সাজু ভাই সিরিজ নম্বর -০৬ (গল্প কাপ ঠান্ডা কফি) (সমাপ্ত গল্প) - অধ্যায় ১৯

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-67212-post-6011204.html#pid6011204

🕰️ Posted on August 16, 2025 by ✍️ Bangla Golpo (Profile)

🏷️ Tags:
📖 2739 words / 12 min read

Parent
শেষ পর্ব (১৯) - বন্ধ মানে? একবারের জন্যও খোলা ছিল না?  - না স্যার, আপনি নাম্বার দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা কাজ শুরু করেছি কিন্তু বন্ধ।  - একটা কাজ করো, নাম্বার বন্ধ হবার আগে সেটা সর্বশেষ কোন এরিয়ায় ছিল বের করো।  - এটা আগেই বের করে রেখেছি, নিউমার্কেটের কাছাকাছি কোনো একটা টাওয়ারের আওতায় সর্বশেষ নেটওয়ার্ক কানেক্টেড ছিল।  - এবার সাজুর নাম্বারটা ট্রাই করো, ওটাও বন্ধ আছে। কিন্তু সেটা কোনজায়গা ছিল চেক করো।  - নাম্বারটা?  লিয়াকত আলী নাম্বার দিয়ে দিলেন। ওই কর্মী দ্রুত কাজ করতে লাগলো। লিয়াকত রুমের বাইরে এসে মাহিনের কাছে বলতেই সে বললো,  - ওই এরিয়ায় ওদের একটা পুরনো বাড়ি আছে, আমার মনে হয় সেখানেই নিয়ে গেছে।  - তুমি কি চেনো সেই বাড়ি?  - হ্যাঁ।  - আচ্ছা তাহলে আমরা সেখানে গিয়ে দেখতে পারি তাহলে, আগে সাজুর নাম্বারটা চেক করা হোক।  - আমার মনে হয় আগেই বেড়িয়ে যাওয়া উচিৎ তাহলে ওদের ধরা সহজ হবে।  - ঠিক আছে আমি ওখানকার স্থানীয় পুলিশ ফোর্স তৈরি হতে বলছি। আর আমরা এখান থেকে বাকিরা চলে যাবো।  সাজুর নাম্বারও সর্বশেষ লোকেশান সাদেকের সঙ্গে মিলে গেছে। লিয়াকত আলী দ্রুত বেড়িয়ে পড়লেন। ওই সন্ত্রাসীরা যদি আগে থেকে টের পেয়ে যায় তাহলে স্থান পরিবর্তন কিংবা বড় কিছু ঘটতে পারে।  গাড়িতে বসে বসে ওসি সাহেবের কথা ভেবে যাচ্ছে ডিবি অফিসার লিয়াকত আলী। লোকটা নিশ্চয়ই কিছু লুকাচ্ছিলো, কিন্তু এই মুহূর্তে সাজুকে উদ্ধার করা প্রধান কাজ। নাহলে সে সরাসরি গিয়ে সেই ওসির সঙ্গে কথা বলতো, বা যে বাড়িতে গিয়ে সাজু বিপদে পড়েছে সেখানে যেতেন।  কিন্তু সেগুলো পড়ে ও করা যাবে, তাই ওটা নিয়ে আপাতত চিন্তা করতে চাইছেন না।  গাড়ি থেকে নেমেই লিয়াকত আলী বললেন,  - এটাই সেই বাড়ি?  - জ্বি ভাই।  - আমরা সরাসরি বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করবো, তবে সবাই সতর্ক থাকতে হবে।  - রামিশা আপুকে গাড়ির ভিতরে রাখা ভালো হবে, নাহলে তাকে সেফ করা।  - বুঝতে পারছি, সমস্যা নেই সে গাড়ির মধ্যে থাকুক।  স্থানীয় থানার একটা পুলিশ ফোর্স এসেছে, তাদের নিয়ে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলেন। গেট দিয়ে ঢুকে একটা বাইক দেখতে পেয়ে লিয়াকত আলী বুঝতে পারলো বাড়ির মধ্যে নিশ্চয়ই কেউ আছে।  আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে তারা দরজার সামনে গেলে, পিস্তল তাক করে দরজা নক করতেই সেটা আপনাআপনি খুলে গেল। সতর্কতার সঙ্গে প্রবেশ করে সামনের দৃশ্য দেখে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়ে গেল লিয়াকত আলী ও মাহিন। মাহিন শুধু অস্ফুটে আস্তে করে বললো,  " সাজু ভাই " ★★ রবিউল যখন সাদেকের কাছে জিজ্ঞেস করে সাজু ভাই কোথায়? তখন তারা ভেবেছিল দাদাজান সব বুঝতে পেরেছে হয়তো। তাই হয়তো রাব্বিকে এই বাড়িতে পাঠিয়েছে। টাকার কথা ভুলে গিয়ে সে অনুরোধের কণ্ঠে বললো,  - আমার ভুল হয়ে গেছে ভাই।  - প্রশ্ন করি একটা আর উত্তর আসে আরেকটা, কেন সাদেক?  - ভিতরের ঘরে আছে ভাই, আমরা এক্ষুনি কাজটা করে ফেলবো৷  - কাজের ব্যাপারে আমি দেখতেছি, তোমরা এখন তাকে আমার কাছে দিয়ে দাও।  - কিন্তু ভাই।  রবিউল তার দিকে রাগি চোখে তাকালে সাদেক মাথা নিচু করে ফেলে। ঠিক এমন সময় সাদেকের নাম্বারে কল করে দাদাজান। সাদেক কল রিসিভ করে পাশের ঘরে চলে যায়,  - জ্বি দাদাজান বলেন।  - তোর কত টাকা দরকার?  - আমাকে মাফ করে দেন।  - তোর জন্য এখন ডিবি পুলিশের কাছে সবকিছু জানাজানি হয়ে যাচ্ছে। এতো কাঁচা কাজ করার তো কোনো মানে হয় না সাদেক।  - এবারের মতো ক্ষমা করেন।  - ছেলেটা কোথায়?  - পাশের ঘরে, তবে রাব্বি ভাই নিজের হাতে মেরে ফেলবে এখন।  - রাব্বি? ও সেখানে গেল কখন?  - একটু আগে এসেছে, কেন আপনি তাকে এখানে পাঠান নাই?  - না তো, এমনিতেই সে একটু অন্যরকম আচরণ করছিল আমার সঙ্গে। তোর কিন্তু এবার বিপদ হতে পারে সাদেক তোরা দ্রুত রাব্বিকে আটকাতে চেষ্টা কর আমি আরো লোক পাঠাচ্ছি।  - কিন্তু সে এমন করবে কেন?  - রাব্বি কখনো নিরপরাধ কাউকে মারে?  - না।  - তাহলে যে ছেলেকে নিয়ে গেছো তাকে তো রাব্বি মারতে দেবে না।  - ঠিক আছে দাদাজান, কিন্তু প্রয়োজন পড়লে রাব্বি ভাইকে ও সরিয়ে দেবো তাহলে।  - আচ্ছা ঠিক আছে।  মোবাইল পকেটে রেখে পিস্তলটা হাতে নিয়ে আবার আগের রুমে এলো। সাজুর কাছে এসে চোখ কপালে উঠে গেল সাদেকের। তার সঙ্গীর ঠিক কপাল বরাবর একটু ছিদ্র, সেই ছিদ্র দিয়ে গলগল করে রক্ত পড়ছে।  কিন্তু সে ও বেশিক্ষণ তাকাতে পারলো না, মাত্র পনের সেকেন্ডের মধ্যে আরেকটা বুলেট এসে তার কপাল ছিদ্র করে দিলো। কোনো ধরনের শব্দ পাওয়া গেল না, শুধু হালকা একটু আওয়াজ।  আলমারির পিছন থেকে বেরিয়ে এলো রবিউল ইসলাম। সাজুর হাতপা বাঁধন খুলে তাকে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেল। সাদেকের পকেট থেকে গাড়ির চাবিটা নিয়ে নিলো। সাদেকের পকেট থেকে তিনটা মোবাইল বের করলো। দুটো মোবাইল আগে থেকেই বন্ধ ছিল। আরেকটা চালু ছিল সেটা দিয়ে একটু আগে সে কথা বলেছে৷  বন্ধ মোবাইল দুটোর মধ্যে একটা মোবাইল সাজুর হবে এটা নিশ্চিত। কারণ সাজু ভাই দামী মোবাইল ব্যবহার করে এটাই স্বাভাবিক।  দ্বিতীয় বন্ধ মোবাইলটা সাদেক বন্ধ করেছিল মাহিন তাকে কল করার পরপরই। সবগুলো মোবাইল নিজের সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে গেল কারণ পুলিশ এসে মোবাইল পেলে এই নাম্বার গুলো দিয়ে অনেক কিছু বের করতে পারে।  