স্বামীর কল্পনা স্ত্রীয়ের যন্ত্রণা - অধ্যায় ৪
৪ (চার) ----
সুচরিতা অনুর হাত সরিয়ে জিজ্ঞেস করলো , "কি হয়েছে রিমা , আমাকে বল। "
অনুরিমার চোখ ছল ছল করছিলো। সে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো , "আমি কিভাবে তোকে বলবো বুঝতে পারছি না রে। আমার খুব লজ্জা করছে। সমীর ইস টোটালি চেঞ্জড নাও। "
"শোন্ রিমা , আমাকে বলা মানে তোর নিজের আয়না কে বলার সমান। কাম অন রিম্স , we used to be best buddies during our college days । তুই কি সব কথা ভুলে গেছিস। আমরা একে অপরের কাছ থেকে কোনো কথা গোপন করতাম না। we shared everything. তাহলে আজ কি হলো তোর ?"
"প্রমিস কর , তুই এই কথা গুলো কাউকে বলবি না। "
"আমি কাকেই বা বলতে যাবো বল। "
"ইদানিং সমীর খুব অদ্ভুত চিন্তা করতে শুরু করেছে। আমি ভাবতেও পারিনি , ও কখনো আমার সম্পর্কে এরকম ভাবনা পোষণ করবে ! "
"কি ভাবছে ? কি ওর ভাবনা ?"
"ওর একটা ফ্যান্টাসি রয়েছে। .."
"কি ?"
অনুরিমা গলার আওয়াজ নিচু করে বললো , "তুই কাকোল্ড সম্পর্কে শুনেছিস ?"
"আঃহ্হ্হঃ। ..", সুচরিতা অবাক হয়ে মুখে হাত দিয়ে বসলো, তারপর বললো , "সিরিয়াসলি ! সমীর সত্যি এখন এসব ভাবছে ?"
অনুরিমা মাথা নিচু করে বসে রইলো। সুচরিতা কিছুটা সেকেন্ড নিজেকে সামলে নিয়ে অনুরিমার হাত ধরে জিজ্ঞেস করলো , "তা তুই কি ভাবছিস ওর এই ফ্যান্টাসিটা কে নিয়ে ?"
"মানে ? তুই বলতে কি চাইছিস ?", অনুরিমা হঠাৎ সুচরিতাকে ঝাঁঝিয়ে কথাটা বললো।
"রিল্যাক্স , এতো উত্তেজিত হোসনা। একটু প্র্যাক্টিক্যাল হও। দেখ এটা তো সত্যি যে সমীরের মাথায় এই কথাটা এসছে , তুই নিজেই সেটা বললি। আর তোর রিঅ্যাকশন দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে তুই এসব কথা নিজের কল্পনাতেও আনতে পারিস না। তাই তো ? "
অনুরিমা চুপ করে রইলো। সুচরিতা বললো , "এবার বল , সমীর কি তোকে ফোর্স করছে এসবের জন্য ?"
"নাহঃ , ও এই কথাটা শুধু একবারই তুলেছিল। তারপর আমি এমন অশান্তি করেছি যে দ্বিতীয়বার বলার সাহস পায়নি আর। "
"ব্যাস , তাহলে তো ঝামেলা মিটেই গেলো। "
"কিন্তু , তারপর থেকে ....."
"তারপর থেকে কি ?"
