রূপাই নদীর রূপকথা/কামদেব - অধ্যায় ১২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-25202-post-1856232.html#pid1856232

🕰️ Posted on April 18, 2020 by ✍️ kumdev (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1198 words / 5 min read

Parent
।।১২।।                   রুপাই নদী আমার কাছে নতুন নয়, কাল  অনুদি আমাকে দেখালো রুপাইয়ের এক  নতুন রূপ। কবিরা এভাবেই দেখে তাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা সাধারণ ঘটনাকে। বলেন্দ্র মোহনের ডায়েরি পড়তে পড়তে যেভাবে বিস্মৃত অতীত জীবন্ত হয়ে ওঠে চোখের সামনে রুপাই যেন নিরন্তর লিখে চলেছে সেইভাবে সময়ের  দিনলিপি। সকাল বেলা মা চা দিয়ে বলল,সারাদিন টো-টো করে ঘুরে বেড়ালে চলবে? --তুমি কেবল ঘুরে বেড়াতে দেখো। --জানি না বাপু তোর যে কি হবে? মা অন্য কাজে চলে গেল।রোজ এইসব বলাই এখন মায়ের অভ্যাস হয়ে দাড়িয়েছে।  ভাবছি একবার লাইব্রেরিতে ঘুরে আসবো, বরেনদার সঙ্গে কথা বলতে বেশ লাগে।সন্ধ্যে হবার মুখে লাইব্রেরীর দিকে পা বাড়ালাম। বরেনদা কবি নয় অফিস থেকে ফিরে লাইব্রেরি খুলে বসে বইয়ে ডুবে থাকেন সারাক্ষণ।আমাকে দেখেই বরেনদা জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার মনোজমোহন? অনেকদিন পরে এলে? দাদার সঙ্গে তারপর যোগাযোগ  হয়েছে? --শুনেছি দাদা এদেশে  ফিরেছে।এখনো যোগাযোগ হয়নি। --কাল কোথায় গেছিলি? --অনুদির সঙ্গে মাজদিয়া।জানেন, রুপাইনদী ওদিকটা অন্যরকম। আপনি দেখেছেন বরেনদা? --হিজলতলিতে অনেক ময়লা জমেছেরে--নদীর চেহারা বদলে দিয়েছে।আক্ষেপের সুর বরেনদার গলায়। বরেনদার কথা কখনো কখনো দুর্বোধ্য মনে হয় বুঝতে পারিনা।তা হলেও শুনতে ভাল লাগে। একটা বই পালটে বেরোতে যাবো বরেনদা জিজ্ঞেস করেন, সেদিন মানিকের দোকানে কি হয়েছিল রে? মনে পড়ল সেদিন কেলোর সঙ্গে গোলমালের কথা। বললাম, মানিকদার সঙ্গে কথা বলছি  কেলো এসে ফালতু চমকাতে এল--। --ওদের এড়িয়ে চলাই ভাল,সমাজের দুষ্ট ক্ষত। তারপর কি ভেবে বললেন, গায়ে ময়লা পড়লে তো গা ঝাড়া দিতেই হবে। লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে পার্টি অফিস অতিক্রম করে কিছুটা যেতেই ভোলা এসে দাঁত বের করে বলল, মনাদা খেল জমেছে। --তোর চাকরির কিছু হল? --ধ্যুৎ কল্যাণদা দেবে চাকরি?  ফিস ফিস করে বলল, এবার কল্যানদার ক্যালানি খাবার সময় হয়ে এসেছে। --কে ক্যালাবে? --নকুড় দালালের সঙ্গে কিচাইন  হয়ে গেছে,রঞ্জিতদাসের গ্রুপে ভিড়েছে,হি-হি-হি। নকুড়বাবু অঞ্চলের একজন বড় প্রোমোটর,অবজ্ঞা করে লোকে দালাল বলে।