সাজুকে নিয়ে গাড়িতে উঠে মুহুর্তের মধ্যে সেই এলাকা থেকে বেড়িয়ে গেল রবিউল। পুরনো সেই বাড়ির মধ্যে দুটো মানুষের মৃতদেহ পড়ে রইল।  ★★★ দুটি লাশ পড়ে আছে, মাহিন তাদের দুজনের নাম বলে দিল। সাজুকে যেখানে বেঁধে রাখা হয়েছে সেই স্থান ফাঁকা, তারমানে কি সাজু এদের হত্যা করে পালিয়ে গেছে? অসম্ভব।  - এখন কি করবেন ভাই?  - আমি বুঝতে পারছি না সাজু এদের কীভাবে খুন করে চলে গেল?  - হয়তো কোনো কৌশলে পেরেছে, নাহলে দু'জন একসঙ্গে খুন করা।  - কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এটা এমন কেউ করেছে যার হাতের নিশানা খুব ভালো।  - কেন ভাই?  - দুজনের ঠিক কপালে গুলি লেগেছে। সাজু কিন্তু অস্ত্র চালাতে পারে না তাই তার পক্ষে এতটা নিখুঁতভাবে গুলি করা সম্ভব না।  - হতে পারে খুব কাছ থেকে কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করেছে।  - সেটা সম্ভব না, দুজন লোককে কীভাবে এমন কাছ থেকে মারবে?  - এমনও হতে পারে যে একজন বাহিরে গেছে সেই সময় ঘরে যে ছিল তাকে মেরেছে। তারপর যখন দ্বিতীয়জন এসেছে তাকেও মেরেছে।  - না, মিলছে না।  সাদেকের হাতের পিস্তলটা ফ্লোরে পড়ে ছিল। সেই পিস্তলটা হাতে নিয়ে লিয়াকত চেক করে বললো,  - সবগুলো গুলি ভেতরেই আছে, তারমানে এই পিস্তল দিয়ে গুলি করা হয়নি। আর সাজুর কোনো পিস্তল নেই, তাহলে গুলি করলো কে?  লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দিয়ে বের হয়ে গেল লিয়াকত ও মাহিন। সবকিছু শুনে রামিশা ছলছল করে তাকিয়ে রইল। তার বিশ্বাস হচ্ছে না সাজু খুন করে পালাতে পারে।  | | ওসি সাহেবকে নিয়ে সেই বাড়িতে গেল লিয়াকত আলী ডিবি। ওসি সাহেব ভয়ে একদম কুঁকড়ে যাচ্ছেন, একটু আগে সে জানতে পেরেছে সাদেক নামের যে লোকটার হাতে সাজুকে তুলে তাদের দুজনকে খুন করে পালিয়ে গেছে সাজু। আর ডিবি অফিসার এখন তদন্ত করতে আসছে সেই বাড়ি তখন কি হয়েছিল?  গেইটের সামনে যে সিসি ক্যামেরা আছে সেই ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেল সাজুকে দুজন পুলিশ বাড়ি থেকে বের করছে। এদের দুজনকে চিনতে একটুও কষ্ট হয়নি ডিবি অফিসার লিয়াকত আলীর। কারণ এই দুজনের লাশ সে একটু আগে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।  তবুও চুপচাপ ভিডিও ফুটেজ মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলো লিয়াকত আলী। ওসি সাহেব পুরোপুরি ঘামছেন, নিশ্চিত বিপদের আশঙ্কা দেখেও পালাতে পারছেন না তিনি।  সাজুকে বাড়ি থেকে ধরাধরি করে নামানোর দৃশ্য দেখে সেটা বারবার দেখলেন ডিবি অফিসার। তারপর তাকে নিয়ে ওই দুজন একটা গাড়িতে করে চলে যাচ্ছে সেটাও দেখা গেল।  সবকিছু দেখে লিয়াকত আলী বললেন,  - কার কথায় আপনি সাজুকে এদের হাতে তুলে দিয়েছেন?  - চুপচাপ। - সাজুকে নিশ্চয়ই অজ্ঞান করা হয়েছিল?  - হ্যাঁ।  - আপনি এতটা কাঁচা কাজ করলেন কীভাবে?  ভেবেছেন সাজুকে ওরা হত্যা করলে সবকিছু চাপা পড়ে যাবে! অথচ এখন তারা দুজনেই খুন।  - আমি বাধ্য হয়ে করেছি স্যার।  - বলার আগে লজ্জা পাওয়া উচিৎ।  ওসিকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়ে দিলেন। ডিবি অফিসারের টার্গেট এখন এই বাড়ির সেই মালিক কিংবা ম্যানেজার।  ★★★ পরদিন বিকেল বেলা।  খুলনা শহরের একটা বাড়িতে মধ্যে বসে আছে রবিউল ইসলাম, মংলা থানার দারোগা ও মাহিশার বাবা।  মাহিশার বাবা দাদাজানের দলের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হলেও আজ পর্যন্ত রবিউলকে দেখেনি। দারোগা সাহেব নিজেও শুধু ফোনে কথা বলেছে কয়েকবার। আজ তারা সামনাসামনি বসে আছে, একটু আগে তারা এসেছে এখানে। তাদের বলা হয়েছে সাজুকে তুলে দেবার জন্য রবিউল এদের সঙ্গে দেখা করতে চায়।  দারোগা নিজে রাজি হয়ে গেল, যেহেতু সাজুকে সে মারতে চায় তাই কোনো ধরনের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। আর কুসুমপুরের চেয়ারম্যান নির্বাচন করার আশা করে বসে থাকা মাহিশার বাবা এসেছেন দারোগার জন্য।  - সাজু কোথায়? আর তাকে না মেরে এখানে নিয়ে আসার কারণ কি?  বিরক্ততার সঙ্গে বললেন দারোগা।  - আপনার সঙ্গে একটা লেনদেন আছে তাই আগে সেটা মেটাতে চাই।  - তোমার টাকার বিষয় তো সব ব্যাঙ্কের মাধ্যমে করা হবে।  - এটা নয়, আমার আব্দুল কাদেরকে চাই।  - মানে?  - মানে আপনি এখন হাসপাতালে কল দিয়ে তাকে পালানোর সুযোগ করে দিবেন। আমি জানি সে অসুস্থ, কিন্তু আমার লোক এম্বুল্যান্স নিয়ে এখন সেখানে অপেক্ষা করছে। আপনি কল দিয়ে আব্দুল কাদেরকে তাদের হাতে তুলে দিতে বলবেন। নাহলে...  - নাহলে?  - নাহলে ঘন্টা খানিকের মধ্যে আপনার লাশ চলে যাবে পোস্টমর্টেম ঘরে।  - হুমকি?  - মোটেই না, সত্যি বলছি।  - তুমি বলেছিলে সাজুকে নিয়ে আসবে সে কোথায়?  - খুলনাতে আছে, সামান্য অসুস্থ, আপনাকে তো ভিডিও কলে দেখালাম।  - তাকে আগে মেরে ফেলো তারপর তোমার লোক তুমি পাবে।  - আমি একই ভুল বারবার করি না।  সব প্ল্যান রবিউল করে রেখেছে। দারোগা শুধু হাসপাতালে ডিউটিরত পুলিশের কাছে কল দিয়ে বলেছে দুজন ডাক্তার যাবে তাদের হাতে আব্দুল কাদেরকে দিয়ে দিতে হবে।  একটু পরে রবিউলের লোক তাকে কল দিয়ে জানায় কাজ হয়ে গেছে। তারা ততক্ষণে খুলনা শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছে যশোরের দিকে।  