তার ছিঁড়ে গেছে কবে - অধ্যায় ২৫

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-68445-post-5940059.html#pid5940059

🕰️ Posted on May 6, 2025 by ✍️ Choton (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1821 words / 8 min read

Parent
(২৫) বুঝি ভোলার বেলা হল সে দিন ভুবনেশ্বর এয়ারপোর্টে প্লেন থেকে নেমে সৌমাভ যখন বাইরে এল, তখন প্রায় সন্ধ্যে নেমে গেছে। এয়ারপোর্টের বাইরে বসেই প্রথমে ছেলেমেয়েকে পেট ভরে আগে বোতলে করে আনা দুধটা খাইয়ে দিল। তার পরে ওদের হিসুপটিতে ভেজা কাপড়গুলো একটা প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে ডাস্টবিনে ফেলল। ও প্রথমে ঠিক করেছিল, প্লেন থেকে নেমে সোজা চলে যাবে বারিপদা। সেখানেই অফিসের দেওয়া একটা বাড়িতে থাকত জয়ন্ত ও জয়তী। এইটুকু ও জানে। বাকিটা রাতে কয়েক জনকে ফোন করে জেনে নেবে না হয়। ওদের কোনও সন্তান হয়নি, সেটাও ও জানত। এখন দেখল, ওকে দুটো চার মাসের শিশুকে নিয়ে প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার রাস্তা যেতে হবে। এদিকে সন্ধ্যা নেমে গেছে। সে দিনের মতো একটা হোটেলে রাত কাটিয়ে পরদিন ভোরে বেরোবে বলে ঠিক করল। সেই মতো একটা হোটেলে গিয়ে ঘর নিল এবং সেখানেই দুটো বাচ্চার জন্য দুধ ও নিজের জন্য ডিনারের অর্ডার দিল। সকালের ব্রেকফাস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় কিছুই খায়নি ও। হোটেলের ঘরে ঢুকে আগে বাচ্চাদুটোকে জাগিয়ে দিল। ওরা এখন খেলবে। খেলুক, তা হলে রাতে ভাল করে ঘুমোবে। বিরাট বিছানায় দুই ভাইবোনে শুয়ে হাতপা নেড়ে নানা রকম আওয়াজ করে নিজেদের মতো খেলতে লাগল। সে দিকে একবার তাকাতেই সকালের কথাগুলো মনে করে চোখে জল এসে গেলেও চোয়াল শক্ত করে দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে একটা গাড়ি বুক করে নিল হোটেল থেকেই। ভোর পাঁচটায় বেরোবে ওরা। রাস্তায় সমস্যা না হলে ১১টার মধ্যে ঢুকে যাবে। তার পর দ্রুত স্নান সেরে ফ্রেস হয়ে এল। ততক্ষণে বাচ্চাদের দুধ এসে গেছে। ও ঠিক করল আগে নিজে খাবে, তার পর বাচ্চাদের খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে নিজেও একটু ঘুমনোর চেষ্টা করবে। হোটেলে স্নানের পরে শরীর এখন ছেড়ে দিচ্ছে। কিন্তু তা-ও সব সেরে বাচ্চাদুটোকে খাইয়ে দিতেই ওরা ঘুমিয়ে পড়ল। হোটেলের রিসেপশনে ফোন করে ওকে ভোর চারটেয় তুলে দিতে বলে আরও একবার গাড়ির কথা মনে করিয়ে দিল। তার পর বালিশে মাথা রাখল বটে, কিন্তু ঘুম আর আসে না। ক্রমাগত সকালের ওই ঘটনা, ঈশিতার চিৎকার-শীৎকার, আন্দামান থেকে ফেরা অবধি ঈশিতার আচরণ, ওর বাড়ির লোকের আচরণ, গুঞ্জার ছেলেমানুষি মাখা ভালবাসা সব মনে পড়তে লাগল। ছোট থেকে