নিয়োগ - অধ্যায় ৭

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-69847-post-6022698.html#pid6022698

🕰️ Posted on August 29, 2025 by ✍️ Manali Basu (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1066 words / 5 min read

Parent
নিয়োগ পর্ব ৭ "কি হল মাধবীলতা, কোনো উত্তর নেই কেন?" "আমরা কি উপভোগ করার জন্য মিলিত হয়েছিলাম সমরেশ দা?" "তুমি আবার আমাকে সমরেশ দা বলে ডাকছো?" "সেটাই শ্রেয়। আমার ভয় করছে। মনে হচ্ছে তুমি একটু বেশিই আশা করে ফেলছো আমার থেকে?" "তুমি তো বলেছিলে শুধু বিছানার নয় মনেরও এক টুকরো ভাগ চাই তোমার।" "ভুল বলেছিলাম, ভুল...." বলেই শাড়িতে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো মাধবী। সমরেশ বুঝলো মাধবী এখনো বিমলেরই আছে, আজীবন হয়তো ওরই থেকে যাবে। কোনোদিনই সে মাধবীকে নিজের করে পাবেনা। মিছে মিছে আলেয়ার পিছে দৌড়তে চেয়েছে সমরেশ। মাধবীকে আর বিরক্ত না করে সমরেশ মুখ ফিরিয়ে নিচে চলে গেল খাবার বানাতে। মাধবী পড়ে রইলো বিছানায়। রান্নাঘরে গিয়ে সমরেশ গ্যাস ওভেনে ভাত চাপালো। সাথে ফ্রিজে থাকা টুকিটাকি কিছু সবজি বের করে কাটতে লাগলো তরকারি তৈরী করবে বলে। ওদিকে বিমল পার্ক স্ট্রিটের এক রেস্তোরাঁয় নিজের প্রিয় রেসিপি চেলো কাবাব দিয়েই লাঞ্চ সারছিলো। প্রিয় মানুষটাকে তো অন্য একজনের জিম্মায় ছেড়ে এসছে, নাহয় প্রিয় খাবারের স্বাধেই মনটাকে একটু শান্ত্বনা দেওয়া যাক। ঘড়িতে তখন চারটে বাজতে চলেছে। সমরেশের লাঞ্চ প্রায় তৈরী। কিছুক্ষণের মধ্যে সিঁড়ি দিয়ে মাধবী নেমে এল। পরনে সায়া, ব্লাউজ, শাড়ি। এসে ডাইনিং রুমের সামনে থাকা সোফাটায় বসলো। সেখানে থেকে দেখছিল সমরেশকে, রান্নাঘরে তার জন্য খাবার বানাচ্ছে। এই প্রথম কোনো পুরুষমানুষ তার জন্য বাড়িতে রাঁধছিল। বসু মল্লিক বাড়িতে হেঁসেলে পুরুষমানুষের প্রবেশ নিষেধ। আর বিয়ের আগে নিজের বাবাকেও কোনোদিন এক গ্লাস জল গড়িয়ে খেতে দেখেনি, রান্নাঘর মুখো হওয়া তো দূর অস্ত। চা থেকে শুরু করে টা, সবকিছুই তার মা মুখে মুখে জোগান দিয়ে এসেছে, পিতৃতান্ত্রিক সমাজের এক অলিখিত নিয়ম অনুসরণ করে। সেখানে সমরেশ ব্যতিক্রম। হোক না সেই মানুষটা পর, এতটাই যে তাকে কোনোদিন আপন ভাবা যাবেনা, করতে চাওয়া তো কল্পনাতীত। তবু তার এই যৎসামান্য যত্ন করার প্রচেষ্টাকেও কি এপ্রিসিয়েট করা যায়না? নিশ্চই করা যায়। এইভেবে মাধবী সোফা থেকে উঠলো যখন সে দেখলো সমরেশ রান্নাঘর থেকে ডালের বাটিটা পরম যত্নে নিয়ে আসছিল টেবিলে রাখার জন্য। সমরেশ আগেই লক্ষ্য করেছে মাধবীর উপস্থিতি। তবু সে মুখে রা কাটেনি, খানিক অভিমানে। মাধবী সমরেশের কাছে গিয়ে বললো সে কি তাকে হাতে হাতে সাহায্য করে দেবে টেবিলে খাবার