উপন্যাসঃ কেবল প্রান্তর জানে তাহা- নির্জন আহমেদ - অধ্যায় ১৩

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-47727-post-4889764.html#pid4889764

🕰️ Posted on July 25, 2022 by ✍️ Nirjon_ahmed (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1940 words / 9 min read

Parent
অধ্যায় ১০:  প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য পরদিন যখন ঘুম ভাঙ্গে নির্জনের তখন সকাল কি দুপুর কি রাত, ও ঠাহর করতে পারে না। শুধু বুঝতে পারে, আকাশে যখন সূর্যের আলোর আভাস ফুটতে শুরু করেছিলো কেবল, যখন পাখিরাও সময় সম্বন্ধে অনিশ্চিত হওয়ায় করছিলো উসখুস নিজেদের নীড়ে আর রাস্তা পরিস্কার করতে মেথর অথবা সেই শ্রেণির পেশাজীবীরা নেমেছিলো ঝাড়ু আর তাদের অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী হাতে রাস্তায়, তখন নিম্বাসদার বাইকের পিছনে ঝুলতে ঝুলতে ও নিম্বাসদাকে সদ্য বিগত হওয়া রাতের অবিস্বাস্য অবিস্মরণীয় ঘটনাবলি বিবৃত করতে করতে ও এসেছে হলে। শুধু আসেইনি, এসেই ঘুমন্ত রুমমেটদের গাঢ় কাঁচা ঘুম চিৎকার করে ভাঙ্গিয়ে শুয়েও পড়েছে বিরক্ত বেডুর পাশে। চোখ খুলে নির্জন আবছায়া তাকায় চারদিকে। ওর এক বছরের ছোট বেডু, খালি গায়ে লুংগির কোঁচায় হাত লুকিয়ে ধোন হাতাচ্ছে আর পড়ছে গুনগুণ করে দুলে দুলে। নির্জন বলে, “কয়টা বাজে রে, হাফিজ?” হাফিজ, যার একটা কান অস্বাভাবিক লম্বা, যে কিনা গত রাতে ওকে হঠাত উদয় হতে দেখে যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছিলো, নির্জনকে দেখে একবার, বিড়বিড় করতে করতে। তারপর বলে, “আড়াইটা! আপনে তো জুম্মার নামাজটাও পড়লেন না!” নির্জনের মনে পড়ে, আজ শুক্রবার। আর আজই তাকে ফিরতে হবে কাল সকালে অফিস ধরার জন্য। গতকাল এখানে আসার পর যেমন অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই দূর হয়ে গিয়েছিলো শরীর থেকে গার্মেন্টসের গন্ধ, অফিসের কথা ভাবতেই তেমনই ওর নাকে এসে লাগতে শুরু করেছে পাট করা সারিসারি কাপড়ের স্তূপের ভোঁটকা ঘ্রাণ, শুনতে পাচ্ছে কানে যন্ত্রের খটর মটর শব্দ আর অপারেটরের অশ্লীল গলা।   অদ্বৈতাও আজ দেখা করতে চেয়েছে তার সাথে। করবে কী? নির্দিষ্ট সময় বলেনি ও কোন। কখন আসবে তবে? সন্ধ্যায়? যখন আকাশে মেঘের সাথে মিশতে শুরু করবে কৃষ্ণপক্ষের তারার ক্ষীণ আলো? নাকি বিকেলেই? নাও আসতে পারে তো ও। নির্জনও একটা মানুষ আর তার কথা মনে থাকবে অদ্বৈতার? হয়তো ওর কোন কাজ পড়ে গেছে, কিংবা কোন অনুষ্ঠানে যেতে হচ্ছে হুট করে কিংবা