প্রায় ঘন্টা খানিক অগত্যা বসে বসে অপেক্ষা করতে হয়েছে। মাহিশার বাবা বেশি ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছেন। তার কেমন অস্বস্তি লাগছে। গতকাল সাদেক ও আরেকজন খুন হয়েছে সেটা শুনেই টেনশনে ছিল সে। তার ধারণা সবকিছুর পিছনে কাজ করছে মাহিন। দাদাজান নিজেই তার দলের সবাইকে নিষেধ করেছে রাব্বির কথা মাহিশার বাবার কাছে যেন না বলে। দারোগা নিজেও কিছু বলে নাই, কারণ সে জানে এসব যদি এই লোক জানতে পারে তাহলে তারও বিপদ। মাহিশাকে খুন কে করেছে সেটা জেনেও তার বাবাকে বললো না দারোগা সাহেব। চেষ্টা করেছে সাজির ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেবার জন্য। আর সেটা এমনভাবে করেছে যেন তারা কেউ কিছু জানে না   দাদাজান যখন তাকে কল দিয়ে ঝাড়ি দিচ্ছিল তখন তিনি রাব্বির কথা বলে নাই৷ তবে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, আজকের মধ্যে দেশ ছেড়ে আপাতত দেশের বাইরে চলে যাবেন। কারণ ঢাকা শহরে নাকি ডিবি পুলিশ নিজেরাই এখন তদন্তের কাজে লেগেছে।  সেই মুহূর্তে দারোগা যখন বললো যে রবিউল সাজুকে নিয়ে এসেছে খুলনায়। তখন সঙ্গে সঙ্গে দেখা করতে রাজি হয়ে যায়, কিন্তু সে বুঝতেই পারলো না তাদের জন্য কতবড় বিপদ অপেক্ষা করে আছে সামনে।  - আমরা আর কতক্ষণ বসে থাকবো?  বললো মাহিশার বাবা।  - আপনি যখন জানতে পারলেন মাহিশাকে আমি কিডন্যাপ করেছি। তখন সরাসরি তাকে বাঁচাতে এলেন না কেন?  - তুমি কিডন্যাপ করেছ মানে?  - আপনি জানেন না সেদিন আপনার মেয়েকে বিয়ে বাড়ি থেকে রাব্বি নামের কেউ কিডন্যাপ করেছে।  - না, তারমানে তুমি সেই ছেলে?  - হ্যাঁ আমি, আপনার মেয়েকে নিয়ে আপনাদের গ্রামের বাগান বাড়িতে গেলাম। তারপর হঠাৎই যে আমাকে কাজটা দিয়েছে সে কল দিয়ে বললো যে মাহিশাকে খুন করা যাবে না। আমি অবাক হলাম ঠিকই কিন্তু বুঝতে পারিনি কিছু। আমার মনে হয় আপনি বুঝতে পেরেছিলেন কাজটা কে করাতে পারে তাই তাকে কল করেছেন।  - হ্যাঁ।  - তো আপনি কেন গেলেন না?  - কারণ তাকে আমি বুঝিয়ে বলার পরে সে আমাকে বলে যে মাহিশাকে আধা ঘণ্টার মধ্যে বাড়িতে পৌঁছে দেবে।  - আপনি বিশ্বাস করেছেন?  - এ ছাড়া উপায় ছিল না, কারণ আমার মেয়ে তো তখন আমার হাতে নেই।  - আমি আপনার মেয়েকে ঢাকায় নিয়ে গেলাম, সম্ভবত আপনি দাদাজানকে সব জানিয়েছেন।  - হ্যাঁ।  - যিনি আমাকে কন্ট্রাক্ট করেছেন তার সঙ্গে আপনার কিসের শত্রুতা? মানে আমি আপনাকে বলতে চাচ্ছি বদিউল আলম রিংকু বা আপনার মেয়ের যার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছিল। তার বোনের স্বামীর সাথে আপনার শত্রুতা কেন?  - বদিউল নিজেও আমাদের দলের একজন, সে যখন জানতে পারে মাহিশা আমার মেয়ে। আর তার সঙ্গে ওর শালার বিয়ে ঠিক হয়েছে তখন থেকে সে বাঁধা দিতে শুরু করে।  - আটকাতে না পেরে সে আপনার মেয়েকে দুনিয়া থেকে সরাতে চায় তাই তো?  - হ্যাঁ, তবে আরেকটা কারণ আছে।  - সেটা কি?  - আমি চেয়ারম্যান নির্বাচন করবো, বর্তমান রানিং যে চেয়ারম্যান সে বদিউলেল পরিচিত। তিনিও বদিউলের সঙ্গে হাত মেলায়।  - মাহিনের সঙ্গে বিয়ে দিলেই পারতেন।  - নিজের দলের ছেলের সঙ্গে বিয়ে কীভাবে দেই? এরকম একটা খারাপ ছেলের সঙ্গে আমার মেয়ে সংসার করবে?  - আপনার মতো খারাপ মানুষের সঙ্গে আপনার স্ত্রী যদি সংসার করতে পারে তাহলে আপনি মেয়ে কেন পারতো না?  - এসব তর্ক এখন করে লাভ কি?  - বদিউলকে মারতে চান?  - কত টাকা দিতে হবে?  - কোনো টাকা দিতে হবে না, কারণ তাকে আমি এমনিতেই মারবো।  - কেনো?  - কারণ সে আমাকে মিথ্যা কথা বলে মাহিশাকে খুন করিয়েছে, এটাই অপরাধ।  অসহায় হয়ে বসে আছে মাহিশার বাবা। অনেক বেশি ক্ষমতা থাকলেও এখন তিনি অসহায় কারণ তার বা দারোগার কারো কাছে পিস্তল নেই। অথচ রাব্বি তার হাতে একটা সাইলেন্সার লাগানো পিস্তল হাতে বসে আছে।  আবারও সেই ছোট্ট একটা শব্দ। দারোগা সাহেব নিস্তেজ হয়ে পড়ে যাচ্ছে। আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে আছে মাহিশার বাবা।  - আপনি জানতেন সাজু খুন করে নাই তবুও কেন তার নামে মামলা করেছেন ঢাকায়?  - বদিউল বলেছিল তাকে কেসের মধ্যে জড়াতে হবে।  - ততক্ষণে তো আপনার মেয়ে মারা গেছে তবে কেন বদিউলের কথা মানতে গেলেন? নিজের মেয়ের জন্য খারাপ লাগেনি?  - লেগেছিল, কিন্তু দলের মধ্যে অনেক কিছু তখন ঘরে গেল। দাদাজান নিজে মামলা করতে বলেন।  - কিন্তু আপনি কি জানেন সেই দাদাজান নিজে আবার পুলিশকে বলে তাকে মামলা থেকে বের করে নেয়?  - হ্যাঁ শুনেছি পরে।  - কারণ সে চেয়েছিল সাজু এসবের মধ্যে জড়িয়ে না যাক। কারণ সাজু জড়ালে বিপত্তি সৃষ্টি হবে, সবকিছু খোঁজাখুঁজি শুরু হবে।  - আমাকে ছেড়ে দাও তুমি।  - আপনারা সবাই বেঈমান, আমার বিশ্বাস যে আপনি চাইলে আপনার মেয়েকে বাঁচাতে পারতেন তাই না?  - হ্যাঁ।  - লোভ আর ক্ষমতার কারণে নিজের মেয়েকে বাঁচাতে পারলেন না। আফসোস।  - আমি বাঁচতে চাই।  - তাহলে আপনার মেয়ে কষ্ট পাবে, ওপাড়ে গিয়ে আপনার মেয়েকে আমার হয়ে সরি বলবেন। আমি ভুল করে তাকে মেরে ফেলেছি।  | | রাত আটটা।  হাতপা বাঁধা অবস্থায় মেঝেতে বসে আছে সাজু ভাই ও বদিউল আলম রিংকু। রিংকুকে সন্ধ্যা বেলা তুলে এনেছে রবিউল, কারণ দারোগা কিংবা মাহিশার বাবার মতো নিজের ইচ্ছায় সে আসবে না এটা জানা কথা।  লোকটা সেই তখন থেকেই ঘাবড়ে আছে, আর একটু আগে রুমের মধ্যে সাজুকে দেখে আরও বেশি ভয় পাচ্ছে। রবিউল তার মোবাইল বের করে পাশের রুমেই দারোগা আর মাহিশার বাবার লাশ পড়ে আছে সেটা দেখালো। বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইল বদিউল আলম।  সাজু ভাই রিংকুর দিকে তাকিয়ে আছে। রবিউল তাকে বলেছে সে অনেক চমকে যাবার মতো তথ্য তাকে জানাবে। শুধু সবকিছু চুপচাপ দেখতে হবে বসে বসে।  রবিউল তার মোবাইল বের করে ভিডিও ওপেন করে রাখলো। বদিউল আলম এখন যা কিছু বলবে সবটা রেকর্ড করা হবে।  - খুব সহজ প্রশ্ন, মাহিশাকে খুন করার জন্য আমার সঙ্গে মিথ্যা বলেছেন কেন?  