তার ছিঁড়ে গেছে কবে - অধ্যায় ১৮

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-68445-post-5938560.html#pid5938560

🕰️ Posted on May 4, 2025 by ✍️ Choton (Profile)

🏷️ Tags:
📖 922 words / 4 min read

Parent
(১৮) খেলার ছলে সাজিয়ে অনুষ্ঠানের আগের দিন কলেজ থেকে ফিরে ফের সবাইকে একপ্রস্থ ফোন করল ঈশিতা। ঠিক হল, শুক্রবার বিকেলে সবাই মিলে এই বাড়িতে খাওয়াদাওয়া হবে। সৌমাভ সকালে বাজার করে আনবে। বাজার মানে মাছ আর কিছু সব্জি। সামনেই বাজার, ফলে সমস্যা হবে না। দুটো-আড়াইটে নাগাদ ঈশিতার মা ও দিদিরা এসে এখানেই রান্না করবেন। ফোনে কথাবার্তা শুনে ঈশিতার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে সৌমাভ বলল, ‘‘এত বছর বয়স অবধি কখনও জন্মদিন পালন হয়নি, এবারও হয়নি। হঠাৎ একমাস পরে তোমাদের এই উৎসবের ধূম দেখে তাই চমকে গেছি। যাক, বাদ দাও। আর বিবাহবার্ষিকী-টার্শিকী তো বড়লোকদের খেয়াল!’’ বলে ফের মুচকি হেসে স্টাডিতে ঢুকে গেল। ঈশিতা বুঝল, এই সৌমাভ এখন ওর থেকে শারীরিক তো বটেই, মানসিক দিক থেকেও অনেক, অনেক দূরের কেউ। একদম অজানা, অচেনা। ও ঠিক করল, আজ রাত থেকেই সৌমাভর পাহাড় ভাঙার কাজটা ও শুরু করবে। যে ভাবেই হোক, আবার সৌমাভকে ও আন্দামানের দিনগুলো ফিরিয়ে দেবে বলেছে, সেটা আজ রাত থেকেই শুরু কবে ও। আনমনে এ সব নিয়ে ভাবতে ভাবতে বালিশে মাথা রাখল। রাতে সৌমাভ যখন শুতে এল, তখন গভীর ঘুমে ঈশিতা। পরের দিন সকালে উঠেই ঈশিতার মনে পড়ল, কাল রাতে ও সৌমাভকে আদর করবে ভেবেছিল ঠিকই, কিন্তু নিজেই ঘুমিয়ে পড়েছিল! আরও একবার সেই একই জিনিস! কিন্তু নিজেকে আড়াল করতে ও সৌমাভকে বলল, ‘‘কাল থেকে আগামী একমাস তোমার কোনও ছুটি নেই, দু’শিফটে ডিউটি দিতে হবে, বুঝলে?’ বলে ঠোঁটের কোণ দিয়ে হাসল। সৌমাভ কিছুই বলল না। শুধু বলল, আজ রাতে ওর প্রোজেক্ট ফাইনাল করার আছে, ফলে রাত অবধি স্টাডিতে কাজ করবে। প্লাস, টাকাপয়সা সংক্রান্ত বেশ কিছু কাগজ একটু সাজানো দরকার। সেই সঙ্গে কুট্টি-মুট্টিদের ছবিগুলোও একটু অ্যারেঞ্জ করে রাখবে আজই। বলে নিত্যকার মতো সব সেরে অফিস চলে গেল। রাতে ফিরে খেয়েদেয়ে ঈশিতা বাথরুমে ঢুকলে ও শোওয়ার ঘরের আলমারি থেকে সব ফাইলপত্র বের করে স্টাডিতে আনল। এমনি বরাবরই ও এই সবে অত্যন্ত গোছানো ছেলে। ফলে ওর সব সাজানোই থাকে। তার পর ঈশিতাকে ডেকে টাকাপয়সা, গয়না ইত্যাদির দায়িত্ব বুঝিয়ে দিল। জানাল, দু’মাস পরে কুট্টি-মুট্টিদের মুখেভাতটা ও বড় করে করতে চায়। সেই মতো কোন ব্যাঙ্কে কত আছে, সেটা ঈশিতার জেনে রাখা দরকার। সেই মতো ও টাকাও একা-একাই তুলতে পারবে এবং খরচও করতে পারবে নিজের হাতে। সৌমাভর কাছে চাইতে হবে না। এ ছাড়া ঈশিতার নামে কটা এলআইসি, কত টাকা পাবে— একটা কাগজে সব লিখে বলল, ‘‘এটা তুমি রেখে দাও। আমি পরপর সব সাজাই। কাল অফিসে প্রোজেক্ট রিপোর্টটা জমা দিতেই হবে। তবে পাঁচটার মধ্যেই ফিরব।’’ বলে বেডরুমে এসে দুই ছানাকে একটু গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করে অনেক দিন পরে ঈশিতাকে বুকে টেনে আদর করে বলল, ‘‘আমার মতো ছেলের যে জন্মদিন হয়, সেটাই এত বছর জানতাম না! গুঞ্জা যে ভুলে না গিয়ে মনে রেখেছে, সেটা দেখে অবাকই হয়েছিলাম!’’ এই কথাটার মধ্যেও যে ঈশিতাকে হাল্কা খোঁচা দিল, সেটা বুঝে মাথা নামিয়ে নিল ও। চোখের জল আড়াল করতে। সত্যি আর কত কষ্ট একটা মানুষ বুকে চেপে রাখতে পারে? আর ও কী ভাবে ভুলের পাহাড় তৈরি করেই যাচ্ছে! তবে দ্রুত নিজেকে সামলে ঈশিতা ওর বুকে মুখ রেখে আদুরে ভঙ্গি করে বলল, ‘‘কাল বাড়িঘর সাজাব। আমি একাই করব, পরে দিদিরা না হয় হেল্প করবে। তুমি সকালে একটু ফুল এনে দিও প্লিজ। একটু পুজো দেব। আর কাল কিন্তু কুট্টিদের বুকের দুধ দেব না’’, বলেই হেসে সৌমাভর বুকে মুখ লোকাল। সৌমাভ বুঝল, কী বলতে চাইল। মুচকি হেসে আবার একটু গালে-মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে শুতে বলে স্টাডিতে ঢুকে গেল। ঈশিতা আগেও লক্ষ্য করেছে, এ বাড়িতে ফিরেও দেখছে, বাপের বাড়ির সেই রাতের ঘটনার পর থেকে ওর বুকে বা শরীরের অন্য কোথাও হাত ছোঁয়ায় না সৌমাভ। বড়জোর কপালে একটা চুমু খায়। পরদিন সকালে উঠে একগাদা বাজার করে এনে রান্নাঘরে নতুন কেনা ফ্রিজটায় ঢুকিয়ে দিল সৌমাভ। ফুলগুলো রাখল খাবার টেবিলে। তার পর জলখাবার বানিয়ে স্নানে যাওয়ার আগে ইশিতাকে ডেকে তুলল। স্নান সেরে জামাকাপড় পরতে পরতেই একটা ফোন এল। ফোন তুলে যেন শক খেল সৌমাভ। ওর খুব ঘনিষ্ঠ সহকর্মী, দিল্লিতে তিন বছর একসঙ্গে কাটানো জয়ন্ত পণ্ডা সপ্তাহ দুয়েক আগে কাঠচোরদের গুলিতে মারা গেছে। ও ছিল সিমলিপাল রিজার্ভে। মাত্রই বছর দুয়েক আগে একটা ওয়ার্কশপে যোগ দিতে এসে কলকাতারই একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে। দু’বাড়ির আপত্তি উড়িয়েই ওরা বিয়েও করে। সকালেই এমন একটা খবরে মনটা খারাপ হয়ে গেল সৌমাভর। এর মধ্যেই কানে এল ঈশিতার হাহাকার! কুট্টি-মুট্টিদের কৌটোর দুধ ফুরিয়ে গেছে! এখন কী হবে? সৌমাভ ওকে জয়ন্তর খবরটা দিল। না চিনলেও এমন খবরে মন খারাপ হল ঈশিতারও। সৌমাভ অবশ্য বেশিক্ষণ সময় নিল না। দ্রুত নীচের দোকানটা থেকে একটা বড় কৌটোর গুঁড়ো দুধ কিনে আনল। ঈশিতাকে বলল, আগে ওদের খাওয়াও। তার পর নিজে খেয়ে মাছ-সব্জি ধোয়াধুয়ি কোরো। বলতে বলতে দেখল, পৌনে দশটা বাজে। ওর অফিস সেই হাজরায়। অনেকটা সময় লাগে যেতে। কোনওরকমে একটু খেয়েই কয়েকটা ফাইল নিয়ে দরজা টেনে বেরিয়ে গেল, তখন দশটা। অফিসের গাড়ি আজ আগেই এসে গেছে। সৌমাভ বেরোতেই জলখাবার খেতে খেতে পরপর মা এবং দিদিদের ফোন করে চারটের আগেই আসতে বলল ঈশিতা। মেজদিকে একটা বড় কেক আনতেও বলে দিল, দুটো অনুষ্ঠান একসঙ্গে বলে। সৌমাভ কী বাজার করেছে, কি কি ফুল এনেছে, সে সব দিয়ে কি করবে ও, সব কথাও সেরে নিল। এই ফাঁকে বেশি করে দুধ তৈরি করে রাখল আজ। তার পর দুটোকে তুলে পেটপুরে খাইয়ে নিজেদের বিছানায় ছেড়ে দিল। পেট ভরা আছে, একটু দুষ্টুমি করে ক্লান্ত হয়ে একটু পরেই ঘুমিয়ে যাবে। তখন কটে শুইয়ে দেওয়া যাবে। তার পর ঘর পরিস্কার করে মাছ ধুতে শুরু করল। পমফ্রেট, চিংড়ি, ভেটকি— তিন রকমের মাছ। সব ক’টাই ঈশিতার ভারী প্রিয়। ঠিক করল মাছ ধুয়ে, একটু আনাজ কেটে তার পরে স্নান করবে একেবারে। একফাঁকে ঘরে উঁকি মেরে দেখল, দুটোই ঘুমিয়েছে। এখন ঘন্টা তিন-চারেক নিশ্চিত। এমনিতে ওরা ভারী শান্ত, বিশেষ দুষ্টুমি করে না। ওদের আস্তে আস্তে কোলে নিয়ে কটে সাবধানে শুইয়ে দিল। ঠিক করল, ওরা ঘুম থেকে উঠলে স্নান করিয়ে ওদের আবার খাইয়ে দেবে। ও একেবারে মা-দিদিরা এলে খাবে। সকালে ভারী জলখাবার খেয়েছে, এখন খিদে পেতে পেতে সেই তিনটে। এই সব ভাবতে ভাবতেই দরজায় কে যেন ঠকঠক করল। এখন আবার কে? তাড়াতাড়ি ম্যাক্সিতে হাত মুছে দরজা খুলেই ভয়ঙ্কর চমকে গেল গেল ও।
Parent