সৌরভ - অধ্যায় ১৫

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-41647-post-5188014.html#pid5188014

🕰️ Posted on March 30, 2023 by ✍️ cuck son (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1826 words / 8 min read

Parent
সন্ধার সময় আবারো চারিদিক নিস্তব্দ , ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকের শব্দ অবশ্য আছে । কিন্তু গত দুই দিনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি । এই শব্দটাকে আর আলাদা কিছু মনে হয় না । মনে হয় এটা গ্রাম্য সন্ধার নিস্তব্দতার একটা অংশ । এতো দ্রুত এই ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দের সাথে মানিয়ে নেয়া কি কোন কিছু ইংগিত করছে ? আমার কাছে কিন্তু তাই মনে হচ্ছে । মনে হচ্ছে আমার মন শরীর আপোষ করতে চায় । যেই আপোষ আমি লীলার জন্য করতে পারিনি সেই আপোষ এখন বিনা সর্তে কবুল করতে রাজি আছে আমার মন ।   বার বার “আমার মন” “আমার মন” বলছি  , আমার মন কি আমি নই ? এসবের মুলেই কি আমি নই । মতিন সুধু ট্রিগার টিপে দিয়েছে । বাকি সবটাই তো আমি করছি । ধরি মাছ না ছুই পানি টাইপ একটা স্ট্রাটেজি আমি ফলো করছি । দোষ চাপাচ্ছি মতিনের ঘাড়ে ।     আচ্ছা সফিকুল লোকটা কই ? আজকে সকাল থেকেই লোকটাকে দেখলাম না । মতিন ও নেই , হচ্ছে টা কি আমার চারপাশে । আর আমিও সারাদিন কি সুন্দর কাটিয়ে দিলাম ! এসব নিয়ে চিন্তাই করলাম না । মতিন আমাকে এভাবে একা ফেলে কোথায় যাবে । ওর কি চিন্তা হচ্ছে না যে আমি পালিয়ে যেতে পারি !! নাকি ও বুঝে গেছে আমি পালাবো না । এতটাই কি প্রকাশ পাচ্ছে আমার ইচ্ছা !!! আর সফিকুল উনিও আর এলেন না আমার সামনে । হয়ত লোকটা লজ্জা পাচ্ছে ।   গত রাতে উনিও ঘুমান নি , সারারাত গুন গুন করেছনে । যতবার ঘুম থেকে উঠেছি ততবার আমি ওনার শব্দ পেয়েছি । আমি নিশ্চিত ধর্ম গ্রন্থ আওড়াচ্ছিলেন । লোকটা কি লজ্জিত ,  পাপ করেছে ভেবে সারা রাত ঘুম হয়নি ওনার? তাহলে আমার কেন ঘুম হয়নি ? আমিও পাপ করছি এই ভেবে কি?   কিন্তু কি পাপা করছি আমি ? আমার শরীরে অধভুত এক রোগ আছে , সেটা কাউকে বলছি না এটাই আমার পাপ । আমার এখন কি করা উচিৎ ? চলে যাওয়া ? সেটাও কি ভালো কাজ হবে? না মনে হয় ?   ইচ্ছা হচ্ছে মেয়েটার সাথে একবার দেখা করি , দেখা করে বলি , জানো আমার একটা কঠিন রোগ আছে , কিন্তু এই রোগ প্রাণঘাতী নয় । মাঝে মাঝে অজ্ঞান হয়ে যাই । মতিনের বিশ্বাস তোমার সাথে বিয়ে হলে আমার রোগ সেরে যাবে । আজকাল আমার ও তাই মনে হচ্ছে ।    মেয়েটা কি করবে ? বাড়িতে গিয়ে সবাইকে বলে দেবে নিশ্চয়ই? গ্রামের মেয়ে বয়স কম , এর চেয়ে বেশি আর কি বা আশা করা যায় ।     আচ্ছা এতটা ডেস্পারেট কেনো হচ্ছি আমি ? লীলার সময় তো এমন মনে হয়নি ? লীলা তো চলে এসেছিলো , আমিই ওকে দূরে ঠেলে দিয়েছিলাম । ভেবেছিলাম মেয়টা কেন সারা জীবন দুঃখ করবে । তাহলে নিলুফারের জন্য আমার  সেই ধরনের সহানুভূতি কাজ করছে না কেনো? আমার এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে কি সফিকুলের কাছ থেকে শোনা ওই কথাটার কোন প্রভাব আছে?  