বদিউল আলম চুপ করে রইল, সে এতক্ষণে বুঝতে পেরেছে তার মৃত্যু অবধারিত। কারণ এ পর্যন্ত অনেককেই মেরে ফেলেছে এই রবিউল। অথচ সে নিজেই এই মরণ খেলার শুরু করেছে ভাড়া করে। তখন যদি জানতো এতকিছু হয়ে যাবে তাহলে হয়তো কোনদিনই করতো না।  রবিউল তাকে অনেক গুলো প্রশ্ন করলো কিন্তু কোনো জবাব দিল না বদিউল৷ রবিউল তখন সাজুর দিকে তাকিয়ে বললো,  - আশা করি একে থানায় নিয়ে আপনারা সবটা স্বীকার করাতে পারবেন। চিন্তা করবেন না, সে যদি টাকার ক্ষমতা দিয়ে বের হয়ে যায় তাহলে আমি তাকে মারবো। আপাতত একে আপনার হাতে দিয়ে আমি বিদায় নিচ্ছি।  - সাজু আস্তে করে বললো, তোমার এতগুলো খুন করা ঠিক হয়নি রাব্বি।  - সেই হিসেবটা আমাকে করতে দেন সাজু ভাই। আপনার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না, একটা ভুল তথ্যের কারণে আজকে এতটা হয়ে গেল। তাই যতটুকু সম্ভব ভুল শোধরানোর চেষ্টা করছি। আমি ঠিকই ভালো থাকবো আর এ দেশেই আমি থাকবো।  - এতদিন ধরা পরতেই হবে।  - কে ধরবে? আপনি?  - কেউ না কেউ।  - একটা পরামর্শ দিচ্ছি।  - কি?  - আপনি ডিবিতে চাকরি নেন কিংবা ভালো কোনো গোয়েন্দা সংস্থায়। কারণ আজকাল ক্ষমতা ছাড়া কিছু করা যায় না। আপনি যেভাবে কাজ করেন তাতে নিজের জীবনের অনেক ঝুঁকি থাকে সাজু সাহেব।  কিছুক্ষণ আগে দারোগা আর মাহিশার বাবার সঙ্গে বলা কথোপকথনের ভিডিও করা মেমোরি কার্ডটা সাজু পকেটে ঢুকিয়ে দিল। তারপর রুম থেকে বের হবার সময় বললো,  - আমি থানায় খবর দিচ্ছি, তারা এসে আপনাকে উদ্ধার করবে আর এই লোকটাকে গ্রেফতার করে নেবে। আপনার কাছে এই ভিডিওতে অনেক তথ্য আছে যেগুলো কাজে লাগবে। আপনি যদি ডিবি পুলিশে যোগ দেন তাহলে আবার হয়তো দেখা হবে আমাদের।  রবিউল বের হয়ে গেল, মুখে কসটেপ দিয়ে আটকানো বদিউল আলমের দিকে ঘৃনার চোখে তাকিয়ে রইল সাজু ভাই। এই লোকটা তাকে নিয়োগ করেছিল এই মামলায়, অথচ সেটা ছিল পরিকল্পিত।  দারোগা, মাহিশার বাবা, তারপর এরা সবাই যার যার স্থান থেকে নিখুঁত অভিনয় করেছেন।  কাঁধে ছোট্ট একটা ব্যাগ নিয়ে রবিউল আবারও রুমে এলো। তার হাতে একটা কাপ। সেটা এগিয়ে দিয়ে বললো,  - আপনার প্রিয় " এক কাপ ঠান্ডা কফি " ভয় নেই এতে কিছু মিশিয়ে দেইনি। পুলিশ এলো তারা যখন হাতের বাঁধন খুলে দেবে তখন কফিটা খেয়ে নিবেন। ভালো থাকবেন সবসময়।  রবিউল বেরিয়ে গেল, সাজু ভাই তার চলে যাবার দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর সে তাকিয়ে রইল তার সামনে। যেখানে রাখা আছে রবিউল 'র রেখে যাওয়া " এক কাপ ঠান্ডা কফি "।  ( সমাপ্ত )  যদি কোনদিন সুযোগ হয় তাহলে দাদাজান ফিরে আসা আর পরবর্তী আরেকটা মিশন নিয়ে এই গল্পের সিজন টু করতে পারি। তবে সত্যি সত্যি যদি সেটা করি তাহলে আগে থেকেই সবগুলো পর্ব লিখে তারপর পোস্ট করা হবে। কারণ প্রতিদিন লিখে লিখে পোস্ট করতে গেলে আপনাদের অনেক দিন অপেক্ষা করাতে হয়।  লেখাঃ- মোঃ সাইফুল ইসলাম।
Parent