পরিবেশন করতে। সমরেশ না করলো না। তবে তার সম্মতিতে উৎসাহের অভাব ছিল স্পষ্ট, খুবই স্পষ্ট। কারণ সে নিঃশব্দে শুধু ইতিবাচকভাবে মাথা নাড়িয়ে ছিল, কোনো কথা বলেনি। মাধবী সমরেশকে বেশি না ঘাটিয়ে রান্নাঘরে গেল। গিয়ে দেখলো এই এক ঘন্টার মধ্যে সমরেশ কত কিছু রান্না করে ফেলেছে। ফ্যান ঢেলে বড় ছাঁকনিতে ভাত রেখে দিয়েছে। একটা পাত্রে কিছু সবজি দিয়ে পাঁচ মিশেলি তরকারি রাঁধা আছে যা আবার মাধবীর খুব প্রিয়। বিমলের মতো অত এক্সটিক খাবার যেমন চেলো কাবাব তার পছন্দ নয়। তার পছন্দ সাদামাটা অথচ সুস্বাধু বাড়ির বানানো বাঙালি খাবার। সাথে কিছু আলু ভাজা ভেজে রেখেছে কড়াইতে। এসব দেখে মুগ্ধ নাহলে সে নারী প্রকৃত নারীই নয়। খুব স্বল্প আয়োজন, কিন্তু প্রতিটিতে মিশে রয়েছে যেন আন্তরিকতা। ভাবতে ভাবতে মোহিত হয়ে যাচ্ছিল মাধবী। পিছন থেকে সমরেশ এসে বললো, "এই কয়েকটা পদই রান্না করতে পেরেছি।" পিছন ফিরে মাধবী বললো, "এটাই অনেক। যদি হয় সুজন তেঁতুল পাতায় ন'জন, ঠিক তেমন যদি রাঁধে আপনজন তাহলে ত্রিপদ রান্নাও হয়ে যায় রাজকীয় ভোজন।" সমরেশ মৃদু আসলো। মনে মনে ভাবলো "আপনজন", সত্যিই সে ভাবে তাকে?.... মাধবী আবার বললো, "তুমি যাও, বাকি খাবারটা আমি নিয়ে যাচ্ছি টেবিলে। এইটুকু কাজ আমাকে করতে দাও, আমার সন্তানের হবু পিতা।" শেষের কথাটা শুনে সমরেশ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলো। আবেগে ভাসমান হয়ে চোখ দিয়ে দু'ফোঁটা জল বেরিয়ে এল। মাধবীর নজর তা এড়ালো না। সে সমরেশকে বললো, "এখন সত্যিই ভেবে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে যে আমি তোমার সন্তানের মা হতে চলেছি। যে পুরুষ প্রত্যাখিত হওয়ার পরও প্রিয় মানুষটার জন্য হাত পুড়িয়ে রান্না করে, তার বীর্যজাত সন্তান যে একটা খাঁটি মানুষই হবে তা নিয়ে আমার আর কোনো সন্দেহের অবকাশ রইলো না।" সমরেশ তক্ষুনি মাধবীর কাছে গিয়ে বললো, "এতই যখন ভালো মনে হয় আমায় তাহলে আমাকে ভালোবাসতে চাইছো না কেন তুমি? আমি যে বড় একা।" মাধবী চক্ষু নামিয়া বলিলো, "আমি অপারগ সমরেশ। আমি অন্য কারোর ঘরণী। আর যার সাথে ঘর বেঁধেছি সে তোমার পরম মিত্র।" "মানিনা সেই বন্ধুত্ব আমি। শুধু তোমাকে মানতে চাই।" সমরেশের গালে হাত রেখে আলতো স্পর্শ করে মাধবী বললো, "যদি আমাকেই মানতে চাও, তাহলে আমার কথাটাই মানো। এই জন্মে আমি তোমার হতে পারবো না। বড়জোড় তোমার সন্তানের মা হতে পারবো। তোমার ভালোবাসার চিহ্ন নিজের উদরে ধারণ করতে পারবো। ব্যস্, এইটুকুই। এর অধিক তোমার জন্য নিজের পরিধি বিস্তার করতে পারবো না। আমার গাঁটছড়া বাঁধা আছে বিমলের সাথে। তাছাড়া সব সম্পর্কই যে পরিণতি লাভ করবে সেটা কি কোথাও লেখা আছে?" সমরেশ মাধবীকে আঁকড়ে ধরে বললো, "সত্যি