সুলতানার ডায়েরি - অধ্যায় ২৪
২৬ শে সেপ্টেম্বর,
আদির ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা রাস্তা ধরে একটু এগুলে বাঁদিকে একটা বিখ্যাত রেস্তোরাঁ পরে, সেখানে আগে বন্ধুদের সাথে আসতাম, এখনও আসি, তবে খুবই কম। আজ আদির মুখোমুখি হবো এমন আশা নিয়েই এসেছিলাম। কিন্তু নিজের মিটিং শেষ করে আর আব্বুর সাথে কনফারেন্স করে এখানে আস্তে আস্তে সন্ধ্যে হয়ে গেল। আদির ফোন অফ।নন্দীবাবু আমাকে ফোন করেছিলেন, বললেন আদি নাকি সিলং গিয়েছে হঠাৎ দরকারে। আদি আমাকে জানাতে পারে নি, বিষয়টা এতো দ্রুত হয়েছে, ফিরতে কাল পরষু হবে। কিন্তু ওর ফ্ল্যাটের চাবি আমায় দিতে বলেছে, তাই নন্দীবাবু এলেন ছটার সময় আদির ফ্ল্যাটের চাবি দিয়ে আমায় বললেন " ম্যাডাম, আপনি স্যার এর ঘরের চাবি সাবধানে রাখবেন।"
বললাম" তোমার স্যার নিজে চাবি না নিয়ে আমায় চাবি দিলেন কেন বলতো?"
"সে তো উনিই জানেন"
"আচ্ছা আদি সিলং কেন গেল?"
জানিনা, তবে ওনার কোনো একজন বন্ধু আছেন, ওনার সাথে দেখা করতে।"
"হঠাৎ?"
"তা তো কিছু বলেননি,সেরকম হলে আপনিই জানবেন।"
"ফোন তো অফ,নন্দীবাবু!"
"স্যার হয়তো ব্যস্ত, উনি বলেছেন, আপনাকেই প্রথম কল করবেন।"
আচ্ছা, বলে নন্দীবাবুকে সি-অফ করে আমি পার্কিং এ এলাম। এখন আব্বুর নামাজ পড়ার সময় অতএব,আব্বুকে পাওয়া যাবে না। আব্বুরও হিস্ট্রি খুব ভালো তাছাড়া, আদির খুঁটিনাটি আব্বু আরও ভালো জানবে। কিন্তু কিন্তু করতে করতে গাড়ি ছাড়ায় আদির বাড়ি যাওয়া স্থির করলাম।
হেঁটে আসতে গিয়ে পথে আসাদ ভাইয়ের হবু স্ত্রীর সাথে দেখা হলো, উনি টেনে আমায় রেস্তোরাঁয় নিয়ে এলেন। এ কথা সে কথার ফাঁকে উনি বললেন, জানো আসাদ বলছিল তুমি নাকি কোন ছেলের সাথে প্রেম করছ!
আরে ভাবি সেরকম কিছু না।
আরে আমাকে বলতে পারো, বলে ভাবি হাসতে লাগলেন।
আমি কিছু বললাম না, খাওয়ার মনোনিবেশ করলাম।
ভাবি হঠাৎ বললেন, আচ্ছা আদিনাথ দেব লোকটা কে?
আসাদ খুব নাম করছিল।
আমি বসেছিলাম, দরজার দিকে মুখ করে, ভাবি উল্টোদিকে,
আমি বলতে যাওয়ার আগে দেখলাম দরজা ঠেলে ঢুকল সেদিনের সেই মার খাওয়া গাট্টা লোকটা আর তার পেছনে কুখ্যাত মস্তান সুলেমান শেখ।লোকটাএকনম্বরের পাক্কা শয়তান। এবার বুঝলাম সেদিন লোকটা সুলেমান শেখকে ডাকার কথা বলছিল। তারমানে লোকটা কি আমাকে নজরে রেখেছিল, তাই এই রেস্টুরেন্ট ঢুকতে দেখে .....এখানে কি ওর লোক আছে? সুলেমান এখনও আমাকে দেখেনি, কিন্তু ওই লোকটা আমাকে চেনে! এরা কি আমাকে ধরতে এখানে এসেছে। আব্বুর সাথে সুলেমানের সম্পর্ক একদম বাজে, আব্বুকে যব্দ করার মোক্ষম সুযোগও সুলেমানের কাছে আছে। আমি বললাম "ভাবি চলেন, রাস্তায় যেতে যেতে বলছি"
ভাবি বলল" খাবা না?"
বললাম না, চলেন উঠি।
ভাবি উঠলেন। আমি উঠতেই বুঝলাম রেস্টুরেন্টে সুলেমানের লোক ভালোই আছে।
এটা কি ইচ্ছে আমাকে কোনো ট্রাপে ফেলা নাকি কাকতালীয়! বুঝলাম না।
হঠাৎ আদি কে ফোন করলাম,
ভীষণ ভয় করছে। আদির ফোন লাগছে না....হাতটা কাঁপছে....আবার ট্রাই করলাম ....টুঁক টুঁক শব্দ হয়ে কেটে গেল। তারপর তৃতীয় বারের চেষ্টায় ফোন লাগল.....রিং হচ্ছে সুলমানের লোকেরা গেটের বাইরেও আছে। পরিস্থিতি বেশ জটিল, সুলেমান চিয়ার ছেড়ে উঠল, আদির ফোন রিং হয়ে কেটে গেল।
আর কিছু করার নেই আশা শেষ, ভাবি বুঝেছে কিছু গন্ডোগোল, বলল " আফ্রিন কিছু গন্ডোগোল মনে হচ্ছে! তুমি কি কিছু! পুলিশে কল করব?"
আমি কিছু বলার আগে, সুলেমান আমাদের একদম সামনে এসে বলল "চুপচাপ আমাদের সাথে এসো"