তার ছিঁড়ে গেছে কবে - অধ্যায় ৩৪

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-68445-post-5941349.html#pid5941349

🕰️ Posted on May 8, 2025 by ✍️ Choton (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1971 words / 9 min read

Parent
(৩৪) তারে দেহ গো আনি আজ অফিসে একসঙ্গে পাঁচজনকে নানা টেবিলে ঘুরতে দেখে জয়তী প্রথমে বুঝতে পারেনি। পাশে এক সহকর্মীকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পেরেছিল, ওরা নাকি সৌমাভস্যারের খোঁজ করছে। আগেও কয়েকবার এসেছিল, কেন কে জানে। বারবার বলা হয়েছে, সৌমাভস্যার এই অফিসে আর কাজ করেন না, তবু আসে! ভদ্রলোক বেশ বিরক্ত। তখনই একঝলক দেখে ঈশিতাকে চিনতে পারে ও। তা ছাড়া সৌমাভর অ্যালবামেও ঈশিতার ছবি দেখেছিল। পরে অবশ্য ঈশিতার সব ছবি ওর সঙ্গে বসেই কেটে কেটে একটা বাক্সে করে ওর হাত দিয়ে কলকাতায় পাঠিয়ে দিয়েছিল। তাতে উপরে ঠিকানা লেখা এবং ভিতরে গুঞ্জাকে লেখা দু-তিন লাইনের একটা চিঠিও ছিল, সেটাও জয়তী জানে। ও ইচ্ছে করেই ঈশিতাদের সামনে দিয়ে তখন নিচে নামছিল। ভেবেছিল, ঈশিতা ওকে চিনতে না পারলে ও নিজেই পরিচয় দেবে। ওর শোনা দরকার, ঈশিতা বা তার বাড়ির লোক কী বলে। গুঞ্জাকে একঝলক দেখেই চিনেছিল। ঈশিতার চেয়েও যেন বেশি সুন্দরী, গায়ের রংটা একেবারে গোলাপী। চোখমুখে একটা আশ্চর্য সরলতা। ভারী মায়া মাখানো। ওদের বিকেলে ওর ফ্ল্যাটে আসতে বলে উপরে গিয়ে সোজা ফোন করল সৌমাভর অফিসে। পেল না। একঘন্টা পরে সৌমাভ পাল্টা ফোন করলে ওকে বলল, ‘‘ঈশিতারা তোমার খোঁজে এই অফিসে এসেছে। আগেও নাকি কয়েক বার এসেছিল। তখন আমি ছিলাম না বা জানতে পারিনি। আজ ওদের আমার ফ্ল্যাটে ডেকেছি বিকেলে। আমি ৫টায় ঢুকব, ওরা হয়তো পিছন পিছনই ঢুকবে। তুমি পাঁচটা ১০-১৫ নাগাদ আমাকে ফোন করবে। আমি রং নম্বর বলে রিসিভারটা নামিয়ে রাখব। জিজ্ঞাসা করলে বলব, কথার সময় যাতে ডিস্টার্ব না হয়, তাই ক্রেডেলে রাখব না। তুমি শুনো সব কথা, আমি কি বলি, সেটাও শুনো। আমি কোনও ভুল বললে পরে বুঝিয়ে বোলো। তার পর সব ঠিক কোরো।’’ সৌমাভ হাহা করে হেসে উঠে বলল, ‘‘যথা আজ্ঞা দেবী’, বলে ফোনটা রেখে দিল।   বিকেল হতেই আকাশ মেঘে ঢাকল। জয়তী একটু তাড়াতাড়ি নীচে নেমে একগাদা খাবার কিনল। আরও কয়েকটা টুকিটাকি জিনিস কিনে ফ্ল্যাটের নিচে পৌঁছে দেখল, ছয়জনই হাজির। ও দিকে মেঘ আরও ঘন হয়েছে, যখন তখন বৃষ্টি নামবে। দ্রুত ওদের নিয়ে উপরে উঠল। ফ্ল্যাটের একের পর এক দরজা খোলা দেখে ঈশিতার মেজদি বলেই ফেললেন, ‘‘বাবা, এত সিকিউরিটি?’’ জয়তী মুচকি হেসে বলল, ‘‘একে একা থাকি, বদ লোকের তো অভাব নেই। তা ছাড়া উটকো লোক কেউ এলে যাতে সহজে ঢুকতে না পারে, সেই জন্য আইহোলও লাগিয়েছি। বাড়িতে ফালতু লোক ঢুকতে দিই না। অপছন্দের কেউ জোর করে ঢুকতে এলে লাথি মেরে বের করে দেব, এটুকু মনের জোর আছে। তাতেও না হলে চেঁচিয়ে পাড়া জাগিয়ে দেব না! যাক, আপনারা আসুন, আমি একটু ফ্রেস হয়ে আসছি।’’ জয়তীর কথাগুলো শুনে ঈশিতার দুই দিদিই ওর মুখের দিকে তাকাল। ঈশিতা মাথা নামিয়ে নিল। বড়দি অপছন্দের লোককে লাথি মেরে বের করে দেওয়ার কথা যে সেদিন রাতে বলেছিল, সেটা মনে পড়ল তিন জনেরই। জয়তী ঘরে ঢুকে আগে ওদের সবাইকে খাবার টেবিলে বসিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে চা বসাল। চা হয়ে গেলে ঢেলে সবাইকে কাপে করে দিয়ে বলল, ‘‘এবার একটু বসুন, আমি চট করে ফ্রেস হয়ে নিই।’’ বলে পাশের ঘরে গেল। এর মধ্যে বৃষ্টি নেমে গেছে তুমুল জোরে। সঙ্গে ঝড়। দ্রুত বাইরের দিকের জানলাগুলো বন্ধ করে শোয়ার ঘরে গিয়ে শাড়ি-শায়া খুলতে খুলতে জয়তী সুরেলা গলায় গেয়ে উঠল, ‘‘এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায়, এমন দিনে মন খোলা যায়—’’ গাইতে গাইতেই বাথরুমে ঢুকে হাত-পা ধুল। তবে গান থামায়নি। বাথরুম থেকে যখন ঘরে ঢুকল, তখন ও গাইছে, ‘‘দু’জনে মুখোমুখি, গভীর দুখে দুখী, আকাশে জল ঝরে অনিবার—’’। ঈশিতার মনে পড়ল, আন্দামানে থাকার সময় একদিন প্রবল বৃষ্টি হয়েছিল সন্ধ্যায়। সেদিন সৌমাভ অফিস থেকে ফিরে চা খেতে খেতে বৃষ্টি দেখতে দেখতে কয়েকটা গান গাইছিল নিজের মতো করে। একসময় ও আর সৌমাভ দু’জনে মিলে এই গানটা গেয়েছিল খুব মজা করে। ঈশিতা একটা লাইন, সৌমাভ তার পরের লাইনটা— এই করে গেয়ে শেষ অংশটুকু দু’জনে একসঙ্গে গলা মিলিয়েছিল। তার পরে ভেসে গিয়েছিল চরম আদরে। আজ এমন পরিবেশে আবার সেই একই গান এবার জয়তীর গলায় শুনে চোখ জলে ভরে গেল ঈশিতার। কী সব আনন্দের দিন ও নিজেই হারিয়ে ফেলেছে নিজের দোষে! এর মধ্যেই বাইরের বসার ঘরে ফোনটা বাজল। জয়তী মুচকি হেসে গান থামিয়ে বেরিয়ে এসে দ্রুত ফোনটা ধরল। ওপাশে সৌমাভর গলা শুনেই গম্ভীর ভাবে রং নম্বর বলে ফোনের রিসিভারটা পাশে নামিয়ে রাখল। তার পর নিজেই সাফাই দিল, ‘‘কথার মধ্যে ফোন এলে বিরক্ত লাগে। কে না কে উটকো লোক...মহা জ্বালা।’’ বলে নিজের চা নিয়ে এসে বসে বলল, ‘‘হ্যাঁ, বল। তোরা সৌমাভদার খোঁজ করছিলি কেন?’’ ঈশিতা জানাল, এক বছর আগে ডিসেম্বরে ওর বিয়ে হয় সৌমাভর সঙ্গে। সৌমাভ তখন আন্দামানে। হঠাৎ করেই বিয়েটা ঠিক হয়, তাই রেজিস্ট্রিও হয়নি ওদের। একমাস পরে ওরা কলকাতায় ফেরে। বেলেঘাটায় একটা বড় ফ্ল্যাটও ভাড়া নিয়েছিল। কিন্তু দেখা যায়, ও ততদিনে প্রেগনেন্ট। তার উপর সামনে উচ্চমাধ্যমিক। তাই ও বাপের বাড়ি চলে আসে। তার পর পেটে যমজ বাচ্চা ছিল, ডেলিভারি এবং তার পরেও বেশ কয়েক মাস ও বাপের বাড়িতেই থেকে যায়। এর ফলে সৌমাভর সঙ্গে ওর একটা মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়। গত নভেম্বরে ও বেলেঘাটার বাসায় ফিরলেও কলেজের নানা অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত ছিল, তাই ওদের বিবাহবার্ষিকীটা পালন হয়নি। সেটা যেদিন করা হবে বলে ঠিক হল, সেদিন বেলার দিকে সৌমাভ অফিসে যাওয়ার পরে ওদের কলেজের এক বন্ধু এসেছিল ওর কাছে। তার সঙ্গে বসার ঘরে ও কথা বলছিল, বাচ্চাদুটো বাইরের ঘরে কটে শোয়ানো ছিল। সৌমাভ একসময় ঘরে ঢুকে এটা নিয়ে ভুল বুঝে রেগেমেগে বাচ্চাদুটোকে নিয়ে চলে গেছে। বহু খুঁজেও তার সন্ধান মেলেনি। এটুকু বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল ঈশিতা। ওর দুই দিদিও চোখে হাত চাপা দিলেন। শুধু গুঞ্জা অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। সব দেখে এবং ঈশিতার কথাগুলো শুনে রাগে গা জ্বলে গেল জয়তীর। সব হারিয়েও এখনও এত মিথ্যে কথা বলছে? এখনও নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা চালাচ্ছে? সৌমাভ ভুল বুঝে চলে গেছে? ও আর নিজেকে সামলাতে পারল না। চায়ের কাপটা নামিয়ে গলাটা শক্ত করে ঈশিতার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘এবার তোদের কয়েকটা কথা বলি। তোর বা তোদের পছন্দ না হলে চলে যাস, দরজাটা পিছন দিকে।’’ ঈশিতা আর ওর দুই দিদি হাঁহাঁ করে কিছু বলতে যেতেই হাত তুলে তাদের থামিয়ে দুই জামাইবাবুর দিকে তাকিয়ে গুঞ্জাকে দেখিয়ে বলল, ‘‘ও খুব ছোট। আপনারা দু’জন ওকে নিয়ে পাশের ঘরে চলে যান বা একটু বাইরে গিয়ে দাঁড়ান। বৃষ্টি থেমে গেছে, সমস্যা হবে না।’’ ওর কথার ভঙ্গিতে চমকে উঠল সবাই। এই এত হাসিখুশি, গান গাওয়া মেয়েটার এত বদল! ওরা তিন জন ঘর ছেড়ে বাইরে যেতেই জয়তী সেই একই স্বরে ঈশিতার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘তুই আগাগোড়া আমাকে একটা ডাঁহা মিথ্যে গল্প বললি। এবার আমি তোকে বলি। সৌমাভদা সেদিন কোনও ভুল বোঝেনি, ভুল করেওনি।’’ তার পরেই দুই দিদির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘আপনারা সেদিন কখন পৌঁছেছিলেন বেলেঘাটার ফ্ল্যাটে?’’ তিন জনেই তখন হতভম্ব। বুঝতে পারছে, জয়তী অনেক কিছু জানে। দুই দিদিই আমতা আমতা করে বলল, ‘‘ওই সাড়ে তিনটে হবে।’’ জয়তী কিছুক্ষণ কর গুনে বলল, ‘‘আপনারা কি সেদিন সৌমাভদার ফোন পেয়ে গিয়েছিলেন ওই সময়?’’ দুই দিদিই সেই একই রকম হতভম্ব অবস্থায় বলল, ‘‘হ্যাঁ, একটা দশ-পনেরো নাগাদ ফোন করে তাড়াতাড়ি বেলেঘাটার বাড়িতে যেতে বলেছিল।’’ এবার জয়তী বলতে শুরু করল, ‘‘তার মানে সকাল দশটায় সৌমাভদা অফিসে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে বিকেল অন্তত তিনটে— মানে প্রায় পাঁচ ঘন্টা ধরে সেদিন তুই আমাদের কলেজের সবচেয়ে নোংরা ছেলেটার সঙ্গে সেক্স করেছিলি এবং সেটাও খুব নোংরা ভাবে। দুটো চার মাসের শিশুকে বেডরুমের বাইরে অনাথের মতো ফেলে রেখে ভিতরের ঘরে সৌমাভদার বিছানাতেই এমন ভাবে সেক্স করেছিস, যা দরজা থেকে শোনা গিয়েছিল! সেটা না বলে তুই আমার কাছে মিথ্যে কথা বললি ফালতু ফালতু। সেদিন কলকাতা ছেড়ে দুটো খুদেকে নিয়ে ভুবনেশ্বরে গিয়ে পরদিন সকালে সৌমাভদা আমার কোয়ার্টারে পৌঁছয়। দুপুরে খাওয়ার পরে চেপে ধরাতে তোর পুরো গল্পটা শুনি। আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি প্রথমে। পরে রাহুল দুবে নামটা শুনে বুঝি, একটুও মিথ্যে বলছে না। আমি মাঝেমাঝেই কলকাতায় আসতাম। তখনই কলেজে এবং আরও নানা জায়গায় ওর কীর্তিকলাপের খোঁজ পেয়েছি। ও যে সেদিন তোর সঙ্গে কী করেছিল, সেটাও এবারে এসে জানলাম, কেউ কেউ জানে। আমি নিজে টানা তিন বছর কলেজে জিএস ছিলাম, তার পরেও বহুদিন, মানে বিয়ের পরে উড়িষ্যা যাওয়া অবধি কলেজের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল ইউনিয়নের সুবাদে। ফলে সবই খবর পাই। তুই সেদিন কতটা নোংরামি করছিলি ওই অতক্ষণ ধরে, সেটা আমি বলতে পারব না। আমি সৌমাভদার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধুর স্ত্রী। আমার কাছে বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিল সৌমাভদা। সব কথা বলতেও পারেনি। বলেওনি। তবে এমনি অনেক কথা বলেছিল। তোর এক বছরের বিয়ে বিয়ে নাটকের গল্প। আরও অনেক কিছু। আর এখন তোরা মিথ্যে গল্প ফেঁদে সৌমাভদার খোঁজ পেতে চাইছিস? শোন, আমার স্বামী জয়ন্ত আর সৌমাভদা তিন বছর দিল্লিতে একঘরে ছিল। জয়ন্তর কাছেই শুনেছিলাম, ওই অল্প বয়সে অত ভাল কাজ করার সুবাদে ও তখন ডিপার্টমেন্টে সবার কাছে খুব পপুলার ছিল। তার উপর