মুনমুন সেন - খোলা মনের মহিলা.. - অধ্যায় ৬৩

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-5467-post-5980232.html#pid5980232

🕰️ Posted on July 8, 2025 by ✍️ rajusen25 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1855 words / 8 min read

Parent
মালতীর পর্ব ========== মুনমুন আর লতিফ চাচার পায়ের শব্দ ধীরে ধীরে দূর হয়ে গেল, আর বারান্দার নিস্তব্ধতা যেন আরও গাঢ় হয়ে এল। মালতীর নীল সিল্কের নাইটগাউনের উপর বিকেল তিনটের রোদ এসে পড়েছে, তার ফর্সা গায়ের রঙকে যেন আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে। আলো-আঁধারের খেলা তৈরি হয়েছে তার শরীরের বাঁকে বাঁকে, বিশেষ করে উরুর কোমল ভাঁজে, যেখানে নাইটগাউনের আঁচল একটু উঁচু হয়ে গেছে। গুমোট বাতাসে মিশে আছে তার গায়ের ফ্লোরাল পারফিউমের মিষ্টি গন্ধ—ঘ্রাণটা ভারী হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে, যেন গরমের বিকেলটাকে আরও উত্তপ্ত করে তুলছে। তার আঙুলের গ্ল্যামারাস লাল নখগুলো গ্লাসের স্বচ্ছ কাঁচে আঁচড় কাটছে, মনে হচ্ছে যেন লিপস্টিকের রেখা এঁকে দিচ্ছে। ঠোঁটে ঠেকানো গ্লাস থেকে গড়িয়ে পড়া জলের ফোঁটা তার গলার নরম চামড়া বেয়ে নিচে নামছে, যেখানে গরমের তাপে নীল শিরাগুলো স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। "উফ... এই গরমে হামিদ মেথর যে কখন আসবে?" মালতীর কণ্ঠে বিরক্তি আর কৌতূহলের এক অদ্ভুত মিশ্রণ। তার ঠোঁটের কোণ কামড়ে ধরা, গভীর চিন্তায় চোখের পলক পড়ছে না। নাইটগাউনের নিচে টাইট প্যান্টির অস্বস্তি তাকে একটু বিব্রত করছে, তবু গরমে ব্রা না পরার স্বস্তিটাই বেশি। তার মনে ভেসে উঠছে হামিদের ছবি—একটা নোংরা, ঘৃণিত মানুষ, যার মুখ সে আজও দেখেনি। কিন্তু সেই অদেখা মুখই আজ তার মনে এক অদ্ভুত উত্তেজনার সৃষ্টি করছে, যেন অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে থাকার সেই রোমাঞ্চ, যা ভয় আর কৌতূহলের সীমা ছাড়িয়ে যায়। হঠাৎ— "ক্যাঁ-ক্যাঁ!" একটা কর্কশ, গভীর কাশির শব্দ যেন বারান্দার নিস্তব্ধতাকে চিরে ফেলে। মালতী চমকে উঠে দরজার দিকে তাকায়। ওই তো, হয়তো হামিদ মেথর। সে উচ্চস্বরে বলে, "চলে আসুন ভেতরে..."