"তারপর থেকে আমাদের সম্পর্কের তার টা কেমন জানি কেটে গ্যাছে মনে হচ্ছে। ও ভয়ে একথা আর তুলছে না ঠিকই , কিন্তু আমি বেশ বুঝতে পারছি , এই ব্যাপারটা ও এখনো নিজের মাথা থেকে নামাতে পারেনি। আর এতে মনে মনে ও অশান্তিতে ভুগছে , আর আমিও। আমাদের মধ্যে এখন বেশ কয়েকদিন ধরে ঠিক মতো কথাও হচ্ছেনা। "
"তাহলে তুই ওর সাথে কথা বল। বলে দ্যাখ ওর ভেতরে এখন কি চলছে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোনো ব্যাপার নিয়ে টানাটানি চললে সেটা কে ঝুলিয়ে রাখতে নেই। আমাকে তো দেখছিস , আমি ঘর পোড়া গরু। "
সুচরিতার কথা শুনে অনুরিমা ঠিক করলো যে সে আজই নিজের স্বামীর সাথে বসবে , এবং বসে কথা বলে সবকিছু ক্লিয়ার করে নেবে। সেই মতো রাতে অনুরিমা সমীরের কাছে গেলো , এবং ওদের কথোপকথন শুরু হলো।
"কি ভেবেছো ? মাথা থেকে ভূতটা নেমেছে তোমার ?"
"তুমি কিসের কথা বলছো ?"
"বুঝতে পারছো না , তোমার সেই ফ্যান্টাসির কথা বলছি। "
সমীর প্রথমে ভাবলো অনুরিমা কে কি জবাব দেবে সে। তারপর ঠিক করলো যে যা হওয়ার দেখা যাবে , কিন্তু সে নিজের কাছে এবং নিজের স্ত্রীয়ের কাছে সৎ থাকবে। তাই সে বললো , "দেখো অনুরিমা , আমি জানি আমার এসব জিনিস ভাবা অপরাধ। কিন্তু আমি তো শুধু এটা তোমাকেই বলেছি , আর কাউকে তো নয়। আমাদের বিয়ের প্রায় এক দশক হয়ে গেছে। আমরা দুজনেই সংসারের নিত্যকার ঝুট ঝামেলার মধ্যে ফেঁসে আছি। তারপরও যেটুকু সময় পাই, আমি যদি ভুলবশত সে সময়ে তোমায় নিয়ে অন্য কিছু ভেবেও থাকি , তাতে আমি কি খুব বড়ো অপরাধ করে ফেলেছি ?"
"তুমি বুঝতে পারছো না , তোমার এই ভাবাটা কতোটা বিষাক্ত ভাবনা ? এরকম কেউ ভাবে নিজের স্ত্রীকে নিয়ে ? ছিঃ। "
"তুমি কি এখন আমাকে ঘেন্না করতে শুরু করেছো ?"
"করবো না ? নিজেকে কোথায় এনে নামিয়েছো তুমি নিজেই সেটা দেখো , এবং বোঝার চেষ্টা করো। "
"অনু , এটা শুধু আমার একটা ফ্যান্টাসি , সেক্সউয়াল ফ্যান্টাসি। "
"ফ্যান্টাসি মানে তো কল্পনা , আর কল্পনা মানে ভাবনা। তুমি আমাকে অন্য কারোর সাথে ভেবেছো ! এটা কি করে ভাবতে পারো তুমি ? আমি তোমার স্ত্রী সমু। নিষিদ্ধ পল্লীর কোনো পতিতা নই। "
"অনু , তুমি কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি করছো ! তুমি এসব কি বলছো ?"