ভোলার মুখে এসব শুনে ভাবি  ভোলা এসব কি  কথা বলছে? ভোলার বিধবা মা লোকের বাড়ী কাজ করে ছেলের মুখে অন্ন যোগায়।মা চিরকাল থাকবেনা,কি করবে তখন ভোলা, কে দেখবে ওকে? বললাম, তোর এসব কথায় কাজ কি?চিরকাল চামচাগিরি করে কাটাবি? কিছু একটা করার চেষ্টা কর। ভোলাকে রেখে এগিয়ে যাই 'কিছু একটা কর' কথাটা কানের মধ্যে অনুরণিত হতে থাকে।মা আমাকে এই কথাটাই বলে। আমি কি ভোলার থেকে আলাদা? খুব অসহায়  মনে হয় নিজেকে। মনে হয় রুপাইয়ের ধারে গিয়ে বসে রূপকথা শুনি।অনুদি বলছিল রূপাইয়ের কথা অনুভবে শুনতে হয়। --মনাদা-মনাদা। পিছন ফিরে দেখলাম আবার ছুটতে ছুটতে আসছে ভোলা। আবার কি গোপন কথা বলতে আসছে।হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল,তোমাকে ডাকছে। --ডাকলেই যেতে হবে? তোকে বলেছি না আমি কারো হুকুমের গোলাম না? --যাঃ বাবা আমাকে বলছো কেন? দিদিমণি বলল তাই বললাম। ভোলা একটু মনক্ষুন্ন। দিদিমণি? তাকিয়ে দেখলাম দূরে দাঁড়িয়ে আছে অনুরাধাদি। সারাদিন অনুষ্ঠানের আয়োজনে ব্যস্ত ছিল।বাইরে থেকে অনেক সম্মানীয় লোকজন আসবে। কাল মনার সঙ্গে কথা বলে অনেক কিছু জানলো।ভেঙ্গে না বললেও মনে হয় ও পাঁকে পড়ে চুদতে বাধ্য হয়েছে।ওর মনটা খুব নরম।সব শুনেও এক কথায় ইন্দ্রানীকে বিয়ে করতে রাজী হয়ে গেল। কিন্তু এভাবে চললে নষ্ট হয়ে যাবে কিছু একটা করা দরকার।মানুষ জড় পদার্থ নয় যে যেখানে যেমন অবস্থায় ফেলে রাখবে ঠিক তেমনি থাকবে চিরকাল? কাছে যেতে অনুদি বলে,কানে আজকাল কম শুনিস নাকি? --আমি আজকাল কম শুনি, কম দেখি, অনুদি আমি দিনদিন যাচ্ছেতাই হয়ে যাচ্ছি।আমার আর কিচছু হবে না। --যা বলছি মন দিয়ে শোন। ভেবেছিলাম সকালে আসবি,তোর কিসের যে এত ব্যস্ততা বুঝিনা।আজ তো হলনা--কাল সক্কালে উঠে শিয়ালদা এই ঠিকানায় চলে যাবি। সুদেষ্ণা আমার বন্ধু, ওকে এই বইটা আর চিঠিটা দিবি। কি বলে মন দিয়ে শুনবি। বইটা নিয়ে দেখলাম প্রচ্ছদে লেখা 'রুপাইয়ের রূপকথা।' তার নীচে অনুরাধা বসু। --তোমার বই? --হ্যাঁ। কাল অবশ্যই যাবি।সন্ধ্যেবেলা বাড়িতে আসবি, মনে আছে তো? --সেই কবিদের ব্যাপার? আমি কি করবো? --তুই আসবি একটা জিনিস পরীক্ষা করে দেখতে চাই। অনুদির চোখে রহস্যের আলো ঝিলিক দিয়ে গেল। কবিদের বোঝা মুস্কিল, কখন যে কি মুডে থাকে।এম.