ওই রকম ঝকঝকে, সুন্দর স্বাস্থ্য, হাসি-মজা, গান নিয়ে মেতে থাকা একটা ইয়ং ছেলে। মেয়েদের সঙ্গে বেশি মিশতে পারত না, মুখচোরা বলে। বহু মেয়ে তো বটেই, অনেকের বাবা-মা-দাদা-দিদিরা ওর সঙ্গে বাড়ির মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য এমনকি জয়ন্তকেও হাতেপায়ে ধরেছে কতবার। এমনকি অনেক বিবাহিতা মহিলাও ওকে পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল বলে ট্রান্সফার নিয়ে পালিয়ে আন্দামানে চলে গিয়েছিল। এ সবই আমাকে জয়ন্ত বলত আর হাসত। আমি জয়ন্তর মুখ থেকে গল্প শুনে সৌমাভদাকে চিনেছিলাম। পরে আমার কোয়ার্টারে গিয়ে তিন দিন ছিল, তখন আরও বেশি করে চিনেছিলাম। অমন খাঁটি হীরে হয় না। ছোটবেলায় মা এবং চাকরি পাওয়ার পরপরই বাবাকে হারানো সৌমাভদার কেউ ছিল না। এমনকি বাবার শ্রাদ্ধও করেছিল দিল্লি কালীবাড়িতে, জয়ন্ত ওর সঙ্গে সঙ্গে সব কাজ করেছিল। যে লোকটাকে স্বামী হিসেবে পাওয়া বহু মেয়ের স্বপ্ন ছিল, তাকে তুই স্রেফ ইউজ করেছিস ঈশিতা! একটাও মিথ্যে বলবি না, নিজের জালে নিজেই জড়াবি। নিজের আপনজন বলতে কেউ ছিল না বলে সৌমাভদা তোকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিল, আর তুই? তুই রাহুল দুবেকে নিয়ে শুতে চেয়েছিলি! এটাই তোদের মধ্যেকার সবচেয়ে বড় ফারাক। তুই বাপের বাড়ি যাওয়ার আগেপরে একবারও সৌমাভদার কথাটা চিন্তাই করিসনি। নিজের স্বার্থ ভেবে গিয়েছিস। আজ যাকে স্বামী বলে ক্লেম করছিস, সে একা একা থাকবে কেমন করে, সে কেমন আছে, কী খায়, তার শরীর কেন ভাঙছে, এ সব দেখার মানসিকতাই তোর ছিল না। কেন তোর সঙ্গে কম কথা বলে, কেন তোর কাছে শুতে চায় না, কেন তোকে কাছে টানে না, কেন তোর সামনে বা তোকে সঙ্গে নিয়ে আগের মতো গান করে না, এ সব নিয়ে ভাববি কখন? তোর তো সব জুড়ে তখন রাহুল দুবের সঙ্গে শোয়ার চিন্তা! তুই ভেবেছিলি, আমি সুন্দরী, তাই যা করব, সবাই সেটা মেনে নেবে। তুই তো বটেই, গুঞ্জা বাদে তোদের ফ্যামিলির সবাই সৌমাভদাকে  টেকেন ফর গ্রান্টেড বলে ধরে নিয়েছিলি ঈশিতা। তাই না মনে রেখেছিলি তার জন্মদিন, না মনে রেখেছিলি নিজেদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী, যেটা যে কোনও মেয়ের কাছে বিয়ের পরে সবচেয়ে স্মরণীয় দিন। এমনকি এ বছর জানুয়ারিতে যে তোর দুই ছেলেমেয়ের মুখেভাত হয়ে গেছে এবং সেটাও এই জায়গাটা থেকে কয়েকশো মিটার দূরে, সেটাও তো জানিস না! জানতে পারলে হয়তো আবার সেখানে গিয়ে মিথ্যে বলে নাটক করতিস কোনও। আর