রূপাই নদীর রূপকথা/কামদেব - অধ্যায় ১৫

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-25202-post-1859069.html#pid1859069

🕰️ Posted on April 19, 2020 by ✍️ kumdev (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1031 words / 5 min read

Parent
।।১৫।।                                         দাদা আমাকে চিরকাল অবজ্ঞা করে এসেছে,এখন কোথায় আছে কে জানে। অনুরাধা বসুও আমার সঙ্গে মজা করল।রেবতীবৌদি কোথায় পালিয়ে গেল কোন খবর নেই। দময়ন্তি ডাকে কাছে গেলে দূর ছাই করে।এখনও মেসেজ করে উইশ করে।পাস করে কলকাতায় হাসপাতালে ইন্টার্নিশিপ করছে,হিজলতলিতে আসা কমে গেছে।বোজোদিও চলে গেছে আমাকে ছেড়ে।আমি এখন একা,কেউ নেই আমার।নৈহাটি কোচিং সেন্টারে যাই আর আসি।পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকি সারাদিন। কল্যানদা ভোলাকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছিলেন, যাইনি।সুনীল গাঙ্গুলীর একটা কবিতার কথা মনে পড়ল, "কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো কেউ কথা রাখেনি ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমি তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিলো শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে তারপর কত চন্দ্রভুক অমবস্যা এসে চলে গেল, কিন্তু সেই বোষ্টুমি আর এলো না পঁচিশ বছর প্রতীক্ষায় আছি ।" সন্দীপদা নৈহাটিতে ক্লাস নিতে আসেন সপ্তাহে তিনদিন। চমৎকার বোঝাতে পারেন। এক সময় অ্যাডমিনিষ্ট্রেটিভ সার্ভিসে ছিলেন।ভীষণ কড়া আর অনেষ্ট অফিসার।যেখানে পোস্টিং হত সেখানেই স্থানীয় রাজনীতিক দাদাদের সঙ্গে গোলমাল ,আর ঘন ঘন বদলি।বিরক্ত হয়ে একদিন দুচ্ছাই বলে ছেড়ে দিলেন মোটা মাইনের চাকরি।এখন স্বামী-স্ত্রী মিলে খুলেছেন ওয়ে আউট কোচিং সেন্টার। ক্লাসশুরু হয়ে গেছে পুরোদমে,সুদেষ্ণাদি বলে দিয়েছেন,ক্লাস ড্রপ করবেনা।কোন চ্যাপ্টার রিপিটেশন হবেনা। তোমার সঙ্গে আমার প্রেস্টিজ জড়িয়ে গেছে। একদিন রাজদীপবাবুর সঙ্গে আলাপ হল,সুদেষ্ণাদির দেওর। সরকারি অফিসার বেশ জলি।বউদির সঙ্গে ঠাট্টা-ইয়ার্কি করলেও দাদাকে খুব সমীহ করেন। বেশ মজা লাগছিল,তিন বছর আগে ক্লাস ছেড়ে এসেছি আবার কেঁচে গণ্ডূষ আরকি। নতুন নতুন ছেলেমেয়ের সঙ্গে আলাপ হয়েছে।সময় কেটে যাচ্ছে ঝড়ের মত। আমার সাফল্য-ব্যর্থতার সঙ্গে সুদেষ্ণাদির প্রেজটিস নাকি জড়ীয়ে আছে। ডাক্তার দিবানাথ সেনের ব্যঙ্গ এখনো কানে বাজছে। মনে মনে বলি বোজোদি তোমার গোসাইরে সাহস যোগাও। হিজলতলিতে একেরপর এক কত ঘটনা ঘটে যায়।জলে ঢিল পড়লে তরঙ্গ সৃষ্টি করে আবার ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে যায়। অনুদি বলেছিল অসম্ভব সহ্যশক্তি রুপাইয়ের, দু-পারে কত অন্যায় অবিচার অনাচার নিত্য ঘটে কিন্তু রুপাই বয়ে চলে নিজস্ব গতিতে নির্বিকার। একদিন কোচিং থেকে ফিরছি স্টেশনে পা দিয়েই বুঝলাম কেমন থমথম করছে স্টেশন পরিবেশ।