এ পড়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু ঈশ্বর আমাকে পরীক্ষা থেকে নিস্কৃতি দিয়েছে। কাল একগাদা কাজ ভাবতে ভাবতে বাড়ীর দিকে যাচ্ছি কিছুটা অন্য মনষ্ক। ডাক্তার সেনের অ্যাটেনড্যাণ্ট নিরঞ্জন বাবু তক্কে তক্কে ছিলেন বোধহয়, চেম্বার অতিক্রম করতে যাব এসে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এই রাস্তা দিয়ে যাও না আজকাল? --মাঝে মাঝে যাই,কেন? --একবার উপর থেকে ঘুরে যাও।ফিস ফিস করে বললেন। --আরেক দিন যাবো।আজ দেরী হয়ে গেছে। --গরীবকে কেন বিপদে ফেলবে? দেখা দিয়েই চলে যেও। --এর মধ্যে বিপদের কি আছে? --মালিকের মেয়ে বলে কথা--কদিন ধরে বলেছে--। অগত্যা উপরে উঠতে হল।বসার ঘরে কেউ নেই। আমি ঢুকতে মিসেস সেন এলেন বললেন,অনেকদিন পরে এলে।কেমন আছো? --ভালই।আপনি? --ওই একরকম। দিয়া তোমার খোজ করছিল।তোমার মোবাইল নেই? --বেকার ছেলে মোবাইল দিয়ে কি করবো? হেসে জিজ্ঞেস করলাম, ও কলেজ থেকে ফিরেছে? --পরীক্ষা হয়ে গেছে এখন তো কলেজ যাচ্ছেনা। জানতাম না দময়ন্তীর ডাকনাম দিয়া। দিয়া মানে কি প্রদীপ? মিসেস সেন চলে যাবার আগে বললেন,তুমি বোসো।যেতে যেতে ইঙ্গিতে একটা ঘরের দরজা দেখিয়ে দিলেন। আমি সেই ঘরে ঢুকে দেখলাম দময়ন্তী উপুড় হয়ে কি যেন পড়ছে ।পরনে টি-শারট আর থ্রি-কে।এমনি স্লিম চেহারা পায়ের গোছ বেশ ভারী, প্যাণ্টের ভিতর হতে বেরিয়ে। আমার সাড়া পেয়ে চিত হয়ে উঠে বসল।বেশ বাচ্চা বাচ্চা লাগছে দেখতে।ভাবলেশহীন গম্ভীর মুখ।ঝগড়াঝাটি করেছে নাকি?   বিছানায় উঠে বসে আমাকে বসতে ইঙ্গিত করে  বলল, আজকাল নাকি কাব্যচর্চা শুরু করেছো? --তা পারলে তো নিজের একটা পরিচয় হতো। --কথার যাদুতে আমাকে ভোলাতে পারবেনা।সোজাকরে কথা বলতে পারো না? অনুরাধা বসুর সঙ্গে মাজদিয়া যাও নি? তোমার চেয়ে বয়সে কত বড় জানো? --বড় তো কি হয়েছে? তুমি কি যা-তা বলছো? অনুদি  আমাকে স্নেহ করে,শুনলে কি ভাববে বল তো? --ভাবলো তো বয়ে গেল! আমি কাউকে ভয় পাইনা। --উর-ই বাবাঃ দিয়া জ্বলে উঠেছে--। ভ্রু কুচকে আমাকে দেখে বলে, দিয়া? এ নাম কি করে জানলে?আমি তো তোমায় বলিনি? --তোমার আপত্তি আছে? তাহলে বলবো না। --না আপত্তি নেই কিন্তু সবার সামনে বলবে না। শোনো আমাকে তুমি ফাকি দিতে পারবে না,সেই চেষ্টা করবে না। --তোমাকে কেন,আমি কাউকে ফাকি দিতে চাইনা। আচ্ছা তুমি বলো আমি কি তোমার সঙ্গে কখনো বিশ্বাস ভঙ্গ করেছি? --যাকে বিশ্বাস করিনা সে আমার কি বিশ্বাস ভঙ্গ করবে?