—কিন্তু তার চোখে লুকানো কৌতূহল। হামিদ ধীরে ধীরে বারান্দার দিকে এগোয়, তার পায়ের তলার মরা চামড়ায় লেগে থাকা রাস্তার পিচ, গোবর আর ময়লা শুকিয়ে কালো আস্তরণে পরিণত হয়েছে। গেট আর বারান্দার মাঝখানে এসে সে থমকে দাঁড়ায়, তার ফাটা গেঞ্জির বগল দিয়ে টপটপ করে ঘাম গড়িয়ে পড়ে মাটির দিকে, যেন তার শরীর থেকে নিঃসৃত হচ্ছে জীবনের সমস্ত ক্লেদ। গলার নিচে জমে থাকা ময়লার স্তর দেখে মনে হয়, কেউ যেন কালি দিয়ে তার গায়ে আঁচড় কেটে রেখেছে। তার কব্জি পোলিও আক্রান্ত—শুকনো ডালের মতো ভঙ্গুর, আর সেই বাঁকা হাতের শক্ত কব্জি দিয়ে চেপে ধরা আছে মরচে-ধরা একটা লোহার বালতি, যার গায়ে মাখা আছে আবর্জনা—বালতির ভেতরে শলার ঝাঁটা আর ফিনাইলের বোতল যেন তার পেশার প্রতীক। তার শ্বাস-প্রশ্বাস ভারী, গম্ভীর—যেন পুরোনো কাশির বারবার ফিরে আসা। মালতী কয়েক হাত দূরেই দাঁড়িয়ে তাকে অবাক চোখে দেখছে। হামিদের নাক মোটা, বিশ্রী, নাসারন্ধ্র বড় বড়—যেন দুটো কালো গর্ত, আর সেই ফুটো দিয়ে বেরিয়ে থাকা নাকের লোম ময়লায় আটকে আছে, যেন কখনো পরিষ্কার হয়নি। মুখ কালো, রোদে পোড়া, অসুস্থতার ছাপ স্পষ্ট। দাঁতগুলো বেঁকানো, কয়েকটি নেই, বাকিগুলো তামার মতো—যেন জীবনে কখনো ব্রাশ স্পর্শ করেনি। ঠোঁটের কোণে শুকনো লালার দাগ, মুখের চারপাশে খাবারের কণা আর ময়লার স্তর। উচ্চতায় সে খাটো, কিন্তু তার বুক পর্যন্ত লম্বা কাঁচা-পাকা দাঁড়ি দেখতে একেবারে যেন রাম ছাগলের দাঁড়ি—এলোমেলো, খাবারের টুকরো আর ময়লায় ভরা। গোঁফ অদ্ভুতভাবে কাটা, যেন কেউ অযত্নে কাঁচি চালিয়েছে, জীবনের প্রতি অবহেলার প্রতীক হয়ে। আরও কাছে এগোতেই মালতী লক্ষ করে, এই ৫৫-৫৬ বছরের মানুষটার মাথা সম্পূর্ণ টাক, কিন্তু সেই টাকের চামড়ায় জমে থাকা ময়লা আর ঘামের আস্তরণে যেন এক ধরনের আঠালো ভাব, রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে উঠেছে। গায়ে পরা এক ময়লা স্যান্ডো গেঞ্জি—যার গায়ে কালো দাগ, আবর্জনা আর ঘামের লবণাক্ত ছাপ স্পষ্ট। পরনের লুঙ্গিটা চরম ময়লা, আর তা থেকে ছড়াচ্ছে তীব্র পেচ্ছাবের গন্ধ—যেন বছরের পর বছর ধোয়ার নামগন্ধ নেই। "সালাম, মেমসাহেব... লতিফ ভাই ডেকেছে... বাথরুম পরিষ্কার করতে..."—হামিদ মালতীর দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নেয়, কিন্তু তার মনে ভেসে উঠছে এক অদ্ভুত ভাবনা—"এ কী দেহ! সাদা মোমে গড়া যেন এক জীবন্ত মূর্তি—ভরাট বুক, মাংসল বাহু, এমন তাগড়া রূপসী তো কখনো দেখিনি!" মালতী গ্লাসে ঠোঁট রাখে। ঠান্ডা জলের ফোঁটা তার গলার রেখা বেয়ে নেমে যায়। "হ্যাঁ, লতিফ চাচা বলেছেন,"—তার কণ্ঠে একটু অস্বস্তি, "আপনি একটু অপেক্ষা করুন। আমি বাথরুম দেখিয়ে দিচ্ছি।" "লতিফ ভাই কোথায়?"