নির্জনের ইরোটিক গল্প সমগ্র - অধ্যায় ২
পল্টনের ল কলেজ ৩
ভেবেছিলো ক্লাস করবে না। কিন্তু কয়েকজন শিক্ষক এতো ভালো ক্লাস করান, নির্জন ক্লাস প্রায় মিসই দেয় না। ক্লাসে সর্বোচ্চ উপস্থিতি ১০-১২ জন। ক্লাস করতে হয় না, এ ধারণা সবার মধ্যেই বদ্ধমূল। প্রতিটা ক্লাসে বাকি এগারোজনের পার্মুটেশন-কম্বিনেশন হয়, কিন্তু নির্জনের উপস্থিতি ধ্রুব। কয়েকটা মেয়েও ক্লাস করে৷ সবাই ওর চেয়ে বয়সে ৩-৪ বছর বড়। আসলে নির্জনই বোধহয় ক্লাসের কনিষ্ঠতম শিক্ষার্থী। বাকিসবাই চাকরি করে, কেউ ব্যবসা করে, কেউ বিবাহিত। সেই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করার সাথে সাথে ঢুকেছে।
ফাহমিদাকে ক্লাস শুরুর পর থেকেই দেখেনি কোনদিন নির্জন। অবশ্য ক্লাসে যে ফাহমিদা কোনদিন আসেনি, এটাও হলফ করে বলতে পারবে না ও। মেয়েদের মধ্যে যে কয়েকজন আসে, তাদের মধ্যে অন্তত ৩ জন বোরখা পরেন, তিন জনই বোধহয় মনে করে দেশটা ইরান বা আফগানিস্তান। মুখ দেখা গেলেই মোরাল পুলিশ এসে ওদের মাশা আমিনির মতো মেরে ফেলবে!
ওদের মধ্যে কেউ একজন ফাহমিদা হতেই পারে!
ক্লাস শেষ হয় ওদের রাত ন'টায়। ক্লাস শেষ করেই নির্জন নিচের মার্শাল টিটোর দোকানে এসে সিগারেট ধরায়। টিটোকে বলতে হয় না, সিগারট জ্বালাতেই সে হাতে চা ধরিয়ে দেয়।
টিটোর নাম মার্শাল টিটো কে রেখেছে, বেশ অনেকবার জানতে চেয়েও চায়নি নির্জন। কারণ এই প্রশ্ন যখন জেগেছে ওর মনে, তখন ও দোকানের চৌহদ্দিতেই ছিলো না।
আজ মনে পড়ায় জিজ্ঞেস করতে যাবে, তখনই শুনলো, "নির্জন ভাই, কেমন আছেন?"
কণ্ঠটা চেনা। ফাহমিদাকে দেখে নির্জন হাসিমুখে বলল, "এইতো! আপনাকে দেখিনা। আমি তো ভেবেছিলাম, অন্য কলেজে ভর্তি হয়েছেন!"
অবাক হওয়ার গলায় ফাহমিদা বলল, "ওমা! আমি তো নিয়মিতই আসি! শুধু শুক্রবারে অফিস থাকে না, এদিকে আসা হয় না বলে আসি না!"
নির্জনের ধারণাই ঠিক হবে। বোরখাওয়ালিদের ভিড়ে ও আলাদা করে ফাহমিদাকে চিনতে পারেনি।
"আপনাকে তো আমি কয়েকবার ডাকছিও। পাত্তাই দেন নাই!"
নির্জন দ্রুত বলে, "আরে ছি ছি, এভাবে বলবেন না। পাত্তা দেবো না কেন? আমি শুনতে পাই নাই!"
চা নিলো ফাহমিদাও। বলল, "আপনি নাকি অনেক নাক উঁচু?"
"আমি?"
"হ্যাঁ। শামিমা আপা বলল। উনি নাকি আপনার কাছে পড়ার ব্যাপারে কী জানতে চাইছিলো, আপনি বলছেন, এইটা তো অনেক বেসিক, এইটা বুঝলেন না? উনি তো সবাইকে বলে বেড়াইতেছে, আপনি গর্বিত ঢাবিয়ান। আমাদের পাত্তাই দেন না সেইজন্যে!"
তার ব্যাপারে যে কেউ এমন ধারণা করতে পারে, এমটা কল্পনাও করতে পারে না নির্জন। তার গর্ব করার মতো আছেই বা কী? না আছে টাকা, না চেহারা, না সে ছাত্র হিসেবে বার্ট্রান্ড রাসেল। তবে লোকে ভাবে কেন এমন!
নির্জন বলে, "আমি জানি না শামিমা আপা কে তবে তাকে যদি এটা বলে থাকি তবে অপমান করার জন্য অবশ্যই বলিনি। তিনি আমার নামে, যাকে বলে আইনের ভাষায় ডিফেমেশন করেছেন!"
ফাহমিদা হেসে বলল, "আচ্ছা, বাদ্দেন। কে কী বললো, এইটা শুনে আপনার লাভ কী!"
"সেটাই!"
নাম্বার বিনিমিয় হলো দুজনের।
ফাহমিদা বলল, "আপনি কি আমাকে দেখে চিনতে পারবেন ক্লাসে? এরপর থেকে?"
নির্জন একটু ভেবে বলল, "মনে হয় না। বোরখা পরলে সবাইকে একরকম লাগে!"