তোমার হাতে ওটা কি বই? বইটা নিয়ে উল্টে-পাল্টে দেখে আমাকে জিজ্ঞেস করে,সন্দীপ মজুমদার কে? --আমি কি করে বলবো? --কবি অনুরাধা বসু বইটা তোমাকে দেয়নি, জনৈক সন্দীপবাবুকে দিয়েছে? তাকে পৌঁছে দেবার দায়িত্ব তোমার?তুমি বেয়ারা। বুঝলাম ক্ষেপে আছে,সব কথার সব সময় গুরুত্ব দিতে নেই।সিঁড়িতে পায়ের শব্দ শুনে ঘুরে দেখি ডাক্তার সেন ঢুকছেন।যাক বাঁচা গেল আপাতত জেরা হতে মুক্তি!আমাকে দেখে ডাক্তার সেন ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করেন, তোমাকে আগে দেখেছি? কেমন চেনা চেনা লাগছে মুখটা।কোথায় দেখেছি তোমায়---? --অনেকদিন আগে বাবাকে নিয়ে চেম্বারে এসেছিলাম--। --ওঃ হ্যাঁ মনে পড়েছে,তোমার এক দাদা বিদেশে থাকে--।তা তুমি কি করো? --বছর দুই আগে গ্রাজুয়েশন করেছি। --এখন তাহলে পোষ্ট গ্রাজুয়েশন? --আজ্ঞে না।এখন কিছু করিনা।   --মানে বেকার?মেয়ের উপর চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললেন, চাকরির চেষ্টা করতে পারো।অন্তত রাস্তার ধারে একটা জায়গা নিয়ে দোকান দিতে পারো? দেখো ভাগ্য কোথায় নিয়ে ফেলে--ভাগাড়ে না রাজপ্রাসাদে? ফুসে ওঠে দময়ন্তী,তুমি ওকে অপমান করছো? --চুপ করো! অনেক অপমান করেছো তোমরা  আর  অপমানিত হতে চাইনা। ডাক্তার সেন চোয়াল চেপে বলে ঘরে ঢুকে গেলেন। দময়ন্তীর মুখ লাল মাথা নিচু করে বসে আছে। --দিয়া বিশ্বাস করো, আমি কিছু মনে করিনি। --আমি মনে করেছি। নিজের মোবাইলটা হাতে গুজে দিয়ে বলে, এইটা রাখো।আমি দিয়েছি কাউকে বোলনা।এখন যাও পরে কথা হবে। --এইটা আবার-।দিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে কথা শেষ করতে পারিনা।দিয়া অন্যঘরে চলে গেল। মিসেস সেন ঢুকলেন, চা নিয়ে। --তুমি একা বসে আছো? দিয়া কোথায়? --ও মনে হয় পাশের ঘরে।  --ওমা সেকি!তোমাকে একলা বসিয়ে--কি যে করি মেয়েটাকে নিয়ে?তুমি চা খাও। আমি দ্রুত চা নিঃশেষ করে বলি,আমি এখন আসি? -- আচ্ছা বাবা আবার এসো। আমি চা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম। দময়ন্তী যেন প্রদীপের মত--সন্ধ্যাদীপের মত দিব্যি জ্বলছে হাওয়ায় নিভু-নিভু  আবার দপ করে জ্বলে ওঠে। রাস্তার আলোতে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখি,বেশ দেখতে।অবাক লাগে এই ছোট্ট যন্ত্রটা দিয়ে যেখান থেকে খুশি লোকে কথা বলে। কিন্তু কিভাবে চালাতে হয় জানি না।আমাকে কেন দিল? কোনদিন আমাকে কেউ কিছু দেয়নি দিয়াই প্রথম আমাকে একটা জিনিস দিল।সঙ্গে আবার একটা তার দিয়েছে। 
Parent