—হামিদের প্রশ্নে একটা উদ্বেগ। মালতী গ্লাসটা টেবিলে রেখে বলে, "উনি বেড়িয়েছেন। আসতে দেরি হবে। তাই আমাকে বলে গেছেন।" তার চোখে এক অদ্ভুত দ্যুতি—যেন ঘেন্না ও কৌতূহলের মিশেল। বারান্দার গরম হাওয়ায় দুজনের মধ্যে এক অদৃশ্য টান তৈরি হয়। হামিদের পা থেকে গলিয়ে পড়া ঘামের ফোঁটা মেঝেতে গড়িয়ে যায়, আর মালতীর গায়ের সুগন্ধ মিশে যায় গুমোট বাতাসে। "আমার... ঘরের এটাচড বাথরুমটা পরিষ্কার করতে হবে,"—মালতী কথাটা বলেই যেন আটকে যায়। সে চেয়ারে আরও গভীরভাবে বসে, হাত দুটো কোলের ওপর শক্ত করে চেপে ধরে। তার নাইটগাউনের নিচ থেকে সাদা উরুর এক টুকরো আলোর সংস্পর্শে এসে জ্বলজ্বল করে। মালতীর আঙুলের ডগা চেয়ারের হাতলে টোকা দেয়—টিক টিক শব্দ। তার মনে পড়ে যায়, এই লোকটাকে ঘরের ভেতর ঢুকতে দেওয়াটা কত বড় একটা সীমানা লঙ্ঘন। তবু... তবু একটা অদম্য ইচ্ছা তাকে তাড়া করে ফিরছে। ঘরের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা এসির ঠান্ডা হাওয়া বারান্দার গরম বাতাসের সঙ্গে মিশে এক অদ্ভুত উত্তাপ তৈরি করে। হামিদের শ্বাসযন্ত্র যেন হঠাৎই কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। তার শুষ্ক গলায় শব্দ আটকে যায়—"আ...আমি..."। লতিফ ভাইয়ের নির্দেশ আর মেমসাহেবের এই অপ্রত্যাশিত অনুরোধের মধ্যে সে যেন পাথরের নিচে পিষ্ট হচ্ছে। তার মাথায় উঁকি দেয় সেই পুরনো ভয়—একজন মেথর, অচ্ছুত, তার কি এই ভদ্রলোকের ঘরের ভেতরে প্রবেশের অধিকার আছে? তবু মালতীর সেই ধবধবে সাদা পা দুটো তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনিবার্য ভাবে। পা দুটো যেন দুটি পরিপূর্ণ দুধের কলস—মাংসল, কোমল, রোদে জ্বলজ্বল করছে। হামিদের নিজের পা—ফাটা, মরা চামড়ায় ঢাকা, নখগুলো কালো হয়ে বেঁকে থাকা—সেই পরিপূর্ণ সৌন্দর্যের সামনে যেন আরও বেশি কর্কশ দেখায়। সে অনুভব করে সেই পুরনো বঞ্চনা, সেই সামাজিক দূরত্ব যা তার রক্তে মিশে আছে জন্ম থেকে। "মেমসাহেব... আমি তো শুধু বাইরের..."—তার কণ্ঠস্বর ভেঙে পড়ে, যেন এই কথাগুলো বলতেই তার সমস্ত সাহস লেগে যায়। মালতী তীক্ষ্ণ স্বরে কেটে দেয়, "আমি তো বলছি এটাচড বাথরুম পরিষ্কার করতে!"—তার ঠোঁট কেঁপে ওঠে রাগে। হাতের আঙুলগুলো চেয়ারের হাতলে শক্ত করে গেঁথে যায়, নখগুলো সাদা হয়ে ওঠে চাপে। একটা অস্বস্তিকর নিস্তব্ধতা ভরে ওঠে বারান্দায়। হামিদের গা থেকে টপটপ করে ঘাম পড়ে মর্মর মেঝেতে। "আপনি শুনছেন না কি আমি বলছি?"