সৃষ্টি (সমাপ্ত) - অধ্যায় ৬০

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-38436-post-5177196.html#pid5177196

🕰️ Posted on March 21, 2023 by ✍️ Bumba_1 (Profile)

🏷️ Tags:
📖 539 words / 2 min read

Parent
|| ফার্স্টক্লাস || শিবরাম চক্রবর্তীর জীবনেও প্রেম এসেছিল একদিন  নীরবে। গ্রামের একটি কিশোরী মেয়ের সঙ্গে শিবরামের হাল্কা প্রেমের পরশ জেগেছিল। মেয়েটির নাম ছিল রিনি। শিবরাম মুখে কোনোদিন বলেননি, রিনি তোকে আমি ভালবাসি। ভালবাসা মুখে বলা হয়নি কোনোদিন। হৃদয় শুধু জেনেছিল। শিবরাম সেইসময় স্কুলের ছাত্র। গোপনে স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। রিনিও তখন কিশোরী। সেও সেইসময় শিবরামের সঙ্গে  স্বদেশী আন্দোলনে অল্প-বিস্তর জড়িয়ে পড়েছিল। একদিন শিবরামের বাবা কলকাতা থেকে নতুন গুড়ের সন্দেশ আনলেন। শিবরাম বাড়ি থেকে লুকিয়ে রিনির জন্য সন্দেশ নিয়ে গেল, একসঙ্গে দু'জনে বসে খাবে বলে। রিনি শিবরামের হাতে দুটো সন্দেশ দেখেই সোজা মুখে পুরে দিল। শিবরাম বলে ওঠে, "এ্যাই রিনি কি করলি? দুটোই মুখে পুরে দিলি? আমাকে একটাও দিলি না?" রিনি তখন মুখের ভেতর থেকে একটা সন্দেশ বার করে শিবরামের মুখে সেই সন্দেশ পুরে দিলো। হাত দিয়ে নয়। মুখে মুখ লাগিয়ে  শিবরামের মুখের ভিতর  রিনি সেই সন্দেশ পুরে দিয়েছিল। দুজনের ঠোঁটে ঠোঁট মিলে গেল। এ যেন সেলুলয়েডের বুকে আঁকা এক অপূর্ব রোমান্টিক মুহূর্ত! শিবরাম আস্তে করে শুধু বলল, "রিনি! এই প্রথম আমি তোকে 'মিষ্টি চুমু' খেলাম।" তবে এই প্রথম আর এই শেষ চুমু। রিনি লজ্জায় দু'হাত দিয়ে মুখ ঢাকল। শিবরাম বলেছিলেন, “আমার জীবনে তুই একমাত্র মেয়ে। তুই প্রথম আর তুই-ই শেষ”।   এর কিছুদিন পর  স্বদেশী করার অপরাধে রিনি কলকাতায় জেলে এলো। শিবরামও একদিন স্বদেশী করার জন্য একই জেলে এলো। জেলে আবার দু'জনের মিলন হলো। কিন্তু কিছুদিন পর রিনি অন্য জেলে স্থানান্তরিত হয়ে গেলো। শিবরামের সঙ্গে আর জীবনে রিনির দেখা হলো না। শিবরামের প্রেম চিরতরে হারিয়ে গেলো! এজন্যই হয়তো শিবরাম চক্রবর্তী  জীবনে কোনোদিন বিয়ে করলেন না .. কে জানে জীবন যে বড়ই বিচিত্র..! ★★★★ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তখন আনন্দবাজার-এ চাকরি করেন। একদিন বেলার দিকে এক সাহিত্যিক এসে খবর দিলেন শিবরামবাবুকে দেখলাম, অফিসের কাছেই ফুটপাথে চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন। মনে হয় শরীরটরির...!’’ সর্বনাশ! সে কী কথা! সুনীল সদলবলে ছুটলেন। গিয়ে দেখেন, সিল্কের পাঞ্জাবি আর ধুতি পরে শিবরাম টানটান শুয়ে রয়েছেন ফুটপাতে। ‘‘কী হল? শরীর খারাপ লাগছে?’’ ‘‘না না, ফার্স্টক্লাস আছি। আসলে যেতে যেতে হঠাৎ মনে হল ফুটপাতে শুয়ে আকাশটাকে কেমন দেখতে লাগে একবার দেখাই যাক।’’ একটা ট্যাক্সি পেলেই চলে যাব.. শরীরটা কিন্তু সত্যিই ঠিক যাচ্ছিল না। স্মৃতি কমে আসছিল। কথাবার্তা অসংলগ্ন। শেষ জীবনে প্রায় কপর্দকহীন। প্রায়ই বলতেন, ‘‘জিনিসপত্র সব বাঁধা হয়ে গেছে এবার একটা ট্যাক্সি পেলেই চলে যাব।’’ চিরকাল লোককে বিশ্বাস করেছেন আর বারবার ঠকেছেন। অনেক প্রকাশক ঠকিয়েছে। এমনকী শেষদিকে সেই সময়ের রাজ্য সরকার এবং কয়েকটি সংস্থা মিলে তাঁর চিকিৎসা ও ভরণপোষণের জন্য যে মাসিক ছ’শো টাকা তারই এক পাড়াতুতো পরিচিতের কাছে পাঠাত, সেই টাকারও সঠিক ব্যবহার হত না। শুকনো-রিক্ত চেহারা। অথচ কেমন আছেন জিজ্ঞাসা করলেই উত্তর ‘‘খাসা আছি। ফাইন আছি।’’ কোনও দিন কোনও অভিযোগ নেই কারও কাছে। তারমধ্যে আবার একদিন ঘরে চোর ঢুকে শেষ পাঞ্জাবিটাও নিয়ে গেছিল, গেঞ্জি পরেই থাকতেন। মুখে বলতেন, ‘‘দরকার কী? এই তো দিব্বি চলে যাচ্ছে গেঞ্জিতে।’’ হঠাৎ কয়েক দিনের প্রবল জ্বর। দুর্বল শরীরে টলতে টলতে বাথরুমে ঢুকেই সংজ্ঞা হারালেন। সারারাত পড়ে রইলেন ওখানেই। পরদিন বেলায় খবর জানাজানি হতে ভর্তি করা হল হাসপাতালে। ১৯৮০ সালের ২৮ অগস্ট সকাল। হাসপাতালের বেডে আচ্ছন্ন বাড়ি থেকে পালিয়ে’র নায়ক। ডাক্তারবাবু জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘শিবরামবাবু, এখন কেমন লাগছে শরীর?’’ ‘‘ফার্স্টক্লাস।’’ জড়ানো গলায় তখনও একই উত্তর। তার ঠিক পাঁচ মিনিট পরেই সেই অপেক্ষার অচেনা ট্যাক্সিতে চেপে বসলেন শিবরাম। রেডিয়োতে সন্ধেবেলায় যখন সেই খবর ঘোষণা হচ্ছে, তখন হয়তো হর্ষবর্ধন আর গোবর্ধনের সঙ্গে চাঁদে জমি কেনা নিয়ে তুমুল ব্যস্ত তাঁদের স্রষ্টা..! তথ্যসূত্রঃ- শিবরাম চক্রবর্তীর আত্মজীবনী মূলক উপন্যাস, "ঈশ্বর পৃথিবী ভালবাসা", "ভালবাসা পৃথিবী ঈশ্বর" এবং আরো কিছু লেখা।  
Parent