রূপাই নদীর রূপকথা/কামদেব - অধ্যায় ১১

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-25202-post-1855064.html#pid1855064

🕰️ Posted on April 18, 2020 by ✍️ kumdev (Profile)

🏷️ Tags:
📖 784 words / 4 min read

Parent
।।১১।।              আধার নেমে এসেছে। অনুদি এক ঘোরের মধ্যে মনে হয়। দুজনে বসে আছি পাশাপাশি। রুপাই রূপকথা বলে? অদ্ভুত লাগে অনুদির কথা। জিজ্ঞেস করি ,তুমি রুপাইয়ের কথা শুনতে পাও? --শোনা যায় না উপলব্ধি  করতে হয়। দুই পাড়ে নিত্য ঘটে চলেছে কত অত্যাচার অবিচার অনাচার তার সাক্ষী রুপাই। রুপাই আমাদের মায়ের মত তা সত্বেও  অকৃতজ্ঞ-পাষণ্ড সন্তানদের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নেয়নি রুপাই।স্নেহ-মমতা দিয়ে ভরিয়ে তুলেছে। নতুন কথা শুনছি।এইসব কথা যেন আমার বুকে চাপা ছিল এতদিন। --তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? অসুবিধে থাকলে বলিস না। --কি কথা বলো,তোমাকে আমি সব কথা বলতে পারি। --ব্রজবালার সঙ্গে তোর কেমন সম্পর্ক ছিল? --জানো অনুদি বোজোদি আমাকে খুব ভালবাসতো--। --তা নয় তুই কিছু করিস নি তার সঙ্গে? --বোজোদি বলতো, গোসাই তোমার-আমার একদিন মিলন হবে। বিশে-কেলোরা আমার নামে মিথ্যে বদনাম দিয়ে বাবার কাছে মার খাইয়েছে।জানো আমার মা বিশ্বাস করেনি এমন  কি দময়ন্তীও--।   --তুই কোন মেয়ের সঙ্গে কোনদিন  কিছু করিস নি? কি জানতে চাইছে অনুদি? হঠাৎ এসব কথা জিজ্ঞেস করছে কেন? কিছু কি শুনেছে? --কি করবো? --থাক তোকে বলতে হবেনা।অনুদি আমার মনের অবস্থা বুঝেছে। অনুদি নদীর দিকে তাকিয়ে বলে, তোর মধ্যে কোন হিপোক্রিসি নেই তুই  খুব  সরল।তোর এই গুণ মেয়েদের আকর্ষণ করে বেশি।যে চায় সে পায় না,যে চায়না তাকেই উজাড় করে দেয় সবাই। --কিন্তু আমি তোমাকে সত্যি কথাটা বলিনি। --মিথ্যে করে বানিয়ে বলতেও পারিস নি। --বলিনি।ইতিস্তত করে বলি, শুনলে আমাকে ঘেন্না করবে। আমি না জানো অনুদি, রেবতী বউদির না খুব কষ্ট--। --কে রেবতী? --পলাশপুরে থাকে অতুলদার বউ। অতুলদা তাকে সুখি করতে পারেনি। একদিন রাতে ঘুমিয়ে আছি আচমকা--বলল আমি তো একজন মানুষ। --ধুর বোকা।দেওয়ার মধ্যে একটা আনন্দ আছে ,মুস্কিল হচ্ছে সবাই মর্যাদা দিয়ে গ্রহণ করতে পারে না। অনুদি আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, আর কখনো কারো সাথে--। --ঝ্য আমার লজ্জা করে। --আমাকে বলতেও লজ্জা? -- জানো অনুদি মলিনাবৌদির গায়ে যা জোর না তোমাকে কি বলব। অনুদি অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে,যার স্বামী জেলে আঁছে? --হ্যাঁ। একদিন একটা পুটুলি আমাকে রাখতে দিল। কদিন পর সেই পুটুলি ফেরত দিতে গেলাম--। --কি ছিল পুটুলিতে? --তখন জানতাম না পরে জেনেছি--সোনার বিস্কুট ছিল। --ও ঐজন্য পুলিশ কিছু পায়নি?তুই খুব ঝুঁকির কাজ করেছিস অবশ্য না জেনে--। --মলিনাবৌদিরও খুব কষ্ট তুমি না দেখলে বিশ্বাস করবে না। ভীষণ মায়া হয় ,আচ্ছা অনুদি মেয়েদের কি খুব কষ্ট হয়? অনুদি বিষণ্ন চোখে রূপাইয়ের অন্য পারের দিকে তাকিয়ে আছে কোনো কথা বলে না।মানুটা সরোজের একেবারে বিপরীত।শুধু নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু বোঝে না।