—মালতীর গলার সুরে বিষধর সাপের মতো ফোঁস শব্দ। তার ভ্রু কুঁচকে গেছে রাগে, ঠোঁটের কোণে কাঁপুনি। হামিদের মাথা আরও নিচু হয়, কণ্ঠে করুণ এক আওয়াজ—"মেমসাহেব... আমি তো মেথর মানুষ... অচ্ছুত... নিচুজাত..."—তার শব্দগুলো যেন মেঝেতে লুটোপুটি খায়, "লতিফ ভাই জানতে পারলে... তিনি তো..." "কে বলেছে '.দের মধ্যে উঁচু-নিচু জাত আছে?"—মালতীর কণ্ঠে এবার এক অদ্ভুত মিশ্রণ, রাগের তীব্রতায় জড়িয়ে আছে এক গভীর কৌতূহল। তার ঠোঁটের কোণে খেলে যায় এক অর্ধ-লুকানো হাসি, যেন সে হামিদের বিশ্বাসের গভীরে পৌঁছতে চাইছে। হামিদের চোখ অপ্রত্যাশিতভাবে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সে মাথা তুলে তাকায়—প্রথমবারের মতো সরাসরি মালতীর চোখের দিকে। "আছে মেমসাহেব... আছে... আমাদের..."—তার কণ্ঠে এক নতুন ধরনের সাহস, "গ্রামের কেউ আমাকে ছুঁয়ে দেখে না, কেউ কথা বলে না..."—সে আবার থেমে যায়, তার চোখ আবার মেঝেতে আটকে যায়। "আপনার বাড়ি কি এই গ্রামেই?"—মালতী হঠাৎ প্রশ্নটা ঘুরিয়ে দেয়, তার কণ্ঠে এখন এক অদ্ভুত কোমলতা। সে চেয়ারে আরাম করে হেলান দেয়, নাইটগাউনের নীল সিল্ক আলোয় ঝলমল করে। হামিদের চোখ আবারও নিচু হয়। "মেমসাহেব... আমার তো..."—তার কণ্ঠে এক করুণ সত্যি, "কোনো বাড়ি নেই। যেখানে পারি রাত কাটাই—মসজিদের বারান্দা, বাজারের চালাঘর..."—তার কথা আটকে যায়, যেন এই স্বীকারোক্তিটাই খুব বড়ো একটা লজ্জা। মালতীর ভ্রু কুঁচকে যায়। সে হামিদের ময়লা গেঞ্জি, ফাটা চপ্পল আর শুকনো ঠোঁটের দিকে তাকায়। "পরিবার বা বেগম নেই?"—তার প্রশ্নে এবার সত্যিই আগ্রহ। হামিদ মাথা নাড়ে, "কে নিকাহ করবে নিচুজাতকে.. আম্মি আব্বুর বহু বছর আগেই ইন্তেকাল হয়েছে।"—তার গলার স্বর এবার ভেঙে পড়ে, যেন এই কথাগুলো বলতেই খুব কষ্ট হচ্ছে। একটা নিস্তব্ধতা ঘন হয়ে আসে বারান্দায়। মালতীর চোখে ভেসে ওঠে এক অদ্ভুত দ্যুতি। সে হঠাৎ বলে ওঠে, "আমি জাত পাত মানিনা, আপনি আমার ঘরে ঢুকবেন আর আপনার কাজ করবেন, ব্যাস"—তার কণ্ঠে এখন এক অপ্রত্যাশিত দৃঢ়তা। হামিদের মুখে এক অদ্ভুত বিস্ময় ফুটে ওঠে। সে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না নিজের কান—"মেমসাহেব...আমি..."