কোন আত্মীয়ের কিংবা বন্ধুর অথবা বান্ধবীর জন্মদিনের আয়োজন আছে আজ- কতো কিছুই তো হতে পারে। নাও আসতে পারে তো আজ। নাও ফোন দিতে পারে নির্জনকে। না এলে কী করবে নির্জন? কিছুই তো করার নেই। হাই তোলে নির্জন। বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করে না। গতকাল যা করেছে সারারাত, ওর উচিত পোলার বেয়ারের মতো শীতঘুমে যাওয়া, অর্ধবছরের তরে না হলেও, অন্তত দু’দিনের জন্য! গা হাতপা ব্যথা ধরে গেছে। দাঁড়িয়ে, বসে, বাঁকা হয়ে, হেলে ও কোলে তুলে যে সমস্ত আসনে কাল সে লামিশা আর মালিহার সাথে মিলিত হয়েছে, তার হদিস না পাওয়া যাবে কামসূত্রে, না পাওয়া যাবে আধুনিক সেক্সের কোন অভিধানে। নির্জন আবিষ্কার করে, ওর দু’পায়ের মাঝে আর কোন অনুভূতিই যেন আর অবশিষ্ট নেই। যন্ত্রটা আছে কি নেই, সেটাও সে বুঝতে পারছে না। খুলে পড়েনি তো আবার? নির্জন প্যান্টের নিচ দিয়ে বাড়ায় হাত রাখে এবং নিশ্চিত হয় যে ওটা খুলেও পড়েনি, লামিশা বা মালিহা কেটেও নিয়ে যায়নি। উঠে পড়ে নির্জন বিছানা ছেড়ে। এখন প্রচণ্ড গরম বলে আর এই অসময়ে আবার ঘুমোলে অদ্বৈতাকে তার অস্বাভাবিক ফোলাফোলা চোখমুখ দেখাতে হতে পারে, এই ভয়ে, হাইবারনেটিং হতে বিরত থাকে ও। বিকেল পাঁচটার দিকে, যখন নির্জন ধরেই নিয়েছিলো, অদ্বৈতা সত্যিই ভুলে গিয়েছে গতকাল রাতে ওকে দেয়া কথা, তখনই ওর ফোন বেজে ওঠে। নির্জনের ঈষৎ কম্পিত বুককে স্বস্তি দিয়ে, অচেনার নাম্বারটার ওপার হতে বেজে ওঠে অদ্বৈতার চেনা গলার চেনাতর (?) স্বর! “আমি তোমার হলের সামনে, নির্জন। গেস্টরুমে অপেক্ষা করবো?” নির্জন তৎক্ষণাৎ জবাব দেয়, “না না। গেস্টরুমে না। তুমি বরং বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকো কোথাও। আমি যাচ্ছি!” গেস্টরুমের নোংরা সোফায় ও অদ্বৈতাকে বসতে দিতে পারে না, নিজের বাড়ি না হলেও, এটা তো ২য় বাড়িই বটে আর অদ্বৈতা তার অতিথি! আর গেস্টরুমের সাথে নির্যাতন শব্দটাও জড়িত। প্রথম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রদের যেভাবে রাজনৈতিক বড় ভাইয়েরা গেস্টরুমে নিয়ে এসে অত্যাচার করে, সেটার অভিজ্ঞতা যার রয়েছে, সে কোনদিন কোন আপনজনকে, যদিও অদ্বৈতা ওর কোনভাবেই অপনজন নয় আক্ষরিক অর্থে, বসাতে পারে না। দুইতলার রুম হতে নির্জন প্রায় লাফাতে লাফাতে নিচে নামে, আর ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ায় হল গেটের দিকে। হল গেটে এসে থামে নির্জন। এভাবে জিভ করে হাঁপাতে হাঁপাতে ও যেতে চায় না অদ্বৈতার সামনে। কিছুক্ষণ নিঃশ্বাস