়। ইচ্ছে মত রঙে রাঙানো যায় ছবি গুলো। নিজের পছন্দসই সব চরিত্রের জায়গা হয় সেই চিত্রপটে। কারও কোন কমপ্লিমেন্ট এর প্রয়োজন হয় না সেখানে, থাকে না কোন বাধ্যবাধকতা। সেই জগতে নিজেই মালিক নিজেই প্রজা। সবাই অভিনয় করে যায় ভাবুকের ইচ্ছে অনুসারে। এমন একটা জায়গা বাস্তবে পেলে কি সুখী হওয়া যেত এ জীবনে। না এই ভাবনার জগতে মজে গিয়ে লাভ নেই। বাস্তবতায় ফিরতে তো হবেই। বাস্তবতা বড় কঠিন, যার চর্যাঘাতে ওষ্ঠগত হয়ে উঠে প্রাণ বায়ু। এই বাস্তবতার কাছে আবেগ, ভালবাসা, অনুভূতি অনেক সময় তুচ্ছ হয়ে যায়। মনের কোনে শীতনিদ্রায় জমতে থাকে সেই আবেগ, অনুভূতি, ভালবাসা গুলো। কখনো কোন পরশমনির পরশ পেলে জেগে উঠে ঘুম থেকে, বেরিয়ে আসে হৃদয় খুলে আবারও ভালবাসতে শেখায়, ভালবাসার অতলে ডুবায়-ভাসায়। আপাতত বাস্তবতা কে নিয়েই বাঁচতে হবে সেটা নিলয়কেও মেনেই নিতে হয়। হাত-পা ঝাড়া দিয়ে উঠে পড়ে সে। আবার কাজের ব্যস্ততায় ডুবিয়ে দেয় নিজেকে। বাসায় ফিরে নিজের রুমে গিয়ে জামাকাপড় চেঞ্জ করতে থাকে নিলয়৷ আগের চেয়ে রুম টা এখন অনেক পরিপাটি। কিছুদিন আগেও এমন ছিল না। এখানে সেখানে জামাকাপড় পড়ে থাকতো, ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতো বিভিন্ন কাগজপত্র, কোম্পানির ফাইল। হঠাৎ দিন পনের আগে কাজ থেকে বাসায় ফিরে রুমে ঢুকে নিলয় অবাক৷ সে ভাবে ভুল বাসায় চলে আসলাম না তো। কিছুক্ষণ চোখ বুলিয়ে ভাবে না এ তো আমার রুম। কিন্তু এত পরিপাটি সাজানো গোছানো হলো কি করে। টেবিলে সুন্দর করে সব ফাইল কাগজপত্র সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা৷ হ্যাঙ্গারে জামাকাপড় গুলো সুন্দর করে ঝুলিয়ে রাখা। টানটান করে বিছানো বিছানার চাদর। একাজ কে করেছে সেটা নিশ্চিত নিলয়ের কাছে। রান্নার খালা যেহেতু এতবছরেও একাজে হাত দেয় নি তাহলে এখনো দেবে না৷ নিলয় ভাবে ঐ মেয়ে কে কি আমি এসব করতে বলেছি নাকি। ও নিজের পড়াশোনা রেখে ঘর গোছানোর কাজে সময় নষ্ট করে কেন, আজ ধমকে দিতে হবে। সেদিন ধমকে দিলেও কোন কাজ হলো না। তথা নির্বিকার চুপচাপ সব শুনে গেল। কিন্তু প্রতিদিন কাজ থেকে ফিরে আবার সেই পরিপাটি ঘর দেখতে পায় নিলয়। রাতে খাবার সময় তথা কে ডাক দেয়। -তোমাকে না করেছিলাম তো নাকি? -(অবাক হবার ভান করে) আমি আবার কি করলাম? -এমন ভাব করছো যেন কিছুই জানো না। -জানিই না তো। জানলে কি আর জিজ্ঞেস করতাম? -আমার রুম গোছাতে কে বলেছে? -কেউ বলে নি। -তাহলে, আজকাল আবার আমার কোন কথা শুনছো না তুমি। -বারে, কোন কথা টা না শুনি। সব কথা মেনে চলি তাতেও দোষ। পড়ার সময় নষ্ট করে তো আর আমি ঘর গোছাতে যাই না। আমার টা গোছানোর সময় একই সাথে করে ফেলি আর কি। -থাক, আর জবাবদিহি করতে হবে না। যা খুশি করো। এখন তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে উদ্ধার করো। -(মুচকি হেসে) উদ্ধার করে চলে যাবো, খুশি তো। আর কথা বাড়ায় না নিলয়। খাওয়া দাওয়া থালাবাসন সব গুছিয়ে নিজের রুমে চলে আসে। রুটিন মাফিক দোলনের সাথে কথা হয় কিছুক্ষণ। বিছানায় শুয়ে চোখে বুজে কিছু একটা ভাবছে সে। জীবনের এত গুলো বসন্ত পার করা একটা মানুষের কাছে কারও মনের হাবভাব বুঝা এতটাও কষ্টকর না। আর সেই মানুষ গুলো পরিচিত হলে তো আরও সহজ হয়ে মনের ভাব বুঝে নেয়া। নিলয়ও সেটা বুঝে, কিন্তু না বুঝার ভান করেই সময়টা বয়ে যেতে দিচ্ছে। ওর কাছে এখন কারও মনের অভিলাষে ভেসে যাবার মত পরিস্থিতি নেই। এখনো অনেক কাজ বাকি, আগে সেগুলো শেষ তো করতে হবে।  নিলয় ভেবে চলে ভাল তো সবাই বাসে। প্রকাশ ক'জন করতে পারে। আমার ভালবাসা আপাতত নিজের হৃদ প্রকোষ্ঠে চুপিসারে বেড়ে চলেছে। আমার টা থাকুক না আমার কাছেই। আমার ভালবাসা  এক গুচ্ছ স্নিগ্ধ অন্ধকারের তমাল অনেক পাতার ঘনিষ্ঠতায় একটি প্রগাঢ় নিকুঞ্জ সন্ধ্যার উন্মেষের মতো সরোবরের অতলের মতো। আমার ভালবাসা কালো-কেশ মেঘের সঞ্চয়ের মতো বিমুগ্ধ বেদনার শান্তি, আমার ভালবাসা বর্ষার অন্ধকারের অনুরাগ হৃদয় ছুঁয়ে-যাওয়া সিক্ত নীলাম্বরী। আমার ভালবাসা, ঘুমের অলসতায় চোখ বুঁজে আসার মতো শান্তি কাকের চোখের মতো কালোচুল এলিয়ে, পানিতে পা ডুবিয়ে-রাঙা-উৎফল যার উপমা, হৃদয় ছুঁয়ে-যাওয়া স্নিগ্ধ নীলাম্বরীতে দেহ ঘিরে, যে দেহের উপমা স্নিগ্ধ তমাল আমার ভালবাসা শুধুই আমার ভালবাসা।
Parent