—তার কণ্ঠে অবিশ্বাস আর কৃতজ্ঞতার মিশ্রণ। মালতী হঠাৎ উঠে দাঁড়ায়, তার নাইটগাউনের আঁচল আলতো করে নড়ে। "আসুন,"—সে দরজার দিকে এগিয়ে যায়, "আমি বাথরুমটা দেখিয়ে দিই।" তার পায়ের পাতায় লেগে থাকা লাল নেলপলিশ বারান্দার সাদা মার্বেলে রক্তের ফোঁটার মতো দেখায়। হামিদের পা কাঁপতে থাকে। সে প্রথমবারের মতো এই বাড়ির ভেতরের দিকে পা বাড়ায়। তার ময়লা চপ্পল থেকে পড়ে যাওয়া এক টুকরো মাটি সাদা মেঝেতে পড়ে যায়। সে থমকে দাঁড়ায়, লজ্জায় মাথা হেঁট করে। "কিছু মনে করবেন না,"—মালতী পিছন ফিরে বলে, তার চোখে এখন এক অদ্ভুত উষ্ণতা, "এসব মেঝে তো পরিষ্কার করাই হবে আপনার কাজ।" তার ঠোঁটে খেলে যায় এক ক্ষীণ হাসি। হামিদের চোখ জলে ভরে আসে। সে অনুভব করে, আজ প্রথমবার কেউ তাকে শুধু একজন মেথর হিসেবে দেখছে না। এই সাদা মার্বেলের মেঝেতে তার পায়ের ছাপ পড়াটাই যেন হয়ে উঠেছে এক নতুন শুরুর ইঙ্গিত। মালতী হামিদকে বাথরুমের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে নিজে শয়নকক্ষে ফিরে আসে। তার নীল সিল্কের নাইটগাউন বিছানার সাদা চাদরের উপর আলতো করে ছড়িয়ে পড়ে। সে বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকায়—চোখে এখনও সেই অদ্ভুত দ্যুতি, ঠোঁটের কোণে সেই রহস্যময় হাসির রেশ। বাথরুম থেকে ভেসে আসে হামিদের কাজের শব্দ—ব্রাশের ঘর্ষণ, জলের শব্দ। মালতী জানালার পর্দা একটু টেনে দেয়। বিকেলের রোদ এখন কমলা রঙ ধারণ করেছে, তার ঘরের দেয়ালে লেগেছে আলোর নরম আভা। সে বিছানার পাশে বসে, হাতের আঙুলগুলো অলসভাবে চাদরের ভাঁজে ভাঁজে ঘুরে বেড়ায়। "একটা মানুষকে শুধু তার কাজ দিয়ে বিচার করা..."—মালতী নিজেই নিজেকে বলে, কণ্ঠস্বর প্রায় ফিসফিসানি। তার মনে পড়ে যায় হামিদের সেই ভাঙা চোখ—যেখানে কষ্ট আর গর্ব একসাথে মিশে ছিল। বাথরুম থেকে আবার শব্দ ভেসে আসে, এবার যেন বেশি জোরালো। মালতীর ঠোঁটে আবারও সেই ক্ষীণ হাসি ফুটে ওঠে। সে জানালার দিকে তাকায়, যেখানে দূরের আমবাগানে পাখিরা ডাকাডাকি করছে। আজকের এই বিকেলটা যেন অন্য সব দিনের চেয়ে আলাদা। মালতী বাথরুমের দরজার ফ্রেমে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, হাতে ঠান্ডা জলের গ্লাস। গ্লাসের বাইরের দিকে ঘামের মতো জলকণা জমেছে, তার আঙুলগুলো ভিজে গেছে। বাথরুমের ভেতর থেকে ভেসে আসছে ব্লিচ ও সাবানের তীব্র গন্ধ, মিশে আছে পুরোনো পাইপের জলের দুর্গন্ধ। হামিদ ঝুঁকে আছে মেঝেতে, তার পিঠের হাড় ফাটা গেঞ্জির নিচে উঁচু হয়ে দেখা যাচ্ছে। তার হাতের আঙুলগুলো ফোলা, নখের নিচে কালো ময়লা জমে শক্ত হয়ে গেছে। ব্রাশের শব্দ শোনা যাচ্ছে—কাঠের হাতল মেঝেতে ঘষে কর্কশ শব্দ করছে, সঙ্গে