নিয়ে, মস্তিষ্ককেও শান্ত করে, নিজেকের বারংবার শান্ত থাকতে বলে, নির্জন হল থেকে বের হয়। “এত তাড়াতাড়ি এলে? আমি তো ভেবেছিলাম, বসিয়ে রাখবে অনেকক্ষণ!” “তোমাকে রাখবো বসিয়ে? আমি দেশের প্রেসিডেন্টকে অপেক্ষায় রাখতে পারি, তোমাকে নয়!”, কথাগুলো বলতে ইচ্ছে করে নির্জনের। কিন্তু বলে না। বরং জবাবে কী বলবে, ভেবে না পেয়ে ফ্যালফ্যাল করে অদ্বৈতার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। অদ্বৈতা বলে, “তুমি কি কোন কারণে আপসেট?” “না না। আপসেট হবো কেন?” “কথা বলছো না যে?”, ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞেস করে অদ্বৈতা। সরাসরি সে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, নির্জনই উল্টো জিজ্ঞেস করে, “তোমাকে কেউ হলের সামনে বসিয়ে রেখেছিল নাকি?” “অনেক বার বসে থেকেছি!” সাথেসাথেই জবাব দেয় অদ্বৈতা। সেই সাথে যোগ করে, “শক্তিদার জন্যে কতোদিন জগন্নাথের গেস্টরুমে বসে ছিলাম। দাদা প্রতিবার আধঘণ্টা লেট করে আসতো!” শক্তি কিংবা শক্তিদা লোকটাকে নির্জন চেনে না। সে যদি কবি শক্তি চ্যাটার্জি না হয়ে থাকে, যা কেবল টাইম ট্রাভেল বাস্তব হলেই সম্ভব, তবে শক্তি কোন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ নয়, কারণ এ নামের কোন গুরুত্বপূর্ণ মানুষের কথা নির্জন শোনেনি। তবে এই অগুরুত্বপূর্ণ মানুষটার জন্য অদ্বৈতা কেন অপেক্ষা করেছিলো? নির্জন জিজ্ঞেস করে, “শক্তিদা কে? আমাদের ডেপ্টের?” অদ্বৈতা অবাক হয়ে বলে, “তুমি শক্তিদাকে চেনো না? আমাদের কমিউনিস্ট ছাত্র ফোরামের সভাপতি ছিলেন!” নির্জন বলে, “তোমাদের বামদের এতো শাখা-প্রশাখা, কতজন সভাপতি সেক্রেটারিকে চেনা যায় বলতো?” এবারে অদ্বৈতা জবাব পায় না খুঁজে। হাঁটতে থাকে ওরা মূল ফটকের দিকে। দুপাশের মাঠে ছেলেরা এর মধ্যেই ফুটবল নামিয়ে একটা বলের পিছনে ৫০ জন ছুটতে শুরু করেছে। পেপ-ক্লপ-টুখেল এই “বল যেখানে সবাই সেখানে” ট্যাকটিক্স একবার ফলো করে দেখতে পারে! নির্জন বলে, “চা খাবে?” “টিএসসিতে খাই? এখানের চা কি ভালো হয়?” “চা ভালোই হয়। কিন্তু টিএসসি বেটার। অনেকদিন মরিচ চা খাই না। আজ খাবো!” “মরিচ চা! উঃ বাবা। আমি জীবনেও এতো ঝাল নিতে পারবো না। তুমি খাইও, আমি নরমাল চা’ই খাবো!” নির্জন তাকায় অদ্বৈতার মুখের দিকে, তাকায় বিকেলের শান্ত হওয়ার মুখের উপর দুলতে থাকা ফেরাল চুলের গোছাটার দিকে। তাকায় তার চোখের দিকে ও চোখের লম্বা ছায়াময়ি পাপড়ির দিকে। কাজল দিয়েছে অদ্বৈতা? নির্জন চুপচাপ হাঁটতে থাকে ওর পাশে পাশে। সামান্য