তার ছিঁড়ে গেছে কবে - অধ্যায় ২৮

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-68445-post-5940062.html#pid5940062

🕰️ Posted on May 6, 2025 by ✍️ Choton (Profile)

🏷️ Tags:
📖 909 words / 4 min read

Parent
(২৮) এবার উজাড় করে লও সেদিন বিকেলে সৌমাভর ঘুম ভাঙল অনেক দেরিতে। উঠে দেখল শরীরটা বেশ ঝরঝরে লাগছে। কারণটা বুঝতে ওর অসুবিধা হল না। গত প্রায় ৪৮ ঘন্টা ধরে ওর উপর দিয়ে যে ঝড় গেছে, গত এগারো মাস ধরে যে অবহেলা উপেক্ষা আর প্রতারণা ওকে পেতে হয়েছে, আজ যেন অনেকটা শান্ত লাগছে নিজেকে। তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেস হয়ে বারান্দায় এসে দেখল, সুভদ্রা দুটোকে নিয়ে সামনের ছোট মাঠটায় মাদুর পেতে খেলছে। খেলছে মানে দুর্বোধ্য, অর্থহীন কিছু শব্দ আর হাসি ছাড়া বোঝা গেল না। ওর বেশ ভাল লাগল। কোথাকার কোন আদিবাসী মেয়ে, রক্তের সম্পর্ক তো দূর, কয়েক ঘন্টা আগেও চিনত পর্যন্ত না, অথচ গত কাল থেকে মায়ের স্নেহে দুটো শিশুকে পরম যত্নে রাখছে ওই মেয়েটাই। অথচ ওদের আসল মা? মনটা ফের বিষিয়ে গেলে একটু। এর মধ্যেই জয়তী ওকে চা দিয়ে নিজেও একটা চেয়ার টেনে বসল। টুকটাক কথার মধ্যেই সন্ধ্যে গাঢ় হচ্ছে দেখে বাচ্চাদুটোকে নিয়ে সুভদ্রাকে ঘরে যেতে বলল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সুভদ্রা উঠে ওদের নিয়ে ঘরে ঢুকে গেল। বারান্দায় পাশাপাশি বসে চা খাওয়ার পরে সৌমাভ একটা সিগারেট ধরাল। গত কাল রাত থেকে শুরু করার পরে খুব বেশি না খেলেও আজ সারা দিনে এটা ওর তৃতীয় সিগারেট। একমনে সিগারেটে টান দিতে দিতে লাল। জয়তী ওর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘তোমার খারাপ লাগেনি তো? আসলে আমি নিজেকে....’’ কথাটা শেষ হল না। সৌমাভ বলল, ‘‘প্লিজ, তুমি এরকম করলে আমি নিজের কাছেই ছোট হয়ে যাব।’’ সৌমাভ ফের একটা সিগারেট ধরাল, আর জয়তী চেঁচিয়ে সুভদ্রাকে চা করতে বলল। চা খেতে খেতে দু’জনে এমনি নানা কথা বলতে শুরু করল। যদিও তার অনেকটা অংশ জুড়ে রইল ঈশিতা, ওদের বাড়ির লোকের কথা, ওদের মধঅযেকার ফাটল ও কবে টের পেয়েছিল, কিন্তু ঈশিতাকে বলতে গেলেও কথাই হত না। এত ব্যস্ত রাখত নিজেকে। শেষে গুঞ্জা ওকে চেপে ধরায় কিছু কিছু কথা বলেছিল। সুভদ্রা মন দিয়ে শুন। বুঝল, সৌমাভ অনেক যন্ত্রণা থেকে কথাগুলো বলছে। রাতের খাবার দেওয়ার সময় আবার দুটোকে নিয়ে অনেকক্ষণ খেলা করল সৌমাভ। এই দুটোই ওর প্রাণ। যে করেই হোক ঈশিতাদের পরিবারের ছোঁয়া বাঁচিয়ে এদুটোকে বড় করতে হবে, এখন এটাই ওর চিন্তা। কিন্তু তার থেকেও বড় চিন্তা হল, ও নতুন জায়গায় গেলে সেখানে এদুটোকে দেখবে কে? সৌমাভ ভেবে নিল, পরে জয়তীর সঙ্গে এ নিয়ে কথা হবে। রাতে খেয়ে উঠে আবার বারান্দায় বসে একটা সিগারেট ধরিয়ে অনেক দিন পরে গান ধরল সৌমাভ, নিচু কিন্তু ভরাট গলায়, ‘‘খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি আমার মনের ভিতরে। কত রাত তাই তো জেগেছি বলব কী তোরে॥ প্রভাতে পথিক ডেকে যায়, অবসর পাই নে আমি হায়--     বাহিরের খেলায় ডাকে সে, যাব কী ক'রে॥’’ শেষের লাইনটা গাওয়া থামতেই ওকে চমকে দিয়ে পাশ থেকে জয়তীর নীচু কিন্তু সুরেলা গলা ভেসে এল, তবে কয়েকটা লাইন বাদ দিয়ে ধরল সে— ‘‘যে আমার নতুন খেলার জন, তারি এই খেলার সিংহাসন,     ভাঙারে জোড়া দেবে সে কিসের মন্তরে॥’’ শেষ দুটো লাইন গেয়ে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে মুখ ঢাকল জয়তী। সৌমাভ ওর মানসিক যন্ত্রণা বুঝে কিছু বলল না, শুধু আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, ‘‘নিজেকে শক্ত করো। অনেক পথ যেতে হবে তোমাকে।’’ কথাটা শুনেই সৌমাভর বুকে লুটিয়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে জয়তী বলল, ‘‘তোমার বন্ধু যদি এইটুকুও বুঝত, আমার কোনও দুঃখ থাকত না। কিন্তু অত ঝামেলা করে বিয়ে করার পাঁচ-ছয় মাসের মধ্যে ও যে এমন বদলে যাবে, ভাবিনি। সত্যি বলছি সৌমদা, অন্য ভাবে নিও না, একটা সন্তান পেলে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি বাকিটা কাটাতে পারব। তা ছাড়া তোমার মতো বন্ধু পাশে থাকবে, তুমি দেখো, আমি সব সামলে নিতে পারব। আর মন খারাপ করব না, প্রমিস।’’ সৌমাভ ওকে সামলাতে সামলাতে কিছুক্ষণ মজা করল। জয়তীর মনের মেঘটা কেটে গেল অনেকটা। সে দিন অনেকক্ষণ গল্প করল দুজনে বসে। সৌমাভ একসময় দ্বিধা কাটিয়ে জয়তীকে বলল, ঈশিতা সে দিন কী ভাবে রাহুলের উপরে উঠে ওকে কী করছিল এবং সে সময় কী কী বলছিল। ঈশিতার ভাষা এবং আচরণে আরও একবার স্তম্ভিত হয়ে গেল জয়তী। চুপ করে থেকে বলল, ‘‘এই সব কথা স্বামী-স্ত্রীর একান্ত মুহূর্তের কথা। জয়ন্তও আমাকে বলত। প্রথম প্রথম অস্বস্তি হলেও পরে কিন্তু ভাল লাগত, বিশেষ করে ওই সব সময়। কিন্তু নিজের স্বামী ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে? ছিঃ।’’ তার পরেই গলাটা গম্ভীর করে বলল, ‘‘ওর ওই সব কথা এবং কাজেই স্পষ্ট, ঈশিতা রাহুলের সঙ্গেই শুতে চাইত। তুমি ছিলে ওর স্টপগ্যাপ পুতুল। ফলে তুমি যেটা করেছো, সেটা কতটা ঠিক বুঝতে পেরেছো?’’ সৌমাভও সেটা স্বীকার করে নিল। সে দিন রাতে খাওয়ার আগে বেশ কিছুক্ষণ দুই খুদের সঙ্গে কোস্তাকুস্তি করল সৌমাভ। তাতে যোগ দিল জয়তী এবং সুভদ্রাও। একটা সুখী পরিবারের আবেশ যেন। তার পর রাতে খেয়ে সুভদ্রা বাচ্চাদুটোকে কোলে তুলে চলে যেতেই ও একটা সিগারেট ধরিয়ে এসে বসল বাইরের বারান্দায়। একটু পরেই জয়তীও এল। দু’জনে অনেকক্ষণ গল্প করল। জয়ন্তর কী হয়েছিল, ও কখন খবর পেল, বাড়ির লোক আর ফোন করেছিল কি না, এই সব নানা কথার পরে দু’জনে শুতে গেল। পরদিন সকালে ওর ঘুম ভাঙাল জয়তীই। তাকিয়ে দেখল, বেশ বেলা হয়েছে। প্রায় এগারোটা। জয়তী স্নান সেরে সেজেগুজে একদম বাইরে যাওয়ার পোশাকে। ও অবাক হয়ে তাকাতেই বলল, ‘‘ডিএম অফিস থেকে ফোন করেছিল, চিঠিটা আজই গিয়ে সই করে নিতে হবে। তুমি ফ্রেস হয়ে চা আর হাল্কা জলখাবার খাও। এসে একসঙ্গে খাব। আজ মাছ আনিয়েছি, দুপুরে ভাল করে খাব সবাই মিলে, কেমন? আমি একটু পরেই চলে আসব। তার পর তোমার সঙ্গে অনেক কথা আছে।’’ জয়তী বেড়িয়ে যেতে ও উঠে ফ্রেস হয়ে চা-বিস্কুট খেয়ে দুটো খুদেকে নিয়ে মেতে রইল। এর ফাঁকে টুকটাক সুভদ্রার সঙ্গেও কথা বলল। এই দু’দিনে সুভদ্রা অনেক সহজ হয়ে গেছে ওর কাছে। তবে ওড়িয়া ছাড়া অন্য ভাষা সে রকম বলতে পারে না। হিন্দি বললেও সেটা ভাঙাভাঙা। সৌমাভ জানল, ওরা ঢেঙ্কানল থেকে এসে ভুবনেশ্বরে কয়েক মাস ছিল। তখন একটা রাস্তার ধারের খাবার হোটেলে বাপ-বেটিতে কাজ করত। সেখানে বাবা মারা গেলে কিছু বদ লোক ওর পিছনে পড়ে যায়। সেখানেই বাস-লরির ড্রাইভার-খালাসিদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ও হিন্দি যেটুকু শিখেছে। কিছু কিছু ইংরেজি কথাও জানে, তবে সেসব কলেজে পড়তে গিয়ে জেনেছিল। সৌমাভ বুঝল, মেয়েটির মেধা আছে, ঘষলে উন্নতি করতে পারে।
Parent