ওই কথা শোনার পর কি আমি মন স্থির করেছি যে আমি বিয়ে করবো, খুঁতে খুঁতে কাটাকাটি । আচ্ছা মেয়েটি কুমারি নয় এটা কি কোন খুঁত?  কুমারিত্ব যদি খুঁত হয় তাহলে তো আমার ও সেই খুঁত আছে । আমার খুঁত দুইটা হলো তাহলে । খুঁতে খুঁতে কাটাকাটি হয়েও একটা অবশিষ্ট রয়ে গেলো ।  তাহলে কি আমার এই বিয়ে করা ঠিক হবে ?     হঠাত পেছন থেকে ডাক শুনলাম “এই যে শুনছেন” । পেছন দিকে তাকিয়ে দেখলাম কিশোর ছেলেটি দাড়িয়ে যে নিজেকে নিলুফারের ভাই হিশেবে পরিচয় দিয়েছিলো । ছেলেটি একটু দুরে আবছা আলোতে দাড়িয়ে , আমি নিজেকে দেখিয়ে ইশারা করলাম । আমাকেই ডাকছে কিনা শিওর হয়ে নিলাম ।  নিলুফারের ভাই ও ইশারাতেই উত্তর দিলো , হ্যাঁ আমাকেই ডাকছে।   বুঝলাম উঠে যেতে হবে আমাকে , ছেলেটা আমার কাছে আসবে না । ছেলেটার আচরণে একটা লুকুচুরি ভাব আছে , মনে হচ্ছে সে কোন এডভেঞ্চারে নেমেছে । এবং সেই এডভেঞ্চারের আমিও একটা অংশ । উঠে গেলাম ছেলেটির কাছে , বসে বসে এসব ভাবার চেয়ে এডভেঞ্চারে অংশগ্রহণ করা ভালো ।   “আপনি একটু আমার সাথে আসেন” এর বেশি আরও কোন কথা বলল না কিশোর ছেলেটি । আশেপাশে একবার তাকিয়ে নিলো কেউ দেখছে কিনা দেখে নিলো । ছেলেটির এমন সতর্কতা আমাকেও আক্রান্ত করলো ছোঁয়াচে রোগের মতন । আমিও একবার চারপাশ দেখে নিলাম , নাহ কেউ দেখছে না আমাদের ।   আমি ছেলেটির পেছন পেছন হাঁটছি , আমার মনে প্রশ্ন থাকলেও করতে সাহস পাচ্ছি না । মনে হচ্ছে এখন কথা বলার মুডে নেই নিলুফারের ভাই , কথা বললেই এডভেঞ্চার শেষ ।  শেষে ছেলেটি আমাকে একটি নিরব জংলা জায়গায় নিয়ে এলো । সেখানে আগে থেকেই একজন উপস্থিত আছেন । মাঝারি গড়নের মাথায় ওড়নার ঘোমটা দেয়া একজন নারী ।   কিশোর ছেলেটি আমাকে সেখানে পৌঁছে দিয়ে একটু দুরে চলে গেলো । আমি দাড়িয়ে রইলাম সেই নারী মূর্তির সামনে ।      “ আমার নাম নিলুফার , আপনার সাথে আমার বিয়ের কথা চলছে” প্রথমে কথা বলল সেই নারী । নাহ মতিনের কাছ থেকে নিলুফারের কথা শোনার পর যেমন কল্পনা করেছিলাম তার সাথে এই নিলুফারের কোন মিল নেই । নত মুখি গ্রামের লজ্জা রাঙ্গা মেয়ে এই নিলুফার নয় । বরং বিপরীত মনে হচ্ছে ।   এমন হঠাত করে এগিয়ে এসে এমন করে নিজের পরিচয় দেয়ায় আমি একটু ভরকেও গেলাম । মানুষ যেমন আশা করে তার বিপরীত কিছু দেখলে যেমন কিছুক্ষণের জন্য ভড়কে যায় তেমনি হলো । তাই কিছুক্ষন কিছু বলতে পারলাম না , কিছু একটা বলা উচিৎ সেটা বুঝতে পারছি , কারন নিলুফারের আয়ত চোখ দুটো আমার দিকে কোন কিছু শোনার প্রত্যাশা নিয়েই তাকিয়ে আছে। “আমি সৌরভ আহমেদ” সুধু এটুকুই বলতে পারলাম ,   “ জী আপনার নাম শুনেছি আমি , এবং আপনাকে চিনিও । এই দুই দিন আপনাকে দেখেছি আড়াল থেকে । আসলে আমি ভেবেছিলাম আপনি আমাকে দেখতে চাইবেন , অথবা কথা বলতে চাইবেন , কিন্তু আপনি এর কিছুই