মায়া - আমরা সবাই বাঁধা যেখানে (সমাপ্ত) - অধ্যায় ১৭

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-46310-post-4772686.html#pid4772686

🕰️ Posted on April 21, 2022 by ✍️ nextpage (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1029 words / 5 min read

Parent
পর্ব- সতেরো সময় বয়ে চলে আপন গতিতে, সময়ের বাঁধা ধরা কোন নিয়ম নেই। নিজের খেয়ালে সবাইকে বেঁধে রাখে। আমরা সবাই সময়ের দাস, সময়ে চলতি পথে আমরা সবাই খেলার পুতুল মাত্র। সময়ের প্রবাহে মানুষ হাসে-কাদে, কাউকে কাছে টেনে নেয়, কাউকে দূরে সরায়। একদিকে নতুন কিছু গড়তে থাকে তো অন্যদিকে দুঃস্বপ্নের মত ভাঙন। এই ভাঙা গড়ার যে খেলা খেলছি আমরা সবাই সেটাই জীবন। জন্মের পর থেকে শুরু শেষ নিশ্বাসের আগ পর্যন্ত এই যে এত সম্পর্ক, এত ভালবাসা, আবেগ, চেতনার বহিঃপ্রকাশ সবকিছুই তো ঐ একটা সুতোয় বাঁধা৷ "মায়া"- মায়া অদৃশ্য সেই সুতোয় বেঁধে রাখে সবাইকে। আমরা সবাই সেই সুতোয় জড়িয়ে আছি বলেই চলার পথে বেঁচে আছি, যেদিন সেই সুতোটা ছিঁড়ে যাবে সেদিন শ্বাস চলতে থাকা একটা নিথড় দেহ পড়ে থাকবে বিশাল পৃথিবীর উন্মুক্ত ভূ-পৃষ্ঠে। আমরা কেউ সেটাকে অপত্য স্নেহ বলি, কারও কাছে সেটা সখ্যতা, কেউ হয়তো বাৎসল্য ভাবি আবার অনেকের কাছে সেটাই ভালবাসা এই সবই কিন্তু এক উৎসে সৃষ্টি। আর সেই উৎসেই থাকে মায়া। মায়া থেকে বন্ধনের সৃষ্টি। সেই বন্ধনেই আবদ্ধ আমরা সবাই। দেখতে দেখতে তথার ফাইনাল পরিক্ষা চলে আসছে। দিন পাঁচেক পর ওর পরীক্ষা শুরু হবে। পরিক্ষা শেষ হলে তখন আবার মেডিকেল এডমিশন কোচিং এ এডমিট করতে হবে, অনেক টাকার ব্যাপার। এ মাসে মার্কেটে একটু বেশিই সময় দিচ্ছে নিলয়। টার্গেট ক্রস করে যত বেশি সেলস করতে পারবে তার উপর একটা বোনাস ক্রেডিট পাবে। সেই টাকা টা হাতে পেলে মেডিকেল এডমিশন কোচিং এ এডমিট টা সহজ হবে। বাসায় ফিরে নিজের রুমে ঢুকতেই দেখে তথা টেবিলে কিসব কাগজ পত্র ঘাটছে। দরজার শব্দে পিছন ফিরতেই নিলয়কে দেখে থমকে দাঁড়ায়। ওর চেহারা দেখে মনে হয় ভুত দেখে থতমত খেয়েছে। -কি ব্যাপার, তুমি এসব কাগজপত্র নিয়ে করছো। -(নিজেকে সামলে নিয়ে) এই টেস্ট রিপোর্ট গুলো কার?  -(প্রচ্ছন্ন রাগ নিয়ে) আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করছো যে। -(রাগান্বিত স্বরে) এই রিপোর্ট কি তোমার? -(তথাকে এমন ভাবে রাগতে দেখে ভীমড়ি খেয়ে) নাম যেহেতু আমার লেখা, তাহলে তো আমারই হবে। -(রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে) তোমার যে শরীরটা খারাপ যাচ্ছে একবারও তো বললে না। তুমি কি মানুষ নাকি? একবার বলতে তো পারতে, পাশাপাশি দু'জন মানুষ থাকি। নাকি সেটা জানার অধিকারও নেই। -(ঠান্ডা স্বরে) আরে এটা অনেক আগের। তেমন কিছু হয় নি তো। তোমাকে বললে শুধু শুধু টেনশন করবে তাই বলিনি। আর এখন তো ঠিক আছি। -(সশব্দে রিপোর্ট কার্ডটা টেবিলে ছুড়ে দিয়ে) থাক। আমাকে বলার দরকার নেই। আমি কে? হনহন করে তথা বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। নিলয় কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে। ভাবে একটু সময় যাক মাথাটা ঠান্ডা হোক তখন না হয় বুঝিয়ে বলে আসলেই হবে। তবে অন্য চিন্তা ঘিরে ধরে নিলয় কে। সে বুঝতে পারে তথার মনের কোনে নিলয়ের প্রতি অধিকার  বোধ জন্ম নিচ্ছে, সেটা আর বাড়তে দেয়া যাবে না। কিছুক্ষণ পর চা নিয়ে তথার ঘরে যায় নিলয়। টেবিলে মাথা গুঁজে বসে আছে। নিলয় গিয়ে বিছানায় বসে শব্দ করে চায়ের কাপটা টেবিলে রাখে। শব্দটা তথা কানে পৌঁছালেও হয়তো হৃদয়ে নাড়া দেয় না। আগের মতই অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে টেবিলে মাথা গুঁজে রাখে। নিলয় বুঝে এখন কিছু বলতে গেলে উল্টোটা বুঝবে, থাক পরে না হয় কথা বলা যাবে। উঠে দাড়িয়ে একবার হাত বুলিয়ে দেয় তথার মাথা, বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। তথার ছলছল করা চোখ দুটোর অশ্রু টেবিলে থাকা খাতার পাতা গুলো ভিজিয়ে দেয়। রাতের খাবার সময়ও কোন কথা হয় না। ঘরে এসে বিছানায় বসতেই ভাইব্রেশনে ফোনটা কেঁপে উঠে। -কিরে কোথায় ছিলি। আগে দু'বার ফোন করলাম রিসিভ করলি না। -ওহহ, খেতে বসেছিলাম। মোবাইল  টা সাইলেন্ট ছিল তো টের পাইনি। তুই খেয়েছিস? -হুম অনেক আগেই। রাতের ঔষধ খেয়েছিস? -এই রে একদম মাথায় ছিল না। এখনি খেয়ে নেব। -(চেঁচানো স্বরে) ভাল খুব ভাল।  ঔষধের কথা মনে থাকবে কেন। দুনিয়ায় সব মাথায় থাকে শুধু নিজের প্রয়োজনের জিনিস গুলোই থাকে না। -আরে বাবা তরা সবাই যদি আমার উপর এত চোটপাট চালাস তবে আমি যাব কোথায়? -(অবাক হয়ে) তরা মানে? আর কে। -(হকচকিয়ে সর্বনাশ হয়ে গিয়েছিল) আর কে হবে। তুই তো সবসময় চোটপাট করিস। সেটাই বললাম। কি করছিস রে? -আজকাল কথার লেন পাল্টানোতে উস্তাদ হয়ে গেছিস দেখছি। -তর সাথে কথায় আমি পাড়বো না। তুই বললে এসে তর পা ধরে ক্ষমা চাইবো। -থাক থাক অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ। বরং কাল আইসক্রিম খাওয়াতে নিয়ে যাবি তাহলেই হয়ে যাবে। -আপনার আজ্ঞা শিরোধার্য। ভাগ্যিস তুই স্কুলে থাকতে আমার