রূপাই নদীর রূপকথা/কামদেব - অধ্যায় ১০

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-25202-post-1854457.html#pid1854457

🕰️ Posted on April 18, 2020 by ✍️ kumdev (Profile)

🏷️ Tags:
📖 892 words / 4 min read

Parent
।।১০।।     ঘুম থেকে উঠে মনে পড়ল অনুদি কি কাজ দেবে বলেছিল।খাওয়া দাওয়া করে বসলাম ডায়েরি নিয়ে। সুর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমে। ডায়েরি শেষ করে এনেছি প্রায়। শেষ দিকটা বড় করুণ। বলেন্দ্র মোহনের বল কমে গেছে। শারীরিক শক্তি সামর্থ্য তেমন নেই।কঠিন যৌন ব্যধিতে আক্রান্ত শুয়ে শুয়ে দিনাতিপাত হয়। ....বড় অন্যায় করিয়াছি মণির প্রতি। ....একবার যদি বউমার দেখা পাইতাম তাহা হইলে মার্জনা ভিক্ষা চাইতাম....আমি জানি বউমা আমার জগদ্ধাত্রী  আমার প্রতি মণির যত ঘৃণাই থাকুক ব্রৃদ্ধ সন্তানটিকে তিনি ফিরাইয়া দিতে পারিতেন না....। মা চা নিয়ে এল। --মা তোমাকে একটা কথা বলবো? --কি কথা? শোন যেখানেই যাস অত রাত করে ফিরবি না। --ঠাকুরদা যদি তোমার কাছে ক্ষমা চায় তুমি তাকে মাপ করতে পারবে? --যত আজেবাজে কথা। আমার কাজ আছে--। --বলো না মা? মা এক মুহূর্ত কি যেন ভাবেন,শোন মানু দোষেগুণে মানুষ--সব সময় মানুষের ভাল দিকটা  দেখবি তাহলে দেখবি পৃথিবী কত সুন্দর।তোর বাবাকে বলেছিলাম একবার খোজ নিতে--।মেয়েদের তোরা মানুষ বলে  ভাবলে তো? মার গলা ধরে আসে। আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি। সত্যি মা আমার জগদ্ধাত্রী। বলেন্দ্র মোহনের চিনতে ভুল হয়নি। এখন একবার বেরোতে হবে। দেখি অনুরাধাদি কি কাজ দেয় আবার? কবিরা খুব সংবেদনশীল হয় শুনেছি। অনুরাধাদি সেজেগুজে কোথাও বের হচ্ছে মনে হল।আমার আসার কথা কি খেয়াল নেই? খুব সাদামাটা সাজগোজ। দীর্ঘদেহি চওড়া পিঠের উপর ছড়ানো একরাশ কালো চুল। কাঁধে একটা ঝোলা ব্যাগ।দময়ন্তীর চুল কাঁধ অবধি ছোট করে ছাটা। --কোথাও যাচ্ছো? --হ্যা তোর জন্য অপেক্ষা করছি,চল। --কি কাজ দেবে বলেছিলে তুমি? --এইতো কাজ। হাটতে হাটতে স্টেশন অবধি গিয়ে ট্রেনে উঠলাম।দুটো স্টেশন পর মাজদিয়া। কলকাতার বিপরীত দিকে,আগে এদিকে আসি নি। কলকাতায় গেছি অনেকবার।অনুদি বলেছিল দুটো কাজের কথা,ওর সঙ্গে যাওয়া হচ্ছে এক নম্বর।স্টেশন থেকে বেরিয়ে রিক্সা স্ট্যাণ্ড,তারা রিক্সা নিয়ে এগিয়ে আসতে অনুদি বলল, আজ হেটে যাবো।সঙ্গে ভাই আছে। অনুদি মনে হল প্রায়ই এদিকে আসে।পাকা রাস্তা ছেড়ে কাচা রাস্তায় নামলাম।