"তাহলে আর কি বলবো , বলো ? তুমি হয়তো মনে মনে চেয়েইছো আমাকে অন্য কারোর সাথে শুতে দেখতে ! নিজের কল্পনাকে বাস্তবে রূপায়ণ হতে দেখতে। একবার ভেবে দেখো সমু , কোনো স্বামী কি এটা চাইতে পারে ? তার উপর তুমি এতো পোসেসিভ স্বামী ! এখন কোথায় গেলো সেইসব পোসেসিভনেস তোমার ? সমু আমার দিকে চেয়ে দেখো , আমি তোমার স্ত্রী , অনুরিমা বসু মল্লিক , এই মল্লিক পরিবারের বউ , সমীর মল্লিকের স্ত্রী। আমি কোনোদিনও নিজের স্বামী ব্যাতিত অন্য কারোর কথা নিজের কল্পনাতেও আনিনি। কলেজ লাইফে প্রথমবার প্রেমে পড়ি , তাও সেটা তোমারই প্রেমে। তুমি আমার প্রথম এবং শেষ প্রেম। তুমি ছাড়া আর অন্য কোনো পুরুষ আমার জীবনে কোনোদিনও আসেনি, আর আসবেও না। এই কথাটা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নাও তোমার। "
এই বলে অনুরিমা মুখ ঘুরিয়ে ঘুমোতে চলে গেলো। সেদিন সমীরও কিছু বললো না আর। সেই রাতটাও স্বামী স্ত্রীর মধ্যেকার অমীমাংসিত ঝামেলার সাক্ষী হয়ে থেকে গেলো।
অনুরিমা ঠিক করলো সে সুচরিতার সাথে আবার দেখা করবে , এবং এই বিষয় নিয়ে কথা বলবে। কারণ এই কথা তো সে আর অন্য কাউকে বলতে পারবে না। একমাত্র সুচরিতাই আছে যাকে সে শেয়ার করতে পারবে।
বিকেলে অনুরিমা গেলো সুচরিতার সাথে দেখা করতে নন্দনের কাছে মোহরকুঞ্জে। সুচরিতা একটা কাজে অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে এসছিল। যেমনটা আগে বলেছি ডিভোর্সের পর সুচরিতা এখন স্বাধীন ঝাড়া হাত-পা হয়ে যাওয়া একজন নারী। চাকরির সাথে সাথে সে টুকিটাকি শিল্প-সাহিত্য নিয়েও চর্চা করতে থাকে। যাই হোক , দুই বান্ধবীতে আবার বসলো গল্প করতে।
"কি রে , হঠাৎ করে এতো জরুরি তলব ? আমি যখন দেখা করতে বলি তখন তো নিজের সংসারের হাজার একটা বাহানা দিস। শশুর-শাশুড়ি বাড়িতে থাকবে না , তিন্নির টিউশন আছে , সমীরের এই হয়েছে , ওই হয়েছে , আরো কতো কি। আর এখন ? আমি অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে এসছিলাম , একটা এক্সহিবিশন ছিল। পুরোটা না দেখেই বেরিয়ে এলাম , তোর জন্য , তোকে টাইম দিয়ে রেখেছিলাম বলে। "
"আই এম সরি রে ", এই বলে অনুরিমা মাথা নিচু করে চোখের জলটা মুছে নিলো।
"হেই , কি হয়েছে তোর ? সব ঠিক আছে ? আরে আমি তো জাস্ট এমনি বললাম , কিছু মনে করিসনা প্লিজ। তোর জন্য তো আমার জান হাজির , মাই ডার্লিং !"
"কিচ্ছু ঠিক নেই রে !"
"তুই কি সমীরের সাথে সেই ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলেছিলিস ? আই মিন ওর সেই ফ্যান্টাসি-টা নিয়ে ?"
"হুমঃ। .."
"তা কি হলো , তারপর ?"
"কি আর হবে ?"
"ও কি এখনো চায় এসব করতে ?"
"মুখে কিছু বলছে না , তবে ওর হাব-ভাব দেখে কেন জানিনা আমার সেরকমই কিছু মনে হচ্ছে। "
"তা তুই কি ঠিক করলি ? "
"মানে ?"
"মানে , তুই কি ওর ফ্যান্টাসিটা কে এনকারেজ করবি ?"
"তুই কি পাগল হয়েছিস ? আমি এসব কথা নিজের দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারিনা ! হাও কুড ইউ সে দিস ?"
"দেখ তুই হয়তো ভাবতে পারিস না , বাট অনেকে ভাবে , এবং ইমপ্লিমেন্টও করে। "
"কি বলছিস তুই এসব !"