মানুর  নিজের জন্য চিন্তা নেই অন্যের কষ্ট নিয়ে ভেবে আকুল।মেয়েদের কেমন কষ্ট হয় ওকে কীভাবে বোঝাবে।এতো বলে বোঝানো যায় না জীবন দিয়ে বুঝতে হয়। অনুদি চুপ করে আছে দেখে জিজ্ঞেস করি, অনুদি তোমার খুব ঘেন্না হচ্ছে তাই না? অনুদি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আমার মুখের দিকে তারপর স্মিত হেসে আমাকে বুকে জড়িয়ে বলে,তোর মনটা এখনো নষ্ট হয়নি। আমার কাছে তোর সম্মান অনেক বেড়ে গেল। তুই এক নতুন অভিজ্ঞতা তোকে কথা  দিতে হবে  আমি যা বলবো তুই করবি? বোজোদি যখন নিজের সঙ্গে আমাকে চেপে ধরত তখন সে জায়গা আলগা করে নিত,স্তন তলপেটের স্পর্শ পেতাম আমি।বোজোদি  বলেছিল,মন নষ্ট হলে সব নষ্ট, আমার সারা মন জুড়ে শুধু গোসাই--আর কিছু নাই গো।বোজোদি নেই কিন্তু সেই ভ্যাদলা মূলের গন্ধ আজও বেশ অনুভব করতে পারি। --কিরে কিছু বললি নাতো?অনুদি জিজ্ঞেস করে। --কঠিন কাজ না হলে করবো না কেন? অনুদির বুকের উষ্ণতায় মন সতেজ হয়ে উঠল।আজকের এই সন্ধ্যা বড় মনোরম। --এবার ওঠ,তাড়াতাড়ি বাড়ী  ফিরতে হবে। পরশুদিন একটা বই  প্রকাশ উপলক্ষে বাড়িতে কয়েকজনকে ডেকেছি--অনেক কাজ বাকি। --কি হবে সেখানে? --কবিরা আসবে, কলকাতা থেকেও আসবে কবিতা-পাঠ আলোচনা--তুই আসবি? --আমি কি করবো?আমি কি কবিতা লিখি? --শুনতে ভাল লাগেনা? শুনবি--।চল, এখান থেকে স্টেশন বেশি দূর না। অনুদির হাত আমার কাঁধে একটা সুন্দর গন্ধ অনুদির গায়ে। একসময় অনুদি বলে, তুই আজ আমাকে যা বললি আর কাউকে বলবি না। তুই জানিস ব্রজবালাকে কে খুন করেছে? --মলিনাবৌদি বলেছে নকুড়দালাল রেপ করে খুন করেছে। --মলিনা কি করে জানলো? --সঙ্গে কেলোরা ছিল।ওদের সঙ্গে বৌদির খুব ভাব। --মলিনাকে এড়িয়ে যাবি,কোথা থেকে বিপদ আসে কে বলতে পারে। আমার কাঁধে অনুদির ঝোলা তার উপর কাঁধে অনুদির হাত চলতে অসুবিধে হচ্ছে।কিছুক্ষণ নীরবে চলার পর অনুদি জিজ্ঞেস করে, তুই কাউকে কোনদিন  ভালবেসেছিস? কথাটা শুনে হাসি পেল।এখন বাড়ির যা অবস্থা রাত পোহালে কি হবে সেই চিন্তা,তখন এইসব ভালবাসা-টাসার কথা হাস্যকর মনে হয়।চাপা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম, ওসব বিলাসিতা আমাকে মানায় না। --না মানাবার কি আছে? --বারে আমার কি টাকা আছে?টাকা না থাকলে কে আমাকে ভালবাসবে বলো? --তুই এত জানলি কি করে? --দাদাকে দেখলাম না? বড়লোকের মেয়ে দেখে সব ভুলে গেল। --সব মেয়ে টাকার জন্য ভালবাসেনা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে  বলে অনুদি। বড় রাস্তায় পড়তে অনুদি কাঁধ থেকে হাত নামিয়ে নিয়ে বলল, দে আমার ব্যাগ দে। ট্রেনে উঠে  অনুদি গম্ভীর অন্য চেহারা। হিজলতলিতে নেমে বলল, পরশু আসবি কিন্তু অনেক কথা আছে।কাল বাড়ীতে আছি অনেক কাজ বাকী। রিক্সার প্যাক প্যাক ধ্বনিতে মুখর স্টেশন চত্বর। মা বলেছে বেশি দেরি করবিনা। দ্রুত পা চালালাম বাড়ির দিকে। মেয়েদের বুকের উষ্ণতা কি প্রেরণা সঞ্চার করে? রুপাইয়ের তীরে অনুদির বুকে মাথা রেখে সেরকম অনুভূতি হল। রমেশদার বাড়ির কাছে  এসে থমকে দাঁড়ালাম।জানলায় দাঁড়িয়ে মলিনাবৌদি রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে দেখেনি দ্রুত সরে এলাম। একটু ঘুরে অন্য পথ ধরলাম।
Parent