করে বলো, তুমি আমাকে ভালোবেসেছো?" গলার স্বর সমানভাবে শান্ত ও স্নিগ্ধ রেখে মাধবী বললো, "মাত্র কয়েকমুহূর্তের রমনে কি কাউকে ভালোবাসা যায়? হ্যাঁ, বলতে পারি এক অদ্ভুত টান অনূভব করছি তোমার প্রতি। হয়তো তাতে সার জল দিলে তা নির্ঘাত ভালোবাসায়ও রূপান্তরিত হতে পারে। কিন্তু আমার ফুলের বাগান সাজানো রয়েছে বসু মল্লিক বাড়িতে, তাহলে এখানে কেন আমি ভালোবাসার ফুল ফোঁটাতে যাব?" ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে সমরেশ মাধবীলতাকে ছেড়ে দিয়ে বললো, "তুমি বড্ড স্বার্থপর মাধবী, বড্ড স্বার্থপর। ওই বাড়িতে তোমার বাগান সুরক্ষিত নয়। তুমি আমার বাগিচায় ফুল ফোঁটাও, আমি সযত্নে লালন করবো।" "আমায় ক্ষমা করো সমরেশ, আমি তা পারবো না।" সমরেশ আর কথা না বাড়িয়ে রাগ করে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেল। ডাইনিং রুমে চেয়ার টেনে টেবিলে মাথা নামিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে বসে রইলো। মাধবী চুপচাপ রান্নাঘর থেকে এক একটা করে খাবার নিয়ে এসে টেবিলে রাখলো। থালা বাটিতে সার্ভ করে দিতে লাগলো। তারপর সমরেশের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, "খেয়ে নাও। এই নিয়ে পরে কথা হবে।" টেবিলের থেকে মাথা তুলে মাধবীর দিকে তাকিয়ে বললো, "আর কি কথা হওয়ার বাকি রেখেছো তুমি? সবকিছুই তো চুকিয়ে দিলে।" "একবার শেষবারের মতো মিলিত হবে আমার সাথে? তোমাকে সবটা উজাড় করে দেব তখন, যার রেশ তোমার সারাজীবনেও কাটবে না। এক মিলনে আমি সাত জন্মের কামনার রস ভরে দেব তোমার প্রাণে, কথা দিচ্ছি।" "সত্যি?" "হ্যাঁ, তিন সত্যি। তবে তার আগে পেট ভরে খেয়ে নাও। গায়ে বল আনতে হবে তো যুদ্ধে নামার আগে", এই বলে মাধবী খাবারের থালাটা সমরেশের দিকে এগিয়ে দিল। বাধ্য ছেলের মতো সমরেশ চেয়ার থেকে উঠে বেসিনের দিকে গেল হাত ধুতে। পিছু পিছু তাকে একই কারণে অনুসরণ করলো মাধবী। হাত ধুয়ে আসার পর দুজনে একসাথে বসলো টেবিলে, আহারাদি গ্রহণে। নিশ্চুপভাবে আগে খাবার শেষ করলো। খেয়ে মুখ হাত ধুয়ে আসার পর যখন সমরেশ দেখলো মাধবী তাদের এঁটো বাসন তুলছে তখন সে বাধা দিলো। বললো মাধবী তার অতিথি, তার এখানে এসব কাজ মানায় না। পাল্টা মাধবী জানতে চাইলো সমরেশ কি এরই মধ্যে তাকে এতটাই পর করে দিল যে এখন আতিথেয়তা দেখাতে উদ্যত হয়েছে সে? সমরেশ ব্যঙ্গার্থ ভঙ্গিমায় জবাব দিতে বলে উঠলো যে মাধবীই তো তাকে মনের সিংহাসন থেকে নামিয়ে দিয়েছে, তাহলে কোন অধিকারে সে মাধবীকে আপন ভাবতে যাবে? মাধবী বুঝলো সমরেশের গোঁসা এখনো রয়ে গ্যাছে। হয়তো কখনো যাবেনা যদি না সে নিজের সবটুকু দিয়ে সমরেশকে ভালোবেসে সন্তুষ্ট করতে পারে, অন্তত একবারের জন্য, শেষবারের মতো।
Parent