তার ছিঁড়ে গেছে কবে - অধ্যায় ১৬
(১৬)
পরান লয়ে কী খেলা
সেদিন সৌমাভ অফিস থেকে ফেরার পরেই নিজের অনুষ্ঠান নিয়ে বকবক করে সবার কান ঝালাপালা করে দিল ও। সেই দুটো পুতুলও দেখাল। রীতিমতো চমকে গেল সৌমাভও। অবিকল মানুষের বাচ্চার মতো সাইজ পুতুল দুটোর। নিশ্চয়ই বিদেশি। ঠিক করল, ও নিজে পরে একদিন নিউমার্কেট থেকে চুপিচুপি এই রকম আরও দুটো পুতুল এবং খেলনা কিনবে কুট্টি-মুট্টিদের জন্য। এদিকে ঈশিতার হল্লার চোটে ভ্যাঁ ভ্যা করে কেঁদে উঠল বাচ্চাদুটো। অবস্থা দেখে কোনও রকমে অফিসের জামাকাপড় ছেড়ে হাতমুখ ধুয়েই ছেলেমেয়েকে কোলে নিয়ে চুপ করাল সৌমাভ। এমনকি ঈশিতা কলেজের কাপড়জামা না ছেড়েই কলেজের অনুষ্ঠান নিয়ে মায়ের সঙ্গে বকবক করে যাচ্ছে দেখে, রোজকার মতোই কৌটোর দুধ গরম করে খাইয়েও দিল দুটোকেই। এই ক’দিন শাশুড়ি আসবেন এবং ঈশিতার পক্ষে সারাদিনের পরিশ্রমের পরে রান্না করা কঠিন বুঝে আগে থেকেই বাইরের খাবার কিনে আনত ও। আগে হলে নিজেই রান্না করে নিত, কিন্তু জ্বরের পর থেকে শরীরটা বেশ কাহিল হয়েছে। তাই এখন কিনেই আনে। সেটা খেয়ে শ্বাশুড়ি চলে যেতেন। শেষ দিন মা চলে যাওয়ার পরে আরও কিছুক্ষণ বকবক করে ঈশিতা জামাকাপড় ছেড়ে ফ্রেস হতে বাথরুমে ঢুকল। আর বাচ্চাদুটো ঘুমিয়ে পড়েছে দেখে সৌমাভ ঢুকে গেল স্টাডিতে।
বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে সৌমাভরই কেনা একটা নতুন ম্যাক্সি পরে শোয়ার ঘরে ঢুকে থমকে গেল ঈশিতা। কখন যে দুটো বাচ্চা বোতলের দুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে, ও সেটা খেয়ালই করেনি? মনে পড়ল, আজও সারাদিন ও বাচ্চাদুটোকে বুকের দুধ খাওয়ায়নি! এমনকি বাড়িতে ঢুকেও বাচ্চাদের কথা না ভেবে নিজের গল্প করতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল! সৌমাভ বাড়ি ঢোকার পরেও সেই গল্পই করেছে সারাক্ষণ। কিন্তু সৌমাভ গেল কোথায়? দ্রুত বসার ঘর পেরিয়ে স্টাডিতে ঢুকে দেখল, নিবিষ্ট মনে কোনও একটা ফাইলে চোখ বোলাচ্ছে সৌমাভ। কিন্তু আগের মতো কাজের ফাঁকে ফাঁকে গুনগুনিয়ে উঠছে না! এই লোকটা ওর একদম অচেনা। অথচ এই লোকটাকে আবার আগের মতো করে তুলবে, দিন কয়েক আগেই নিজের মায়ের কাছে এবং নিজের কাছে এই প্রতিজ্ঞা করেছিল। আর ঠিক তখনই বাড়ির ল্যান্ডফোনটা করকর করে বেজে উঠল। চমকে গেল ঈশিতা। এ বাড়িতে ফোন, আর ও জানে না?