বহু কষ্ট করে বড় হলেও সৌমাভ সেই ভাবে কখনও কাঁদেনি। আজ কিছুক্ষণ কাঁদল। তার পর একসময় ক্লান্ত শরীর-মন নিয়ে ঘুমিয়েও পড়ল। ভোরে সময়মতো উঠে দ্রুত বাথরুমের কাজ সেরে সব গুছিয়ে ঘুমন্ত অবস্থাতেই দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে নীচে নেমে দেখল গাড়ি রেডি। চালককে সব বুঝিয়ে একটাই অনুরোধ করল, ‘‘খুব সাবধানে চালাবেন, এই দুটো শিশুর সেফটি আপনার হাতে। আর যদি পারেন, বেলা বাড়ার আগেই যতটা বেশি জোরে চালিয়ে এগোনো যায়, দেখুন।’’ গাড়ি পাঁচটার আগেই রওনা হয়ে গেল। চালকের অসাধারণ হাত এবং বারিপদা যাওয়ার ভিতরের রাস্তাঘাট জানা থাকায় ওরা দশটার একটু পরেই পৌঁছে গেল বারিপদা। ইতিমধ্যে একবার দুটো বাচ্চাই জেগে ওঠায় হোটেল থেকে আনা দুধ ওদের খাইয়ে দুটোকে দুই থাইয়ে বসিয়ে দিল। ওরা নিজেদের মতো ব্যস্ত হয়ে গেল। পথে একফাঁকে গাড়ি থেকে নেমে জয়ন্তদের বাড়ির ঠিকানাটা জেনে নিল উড়িষ্যার বন দফতরের এক পরিচিত লোকের থেকে। যদিও তাকে বলল না যে ও এখন সেখানে যাচ্ছে। বলল, পরে একসময় দেখা করতে যদি যায়, তাই ঠিকানাটা দরকার। সৌমাভ জানে, ঈশিতার কীর্তিকলাপ কাল ও ফাঁস করার পরে এবং কুট্টি-মুট্টিকে নিয়ে চলে আসার পরে এ বারে ওকে এবং কুট্টি-মুট্টিকে খোঁজা শুরু করবে ঈশিতাদের বাড়ির লোক। যে ভাবেই হোক বিয়ে দিয়ে দেওয়া মেয়েকে কলঙ্কমুক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠবে ওদের বাড়ির লোক। তার আগেই দুই সন্তানকে নিয়ে ওকে সরে যেতে হবে নিরাপদ জায়গায়। বিস্তর খোঁজাখুঁজি করে সৌমাভ যখন জয়ন্তর ছোটখাটো একতলা বাড়িটার দরজার বেল বাজাল, তখন বেলা ১১টা। দরজা খুলে একটা অচেনা লোক, কোলে দুটো দুধের শিশু— এই সব দেখে চমকে গেল জয়তী। সৌমাভ নিজের পরিচয় দিতেই জয়তী ওকে চিনতে পারল। তিন বছর দিল্লিতে একই ঘরে থাকত সৌমাভ ও জয়ন্ত। দু’জনেই দু’জনের খুব ঘনিষ্ঠ ছিল। সৌমাভর সব কথাই ওকে জয়ন্ত বলেছিল। ফলে আড়ষ্টতা কেটে গেল অল্পক্ষণের মধ্যেই। ওদের বাড়ির সর্বক্ষণের অল্পবয়সী কাজের মেয়েটির হাতে দুটো শিশুকে দেখভালের ভার দিয়ে দু’জনে কথা বলতে বসল। সৌমাভ খেয়াল করল, জয়তীর বয়স ২৩-২৪ মতো। দেখতে খারাপ না, শরীরস্বাস্থ্যও বেশ আকর্ষণীয়। স্বামী হারানোর যন্ত্রণা থাকলেও তা এই কয়েক দিনে অনেকটাই সামলে উঠেছে। জানতে পারল, সরকারের তৎপরতায় সে দিন রাতেই জয়ন্তর দাহ মিটেছে। জয়ন্তর বাড়ির লোকজনের পাশাপাসি জয়তীর মা-বাবা এমনকি দাদা-বৌদিও এসেছিলেন। কিন্তু পরের দিনই তাঁরা সকলে ফিরে গেছেন। আসলে জয়ন্তর সঙ্গে জয়তীর প্রেমের বিয়েটা দু’বাড়ির কেউই মেনে নেয়নি। তাই এই অবস্থাতেও তাঁরা পাশে না দাঁড়িয়ে উল্টে নানা রকম দোষারোপ করে যে যার মতো চলে গেছে। ও