সৃষ্টি (সমাপ্ত) - অধ্যায় ৪০

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-38436-post-4986448.html#pid4986448

🕰️ Posted on October 14, 2022 by ✍️ Bumba_1 (Profile)

🏷️ Tags:
📖 500 words / 2 min read

Parent
 ভবানীপুরের বাড়ির লক্ষ্মী প্রতিমার মুখে স্ত্রী গৌরীদেবীর ছাপ  যদুভট্ট ছবির কাজ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন মহানায়ক। সেটে প্রয়োজন একটি সরস্বতীর মূর্তি। কুমোরটুলি থেকে বায়না দিয়ে তা বানিয়ে আনা হল। দেখে এক কথায় মুগ্ধ উত্তর কুমার। স্থির করলেন, তাঁর বাড়ির লক্ষ্মী ঠাকুরও গড়বেন সেই শিল্পীই । নাম নিরঞ্জন পাল। তবে দিলেন একটি শর্ত। মায়ের মুখ হতে হবে তাঁর স্ত্রী গৌরী দেবীর মুখের মত। সেই মতই গৌরী দেবীর মুখের আদলে প্রতিমা গড়ে ফেললেন শিল্পী নিরঞ্জন পাল । সবাই দেখে অবাক। তবে থেকেই চলে আসছে এই প্রথা। আজও সেই একই ধাঁচের প্রতিমা গড়া হয়। আগে বেনারসী পরিয়ে মাকে নিয়ে আসা হত বাড়িতে। কিন্তু আজ সেই প্রথা আর নেই। তাঁতের শাড়ি পড়িয়ে বাড়িতে লক্ষ্মীর প্রবেশ। মহানায়কের বাড়িতে লক্ষ্মী পুজো আজও প্রথা মেনেই হয়ে আসছে। উত্তম কুমারের মৃত্যুর পরও তা বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। একই ভাবে, একই সাজে ও একই রূপে আজও পূজিত হন মা লক্ষ্মী। এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে রত্না বন্দ্যোপাধ্যায় (উত্তমকুমারের ভাইঝি) জানিয়েছিলেন, উত্তমকুমারের বাড়ির পুজো মানেই এই লক্ষ্মীপুজো। মহানায়ক ধুমধাম করে কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমার দিন বাড়িতে প্রতিমা এনে পুজো করতেন। কেন করতেন? তাঁর অনুরাগীরা জানেন না। মহানায়কের ভাইঝি তাঁর মায়ের কাছে শুনেছিলেন, তাঁর কাকুর দেবীদর্শন হয়েছিল। পুজোর কিছু আগে ছাদে একটি ছোট্ট বাচ্চা মেয়েকে পা ঝুলিয়ে বসে থাকতে দেখেছিলেন। বাড়িতে তখন মেয়ে বলতে একমাত্র রত্না (ডাকনাম মাঈ) । কাকু (উত্তমকুমার) তাড়াতাড়ি মায়ের কাছে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘বৌদি মাঈ ছাদে পা ঝুলিয়ে বসে। পড়ে যাবে। ওকে দেখো।’’ মা বলেছিলেন, "মাঈ তো ঘুমোচ্ছে!" শুনে কাকু অবাক। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দু’দিন আগে থেকে রোজ একটি লক্ষ্মী প্যাঁচা উত্তমকুমারের বাড়িতে আসতে আরম্ভ করল। দেখতে দেখতে তাঁর নাম, যশ, অর্থ বেড়ে চার গুণ। সেই থেকে তাঁর বাড়িতে ঘটা করে লক্ষ্মীপুজো শুরু। বাড়িতে তৈরি মিষ্টি দিয়ে মায়ের পুজো হবে, এই ইচ্ছে থেকে উত্তমকুমার ভিয়েন বসাতেন। সেখানে গরম গরম পান্তুয়া তৈরি হত। তিনি ডেকে ডেকে সেই পান্তুয়া খাওয়াতেন বাড়ির সবাইকে। লক্ষ্মীপুজোর রাতে ছোটদের বড় প্রাপ্তি উত্তমকুমারের ছবি দেখতে পাওয়া। বড় স্ক্রিন টানিয়ে মহানায়ক সবাইকে তাঁর অভিনীত দু'টি ছবি দেখাতেন। সব থেকে মজার কথা, ছবি দেখতে দেখতে বাড়ির বড়রাই ভুলে যেতেন, উত্তমকুমার তাঁদের পরিজন। জনপ্রিয় দৃশ্য বা গান শুরু হলে তাঁরাই ‘গুরু গুরু’ বলে চেঁচিয়ে উঠতেন। বিষয়টি কিন্তু দারুণ উপভোগ করতেন মহানায়ক। হেসে ফেলতেন পরিবারে লোকজনদের অবস্থা দেখে।পুজোর পরের দিন উত্তমকুমার সবাইকে মাছ খাওয়াতেন। ওই দিন রুপোলি পর্দার সব তারকা জড়ো হতেন মহানায়কের বাড়িতে। লুচি, পাঁচ রকম ভাজা, বাঁধাকপির তরকারি, ফুলকপির ডালনা, পোলাও, চাটনি ও মিষ্টি দেওয়া হয় মা লক্ষ্মীর ভোগে। আগে বাড়িতে ভিয়েন বসিয়ে তৈরি হতো পান্তুয়া, দরবেশ ও গজা। এখন সে সব পাট চুকে গিয়েছে। কিন্তু আজও পাত পেড়ে খান প্রায় চারশো-পাঁচশো জন অতিথি। উত্তমকুমারের সময় থেকেই শুরু হয় এই আতিথেয়তার। ভোজনরসিক মহানায়কের কাছে পুজো বাড়িতে পেট পুরে না খেয়ে যাওয়াটা ছিল একেবারেই অনভিপ্রেত। শোনা যায়, তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সকল নিমন্ত্রিতদের খাওয়াতেন। তার পরেই নিজে খেতে বসতেন। মেনুতে অবশ্যই থাকত লুচি, ছোলার ডাল, বেগুন বাসন্তী, আলুর দম, ধোকার ডালনা, ছানার ডালনা, মিষ্টি। ইদানীং মেনুতে ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটেছে। পুজোর পরের দিন দরিদ্র নারায়ণ সেবা করতেন মহানায়ক। তিনি নিজেই সকলের পাতে খাবার পরিবেশন করতেন। কিন্তু এখন লোকবলের অভাবে সেই সেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অবশ্য শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা বিসর্জনের যে ধারা বজায় ছিল, তা কিন্তু আজও অমলিন। তথ্যসূত্রঃ ‘দেবীদর্শন’ .. (আনন্দবাজার পত্রিকা)
Parent