আম-জাম-তেতুল-বকুল-কদম-শিমুলের ঘন নিবদ্ধ জটলা।নীচে আশ শ্যাওড়া-আকন্দ-গোয়ালালতা-ভুতচিংড়ের ঠাস বুনট তার মধ্য দিয়ে সুঁড়ি পথ। --মনা ভাল লাগছে না? --কোথায় যাচ্ছি বললে নাতো? --সাস্পেন্স।গেলেই দেখতে পাবি।মুচকি হাসল অনুদি। বিশাল ভাঙ্গাচোরা জীর্ণ বাড়ির নীচে এসে যাত্রা শেষ হল।বাড়ির সামনে আগাছায় ভরা জঙ্গল।ভিতরে ঢুকে দেখলাম ক্ষয়া ক্ষয়া সিঁড়ি উপরে উঠে গেছে। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে একটা বৈঠকখানা গোছের ঘর।পরিস্কার পরিচ্ছন্ন বোঝা গেল ঝাড়পোছ হয়। আমরা ঢুকতে পাশের ঘর থেকে একটি বছর কুড়ি-বাইশের ফুটফুটে সুন্দরি  মেয়ে বেরিয়ে এসে বলল, দিদি আপনি? মেয়েটি কুমারী না বিবাহিত বোঝার উপায় নেই।অনুদি বলল, তোর ছেলে কোথায়? মেয়েটি হেসে বলল, দস্যিপনা করে এখন মার কাছে ঘুমোচ্ছে।দাড়ান,আনছি। --না থাক ঘুমোক।মাসিমার শরির কেমন আছে? ভীতর থেকে কে যেন ডাকলেন, কে এলরে ইন্দ্রাণী? --অনুদি এসেছেন মা। অনুদি আমার কাছ থেকে ঝোলা ব্যাগ নিয়ে  তার ভিতর থেকে একগোছা টাকা বের করে ইন্দ্রাণীর হাতে দিল। একটু ইতস্তত করে টাকাটা নিয়ে বলল, দিদি মামলা কতদিন চলবে? আর ভাল লাগছেনা। --তোকে ওসব ভাবতে হবেনা। তোকে যা বলেছি মন দিয়ে কর। পিএসসি পরীক্ষা এগিয়ে এল।তোর উপর অনেক ভরসা আমার। মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকে ইন্দ্রানি,তারপর বলে ,দিদি বোসো  চা করি। --না বসবোনা,অনেক কাজ আছে।আসিরে। নীচে নামতে একটা ছায়ামূর্তি এগিয়ে এল, আমি কুদ্দুস। --ওঃ ভাইজান? কেমন আছেন? --আপনি এসেছেন দেখে আসলাম। --কোন অসুবিধে হচ্চেনা তো? --দিদিমণি আপনি কিছু ভাববেন না।আপনার ভাইজান থাকতে কোন হারামি ওদের ক্ষতি করতে পারবে না। --সেই ভরসাতে আমি নিশ্চিন্তে যেতে পারছি।কোন দরকার হলে আমার স্কুলে চলে আসবেন। এখন আসি? পাখিরা বাসায় ফিরে গেছে, একটু পরেই সন্ধ্যে নামবে। এবার অন্য পথে চলেছে। ক্রমশ রহস্যময়ী হয়ে উঠছে অনুদি। --কিরে অত দূরে থাকলে কথা বলবো কি করে? পাশে পাশে আয়। বড় বড় পা ফেলে অনুদির পাশে যেতে জিজ্ঞেস করল, কেমন দেখলি? --কিসের কথা বলছো? --আমি ইন্দ্রাণীর কথা বলছি। --মহিলা বেশ সুন্দরি। --ইন্দ্রাণী পলাশ পুরে থাকতো,আমার ছাত্রী। ওর রুপই ওর কাল হয়েছে। --আপনা মাংসে হরিণা বৈরী। আমি চর্যাপদের শ্লোক আওড়ালাম। --বাঃ বেশ বলেছিস তো। রুপই মেয়েদের শত্রু। ক্লাস টেনে উঠে এক ঠগের পাল্লায় পড়েছিল,তার বোলচালে ভুলে বিয়ে করে।