নিজের মতো একাএকাই কাছের একটা মন্দিরে গিয়ে শ্রাদ্ধের কাজ করেছে। সব শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেল সৌমাভ! জয়তী অবশ্য এ সব নিয়ে একটুও ভেঙে পড়েনি। বরং বলল, ওর চাকরির ব্যাপারটা দ্রুত প্রসেসে চলে যাবে বলে সে দিনই মন্ত্রী নিজে আশ্বাস দিয়েছেন। তখন ও কোথায় থাকবে জানে না, তবে আর বিয়ে করার ইচ্ছে নেই ওর। বাকি জীবনটা নিজের পায়ে দাঁড়িয়েই কাটিয়ে দেবে, সে মনের জোর ওর আছে। দরকারে কোনও শিশুকে দত্তক নেবে। সব শুনে সৌমাভ ওকে বলল, ‘‘আপনি কালই একবার দেখা করুন। এ দিক থেকে চিঠিটা ছাড়া হলে বাকিটা আমি দেখে দেব, চিন্তা করবেন না।’’ জয়তী ওকে অনুরোধ করল আপনি ছেড়ে তুমি বলতে, কারণ বয়সে জয়ন্ত ওর চেয়ে অনেক বড়। হাসিমুখে সে কথা মেনে নিল সৌমাভ। তার পর ওদের বাড়ির ফোন থেকেই দিল্লিতে মাথুর স্যারকে ফোন করে জয়ন্তর ব্যাপারটা বলতেই তিনি বললেন, ‘‘আমি শুনেছি। ওর স্ত্রী চাকরিটা পাবেন। যদিও শুরুতে ক্লারিকাল পোস্ট হবে, তবে পরে পরীক্ষা দিয়ে প্রোমোশান পাবেন অনেক। বয়স কম, ফলে অসুবিধা হবে না। অনেক সিনিয়ার পোস্টে থেকেই রিটায়ার করতে পারবেন। তবে চিঠি না এলে তো কিছু করতে পারব না রে! আর তুই কবে জয়েন করবি ভদ্রায়? ওখানে কিন্তু খুব চাপ হবে। অনেক কাজ দেখার আছে। তার পর একগাদা জায়গায় পরপর ট্রান্সফার নিবি। যা-ই কর, নিজের সার্ভিস বুকটা ঠিক রাখিস আর শরীরের যত্ন নিস। বউমাকে সাবধানে রাখিস। ছেলেমেয়েদেরও। কেমন? আর আমি দেখছি, আমার সেক্রেটারিকে দিয়ে ওদের মন্ত্রীকে বলে কাল-পরশুর মধ্যে জয়ন্তর স্ত্রীর বিষয়টা প্রসেস করে দিতে। ওনাকে বলিস, কাল-পরশুর মধ্যে ডিএম অফিসে দেখা করতে। আর তো ক’টা দিন। তার মধ্যে যতটা পারি, ভাল কাজ করে রাখি’’ বলেই হোহো করে হেসে উঠে ফোনটা রাখলেন। ও মাথুর স্যারকে ঈশিতার প্রতারণা ও নোংরামির কথাটা বলতে পারল না কিছুতেই। বলতে পারল না, কী অবস্থায় ও আছে এবং কেনই বা এই ভাবে কলকাতা ছেড়ে পরপর ট্রান্সফারের আব্দার করেছে মাথুর স্যারের কাছে।   ফোনটা রেখে জয়তীকে সব কথা খুলে জানাল। বলল, ‘‘তুমি কালই যাও ডিএম অফিসে। দেখো মন্ত্রী কী করেন। আর সব ডকুমেন্ট গুছিয়ে নিয়ে যাবে। মনে হচ্ছে, দিন পনেরোর আগেই তোমার কেসটা হয়ে যাবে।’’ সৌমাভর ফোন এবং এখন এই বলার ভঙ্গিতে জয়তী বুঝল, লোকটা বেশ প্রভাবশালী। না হলে এই ভাবে কথা বলতে পারত না। ফোনের ওপারের লোকটা কে ছিলেন, সেটা ও বুঝতে পারেনি। এটুকু বুঝেছে, তিনি দিল্লির কোনও বড় কর্তা। অনেকটা নিশ্চিন্ত হল। তার পর সৌমাভকে দ্রুত স্নান সেরে খেয়ে নেওয়ার অনুরোধ করল। জয়ন্ত মারা যাওয়ার পর থেকে মাছ-মাংস খায়নি ও, তাই নিয়ে দুঃখ করতেই সৌমাভ বলল, ‘‘ও সবের কোনও প্রশ্নই নেই। জয়ন্ত আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। এই অবস্থায় তুমি মাছ-মাস দিলেও আমি খেতাম না। স্রেফ সেদ্ধভাত। তা ছাড়া কাল থেকে খুব হেকটিক চলছে, ও সব খেলে শরীর খারাপ লাগবে। তুমি বরং এক কাজ করো, তুমিও স্নান সেরে এসো, একসঙ্গেই খেয়ে নিই। তার পর একটু রেস্ট নেব।’’ খেতে বসে কথায় কথায় জয়তী জানতে চাইল সৌমাভর বিষয়ে। সৌমাভর এখন আর কোনও সঙ্কোচ নেই। অকপটে আন্দামানে বিয়ে থেকে গত কাল দুপুরের ঘটনা— সব উগড়ে দিল। এমনকি আলাদা করে গুঞ্জার কথাও বলে বলল, ‘‘জানো তো, ওদের বাড়িতে আমি গোড়া থেকেই কেমন অচ্ছুৎ ছিলাম। বুঝতে পারতাম, কিন্তু ঈশিতার কথা ভেবে চুপ করে যেতাম। ঈশিতার তখন অবশ্য আমার কথা নিয়ে ভাবারই সময় ছিল না। সেটাও বুঝতে পারতাম। ও তখন যে নিজেকে বদলাতে শুরু করেছে, সেটা অবশ্য বুঝতে পারিনি। কিন্তু ওই একটা পুঁচকে মেয়ে গুঞ্জা আমাকে সবথেকে বেশি বুঝত। আমি না বললেও বুঝে যেত কত সময়! ওর জন্য খারাপ লাগে।’’ কথায় কথায় ঈশিতা কোন কলেজের ছাত্রী জেনে চমকে উঠল জয়তী। ওই একই কলেজ থেকে তো ও নিজেও পাশ করেছে। টানা তিন বছর কলেজের জিএস হয়েছিল। এমনকি পাশ করার পরেও প্রায় বছর তিনেক কলেজ ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের সূত্রে কলেজে প্রায়ই যেত। গত বছরও জয়ন্তে নিয়ে কলকাতায় এসেছিল যখন, তখন কলেজের রিউইনিয়নেও গিয়েছিল জয়তী। ঈশিতার কোনও ছবি আছে কি না জানতে চাইলে সৌমাভ ব্যাগ খুলে অ্যালবামটা বের করে ছবিটা দেখাতেই চিনতে পারল ও। গত বছরই ইলেভেন থেকে টুয়েলভে ওঠা এই মেয়েটা গান গেয়ে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছিল। ভাল আবৃত্তিও করেছিল। অন্য দিকে রাহুল নামের ছেলেটা সম্পর্কেও ও সে বারই শুনেছিল। কিন্তু ঈশিতাকে দেখে তো মনে হয়নি তখন যে ও রাহুলের সঙ্গে প্রেম করে। অবশ্য কয়েক ঘন্টায় কী বা বোঝা যায়! বরং রাহুলকে নিয়ে ‘দুবে মানেই দেবে’ অশ্লীল রসিকতা শুনে খুব বিরক্ত হয়েছিল জয়তী। কলেজ ইউনিয়নের মেয়েদের বলেছিল, তোরা কিছু করতে পারিস না? বিয়ে এবং দুই সন্তানের মা হওয়ার পরেও সেই ছেলের সঙ্গে এই ভাবে জড়িয়ে ওই নোংরামি করেছে ঈশিতা? বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল জয়তী। সৌমাভর প্রতি সহানুভূতিতে ওর মনটা ভরে গেল। অনেকক্ষণ চুপ করে সব কথা নিজের মধ্যেই নাড়াচাড়া করল। তার পরে মুখ তুলে বলল, ‘‘সৌমাভদা, তোমার কথা জয়ন্তর কাছে অনেক শুনেছি। তুমি অনেক কষ্ট করে এই জায়গায় পৌঁছেছো। ও তোমাকে যে ভাবে ঠকিয়েছে, আর সেটা জানতে পেরে তুমি যেটা করেছো, সেটা একদম ঠিক। আমি বলছি তোমায়, তুমি কোনও ভুল করোনি।’’ গত কাল থেকে প্রায় ২৪ ঘন্টা পরে এই প্রথম কারও কাছে সব কথা বলে এমনিতেই অনেক হাল্কা বোধ করছিল সৌমাভ। জয়তীর কথায় এ বার ও প্রায় কেঁদে ফেলল কৃতজ্ঞতায়। জয়তীর একটা হাত ধরে ধরা গলাতেই বলল, ‘‘তোমাদের মতো বন্ধু থাকে বলেই কিছু লোক অনেক বাধা টপকেও মাথা উঁচু করে থাকে। থ্যাঙ্ক ইউ ফর ইওর মরাল সাপোর্ট জয়তী, থ্যাঙ্ক ইউ!’’ ও দিকে জয়তীর বাড়ির কাজের মেয়েটার কোলে দিব্যি ততক্ষণে স্নান করে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে দুই খুদে। জয়তীই জানাল, মেয়েটি অতি গরিব ঘরের। ওর নাম সুভদ্রা। ওদের বাড়ি ঢেঙ্কানলে। আদিবাসী হলেও ক্লাস টেন অবধি পড়েছিল গ্রামের কলেজে। রেজাল্টও খারাপ না। ওর মা গ্রামের এক মন্দিরের পুরোহিতের সঙ্গে পালিয়ে যায়, তার পর গ্রামে টিকতে না পেরে বাবাকে নিয়ে পালিয়ে আসে শহরে। তখনই একজনের সূত্রে ওকে নিজের বাড়িতে রেখে দেয় জয়তীরা। সে প্রায় দু’বছর হতে চলল। মেয়েটি প্রায় ওদের ঘরের লোক। বয়স প্রায় ঈশিতারই মতো। জয়তীকে দিদিমণি বলেই ডাকে। খেয়ে উঠে দুই ছেলেমেয়েকে পাশে নিয়ে দুপুরে প্রায় ঘন্টাতিনেক ঘুমিয়ে সৌমাভ যখন উঠল, তখন প্রায় সন্ধ্যা। এখন ওর অনেক ফ্রেস লাগছে। ওদিকে দুই খুদে উঠেই কান্নাকাটি শুরু করতেই সুভদ্রা এসে ওদের কোলে নিয়ে বাইরে চলে গেল। তার পর ভাল করে দুধ খাইয়ে ফ্রেস করে গায়ে গরম জামা চাপিয়ে ওদের নিয়ে খেলতে শুরু করল। সৌমাভও উঠে ফ্রেস হয়ে চা খেয়ে জয়তীদের বাড়ির সামনের ছোট্ট বাগানটায় বসল। দেখল, কর্তাগিন্নি মিলে বেশ কয়েকটা গাছ লাগিয়েছে। এর মধ্যেই জয়তী এসে ওর সঙ্গে গল্প জুড়ে দিল। নানা কথা, নানা বিষয়। সৌমাভ আসার পরে ওর সঙ্গে কথা বলে এবং নিজের ভবিষ্যত নিয়ে আশা পাওয়ার পরে ওর মুখচোখ এখন অনেক ফ্রেস। দু’একটা হাসিঠাট্টাও হল দু’জনে। কথায় কথায় গত এগারো মাসের অনেক টুকরো ঘটনা, টুকরো জিনিস জয়তীকে বলল সৌমাভ। জয়তীও চুপ করে শুনল, কাঁদলও নীরবে। ও বুঝে গেছে, যত বলবে, তত হাল্কা হবে লোকটা। একই সঙ্গে বুঝল, ঈশিতাকে কী পাগলের মতো ভালবাসে সৌমাভ, যে এত কিছু সহ্য করেও এগারো মাস ধরে শুধু একতরফা ভালই বেসে গেছে প্রতিদানের আশা না করে। এবং এও বুঝল, আজও সৌমাভর মনে ঈশিতা ছাড়া অন্য কোনও মেয়ে নেই। রাত বাড়লে এক সময় ঘরে এল। সৌমাভ অবাক হয়ে দেখল, ওকে দেখেও দুই খুদে ওর কোলে না এসে বরং হাতপা নেড়ে দুর্বোধ্য ভাষায় সুভদ্রার সঙ্গে খেলে যাচ্ছে। সুভদ্রাও ওদের সঙ্গে তাল দিয়ে হেসে গড়িয়ে যাচ্ছে। ভাল করে লক্ষ্য করে দেখল, আদিবাসী হলেও সুভদ্রার গায়ের রং তুলনায় পরিস্কার। শরীর-স্বাস্থ্যও বেশ ভাল। সেটার একটা কারণ হতে পারে, এই বাড়িতে প্রায় দু’বছর ধরে যত্নে থাকার ফলে হয়েছে। ওর সুভদ্রাকে খুঁটিয়ে দেখা দেখে জয়তী চোখের ইশারায় মশকরাও করল।
Parent