প্রপোজ টা একসেপ্ট করিস নি। করে নিলে তো আমি শেষ হয়ে যেতাম। -তাই নাকি, তোর আমাকে তেমন মনে হয়। -আমার নারে, কবিরা এমন ভাবেই বলে গেছে। -কি বলেছে শুনি -তাহলে শোন কবিতাটা তোমাকে পেয়ে গেলে আমার শালার বিরাট সমস্যা হয়ে যেতো, সব কথা তোমারে বলা লাগতো লেখার মতোন কিছুই পাইতাম না। দুপুরে হয়তো তোমারে পাইতাম  কিন্তু ছাড়খার করা দুপুর পাইতাম না, বিকালে নিয়ম কইরা তোমার লগে হাঁটা লাগতো বিকালের বিষাদ পাইতাম না। সারারাত তোমার লগে  ফুসফুস কইরা কথা বলা লাগতো রাত আমারে আর পাইতো কই? তোমারে পেয়ে গেলে  আর আক্ষেপ করার মতোন কিছুই থাকতো না আক্ষেপের অভাবে ফাঁকা ফাঁকা লাগতো। তোমার দিক তাকাইলে তোমার চোখে ডুইবা যাইতাম পিংক ফ্লয়েডে আর ডুবা হইতো না। তোমার ভালোবাসা পেয়ে গেলে  হয়তো চায়ের কাপে  ভালোবাসা একটু কম কম লাগতো। সিগারেট খাওয়া হতো না, আর সিগারেটের মধ্যে পাগল করার যে ম্যাকানজি টা ও বুজতে পারতাম না।   তোমারে পেয়ে গেলে তোমারে না পাওয়ার কষ্ট আর পাওয়া হইতো না তখন ছোট-খাটো কষ্ট শালা জ্বালায়ে মারতো। কাছ থেকে তোমার সৌন্দর্য দেখে ফেললে হয়তো নর্দান লাইটরে টর্চলাইট মনে হইতো। তোমার চুমু পেয়ে গেলে হয়তো খাবার-দাবার সব তিতা তিতা লাগতো, চিকন শরীরে আরো অপুষ্টিতে ভুগতাম।  তোমারে পেয়ে গেলে আর কোনো কিছুর পরোয়া করতাম না তখন জগৎ সংসার ছাড়খার হইয়া যাইতে পারতো।  তাই তোমারে পেয়ে গেলে আসলেই  আসলেই শালার বিরাট সমস্যা হইয়া যাইতো।ভাগ্যিস তোমাকে পাইনা, পাইলে লাইফের বারোটা বেজে জেতো। -ভালো ভালো। সেই জন্যই তো তোর হলাম না।(অভিমানী সুরে) -এই যে আবার রাগ করে। আমি তো এটা মজা করে বললাম। আমি তো বরাবরই তোরই আছি, তোরই থাকবো। -সত্যি তো। -কোন সন্দেহ? -নারে আর কিছুক্ষণ কথা বলে মোবাইলটা রেখে দেয় নিলয় আর রুম থেকে বেরিয়ে বিল্ডিং এর নিচে নেমে যায়৷ একটু পরে তথার রুমের দরজায় টুকা দেয়ার শব্দ -ঘুমিয়ে পড়েছো? -হুম। -ওহ তাহলে থাক। -ঘুমিয়ে পড়লে কথা বললাম কিভাবে। কি দরকার। -(রুমের ভিতরে ঢুকে) না ঐ হঠাৎ আইসক্রিম খেতে মন চইলো তাই নিয়ে আসলাম। -আমি খাবো না। -ওহ তাই তো। আমার তো মনেই ছিল না আমার উপর তো আবার একজনের অনেক রাগ। তবুও টেবিলে রেখে গেলাম যদি আইসক্রিম গলে যাবার আগে যদি কারও রাগ গলে পানি হয়ে যায় তবে যেন খেয়ে নেয়।  রুম থেকে বেরিয়ে যায় নিলয়। -(অভিমানী সুরে) এহহ আইসক্রিম নিয়ে এসেছে রাগ ভাঙাতে। আইসক্রিমের কাপ টা টা হাতে নিতেই নিমিষেই যেন সব রাগ গলে পানি হয়ে গেল তথার। ঠোঁটের কোনে অকৃত্রিম হাসি।
Parent