পরে জানা গেল ছেলেটির কোন উপার্জন নেই বেকার ইন্দ্রাণীকে বিপথে নেবার চেষ্টা করে।বুদ্ধিকরে তার খপ্পর থেকে  বেরিয়ে আমাকে সব জানায়।ডিভোর্সের মামলা চলছে,আমি ওকে নিজের পায়ে দাড় করাবার চেষ্টা করছি।আমার বিশ্বাস ও পারবে। --কিন্তু আমাকে এখানে আনলে কেন তা কিন্তু বলনি। --তুই ওকে বিয়ে করতে পারবি? --কেন পারবো না? --বিয়ে করে খাওয়াবি কি? --সেই একটা সমস্যা। অনুদি আমি একটা অপদার্থ আমাকে দিয়ে তোমার কোন কাজ হবেনা। --কি করে বুঝলি? --বোজোদি বলত গোসাই তোমার বড় দোষ তুমি বানিয়ে কথা বলতে পারো না। অনুদি ভ্রু কুচকে আমাকে লক্ষ্য করে কি যেন বোঝার চেষ্টা করে। তারপর বলে, একটা কথা বলি হয়তো একটু রুঢ় শোনাবে।তুই একটা অলস গা-বাচানো স্বার্থপর মায়ের কষ্ট না-বোঝা কি বলবো যাচ্ছেতাই--। --থাক আর বলতে হবেনা।অনুদি তুমি আমাকে ভর্ৎসনা করে আনন্দ পেতে চাও--পাও। কিন্তু আমার জন্য চিন্তা কোরনা। --কিজানি কেন চিন্তা করছি? আসলে আমি জীবনের অপচয় সহ্য করতে পারিনা।মনুষ্যত্বের স্খলন আমাকে যন্ত্রণা দেয়। অনুদি কবি তাই হয়তো উপলব্ধিগুলো এত সুন্দর করে প্রকাশ করতে পারে।আমরা একটা নদীর কাছে চলে এসেছি। নদীর ধারে দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের ক্ষেত। চাদের আলোয় ঝিলমিল করছে নদীর জল। --এটা কি নদী অনুদি? --নদীর নাম রুপাই।হিজলতলিতে  দেখেছিস সেখানে জন বসতিতে এক রূপ এখানে একটু বন্য রূপে। রূপাই এদিকে এসেছে?  গদ গদ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অনুদি।আমার কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে,তুই সিগারেট খাস? --কখনো খেয়েছি এক-আধটা। --মাঝে মাঝে মন ভারাক্রান্ত হলে এখানে আসি।বসে বসে শুনি রুপাইয়ের রূপ কথা।কত কথা বলে যায় নীরবে।ব্যাগের ভিতর থেকে সিগারেট বের করে আমাকে একটা দিল,নিজেও একটা ঠোটে গুজে ধরাল। ইতিপুর্বে অনুদিকে সিগারেট খেতে দেখিনি।কবিদের জীবন যাপনই আলাদা।একরাশ ধোয়া  ছেড়ে অনুদি আবৃত্তি করে, নদীর বাতাসে শোন বিলাপের ধ্বনি বালির অতলে জল কাপে নিরবধি আমিও এসেছি আজ রুপাইয়ের তীরে তোমার পায়ের চিহ্ন খুঁজে,-- অগোচরে আমি শুধু শূন্য গুনি, গুনে মন ভোর প্রতি অঙ্গ লাগি কাঁদে প্রতি অঙ্গ মোর। কি সুন্দর লাগছে দেখতে অনুদিকে চাদের আলোর সিলুয়েটে।কানের পাশ দিয়ে এক গুচ্ছ চুল কাপছে বাতাসে।যেন কোন তাপসী অনন্ত অপেক্ষায়।  অনুদি কার পায়ের চিহ্ন খুঁজে ফিরছে?
Parent