সৃষ্টি (সমাপ্ত) - অধ্যায় ১৩

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-38436-post-3592923.html#pid3592923

🕰️ Posted on August 13, 2021 by ✍️ Bumba_1 (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1332 words / 6 min read

Parent
মেশিন মিতাশা লেখা এবং প্রচ্ছদ :- বুম্বা মিতাশা ছোটো মেয়ে, সাত বছরের, আজকে সে খুব খুশি .. ওর পিসি আসছে কটক থেকে। পিসিকে এর আগে ও কখনো দেখেনি, এই প্রথম দেখবে। ও তো থাকে বাবা-মায়ের সঙ্গে। ওর নিজেরও কোনো ভাইবোন নেই আর বাবারও কোনো ভাইবোন নেই। উপরের ফ্ল্যাটে থাকে ঠাম্মা আর দাদান। পিসি দাদানের বোনের মেয়ে .. মা বলে দিয়েছেন। মা অবশ্য এও বলে দিয়েছেন .. "পিসিকে জ্বালাবে না, পড়াশোনা একদম বন্ধ করবে না, কাল কিন্তু নতুন স্কুলে যেতে হবে - মনে থাকে যেন।" মিতাশার ডাকনাম মিতি। সে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়। দোলা পিসি এলো সকাল ন'টার মধ্যেই .. পুরী এক্সপ্রেসে এসেছে। মিতি তখন স্কুলে বেরোবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দোলা পিসি আদর করে ওর হাতে একটা প্যাকেট দিলো। মা বললেন "রেখে দাও এখন পিসির গিফ্টটা .. এসে দেখবে।" ঘাড় নেড়ে মিতি চলে গেলো স্কুলে। দোলা এসে পড়লো ফাঁপড়ে। দোতালায় থাকে মামা মামী আর নিচে থাকে ভাই, ভাই বউ আর বাচ্চা মিতি। তাদের পৃথক অন্ন। সে খাবে কার কাছে সেটাই ভাবছিলো .. মামী বললেন - "তুই দিনে এখানে খা, রাতে বৌমার কাছে খাবি.. কারণ ওরা দুজনেই তো সকালে থাকে না ..বেরিয়ে যায়।" সারাদিন কেটে গেলো মামা-মামীর সাথে নানা রকম গল্প করে। বহুদিন পর দেখা, বেশ ভালই লাগছিলো সবকিছু। সন্ধ্যাবেলায় নিচের ফ্ল্যাটের বৈঠকখানায় সবাই একসাথে মিলিত হলো। মিতির মা-বাবা আজ দারুণ খুশি। কারন অনেক চেষ্টা করে, বহু কাঠখড় পুড়িয়ে, বলা ভালো মোটা ডোনেশন দিয়ে মিতিকে শহরের একটি নামকরা স্কুলে ভর্তি করতে পেরেছে। দোলা জিজ্ঞাসা করে "এই সময় তো অফ সিজন, এখন ভর্তি নিলো?" সীমা অর্থাৎ মিতির মা জানায় "নিয়েছে এই আমাদের চোদ্দ পুরুষের ভাগ্য .. তবে ওরা এ'বছর টা ধরবেনা।" "বলো কি .. এক বছর নষ্ট!" বিস্ময় প্রকাশ করে বলে দোলা। "একবছর বলছো কি গো.. এইরকম স্কুলের জন্য তিন বছর নষ্ট হলেও কিছু বলার নেই.. যুগটা কি দেখো!" সীমা চোখ বড় বড় করে উত্তর দেয়। দোলা বলে "হয়তো ঠিকই বলছো .. এখনকার পড়াশোনা, স্কুলের স্ট্যান্ডার্ড সম্পর্কে জ্ঞান আমার একটু কমই .. তা স্কুলটা কোথায়?" "দক্ষিণ কলকাতায়" সীমা জানায়। "বাব্বা অতদূর! ওতো সারাদিনের ব্যাপার" বিস্ময় জানায় দোলা। "সে তো হবেই .. বুঝতেই তো পারছো .. এটা কেরিয়ার তৈরীর যুগ .. এইটুকু তো করতেই হবে .. না হলে পিছনে পড়ে থাকতে হবে" এই কথা বলে সীমা চলে যায়, কারণ কাল সকালেই তাদের বের হতে হবে স্কুলের উদ্দেশ্যে। নতুন স্কুলের প্রথম দিন .. মিতির বাবা-মা দুজনেই আজ ছুটি নিয়েছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে প্রস্তুতি পর্ব। সব নতুন .. বই, ব্যাগ, জুতা, মোজা, পেন, পেন্সিল, টিফিন বক্স, রাবার, স্কেল, পেন্সিল কাটার, কালার বক্স, ইউনিফর্ম। সাত বছরের মিতি বাবা-মায়ের সঙ্গে বেরিয়ে গেলো সকাল ছ'টা পঁচিশ মিনিটে। সারাদিন কেটে গেলো .. সন্ধ্যার মুখে ফিরে এলো তিনজন .. যেনো রণক্ষেত্র থেকে ফেরা সৈনিক .. ক্লান্ত অবসন্ন। দোলার আর তর সয় না। জিজ্ঞাসা করে সীমাকে "সকাল আট'টা থেকে দু'টো পর্যন্ত স্কুল শুনেছিলাম .. ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে গেলো কেনো? কোথাও গিয়েছিলে বুঝি?  বিগবাজার?" সীমা ঢোক গিলে বলে "না না স্কুলেই ছিলাম .. ভীষণ ডিসিপ্লিন .. একটা বাংলা কথা বলা যাবে না .. তাই ছুটির পরে দেড় ঘন্টা মতো স্পোকেন ইংলিশ ক্লাস করতে হবে .. আজ থেকেই করতে হলো .. তাই দেরি হলো।" "তাই বলে এতক্ষণ!" এইরূপ মন্তব্য করে মিতির দিকে তাকিয়ে দোলা পিসি বলে "আয় তোর জামাকাপড় খুলে দি।" সীমা বলে "তুমি শুধু শুধু টেনশন নিও না .. ও নিজেই খুলবে .. ওর বাবা ওকে হেল্প করবে।" মেয়ের গা থেকে বাবা এক এক করে যুদ্ধের পোশাক খুলে নিলেন .. পোশাকগুলিকে যথাস্থানে গুছিয়ে রেখে মেয়ে অর্থাৎ মিতি একছুটে দাদু ঠাকুমার কাছে উপরে চলে গেলো। একটু পরে সকলেই ফ্রেশ হয়ে চায়ের টেবিলে বসলো। সান্ধ্য টিফিন খেতে খেতে মিতি বললো "মামণি আমি একটু পিসির সাথে পার্কে যাবো?" মা বললেন "না .. আজ থাক .. এখনই তো মিঠুকাকু আসবে .. এখন থেকে এই সময়টাই আঁকা শিখতে হবে .. তাছাড়া আর সময় কই.." মিতি মুখটা ব্যাজার করে বললো "দূ .... র" দোলা তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো "আমি কিন্তু কাল সকালেই বেরোবো।" "কেনো? আর দুটো দিন থাকো.." প্রশ্নসূচক ভঙ্গিতে বলল অশোক অর্থাৎ মিতির বাবা। "না রে .. হাতে ছুটি বেশি বাকি নেই .. তাছাড়া নৈহাটিতে তো দু'দিন থাকতে হবে। মা-বাবা বেঁচে নেই কিন্তু এতদূর এসে আমার পৈতৃক ভিটে একবার ঘুরে যেতেই হবে।" মিতি কাঁদো-কাঁদো ভাবে বলে ওঠে "না .. পিসি .." সীমা সঙ্গে সঙ্গে ধমক দিয়ে ওঠে "পিসি নয় আন্টি বলো।" মিতি "সরি মামণি" বলেই পিসির দিকে তাকিয়ে বলে আর দুটো দিন থাকো না আন্টি.." -- তার দুটি চোখে গভীর হতাশা। দোলার চোখে মুহূর্তে জল এসে যায়। সামলে নিয়ে বলে "থাকলাম তো সোনা দু'দিন, তুমিতো নতুন স্কুলে যাবে, নতুন নতুন মিস'দের কাছে পড়বে, কত নতুন বন্ধু হবে .. তারপর আঁকা শেখা, নাচ শেখা, টেবিল টেনিস খেলা, গান শেখা, কত কি করতে হবে .. কত সুন্দর জীবন তোমাদের, ভাবতেই ভীষণ .." দোলা কথাটা শেষ করার আগেই ডুকরে কেঁদে উঠলো মিতি "সুন্দর না ছাই .. স্কুলটা মোটেই ভালো না .. কত  উঁচু উঁচু দেওয়াল .. আকাশ দেখা যায় না .. ছোট্ট ছোট্ট জানলা। মিস'রা গাদাগাদা লিপস্টিক মাখে .. আমার আগের স্কুল টাই ভালো ছিলো .. এটা পচা স্কুল .. পচা .. পচা।" এই কথা বলে খাওয়া বন্ধ করে ছুটে গিয়ে ঠাকুমার কাপড়ে মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগলো। নির্বাক ঠাকুমা নাতনির পিঠ সাপটে দিতে লাগলেন। এইরকম আকস্মিক ঘটনায় হতচকিত হয়ে আস্তে আস্তে সবাই টেবিল থেকে উঠে গেলো। সন্ধ্যে থেকেই পরিবেশটা থমথমে। উপরের ছোট্ট বারান্দায় মামা মামীদের সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করে দোলা নীচে নেমে এলো। ভাই তার অফিসের কাজে ব্যস্ত .. ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে। ভাই বউ সীমা মেয়ের স্কুলের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে তার সঙ্গে রাতের রান্নার প্রস্তুতি পর্ব চলছে। নিচের পরিস্থিতি এখন অনেকটাই হালকা। মিতির আঁকার মাস্টারমশাই চলে গিয়েছে .. মনে হয় অন্য একজন এসেছে .. দরজার ফাঁক দিয়ে তার পিঠ দেখা যাচ্ছে .. স্ট্রাইপ দেওয়া জামা গায়ে .. সামনে কম্পিউটার .. মিতি বোধহয়  কম্পিউটার শিখছে। দোলার মনটা সত্যিই দমে গিয়েছিলো। এখন মনে হচ্ছে একটু হালকা, তাও সংশয় আছে। যদি কাল স্কুলে যাওয়ার সময় মিতি কোনো রকম ঝামেলা করে তার আগেই বেরিয়ে পড়তে হবে তাকে। সীমা ডাকে "দিদি এসো .. বসো।" দোলা এসে বসে। মিতির কম্পিউটার শেখা শেষ হলো .. স্যার'কে টা টা করে দিয়ে এসে পিসির কাছ ঘেষে দাঁড়িয়ে বললো "আন্টি তুমি কাল তাহলে চলেই যাচ্ছো?" সীমা কাজ করতে করতেই বললো "যাবে না? তুমি তখন যা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদলে, তোমাকে তো আন্টি চিনেই নিলো।' মিতি ছুটে গেলো তার মায়ের কাছে "মামণি আর হবে না কোনোদিন .. কক্ষনো করবো না মামণি .. ক্ষমা করে দাও .. বলো মামণি ক্ষমা করবে .. ?'' "থাক হয়েছে.. যাও আন্টির কাছে ক্ষমা চাও।" সীমা উক্তি করলো। এইবার নিজের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে রে রে করে উঠলো দোলা "একদম না .. এসব কি শেখাচ্ছো মেয়েকে? ও এমন কি বলেছে যার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে? আমি কিচ্ছু মনে করিনি ..  হ্যাঁ আর একটা কথা আমাকে এবার থেকে আন্টি নয় পিসি বলে ডাকবি .. আয় আমার কাছে আয় .." হাত বাড়িয়ে মিতিকে কোলের কাছে টেনে নেয় তার দোলা পিসি। কি নরম মিতির শরীর .. যেন ছোট্ট একটা পাখির ছানা। সীমা এবার নিজেকে সামলে নিয়ে বলে "পিসিকে কতগুলো রাইমস শুনিয়ে দাও .. আর কি কি শিখেছো দেখাও ..।" মন্ত্রমুগ্ধের মত হাত-পা খেলিয়ে মিতি গড় গড় করে একের পর এক রাইমস বলে গেলো। মিউজিক সিস্টেম চালিয়ে নাচ দেখালো গোটা তিনেক। এরই ফাঁকে টিভিতে কার্টুন প্রোগ্রাম দেখলো। কয়েকটা ফোনও ধরলো .. তাকে এবং তার মাকে কেউ কেউ নতুন স্কুলে ভর্তির চান্স পাওয়ার জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছে .. প্রত্যেকটি ফোন কলের উত্তরও দিলো সে সপ্রতিভভাবে। এ যেন এক মনুষ্যরূপী মেশিন .. মিতিকে দেখতে দেখতে এই মুহূর্তে এই কথাই মনে হচ্ছিলো তার দোলা পিসির। রাত দশ'টা বেজে গিয়েছে .. খাওয়ার টেবিলে সবাই অপেক্ষা করছে।  সীমা ডাকলো "মিতি আয় .. খেতে বোস।" মিতি পাশের ঘর থেকে উত্তর দিলো "যাই মামণি .. পুরনো বই খাতা বুকশেল্ফে তুলে রেখে কালকের জন্য নতুন বইপত্র গুছিয়ে রেখে আসছি।" "আচ্ছা এসো" - বলে সীমা খাবার বাড়তে থাকে। মিতি এসে বসে তার দোলা পিসির পাশে। আস্তে করে হাতটা ঠেলে দিয়ে বলে "আন্টি .. সরি পিসি .. থাকো না গো কালকে .. কাল ঠিক পার্কে যাবো তোমার সঙ্গে।" চোখে জল চলে এলো দোলার। অবাক করা জীবনচর্চা .. অভাবনীয় নিয়মানুবর্তিতা .. কি করে শিখলো এইসব সাত বছরের শিশুটি! কাল থেকে ও ঠিকই  স্কুলে যাবে .. কারণ ও জানে এটা কেরিয়ার তৈরীর যুগ .. স্কুলের জানলাগুলো ছোট হলেও ক'দিনেই ও ভুলে যাবে আকাশ দেখার মনোবাসনা। তার বদলে দেখতে পাবে আকাশ ঢাকা শুধু বড়ো বড়ো অট্টালিকা। মিতি তার পিসিকে আবার ঠেলা দিয়ে বলে "বলো না গো পিসি .. থাকবে তো?" মৃদু হেসে ঘাড় নাড়িয়ে তার দোলা পিসি জানায় "থাকবো"।
Parent