"ওই জন্যই বলি ডার্লিং , ঘর সংসার থেকে একটু বেরো , বেড়িয়ে দুনিয়াটা কে দেখ। এটা এখন সোশ্যাল মিডিয়ার এক ভার্চুয়াল দুনিয়া। এই সমাজে এখন অনেক কিছু হয় , লোক চক্ষুর আড়ালে। "
"সে যাই হোক না কেন , আমি ওসবের মধ্যে একদম নেই। "
"তা তুই নাই বা থাক, কিন্তু জানতে তো কোনো অপরাধ নেই। "
"তুই হেয়াঁলি না করে , সোজাসুজি বলবি , এক্সাক্টলি কি বলতে চাইছিস। "
"খুব সিম্পল। তোরা একটা সেক্সওলজিস্ট এর সাথে কনসাল্ট কর। দেখ তুই চাসনা এসব করতে , সমীর মনে মনে হয়তো চায় , কিন্তু ভয়ে তোকে খোলাখুলিভাবে বলতে পারছে না। এভাবে মনে মনে দ্বন্দ্ব চললে তো তোদের স্বামী স্ত্রী সম্পর্কের মধ্যে তো ফাটল ধরে যাবে , সেটা নিশ্চই তুই চাইবি না। তোকে একটা ডিসিশন নিতে হবে। হয় তুই সমীরের ফ্যান্টাসিটা কে অ্যাপ্রুভ করে সেটা কে সত্যি করবি , আর নতুবা সমীরকে ওই ফ্যান্টাসির মোহঃ মায়া থেকে সরিয়ে আনবি। আমি জানি তুই সেকেন্ডটাই করার চেষ্টা করবি। প্রথম অপশনটা তোর সামনে রাখা বৃথা। তবে যেটাই হোক না কেন , বোথ অফ ইউ শুড হ্যাভ কনসাল্ট উইথ আ সেক্সওলজিস্ট ফর দিস পারপাস। আমার এক বন্ধু সেক্সওলজিস্ট , নাম ডক্টর রাজীব রায় , আমাদেরই বয়সী। আমি ওর নাম্বার তোকে দিচ্ছি। তুই বললে আমি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিতে পারি। "
"রাজীব রায় , ছেলে তো। ওকে কি করে বলবো সব। "
"কাম অন অনুরিমা , সেক্সওলজি বিভাগে তুই দেশে ক'জন মহিলা ডাক্তার কে পাবি বল তো ? আর সে তো তোর পরিচিত নয় , তোরা যাবি নিজেদের সেক্সউয়াল প্রবলেম নিয়ে কথা বলতে , ও ডক্টর , ওর এটাই পেশা , এইসব সমস্যা নিয়ে ডিল করা। সো অতো হিচকিচাস না। "
"কিন্তু সমীর রাজি হবে ? "
"আলবাত হবে। এখন তুই ডমিনেটিং পজিশনে আছিস , আর ও নিজের মরমে মরছে। তুই যদি এখন ওকে চাঁদেও যেতে বলিস , ও তোর সাথে সেখানেও যেতে রাজি হয়ে যাবে। শুধু বলিস না , আমি তোকে ডাক্তারের নম্বরটা দিয়েছি। বলবি তুই ইন্টারনেট থেকে সার্চ করে পেয়েছিস। আমিও রাজীবকে বলে রাখবো যে ও যেন সমীরের সামনে আমার নাম না নেয়। আমি জানি সমীর আমাকে পছন্দ করেনা , সেই কলেজ এর টাইম থেকেই। আমি আসলে ঠিক ওর টাইপের মেয়ে নই , তাই ওর চোখে আমি সবসময়ে একটা বাচাল , উৎশৃঙ্খল মেয়ে ছিলাম , এবং অ্যাম প্রিটি সিওর এখনও ওর ভাবনাটা আমার প্রতি ওরকমই রয়েছে। আসলে এতে আমি সমীরের দোষ দেখিনা, এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েদের জন্য কিছু গতে বাধা নিয়ম রয়েছে , যেগুলো আমি কোনোদিনই মানিনি। তাই বেশিরভাগ পুরুষেরই চক্ষুশূল আমি , তা সে সমীর হোক বা আমার স্বামী আদিত্য , সরি প্রাক্তন স্বামী। "