জানবি কি করে? শুধু জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না, অনেক কষ্ট করতে হয় একটা মা-কে। তাই এখন সৌমাভকে ভালবাসি বলে ফালতু নাটক করিস না, ওই রাহুলকেই পারলে বিয়ে কর। সৌমাভদার চরিত্র শুধু না, মানসিকতাও ইস্পাতের মতো। ও সে দিন একবার যখন সব নিজের চোখে দেখে, কানে শুনে অতক্ষণ সময় নিয়ে ওই বাড়ি থেকে নিজের সব কিছু, এমনকি কুট্টি-মুট্টিকেও নিয়ে চলে ছেড়ে গেছে, তখন মনে করিস না তুই আর কোনও দিন ওকে পাবি।’’ কথাগুলো বলতে বলতে হাঁপাচ্ছিল জয়তী। রাগে ওর শরীর তখনও জ্বলছে। একটু জল খেয়ে বলল, ‘‘তোদের বাড়ির লোকেরাও ওকে কোনও দিন সেই সম্মানটাই দেয়নি, যেটা ওর প্রাপ্য ছিল। একমাত্র গুঞ্জা, ওই ছোট্ট মেয়েটা ওকে বুঝত। গুঞ্জাকে শুধু বোন নয়, নিজের বন্ধু হিসেবে দেখত সৌমাভদা। তাই এমন অনেক কথা তার সঙ্গে শেয়ার করত, যেগুলো স্ত্রী এবং বন্ধু হিসেবে তোর সঙ্গে শেয়ার করার কথা ছিল। তোর এত উপেক্ষা, অবহেলার পরেও শুধু তোর সম্মানের দিকে তাকিয়ে, তোকে অন্ধের মতো ভালবেসে, কুট্টি-মুট্টি হওয়ার পরে তাদের দিকে তাকিয়ে একবুক অভিমান আর তোর উপেক্ষা সহ্য করেও সব মেনে নিয়েছিল। যদিও তোর সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে শুরু করেছিল তুই যেদিন ওকে নিয়ে নিজের বাপের বাড়িতে প্রথম রাত কাটিয়েছিলি। তার ঠিক আগে আগে কী একটা ঘটনা ঘটেছিল, সেটাতেও সৌমাভদা খুব আঘাত পেয়েছিল তোর কথার ভঙ্গিতে। সেটা আমাকে বলেনি অবশ্য। আর তুই নাকি ওর বউ বলে নিজেকে দাবি করিস? ছ্যাঃ। ও যে গান গাইত, তার মানে কোনওদিন বোঝার চেষ্টা করেছিস ঈশিতা? জানতে চেয়েছিলি কোনওদিন বুকে মাথা রেখে, কেন গাইলে তুমি এমন গান? কী হয়েছে তোমার, আমায় বলো? কোনওদিন করিসনি। পাত্তাই দিসনি। এমনকি তোর সামনে ও যে গাইত না আর, সেটা নিয়ে কোনও দিন জানতে চেয়েছিলি? চ্যালেঞ্জ করতে পারি, তোর মত মেয়ে সেটা করেনি। ওই যে বললাম, তুই সৌমাভদাকে একটা ফালতু এবং টেকেন ফর গ্রান্টেড ধরে নিয়েছিলি। তোর হয়তো অঙ্ক কষাই ছিল, পাশটাশ করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে ওকে ডিভোর্স দিয়ে অন্য কারও গলায় ঝুলে পড়বি। তাই আন্দামান থেকে ফেরার পরেই নিজের স্বরূপ দেখাতে শুরু করেছিলি। সৌমাভদা খুব বোকা, তাই অতদিন লেগেছিল তোকে চিনতে। অন্য যে কোনও লোক হলে প্রথম তিন মাসেই তোকে চিনে ফেলত।’’ কথা শেষ করে এ বারে টেবিলে মাথা রেখে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলল জয়তী।
Parent