এ বাড়িতে আসার পরপরই ফোন নেওয়ার কথা এবং তার অ্যাপ্লাই করার কথা ঈশিতা জানত। ইনফ্যাক্ট ফোনের অ্যাপ্লিকেশনটা ওকেই সৌমাভ দিয়েছিল ফিলাপ করতে, যাতে ও শিখতে পারে এগুলো। কিন্তু গত কয়েক মাসে সেই ফোনের ব্যাপারে ও একবারও সৌমাভর কাছে কিছুই জানতে চায়নি। এমনকি ও কী খায়, রান্না করে কি না, জাতীয় সাধারণ সাংসারিক কথাও জানতে চায়নি একদিনও। তাই জুন মাসে এই বাড়িতে ফোন এলেও এতদিন ও ঈশিতাকে বা তার বাড়ির লোকেদের সে কথা জানায়ওনি। শুধু গুঞ্জা জেনেছিল। কিন্তু ও গুঞ্জাকে প্রমিস করিয়েছিল যে, সে যেন কাউকে না বলে। গুঞ্জা সে কথা রেখেছে। সচরাচর ওর অফিসের ফোন বাড়িতে আসে না। গত কয়েক মাস ধরে এই ফোন তেমন ব্যবহারও হয়নি। তবে অফিসের কয়েকজন সিনিয়ারকে এর নম্বরটা দেওয়া ছিল। তাঁদেরই একজন ফোন করেছেন। কয়েকটা দরকারি কথা বলে তিনি ফোন রাখতেই এবারে ঝামটে উঠে পাল্টা আক্রমণের পথে গেল ঈশিতা। সরাসরি সৌমাভর চোখে চোখ রেখে কিছুটা ঝাঁঝালো গলায় বলল, ‘‘বাড়িতে ফোন এসেছে, এ কথাটা আমাকে একবার জানানোরও প্রয়োজন মনে করলে না?’’ সৌমাভ ততধিক শান্ত গলায় বলল, ‘‘কলকাতায় আসার পরে এই ফোনটার ফর্ম তুমিই ও ঘরে বসে ফিলাপ করেছিলে, মনে আছে ঈশিতা? গত এগারো মাসে একবারও জানতে চেয়েছো, ফোনটার কানেকশন দিয়েছে কি না?’’ এই বারে নিজের গত এগারো মাসের ভুলগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে গেল ঈশিতার কাছে। সেই সঙ্গে বুঝল, নিজের ভুলেই সৌমাভর মনে ও অভিমানের পাহাড় তৈরি করে ফেলেছে। শুধু তাই নয়, ওদের মধ্যে আন্দামানের সেই নিবিড় ব্যাপারটাই আর নেই। এবং এর জন্য অন্য কেউ নয়, একমাত্র ও নিজেই দায়ী। এটাও খেয়াল করল, সৌমাভ আগের সেই ঈশি ডাক ছেড়ে ওকে প্রথম পরিচয়ের সময়কার ঈশিতা বলেই ডাকছে। তখনই চমকে উঠল আর একবার। সত্যিই তো, গত এগারো মাসে একবারও তো সৌমাভ ওকে ঈশি বলে ডাকেনি! মাথা নিচু করে স্টাডি থেকে বেরিয়ে বেডরুমে ঢুকে বিছানায় পড়ে হাউহাউ করে কেঁদে উঠল ও। সেই কান্নার আওয়াজে কুট্টি-মুট্টি জেগে উঠতেই ও কান্না থামিয়ে কুট্টিকে কোলে নিতেই দু’জনের জোড়া চিৎকার শুরু হল। এ বারে স্টাডি থেকে এসে প্রথমে কট থেকে মুট্টিকে এবং তার পরে ঈশিতার কোল থেকে কুট্টিকে নিল সৌমাভ। দু’জনের মাথা নিজের দুই কাঁধে রেখে হাল্কা দোলা দিতেই ঈশিতাকে আবারও অবাক করে দিয়ে দু’জনেই থেমে গেল প্রায় একসঙ্গে। ওই অবস্থাতেই সৌমাভকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল ঈশিতা। ‘‘প্লিজ, প্লিজ, তুমি আমাকে ক’টা দিন সময় দাও, আমি কথা দিচ্ছি...’’ কাঁদতে কাঁদতে বলা ঈশিতার কথা মাঝখানে থামিয়ে সৌমাভ খুব নরম গলায় বলল, ‘‘ঈশিতা, আজ তুমি ক্লান্ত। এখন খেয়ে ঘুমিয়ে পড়। কাল কথা হবে, কেমন?’’ বলে কুট্টি-মুট্টিকে ফের কটে সাবধানে শুইয়ে ঘর ছাড়তেই ওর উপরে যেন ঝাঁপিয়ে পড়ল ঈশিতা। টেনেহিঁচড়ে সৌমাভকে সোফায় ফেলে ওর বুকের উপর শুয়ে বারবার বলতে লাগল, ‘‘আমি জানি আমি ভুল করেছি। তুমি তাই বলে এত দূরে সরিয়ে দেবে? তুমি কেন আমাকে ঈশি বলে ডাকো না আর? কেন আমাকে আগের মতো জড়িয়ে ধরো না? কেন আমাকে আন্দামানের মতো আদর করো না?’’ ওর পরপর প্রশ্নগুলো শুনে সৌমাভ বরাবরের শান্ত গলাতেই বলল, ‘‘আজ তো নয়, এগারো মাস ধরেই তোমাকে পুরনো নামে ডাকি না। তুমি আজ খেয়াল করলে? বাহ! আর হ্যাঁ, আন্দামানের কথা কী যেন বলছিলে? এই সোফায় বসে আন্দামানের কথা বলায় আমাকে তুমি যেটা বলেছিলে, সেটা আমি মনে রেখেছি ঈশিতা। আর আদর করা? ডাক্তার পাঁচ মাস অবধি সেক্স করা যেতে পারে বলে দিয়েছিলেন তোমার সামনেই। তোমার শরীরের লোভে নয়, তোমার এই অবস্থায় পরীক্ষা দেওয়ার মতো চাপের কথা ভেবেই আমি আগামী বছর পরীক্ষাটা দেওয়ার কথা ফের ভাবার জন্য বলেছিলাম। তোমার উত্তর এবং তার পরের কাজগুলো নিশ্চয়ই মনে আছে ঈশিতা?’’ কান্নায় ভেঙে পড়া ঈশিতার মুখটা বুক থেকে তুলে ফের ওকে খেয়ে নিতে বলে উঠে দাঁড়াল সৌমাভ। এই বার ঈশিতারও মনে পড়ে গেল, প্রথম দিন সৌমাভকে নিয়ে বাপের বাড়িতে যাওয়ার রাতটার কথা। সেদিন এমনিতেই নতুন জায়গায় এসে আড়ষ্ট হয়েছিল সৌমাভ। আর ও? ঈশিতার মনে পড়ল, সে রাতে রাহুলের কথা ভাবতে গিয়ে সৌমাভর সঙ্গে চোদাচুদি করলেও সেটা ও কতটা জড়তা নিয়ে করেছিল, যার জন্য সৌমাভ নিজেকে শান্ত না করেই ওর উপর থেকে নিঃশব্দে উঠে গিয়েছিল সে দিন। গত এগারো মাসেরও বেশি সময়ে সেটাই ওদের শেষ বার শারিরীক সম্পর্ক হয়েছিল এবং সেটাও ওর নিজের জন্যই অত্যন্ত খারাপ ভাবে শেষ হয়েছিল। ওর ভালই বোঝে, সেদিনের পর থেকে সৌমাভ ওকে সেই ভাবে ছোঁয়ও না। মাঝে একবার পেটে আতলতো করে হাত বুলিয়ে দেওয়া আর একবার পেটে কান রাখা ছাড়া সৌমাভ ওকে যে আর সেই ভাবে স্পর্শও করে না সেদিনের পর থেকে, সেটা ও বহুবার টের পেয়েছে। কিন্তু একবারও নিজে সেই পাঁচিলটা ভাঙার চেষ্টা করেনি। এমনকি সেদিনের পরেও বেশ কয়েক বার দু’জনের একসঙ্গে থাকা, পাশাপাশি শোয়া এমনকি শারিরীক সম্পর্কের সুযোগ তৈরি হলেও সেটা আর হয়নি। ও-ই এগোয়নি। অথচ নিজেই বুঝত, ওর আচরণ এবং উপেক্ষা ও শীতলতায় ওদের মধ্যে তৈরি হওয়া দূরত্ব কমিয়ে আনতে পারে বারবার বুকে টেনে নিতে পারলে। তবু ও এগোয়নি। এমনকী এ বাড়িতে আসার পরেও। তা ছাড়া ও নিজে তো বটেই, সৌমাভও আর ওকে জড়িয়ে পর্যন্ত ধরে না। সেই সব কথাই কি আজ মনে করিয়ে দিল সৌমাভ?