দূরত্ব ও ইচ্ছে করেই রাখে, যাতে লেগে না যায় হাতে হাত। নির্জন জিজ্ঞেস করে, “রিক্সা নেব?” “না না। হেঁটেই যাই। আমার গাড়ি আছে। হাঁটতে না চাইলে ড্রাইভারকে আসতে বলি?” নির্জনের মনে পড়ে, অদ্বৈতা আর ও একই ক্লাসে একই স্ট্রাটায় বিলং করে না। ওর রিক্সা চাপার অভ্যেস হয়তো নেইই। “তোমার গাড়ি কোথায় আছে?”, জিজ্ঞেস করে নির্জন। “এখানেই আছে। আসতে বলব?” “না থাক। হেঁটেই যাই। আমি গাড়িতে অভ্যস্ত না!” ফুলার রোডের বিশাল কড়ই গাছগুলোর পাতা সবুজতর হয়েছে দুপুরের বৃষ্টিতে, এখন প্রহর শেষের সর্বনাশা রোদে লাজুক বৌয়ের মতো ছলছল কলকল করতে শুরু করেছে পাতারা। আর কয়েকটা টিয়া তাদের ক্যাঁচক্যাঁচে কর্কশ গলায় করছে মান অভিমানের গল্প! “কী বলতে চেয়েছিলে আমাকে অদ্বৈতা? হঠাত দেখা করতে চাইলে?” কাল থেকেই প্রশ্নটা ওকে আঘাত করছে। সেদিকে ও একদম যাচ্ছেই না দেখে, নির্জন প্রশ্নটা করেই ফেলে। “তুমি জানো না?”, নির্জনের দিকে তাকিয়ে বলে অদ্বৈতা। চোখে চোখ পড়তেই চোখ নামিয়ে নেয় ও। যেন লজ্জায়। “না! হঠাত। আমি সত্যিই জানি না!” চুপচাপ হাঁটতে থাকে অদ্বৈতা। নির্জনও আর প্রশ্ন করে বিব্রত করে না ওকে। “আসলে কীভাবে বলবো বুঝতে পারছি না!” নির্জন এবারে থামে। ও থামতে দেখে চলা বন্ধ হয় অদ্বৈতারও। “বলে ফেলো! আমি কিছু মনে করবো না। যা ইচ্ছা!” অভয় দেয় নির্জন। “আমি আসলে খুব সরি, নির্জন। আমি আসলেই খুব রুড আচরণ করেছি তোমার সাথে। তোমার সাথে এমন আচরণ করা আমার একদমই উচিত হয়নি!” এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলে অদ্বৈতা, যেন সে দাঁড়িয়ে আছে আসামীর কাঠগড়ায় আর তার দিকে তাকিয়ে আছে সন্দিগ্ধ বিচারক রক্তচোখে। হেসে ফেলে নির্জন। হাঁহাঁ করে। ওর হাসি দেখে চমকে ওঠে অদ্বৈতা। এমনকি পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া মাঝবয়সী লোকটাও পেছনে ফিরে তাকায়। “হাসছো যে? হাসির কথা বললাম?”, লজ্জিত কিংবা বিব্রত, যে কোন একটা হয়ে প্রশ্ন করে অদ্বৈতা। “হাসবো না? কতদিন আগে কী না কী হয়েছিলো, আমি তো ভুলেই গেছিলাম। সেটার জন্যে আজও, এতদিন পর তোমাকে ক্ষমা চাইতে হবে?” “ভুলে গেছো?”, চোখ তুলে তাকায় অদ্বৈতা, তাকায় নির্জনের মুখের দিকে। “ভুলেই গেছি তো! কতোদিন আগের কথা!” “হ্যাঁ। অনেকদিন!”, নির্জনের কথারই প্রতিধ্বনি করে অদ্বৈতা। নির্জন বলে, “এসব আমি মনে রাখিনি। আর দোষটা তো ছিলো আমারই। আমিই বাড়াবাড়ি করেছিলাম, সবার সামনে ওভাবে তোমাকে অপমান না করলেও তো পারতাম আমি!” অদ্বৈতা সাথে সাথেই কিছু বলে না উত্তরে। ও