করলেন না , তাই দুটো কথা বলার জন্য আপনাকে এই কষ্ট দিলাম”   বেশ লজ্জা পেলাম নিলুফারের কথায় । মেয়েটি কি আমাকে হাভাতে ভাবছে , একবার দেখতে চাওয়া কি উচিৎ ছিলো আমার? ছিঃ ছিঃ কি ভাবছে মেয়েটা , নিশ্চয়ই ভাবছে বিয়ে করার জন্য এতই উতলা হয়ে আছি যে , যাকে বিয়ে করার কথা হচ্ছে তাকে একটিবার দেখতে পর্যন্ত চাইলাম না , দুটো কথা বলে জানাশোনার ব্যাপার তো দুরের কথা । উল্টো উপায় না দেখে মেয়েটিই আমার সাথে দুটো কথা বলার জন্য ডেকে পাঠালো ।   উত্তরে কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না , এমন লজ্জায় মনে হয় কোনদিন পরিনি । একবার ভাবলাম বলি যে আমি এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেই নি , যদিও কথাটা আংশিক সত্য । কিন্তু এতটুকু বুদ্ধি আমার আছে যে এমন কথা সরাসরি বলা ঠিক হবে না । তাই দোষ কাটানোর জন্য বললাম “ আসলে আমি ভেবেছিলাম মতিন এলে একবার এই কথা বলবো”   কথা শুনে নিলুফার একটু হাসল , মেয়েটির চেহারায় একি  সাথে মায়া আর কাঠিন্য খেলা করে । হাসির কারনে কাঠিন্য কিছুটা কমজোর পরে গেলো । উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণনের মুখটা বেশ মায়াবতী মনে হলো ।     “ ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে যাবে , মতিন ভাই শহরে গিয়েছেন শপিং করার জন্য, আগামিকাল বাদ যোহর আমাদের বিয়ে” এবার একটু শব্দ করে হাসল নিলুফার । তবে এই হাঁসিতে মায়া নেই , বরং এই হাসির সময় ওর কঠিন অংশটা মায়ার উপর চড়াও হলো ।   “ তাই নাকি আমি তো এসবের কিছুই জানি না” বেশ অবাক হয়ে বললাম আমি ।   “ সেটা আমি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম , মতিন ভাই এমনি , উনি আমার আব্বা আম্মা কে এমন ভাবে বুঝিয়েছেন যে আপনার অনেক লজ্জা , তাই আপনি দেখা দেখির মাঝ দিয়ে যাবেন না। তবে আমার লজ্জা একটু কম তাই আমার কিছু বলার আছে”   “ আমিও কিছু বলতে চাই?”  আমিও পিছিয়ে থাকতে চাই না , এমন ভাব ধরেই কথা গুলো বললাম ।   “ ঠিক আছে তাহলে বলুন”   “ না না আপনি ই আগে বলুন” একবার ভাবলাম তুমি করে বলি , পরে সেই চিন্তা বাদ দিলাম   “ ওকে ঠিক আছে , আমিই বলছি” এই বলে নিলুফার নিজের শরীরের ভার ডান পা থেকে সরিয়ে বাম পায়ের উপর দিলো , তারপর আবার বলতে শুরু করলো “ দেখুন মতিন ভাই অনেক মিথ্যা বলে , তবে আপনি যে সহজ সরল সেটা মিথ্যা বলেনি , সহজ সরল না হলে আপনি এই ঘটনা আগেই জেনে যেতেন , আমার একটা অতীত ইতিহাস আছে , ইতিহাস বলছি এ কারনে যে গ্রামের সবাই এটা জানে , এবং নতুন কেউ এলে তাদের কাছে বলে দেয় , আপনি কি করে বাদ গেলেন সেটাই অবাক করা ব্যাপার, আমি যখন উচ্চমাদ্ধমিকে পড়ি তখন একটা ছেলের সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো , এবং আমরা বাড়ির অমতে শহরে চলে গিয়েছিলাম , ছেলেটির সাথে আমার বিয়ে হয়েছিলো , এবং ছয় দিনের মত সেই বিয়ে স্থায়ী হয়েছিলো । সাত নাম্বার দিনের শুরুতে ছেলেটি সকালের নাস্তা আনার কথা বলে সেই বেরিয়েছিলো আর ফিরে আসেনি”   নিলুফার কথা গুলো বলে বেশ অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে , অবাক হওয়ার কারন আমি কোন প্রতিক্রিয়া দেখাইনি। সফিকুল সাহেবের কাছে কিছুটা আগেই আমি শুনেছি । তাই ডিটেইল শুনে আমার তেমন কোন প্রতিক্রিয়া হলো না ।   “ আপনার ইতিহাস শুনলাম , তবে আমি যেটা বলবো সেটা ইতিহাস নয় , আমার বর্তমান , আমার একটা অসুখ আছে , অসুখটার নাম বলতে পারবো না , আমার মনে থাকে না । আমি মাঝে মাঝেই অজ্ঞান হয়ে যাই । মাঝে মাঝে দীর্ঘ সময় অজ্ঞান থাকি, মতিন নিশ্চয়ই এসব কথা আপনাকে বা আপনাদের বলেনি?”   “ না বলেনি , আব্বা আম্মা কে বলেছে কিনা জানি না , আর বলে থাকলেও ওনারা হয়ত কিছু মনে করবে না” এইটুকু বলে থামল নিলুফার , তারপর আবারো বলতে শুরু করলো “ দেখুন আপনি অসুস্থ এটা জানার পর ও হয়ত আমার বাবা মা আপনার সাথে আমার বিয়ে দেবে , কিন্তু আমি এই বিয়ে করতে চাই না , দুই বছরে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে বিয়ে করার ইচ্ছা চলে গেছে , মেয়ে মানুষ হচ্ছে দুধের মতন , আর বদনাম হচ্ছে লেবুর রস । দুধের সাথে লেবুর রস মিশলে  সেটা আর দুধ থাকে না , এমন নয় যে সেই দুধ ব্যাবহার করা যায় না , ব্যবহার করা যায় , তবে সেটা দুধ হিসেবে নয় ছানা , রসগল্লা , দই এসব নামে। ঠিক তেমনি মেয়ে মানুষের জীবনে একবার কলঙ্ক লাগলে তাকে বৌ করা যায় না , তবে অন্য আরও অনেক নামে তাকে ব্যাবহার করা যায়”   গ্রামের মেয়ে নিলুফারের মুখে এমন কথা শুনে আমি একটু ভড়কে গেলাম দ্বিতীয়বারের মতন । আমি কি বলবো ভেবে নিচ্ছিলাম , এসব জানার পর ও তোমাকে বিয়ে করতে চাই । এই ধরনের কথা বলতে গিয়েও থেমে গেলাম । কেনো বলবো এমন কথা , এই মেয়েকে আমি চিনও না তার প্রতি এই ধরনের সহানুভূতি দেখানর কি মানে , অবশ্য যদি একে সহানুভূতি বলা যায় ।   একটা মেয়েকে চিনি না জানি না তার একটা অতীত ইতিহাস মেনে নিয়ে তাকে গ্রহন করা আমার কাছে বেশ বেখাপ্পা মনে হচ্ছে । কেন করব ? এই প্রশ্নটা বার বার মনে আসছে । আর যদি করিও , নিলুফার কি ভাবাবে ? ও কি আমাকে এটা করতে দেবে ? উত্তর টা নিলুফার নিজেই দিয়ে দিলো অবশ্য আমাকে আর চিন্তা করতে হলো না   “ দেখুন , আপনি অনেক ভালো মানুষ বলে মনে হচ্ছে , হয়ত আপনি আমার অতীত জেনেও এই বিয়েতে রাজি হবেন , কিন্তু আমি নিজে রাজি না , আমি এই বিয়ে করবো না , বিয়ে আমি করবো না এমন নয় , হয়ত করবো , যদি এমন কারো সাথে কোনদিন দেখা হয় যার সাথে এমন সম্পর্ক তৈরি হয় ঠিক যেমন সমর্পক আমার ওই ছেলেটির সাথে ছিলো তাহলেই আমি বিয়ে করবো , তখন আমি আমার অতীত নিয়ে ভাব্বো না , আসলে ওটা ভাবার বিষয় ও না, কিন্তু সে জন্য সঠিক মানুষ দরকার , আপনি সেই সঠিক মানুষ নন”   এই বলে নিলুফার আর দাঁড়ালো না , চলে গেলো । একটি বার ও পেছন ফিরে তাকালো না …… আমার বা হাত কাঁপছে , মাথা ঝিম ঝিম করছে , হ্যাঁ আমি সেই মানুষ নই …………
Parent