রাস্তায় লোকজন কম ভাবছি কি হল আবার কোথা থেকে ভোলা ছুটে এসে জানালো,মনাদা শুনেছো শালা নকড়ে দালালের লাশ পাওয়া গেছে জঙ্গলে? এতক্ষণে বুঝলাম পরিবেশ বদলের কারণ। --কে মারল? ভোলা কাছে ঘেঁষে ফিসফিস করে বলে,কাউকে বোলো না কেলোর কীর্তি---ব্যাটা ফেরার।পুলিশ এসেছিল রমেশদার বউকে ধরে নিয়ে গেছে। --মলিনাবৌদি? তাকে ধরল কেন? --নকড়ে মরার আগে ওর সঙ্গেই শুয়েছিল।রঞ্জিতদাস বলেছে শেষ দেখে ছাড়বে। নকুড় দালাল ইদানীং রঞ্জিতদাসের এলাকায় প্রোমোটীং করছিল।কল্যানদার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল না। রাতে মলিনাবোউদির কাছে আসতো।বোজোদিকেও হারামীটা খুন করেছে,এবার বোঝো।  হঠাৎ শরীরের মধ্যে শীতল শিহরণ খেলে যায়।ভোলা বলছিল,ওর সঙ্গে শুয়েছিল। পুলিশের জেরায় আমার কথা বলে দেবেনা তো?এলাকায় মনীন্দ্রমোহনের একটা সুনাম আছে,লোকে তাহলে আঙ্গুল তুলে বলবে, ওই যাচ্ছে বাপের মুখে কালি দেওয়া ছেলে!দাদা বাপ-মাকে ফেলে পালিয়েছে আর তার ভাই--ছিঃ-ছিঃ। পরেরদিন দেখলাম দেওয়ালে পোষ্টার--শহীদ নকুড় শিকদার জিন্দাবাদ! তার মানে আমাদের অঞ্চলেও রঞ্জিতদাসের লোকজন আছে। দিয়াদের বাড়ির কাছে যেতেই এগিয়ে আসেন নিরঞ্জনবাবু। --একবার উপরে যেও বাবা। বয়স্ক মানুষের কথা উপেক্ষা করতে পারিনা। তাহলে দিয়া কি ফিরে এসেছে? উপরে উঠে বসার ঘরে ঢুকে দেখলাম কেউ নেই। কি করবো ভাবছি,এমন সময় একজন বিধবা মহিলা এসে বললেন,মা আপনাকে বসতে বললেন। --মা বললেন? তাহলে কি মিসেস সেন? একটু পরেই মিসেস সেন চা নিয়ে ঢুকলেন। --তোমার মা কেমন আছেন?স্মিত হেসে মিসেস সেন বলেন। --ভাল,আপনি ভাল আছেন? --আর বাবা ভাল।একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। আমি তোমার মায়ের মত,তোমাকে একটা কথা বলছি। মায়ের মত কথাটায় একটা যাদু আছে,আমি উদগ্রীব হয়ে তাকালাম। --দেখো বাবা মেয়েটাকে তুমি একটু বুঝিয়ে বোলো।মা কি তার শত্রু?কলকাতা তো খুব দূর নয় তাহলে হোস্টেলে থেকে ইন্টার্ণিগিরি করার কি দরকার? --জানেন তো দিয়া কেমন জিদ্দি,আমার কথা কি শুনবে?আমাকেই ধমক দেয়! মিসেস সেন মৃদু হেসে বলেন, তুমি বোলো তোমার কথা ফেলতে পারবেনা।চা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে খেয়ে নেও। শরতের আকাশের মত মনে হল মিসেস সেনকে। প্রথমে করুণ আর্তি তারপর হাসিতে উদ্ভাসিত উজ্জল মুখ। বাতাসে হিমেল পরশ।ডাক্তার সেনের বাড়ি থেকে রাস্তায় নামতে দেখলাম মিছিল যাচ্ছে।কমরেড নকুড় শিকদারের হত্যাকারীদের শাস্তি চাই--শহীদ নকুড় শিকদার লাল সেলাম শ্লোগানে মুখর মিছিল।মনে এল, মলিনার বাসায় কি বিপ্লব করতে গেছিলে কমরেড? শালা শহীদ হয়েছে! মানুষ এসব সহ্য করে কি করে? দেখতে দেখতে পুজোর ছুটি শেষ হতে চলল। প্রিলি পরীক্ষা শেষ পড়াশুনায় চাপ কম।আজ ভাবছি কলকাতার অফিসে যাবো। এসময় ট্রেনে ভীড় প্রচণ্ড। গাদাগাদি করে উঠে যখন শিয়ালদা পৌছালাম বেলা একটা বেজে গেছে। অফিসে বসে আছেন সুদেষ্ণাদি। আমাকে দেখে বললেন,শুনেছো? বুঝলাম না কি বলছেন,জিজ্ঞেস করি,কি? --আচ্ছা বোসো। বলে সুদেষ্ণাদি চলে যেতে ঢুকলেন সন্দীপ স্যর। আমি উঠে দাড়াতে বললেন,আরে বোসো-বোসো। তুমি তো কামাল করেছো ভাই। পরীক্ষায় তোমার rank কত হয়েছে জানো?