সৃষ্টি (সমাপ্ত) - অধ্যায় ২৮
নাড়ির টান
লেখা এবং প্রচ্ছদ :- বুম্বা
ইদানীং বুম্বার শরীর খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। মন তো অনেকদিন আগেই চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে। বুকের বাঁ'দিকে আজকাল একটা চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করছে সে মাঝে মাঝে। কোথায় যেন একটা শূন্যতা.. একটা ফাঁকা ফাঁকা ভাব। এ সবই হয়তো তার মায়ের চলে যাওয়ার জন্য .. তবে শুধু মা তো নয় .. তার জীবনের সব প্রিয়জনেরাই তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে একে একে।
আজ না হয় অন্যদের কথা থাক
মা'কে নিয়েই একটা ঘটনা বলা যাক
অবশ্য শুধু বুম্বার মা নয়, এ জগতে সন্তানেরা যদি তাদের মায়েদের কথা বলতে আরম্ভ করে তবে অনন্তকাল কেটে যাবে, কিন্তু কথা শেষ হবে না। মাতৃদেবী যে ভগবানেরই আর এক রূপ, তার একটা প্রমাণ না হয় দেয়া যাক আজ।
তখন বুম্বা কলেজে পড়ে। সেইসময় একবার তার দিদিমার খুব শরীর খারাপ হয়েছিল। তাই বুম্বার মা-বাবা উনাকে দেখতে আসানসোলে তার মামার বাড়ি চলে গেলেন। বুম্বার পার্ট ওয়ান পরীক্ষা থাকার জন্য সে যেতে পারলো না।
Zoology অনার্স ছিলো বুম্বার। অনার্সের শেষ পরীক্ষার দিন .. হঠাৎ করেই সেদিন প্রচন্ড বৃষ্টি আরম্ভ হয়েছিল। পরীক্ষা দিয়ে বেড়িয়ে সে অপেক্ষা করছিলো কখন বৃষ্টি থামবে। আধঘণ্টা অপেক্ষার পরেও যখন বৃষ্টি থামলো না, একপ্রকার বাধ্য হয়েই বের হতে হলো। কলেজ থেকে স্টেশন অনেকটাই দূর ছিলো। দুর্ভাগ্যক্রমে সেদিন একটাও অটো পাওয়া গেলো না .. পুরো রাস্তাটাই পায়ে হেঁটে বৃষ্টিতে ভিজে স্টেশনে আসতে হলো বুম্বাকে।
বাড়িতে এসে বুম্বা তাড়াতাড়ি জামাকাপড় ছেড়ে গা-হাত-পা মুছে নিলো ঠিকই কিন্তু ততক্ষণে গা'য়ে জল বসে গিয়েছে। সন্ধ্যাবেলা কিছু টের পায়নি, তবে গভীর রাতে জ্বর এলো তার। খাওয়াদাওয়া সব মাথায় উঠলো। শরীরের তাপমাত্রার পারদ বাড়তে থাকলো। থার্মোমিটারে দেখা গেলো জ্বর ১০২ ..
দু'দিন পরে পাসকোর্সের সাবজেক্টগুলির পরীক্ষা শুরু হবে। বাড়িতে বুম্বা একা .. পড়তেও পাড়ছিলাম না মাথার যন্ত্রণাতে। তার খুব অসহায় লাগছিল নিজেকে। কি হবে, কি করবে .. এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যে একটু তন্দ্রা এসে গিয়েছিল বুঝতে পারেনি সে।
হঠাৎ যেন কার একটা হাতের স্পর্শ পেলো কপালে। চোখ মেলে বুম্বা তাকিয়ে দেখলো মা এসেছেন .. তার মা।
বুম্বা বললো "কি গো, তুমি কি করে এলে এতো রাতে? তুমি তো এখানে নেই। আর তাছাড়া দরজা তো বন্ধ, ঢুকলে কি করে?"
মা বললেন "ইশ, আমি কি না এসে পারি! আমার সোনা টা এইরকম কষ্ট পাচ্ছে যে। চুপ করে চোখ বুজে শুয়ে থাক। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি, সব ঠিক হয়ে যাবে।"
বুম্বা ধীরে ধীরে চোখ বুঝলো .. তারপর আর তার কিছু মনে নেই। পরেরদিন সকাল সাত'টা নাগাদ ঘুম ভাঙলো বুম্বার। শরীর'টা তখনও অসম্ভব দুর্বল তার, কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার গা'য়ে একটুও জ্বর নেই। অবাক কান্ড, বিনা ওষুধে এই জ্বর সারলো কি করে!!
হঠাৎ তাদের বাড়ির ল্যান্ডফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা তুলে তুলতেই ওপাশ থেকে মায়ের গলা ভেসে এলো "কি রে তুই ঠিক আছিস তো? আমার আর ভাল লাগছে না এখানে .. আমরা আগামীকালই ফিরছি।"
বুম্বা শুধু "হুঁ" বলে তখনকার মতো ফোন রেখে দিলো।
পরেরদিন বাবা-মা ফেরার পর গত রাতের ঘটনাটা ওদের বললো সে। বাবার মুখ দেখে বুম্বা বুঝলো সে একটুও বিশ্বাস করেনি কথাগুলো। কিন্তু মা'র মুখে একটা অদ্ভুত হাসি দেখতে পেলো সে। সেই হাসির মানে তখন না বুঝলেও এখন বোঝে বুম্বা।
কে বলেছে ভগবান শুধু স্বর্গে থাকে? মাঝে মাঝে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখো, ভগবানের ঠিক দেখা পাবে। ভগবান তো নিজে সব সময় সবাইকে দেখা দিতে পারেন না, কিন্তু "মা" এর রূপ নিয়ে সর্বদা থাকেন আমাদের পাশে।