এই সব ভাবতে ভাবতেই ফের ফোন এল। সৌমাভ দ্রুত ফোনটা ধরে কিছুক্ষণ কথা বলে বাইরের ঘরে এসে ঈশিতাকে ডেকে বলল, গুঞ্জা ফোন করেছে, কথা বলো।
গুঞ্জা? গুঞ্জা এই ফোনের নম্বরটা জানে অথচ ও জানে না? এ নিয়ে পরে হিসেব করা যাবে ভাবতে ভাবতে তড়িঘড়ি ফোনটা ধরে আরও একটা বড় ধাক্কা খেল ঈশিতা। কালীপুজোর দিন সৌমাভর যে জন্মদিন ছিল, সেটা আন্দামানে থাকাকালীন ওরই জোরাজুরিতে সৌমাভ ওকে বলেছিল। আর ও সেটা মনেই রাখেইনি! ওর বাড়িতেও কেউ জানে বলে ও জানত না। সৌমাভর প্রতি বাড়ির লোকের অন্য রকম আচরণটা ও অনেক দিন ধরে লক্ষ্য করলেও এ নিয়ে কোনও দিনই কিছু বলেনি। অথচ ওর দু’বছরের ছোট বোন গুঞ্জা সব জানে? দিন-তারিখ সব? ওদের বাড়ির একমাত্র সদস্য হিসেবে গুঞ্জাই কালীপুজোর পরে যেদিন সৌমাভ ওদের বাড়িতে গেছিল, সেদিন ওকে উইশ করে চকোলেট গিফ্ট করেছিল। আজ একথা-সেকথায় গুঞ্জা বলল, শুক্রবার ও আসবে এ বাড়িতে, সৌমদার জন্মদিনের খাওয়া খেতে। ওটা নিয়ে নাকি দু’জনের কথাও হয়ে গেছে দিন কয়েক আগে ফোনেফোনে! ঈশিতার মনে পড়ল, ওর নিজের জন্মদিনের দিন ভোরবেলায় ওর বাড়িতে গিয়ে ওকে প্রথম উইশ করেছিল এই সৌমাভই। নিজেকেই নিজে আবার ধিক্কার দিল। তবে মুখে কিছু প্রকাশ করল না। তার পরেই গুঞ্জার আর একটা কথায় আরও চমকে গেল ও। পাঁচ দিন আগে ওদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী ছিল? ওর মনে পড়ল, সে দিনও ও সারাদিন কলেজের অনুষ্ঠান নিয়েই মেতে ছিল। অথচ গুঞ্জাই নাকি সেদিন সৌমাভকে ফোন করে উইশ করেছে? গুঞ্জাই জানাল, ও সৌমদাকে বলেছে, একসঙ্গে জন্মদিন ও বিবাহবার্ষিকীর খাওয়া এই শুক্রবারেই খাওয়াতে হবে। গুঞ্জা সব জানে শুধু না, দু’টো ক্ষেত্রেই একমাত্র সেই সৌমাভকে উইশ করেছে। জন্মদিনে গিফ্টও দিয়েছে? অথচ ও নিজে স্ত্রী হয়েও কিছুই মনে রাখেনি, দিনগুলো পালন করা তো দূর, উইশ পর্যন্ত করেনি।
বাইরের ঘরে এসে সৌমাভকে কথাটা বলতে সে একটু অবাক হয়ে বলল, ‘‘ওহ, হ্যাঁ, গুঞ্জাটা আব্দার করেছে। কিন্তু এই ক’টা দিন তো আমার অফিস আছে। যেতেই হবে, প্রচন্ড চাপ। তবে শুক্রবারটা দেখি। সেদিনও অফিস যেতে হবে, তবে মনে হয় পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ফিরতে পারব। ঠিক আছে, সেটা আমি গুঞ্জাকে বলে দেব। ও না হয় সে দিন সন্ধ্যাবেলাতেই আসবে, কেমন? আর তোমরা এত সব প্রোগ্রাম করতে গেলে কেন? বিবাহবার্ষিকী তো দিন কয়েক আগে চলে গেছে। জন্মদিনও তো প্রায় একমাস আগে চলে গেছে ঈশিতা? এখন এসব কেন?’’