"ও!", ম্লান শোনাল ফাহমিদার গলা।
নির্জন বলল, "তবে একটা উপায় আছে!"
"কী?"
"আমার এক বান্ধবী ছিলো ভার্সিটিতে। মানে এখনো আছে, মরে নাই, বন্ধু থেকে শত্রুও হয়ে যায় নাই!"
"হ্যাঁ তো?"
"সেও আপনার মতো হিজাবিনেকাবি। ওকে আমি চিনতে পারি। ওর সাথে এতোবার দেখা হয়েছে ক্লাস করতে গিয়ে যে ওর হাঁটাচলা, হাতপা নড়ানো, ফিগার, চোখ সবই মুখস্ত আমার। তাই চিনি। আপনার ফিগারও যদি দেখি তবে হয়তো চিনতে পারব!"
"ফিগার?", বিস্মিত ফাহমিদার গলার।
বলল, "সেটা আমাকে বলে দেখবেন কেন? এমনিই তো দেখতে পারেন?"
নির্জন বলল, "এতক্ষণ চেক আউট করার কথা মনে ছিলো না। এখন যেহেতু জিজ্ঞেস করলেন মনে থাকবেন কিনা, তাই মনে হলো। এই একটা উপায় ছাড়া আর তো কোন উপায় নাই!"
"চেক আউট?"
নির্জন অনুতপ্ত হয়ে বলল, "চেক আউট না আসলে। মানে ভালো করে দেখতে হবে আরকি আপনাকে!"
"বুঝলাম!"
আজ চায়ের বিল দিল ফাহমিদাই।
"আপনি কি আশেপাশেই থাকেন?", জিজ্ঞেস করে নির্জন।
"হ্যাঁ। মিতিঝিলে। আপনি তো হলে থাকেন, না?"
"কোন হল?"
হলের নাম বলে নির্জন।
"লেখাপড়া শেষ। এখনও হল ছাড়তেছেন না। আপনার জন্য জুনিয়ররা সিট পাচ্ছে না!", বলল ফাহমিদা স্বাভাবিক গলাতেই।
লজ্জা পেল নির্জন। বলল, "যে যায় লঙ্কায়, সেই হয় রাবণ। আমি তো সিট পেয়েছি থার্ড ইয়ারের মাঝামাঝিতে। আমার কোটা কি পূর্ণ হলো? আমার তো ৫ বছর হলের রুমে থাকার কথা। মাত্র ৩ বছর কেন থাকব তবে? ফার্স্ট সেকেন্ড ইয়ারে আমিও ভাবতাম, শেষ হলেই হল ছেড়ে দেব। এখন বুঝি, আসলে লেখাপড়া শেষ হলেই আসল জার্নি শুরু হয়। হল না ছাড়ার কারণে যেসব বড় ভাইকে গালাগালি করতাম, আমিই আজ সেসব বড়ভাই হয়ে গেছি, দুর্ভাগ্যক্রমে!"
কথা বলতে বলতে পল্টন মোড়ে চলে এলো ওরা। বাসের হর্ন, চিৎকার, ধাক্কাধাক্কি।
এখান থেকেই রিক্সা নেবে ফাহমিদা।
হঠাৎ ও বলল, "দেখা হইছে?"
বুঝতে পারলো না নির্জন। বলল, "কী দেখা হবে?"
"আমাকে দেখা হইছে আপনার? এখন চিনতে পারবেন?"
হাসল নির্জন। দেখেছে ও ফাহমিদাকে। ওর বলিষ্ঠ পদক্ষেপে, হাঁটার স্টাইল, নড়াচড়া খেয়াল করেছে ও। ফাহমিদার স্তনের কম্পন পর্যন্ত নজর এড়ায়নি। ও এর মধ্যেই চোখ দিয়ে মেপে নিয়েছে ফাহমিদার কোমরের বেড়।
বলল, "হ্যাঁ। পারবো। তবে পেছন থেকে চিনতে পারবো না!"
ফাহমিদা বলল, "তাই নাকি? কেন?"
নির্জন হেসে বলল, "পেছনটা তো দেখিনি! আপনি আমার সামনে ছিলেনই না কখনও!"
গলায় সার্কাজম এনে ফাহমিদা বলল, "পেছন দিকটা চিনতে হবে কেন?"
"যেন পেছন থেকে ডাকতে পারি?"
"ও!"
লম্বা করে "ও" বলল ফাহমিদা।
তারপর বলল, "আপনি এখানে দাঁড়াবেন। নড়বেন না। আমি ওখান থেকে রিক্সা নেব। আর আপনি আমার পেছন দিকটা মুখস্ত করবেন, ওকে?"
ওকে অবাক করে দিয়ে হাঁটতে লাগলো ফাহমিদা। নির্জন তাকিয়ে রইলো ওর দোদুল্যমান কোমর আর নিতম্বের দিকে। সত্যিই মুখস্ত করে ফেলল ওর নিতম্বের ছন্দ।
রিক্সায় উঠে ওর দিকে তাকিয়ে দুই হাতে একটা ভঙ্গি করলো ফাহমিদা। যার অর্থ "দেখা হলো?" কিংবা "এবার চিনতে পারবেন?" দুটোই হতে পারে।