--ইলেভেন। --যাও তোমার দিদির সঙ্গে দেখা করে এসো। --সুদেষ্ণাদির সঙ্গে দেখা হয়েছে।আমি বললাম। একটা ঘর দেখিয়ে বললেন,সোজা ঐ ঘরে চলে যাও। হ্যাঁ দরজায় নক করে ঢুকবে। দরজায় নক করতে ভিতর থেকে গম্ভীর গলায় পুরুষ কণ্ঠ ভেসে এল, কে-এ? ভিতরে এসো। দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে চমকে গেলাম, অনুরাধা বসু আর রাজদীপবাবু মুখোমুঝি বসে। ব্যাপারটা বুঝতে অসুবিধে হয়না। ফিরে যাব ভাবছি অনুদি বলল,আয় মানু ভিতরে আয়। --এই তোমার সেই ভাই? আচ্ছা রাধা তোমরা কথা বল আমি পাশের ঘরে আছি। রাজদীপবাবু বেরিয়ে গেলেন। আমি ভিতরে ঢুকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। কি করবো মাথায় আসছেনা। অনুদি হেসে বলে, তোকে বিয়ে করিনি বলে রাগ করেছিস? --আমার কি আছে বলো?হাবাগোবা বেকার-বাউণ্ডেলে--আমাকে বিয়ে করতে কার বয়ে গেছে। অনুদি খিলখিল করে হেসে ওঠে,আমার গা জ্বলে যায়। খুব পাকা-পাকা কথা শিখেছিস? --তোমরা কবি তোমাদের মত কথা কি করে বলবো? সনদীপবাবুকে নিয়ে সুদেষ্ণাদি ঢুকতে ঢুকতে বললেন,তোর ইনভেস্টমেন্ট কাজে লেগেছে বল। --আমি ওসবে নেই।আমি মানুকে টাকা ধার দিয়েছি। কিন্তু আমাদের আড়ি চলছে কি ভাবে টাকা ফেরত চাইব ভাবছি। সুদেষ্ণাদি মজা করে জিজ্ঞেস করে, কি নিয়ে আড়ি? --কিরে মানু বল কি নিয়ে আড়ি? অনুদি বলে। অবাক হলাম কোনো ভয় নেই বলে কিনা কি নিয়ে আড়ি!সুদেষ্ণাদির কথায় আজ জানলাম, অনুদি এতকাল আমার পড়ার খরচ যুগিয়েছে? আমার চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এল। অনুদি উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরে আঁচল দিয়ে চোখ মুছে দিয়ে বলল, ছিঃ বোকা ছেলে কাঁদেনা। বিস্মিত হয়ে সুদেষ্ণা দুই ভাই-বোনকে দেখে।সন্দীপ বলেন,চলো ভাই-বোনের মধ্যে আমাদের থাকা ঠিক নয়। ওরা চলে যেতে আমি বললাম, অনুদি তুমি খুব বিরক্ত হয়েছো?আমি না জেনে তোমার প্রতি দুর্ব্যবহার করেছি।তুমি ঐসব কেন করলে? --নারে বিরক্ত হবো কেন,আমি কি তোকে চিনিনা?শোন ওতে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় না। এখনো অনেক পথ বাকি যেতে হবে আরো বহুদূর পথ এদিক-ওদিকে কি দ্যাখো সামনের তাকিয়ে দেখো--সুসজ্জিত তোমার রথ। কি সুন্দর আবৃত্তি করে অনুদি! মোবাইল বেজে ওঠে , অনুদি বলে, দ্যাখ কার এত তাড়া? --তুমি কোথায়? --আমি ওয়ে আউট-এ--। --ওখানেই থাকো--আমি আসছি।ফোন কেটে দিল দময়ন্তী। --কে রে? আমি বিরক্তি নিয়ে বলি, ডাক্তারবাবুর মেয়ে। --কি বলছে? --দ্যাখো না খালি হুকুম করবে।আমি কারো হুকুমের ধারধারিনা। অনুদির ঘর থেকে বেরিয়ে ভাবছি কি করবো? দময়ন্তী অপেক্ষা করতে বলল,চলেই যেতাম।কিন্তু মিসেস সেন বলেছেন, দেখি ওকে বলে শোনে কিনা?যদি উল্টোপাল্টা কিছু বলে বলুক আমি পরোয়া করি না।ডাক্তার হয়েছে ঐরকম কথা বললে কোনো রোগীর আসতে বয়ে গেছে।
Parent