টপটপ করে নোংরা জল পড়ার শব্দ। "হামিদ চাচা... জল খান," মালতী বলে, কিন্তু গলার স্বরে একটা অস্বস্তি লুকানো। মালতীর জল বাড়ানোর মুহূর্তে হামিদের চোখে জল এসে যায়। তার মনে হয়, এই দৃশ্য যেন কোনো স্বপ্ন—একজন "অচ্ছুত" মেথর, যাকে গ্রামের লোকেরা দূরে ঠেলে দেয়, আজ এক রাজকীয় রূপসীর হাত থেকে জল পাচ্ছে! তার শ্বাস আটকে আসে, গলার ভেতর শুকনো কাশির একটা গুড়গুড় শব্দ হয়। হঠাৎ তার কাঁপতে থাকা আঙুলগুলো—যেগুলো সারাজীবন ময়লা, মল, রক্ত, সাবানের সংস্পর্শে কঠিন হয়ে গেছে—সেগুলো নিজেই যেন স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে মালতীর পায়ের গোড়ালির কাছে এগিয়ে যায়। তার আঙুলের স্পর্শ যেন পুড়ে যাওয়া কাঠের মতো রুক্ষ, কিন্তু সেখানে এক অদ্ভুত কাঁপুনি—ভয়, লজ্জা আর এক গভীর কৃতজ্ঞতার মিশ্রণ। "মেমসাহেব... আপনিই তো...আমার মতো এক মহমেডান মেথরকে আপনি পানি দিচ্ছেন, কেউ আমার ছায়াও মাড়ায় না!!"—তার গলা ভেঙে যায়, কথা শেষ হয় না। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া অশ্রু তার কালো, রোদে পোড়া গাল বেয়ে নেমে আসে, ময়লার স্তর ভেদ করে গড়িয়ে পড়ে গেঞ্জির কলারে। মালতী হঠাৎ কেঁপে ওঠে যখন হামিদের আঙুল তার পায়ের পাতায় স্পর্শ করে। তার গ্লাস থেকে জল হামিদের গেঞ্জিতে পড়ে, যেটা ইতিমধ্যেই তার নিজের ঘামে ভেজা, গোবর ও পেচ্ছাবের গন্ধে ভারী। সেই ভেজা দাগটা গেঞ্জিতে ছড়িয়ে পড়ে, যেন এক অদৃশ্য সীমানা লঙ্ঘন হয়ে গেছে। মালতীর গায়ে হঠাৎ এক ঝলকানি অনুভূতি—ভয় নাকি অন্য কিছু? কিন্তু তার চোখে এখনও সেই অদ্ভুত দ্যুতি, ঠোঁটের কোণে সেই রহস্যময় হাসির রেশ। "ইস্! কি করলেন চাচা?" - মালতীর গলা চিড়ে উঠল, কণ্ঠে মায়া আর ন্যাকামির মিশেল। তার গালে লাল ছোপ পড়েছে, গলার নীল শিরাগুলো উত্তেজনায় ফুলে উঠেছে যেন সাপের ফনা। হামিদের হাত যেন আগুনে পুড়ে গেল - "মাফ করবেন মেমসাহেব... হাত কাঁপছে... ভুলে..." - তার গলা ভাঙা, ঠোঁট শুকনো কাঠের মতো। চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রু পলকের আঠালো ময়লায় ঝাপসা হয়ে গেল। মালতী খালি গ্লাসটা হাতে নিয়ে "দাঁড়ান...আরেক গ্লাস আনছি" বলেই নাইটগাউনের আঁচল পায়ে জড়িয়ে বারান্দার দিকে হাঁটতে লাগল। সিল্কের নীল কাপড় তার মাংসল উরুর সঙ্গে লেপ্টে যাচ্ছে, প্রতিটি পায়ের পাতায় লেগে থাকা লাল নেলপলিশ মার্বেল মেঝেতে রক্তের ফোঁটার মতো দাগ ফেলছে। চলবে।.....
Parent