ঈশিতা এই বারে ঠিক করল, শুক্রবার বাড়িতে শুধু গুঞ্জা নয়, ওর বাপের বাড়ির সবাইকে ডেকে একটা ছোট হলেও অনুষ্ঠান করবে। সৌমাভর জন্মদিন এবং ওদের প্রথম বিবাহবার্ষিকীকে একসঙ্গে করে একটা অনুষ্ঠান হবে। ওর মাকে ফোন করায় তিনিও আকাশ থেকে পড়লেন। এই জামাইয়ের জন্মদিনটা তো তিনিও জানেন না। অথচ তাঁর ছোট মেয়ে নাকি সব জানে? আর মেয়ের বিবাহবার্ষিকীও এর মধ্যে চলে গেছে? এত হাঙ্গামা করে দেওয়া বিয়ের তারিখটা কেউ মনেই রাখেনি, তিনিও না! তা ছাড়া তাঁর নিজের মেয়ে, যার বিবাহবার্ষিকী বা বরের জন্মদিন, সে নিজেও তো কিছু বলেনি! অস্বস্তি এড়াতে তিনি কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে বললেন, তিনি শুক্রবার দুপুরে পায়েস এবং আরও কয়েক পদ রান্না করে এ বাড়িতে আসবেন। দিদিরাও দুপুরেই আসবে। সন্ধ্যায় দুই জামাই এলে বাইরে থেকে খাবার এনে সবাই মিলে খাওয়াদাওয়া করা হবে। সব প্ল্যান করে একটু যেন হাল্কা লাগল ওর।
কিন্তু ক্রমাগত মনের মধ্যে একটা খচখচানি ঈশিতাকে বিঁধে গেল। সৌমাভকে আবার আগের মতো সব ফিরিয়ে দেবে, গত কয়েক মাসে হাজার বার এই প্রতিজ্ঞা করলেও সে সব তো কিছুই করেনি, এমনকি তার জন্মদিনটাও মনে রাখেনি স্ত্রী হয়ে! তা ছাড়া নিজেদের প্রথম বিবাহবার্ষিকীর দিনটা ও কাটিয়েছিল সারাদিন কলেজের অনুষ্ঠান নিয়ে মেতে! এমনকি সেদিন ফিরেওছিল রাত করে। আজও ওর মাথাতেই ছিল না ওর এবং সৌমাভর জীবনের বিশেষ দিনটার কথা! সেই জন্যই কি গুঞ্জা সেদিন ও রকম ব্যঙ্গের হাসি হেসেছিল? এ সব মনে করে কেঁদে ফেলল ঈশিতা। সেই আওয়াজে স্টাডিতে বসে থাকা সৌমাভ ফাইল থেকে চোখ তুলে তাকিয়ে একটু অবাক হল প্রথমে। চেয়ার ছেড়ে উঠতেই ওর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে এতদিনের কান্না যেন বাঁধ ভাঙল ঈশিতার। বারবার গত এগারো মাস ধরে করা নিজের জেদ-ভুলের কথা, সৌমাভকে অবহেলার কথা বলতে শুরু করল নিজেই। এমনকি বিবাহবার্ষিকী ভুলে যাওয়ার কথাটাও তুলল নিজেই। সৌমাভ একটা কথাও বলল না। একসময় একটু শান্ত হয়ে সৌমাভর বুকে মুখ গুঁজে ঈশিতা বলল, ‘‘আমি প্রমিস করছি, যে করেই হোক তোমাকে আন্দামানের সময় আমি ফিরিয়ে দেবই। আজ থেকেই দেব। তুমি একবার আমাকে ভরসা করে দেখ!’’ এই বারে সৌমাভ মুচকি হেসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে খুব আস্তে করে বলল, ‘‘ঈশিতা, আজ তুমি ক্লান্ত। এখন বিশ্রাম নাও। কাল কথা হবে। যাও, খেয়ে নাও।’’