যেন খুব মনোযোগ দিয়ে আকাশের দিকে দেখে, কিংবা দেখে নব বঁধুর মতো লজ্জিত কড়ই গাছের ঝলমলে ছলছলে কলকলে স্নাত পাতাগুলোর দিকে। তারপর অস্ফুটে বলে, “ওটা দোষের ছিলো কিনা, সেটাই তো বুঝতে পারছি না!” নির্জন ওর অস্ফুট কণ্ঠও ঠিক শুনে নেয়, কান পেতেই তো ও আছে ওর কথা শোনার জন্য। বলে, “দোষ নয় বলছো? আমি ওভাবে এতগুলা মানুষের সামনে তোমাকে প্রোপোজ করে বিব্রত করলাম, এটা ঠিক অন্তত করিনি!” “কিন্তু দোষও তো নয়! আমি তোমাকে রিজেক্ট করতেই পারি কিন্তু তাই বলে সবার সামনে ওভাবে যা তা বলবো?” “যা তা বলাও ঠিক আছে, অদ্বৈতা!”, বলে নির্জন। “একটা গেঁয়ো ছেলে তোমাকে সহজলভ্য ভেবে, তোমার কাছে ঠিক আগেরদিনই রিজেক্টেড হয়ে, এমন বাড়াবাড়ি করলো। রাগ সবারই হতো! আমি ইম্ম্যাচিউর ছিলাম। এখনকার আমি হলে কোনদিন ঐ কাজ করতাম না, বিশ্বাস করো!” নির্জনের অজান্তেই, ওর গলায়, ওর স্বরে, ওর উচ্চারিত প্রতিটা শব্দে অভিমান এসে জমাট বাঁধে। অদ্বৈতা হয়তো সেটা খেয়াল করে, কিংবা করে না। ও নিজের মনেই বলে চলে, “আম সরি, নির্জন। আই ওয়াজ টু রুড! তুমি ঐ ঘটনার পরও দুই একবার আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিলে। আই ডিডেন্ট ইভেন বদার টু আন্সার ইউ! আই ওয়াজ মোর রুড টু ইউ দ্যান আই একচুয়ালি এম!” নির্জনের চোখে বাষ্প জমতে শুরু করে। সূর্যাস্তের পর আবহাওয়ার কারসাজিতে, যেভাবে জমতে থাকে শিশির ঘাসের ডগায়, কচুর পাতায়, আর পথের পাশের লতাগুল্মে, যেভাবে চোখে অযাচিত জল এসে জমাট বাঁধতে চায় ওর চোখে। ওর চোখ জ্বলতে থাকে, ভারি হতে থাকে। কিন্তু নিজেকে সামলে নেয় নির্জন। এসব ন্যাকান্যাকা কান্নাকাটির “দিন নয় অদ্য/ ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা/ চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্য/ কাঠফাটা রোদ সেঁকে চামড়া।” নির্জন বলে, “ইটস ওকে, অদ্বৈতা! আমি খুব ডেসপারেট ছিলাম। সুস্থ মস্তিষ্কে ওমন হটকারিতা করিনি। তুমি রেগে গিয়েছিলে। রাগের মাথায় অনেক কিছুই করে মানুষ!” হাঁটতে শুরু করে আবার ওরা, আর উদয়ন স্কুলের সামনে এসে পড়ে। এখানে এখন হাট লেগে গেছে যেন। গোটা শহর থেকে কপোত-কপোতিরা এসে যেন জমা হয়েছে এখানে। এখানে ওখানে আইস্ক্রিম ভ্যান, ঝালমুড়ি ওয়ালা, চা সিগারেট বিক্রেতা। ফুলার রোডের ফুটপাতে এক কণা জায়গা নেই বসার। নির্জন বলল, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আমার মাঝেমাঝে পার্ক মনে হয়! কোন পার্কেও বোধহয় এতো মানুষ আসে না!” নির্জন, ইচ্ছেকৃত ভাবেই, সেই বাষ্পাচ্ছাদিত বিষয় থেকে বেরিয়ে আসতে, এটা বলে। অদ্বৈতা বলে, “আসুক না। ঢাকার আর কোথায় খোলা একটু জায়গা আছে বলো। একটা সুস্থ জায়গা আছে যেখানে ছেলেমেয়েরা প্রেম করতে পারে? এখানেই না হয় করুক প্রেম!” নির্জন একটা সিগারেটওয়ালাকে ডেকে সিগারেট ধরায়। সেই প্রথমবর্ষে, যখন নির্জন এসাইন্মেন্টের কাজে ও সঙ্গের লোভে অদ্বৈতার পেছনে ঘুরঘুর করতো, তখন নির্জনকে সিগারেট হাতে দেখলেই ক্ষেপে যেত অদ্বৈতা। এমনকি কয়েকবার হাত থেকে সিগারেট নিয়ে ফেলেও দিয়েছে ও। আজ এমন করবে কী? এমন করলেও সিগারেট ফেলবে না নির্জন। তুমি কে হে, আমাকে সিগারেট খেতে বারণ করার? আমি আমার টাকায় খাবো, আমার বুক পুড়বে, তাতে তোমার কী? একবার তো বুক পুড়িয়েই দিয়েছ, সিগারেট পোড়ালেই দোষ? আজ আর বাঁধা দেয় না অদ্বৈতা। নিষেধ তো দূরের কথা, এমনকি বাঁকা নয়নে তাকায়ও না। নির্জন বলে, “তোমার দিনকাল কেমন যাচ্ছে বলো। মাস্টার্সের ক্লাস কেমন হচ্ছে?” নির্জন এতো দ্রুত স্বাভাবিক হবে, এটা হয়তো আশা করেনি অদ্বৈতা। বলে, “ভালোই হচ্ছে। আমার আসলে দেশে মাস্টার্স করার ইচ্ছে ছিলো না।“ “করছো যে?” “এপ্লাই করেছি কয়েকটা ইউনিতে। নেক্সট এডমিশন উইন্ডোতে আবার করব। দেখা যাক!” সিগারেটের পরপর কয়েকটা টান মারে নির্জন। তারপর ধোঁয়া ছেড়ে বলে, “আমাদের ব্যাচের সবাই মাস্টার্স করছে?” “হ্যাঁ। তুমি ছাড়া সবাই করছে!”, বলে অদ্বৈতা। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে নির্জন। পারলে কি সে করতো না? অন্তত অদ্বৈতাকে নিয়মিত একটা বছর দেখতে পারতো। আর তো সম্ভব নয়, আর আসবে না ফিরে এই সুযোগ। যদি সত্যিই কোনদিন ওর ভাগ্য ফেরে, সত্যিই কোনদিন ও সুযোগ পায় মাস্টার্স করার, সেদিন অদ্বৈতা থাকবে না, চেনা বন্ধুরা থাকবে না। নির্জন বলে, “আমি ছাড়া আর কাউকেই বোধহয় বাড়িতে টাকা পাঠাতে হয় না!” এর জবাবে কিছু যেন বলতে চেয়েও বলে না অদ্বৈতা। নির্জন অপেক্ষা করে ওর দিকে তাকিয়ে। কিন্তু ওর ঠোঁট ফুঁড়ে কোন আওয়াজ আসে না। নির্জন ধোঁয়া ছাড়ে। হাঁটতে হাঁটতে ওরা চলে এসেছে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সামনে। অদ্বৈতা বলে, “তুমি টিউশন করাতে! অনেকেই তো টিউশনি করিয়ে মাস্টার্স করছে!” এর জবাবে অনেক কথাই বলতে পারে নির্জন। কিন্তু এসব বলে সিমপ্যাথি কাড়তে চায় না নির্জন। সহানুভূতি ধুয়ে পানি খাওয়াও যায় না। নির্জন বলে, “আমার কথা বাদ দাও অদ্বৈতা। আমি খরচের খাতায় চলে গেছিল। তোমার কথা বলো। তুমি তো বোধহয় থিসিস করছো। তোমার সুপারভাইজার কে?”
Parent