উপন্যাসঃ কেবল প্রান্তর জানে তাহা- নির্জন আহমেদ - অধ্যায় ৩

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-47727-post-4846564.html#pid4846564

🕰️ Posted on June 20, 2022 by ✍️ Nirjon_ahmed (Profile)

🏷️ Tags:
📖 807 words / 4 min read

Parent
অধ্যায় ৩: শুকতারা নিভে গেলে কাঁদে কি আকাশ? My heart aches, and a drowsy numbness pains         My sense, as though of hemlock I had drunk, Or emptied some dull opiate to the drains         One minute past, and Lethe-wards had sunk: কিটসের নাইটিংগেল মনে পড়ে যায় নির্জনের। ও নড়তে পারে না। পা দুটো যেন শতবর্ষী কোন জোর লাগা বট। অনড়, অব্যয়, অক্ষয়। ও দাঁড়িয়ে থাকে ঝড় পরবর্তী তেজী বস্পতির মতো। মেয়েটি হাসছে। মা এভাবে হাসতো না। মায়ের হাসি ছিলো ছোট নদীর কলতানের মতো- ঘোর বর্ষাতেও স্রোতের আওয়াজ যার কানে আসে না। নির্জন ওর মায়ের এমন প্রাণখোলা হাসির কারণ হতে পারেনি কোনদিন। চেষ্টাও করেনি হওয়ার। মেয়েটি কেন হাসছে, জানতে ইচ্ছে করে খুব ওর। খুব হাসির কোন কৌতুক বলেছে কেউ নাকি নিজেই হাসতে হাসতে বর্ণনা করছে মজার কোন ঘটনা? নির্জন এগিয়ে যায়। কান পেতে শুনতে চেষ্টা করে। কিন্তু দূরের মূল রাস্তার বাস আর প্রাইভেটের হর্ন ছাড়া কিছুই কানে আসে না ওর। “হে পৃথিবী, শান্ত হয়ে যাও তুমি। বন্ধ করো তোমার কর্মকোলাহল। আমি কান পেতে রয়েছি, আমাকে ওর স্বর শুনতে দাও। শুনতে দাও। শুনতে দাও!” কোন ধর্মের ঈশ্বরই কোনদিন ওর প্রার্থনা মঞ্জুর করেনি বলে, পৃথিবীর কাছেই নতজানু হয় ও। খুব করে চায়, মনে প্রাণে চায়। কল্পিত ঈশ্বরদের মতো পৃথিবীও অক্ষমতা প্রকাশ করে নির্জনের প্রার্থনার উত্তরে। নীরবতার বদলে একটা বাস এসে তার কানে ঢোকে। একটা ময়লার গাড়ি প্যাঁপু করতে করতে এসে তার কানে মুখে মাথায় যেন গোটা শহরের আবর্জনা ঢেলে দেয়। মেয়েটির স্বর শুনতে পায় না ও। “আরেকটু এগিয়ে যাব?” নিজেকে প্রশ্ন করে নির্জন। কিন্তু মস্তিষ্কের আগে পাদুটো কাজ করে এবারে। এগিয়ে যায় ও। ও দেখেই মেয়েটির হাসি থেমে যায়। মেয়েটির চোখের দিকে তাকায় নির্জন। না, কোন পার্থক্য নেই। শুধু মায়ের মতো মেয়েটির চোখের নিচে জন্মদাগের মতো রাতজাগা কালি নেই, চোখের কোণে বয়সের কুঞ্চন নেই। “কিছু বলবেন?” মেয়েটিই বলে ওঠে ওর দিকে তাকিয়ে। ওর গলার স্বর, যা এতক্ষণ শোনার জন্য প্রায় উন্মাদের মতো আচরণ করছিল, শুনে নির্জন স্বস্তি পায়। না। মায়ের গলার স্বর এটা নয়। কোনদিন নয়। “ভাই, কিছু হয়েছে? অনেকক্ষণ ধরে দেখছি আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন। কোন সমস্যা?” এবারে আরেকজন, ওদেরই দলের, একটা নির্জনের বয়সী ছেলে, বলে কথাগুলো। অন্যদের উপস্থিতির ব্যাপারে এতক্ষণ নির্জন সচেতন ছিলো না। ও যে এতক্ষণ এমন হাবার মতো ওখানে দাঁড়িয়ে আছে আর লোকজন যে তা খেয়ালও করেছে, সেটা বুঝতে পেরে লজ্জিত হয়। দলটার সবাই ওর দিকে তাকিয়ে। জবাবের অপেক্ষায়। গলা পরিষ্কার করে, যেন বক্তৃতা দিচ্ছে এমন স্বরে, বলে, “আমি আসলে ব্লুবার্ড স্কুলে চাকরির একটা ভাইভা দিতে এসেছিলাম। সিরিয়াল অনেক পেছনে, তাই এদিকটায় ঘুরতে এসেছি। কিন্তু ওনাকে দেখে” নির্জন মেয়েটির দিকে চেয়ে সবার দৃষ্টি সেদিকে ফিরিয়ে দেয়, “ওনাকে দেখে আমি, সত্যি বলছি, থ হয়ে গেছি!” “থ হয়ে গেছেন? এক্কেবারে ফিদা?”, নারীকণ্ঠে কলকলিয়ে ওঠে একজন। এই দলে যে “মায়ের মতো ভালো” মেয়েটি ছাড়াও অন্য মেয়েও আছে, খেয়াল করেনি নির্জন। প্রশ্নকর্ত্রীর দিকে তাকাল নির্জন। কৌতূহলী বড় বড় দুটো চোখ মেলে তাকিয়ে আছে। ওর খোলা লম্বা চুল, সিঁথির দুপাশের অংশ সামান্য ব্লন্ড করা। “কে ভাই আপনি? স্টক করছেন নাকি ওকে?” একজন ভোটকা মতো ছেলে প্রায় মারমুখী হয়ে ওঠে এবারে। মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে, “এই ধানসিঁড়ি, এক তোকে স্টক করছে নাকি? তুই এর কাছ থেকেই সিগারেটের আগুন চাইলি না?” ঐ দলেরই আরেকজন বলে ওঠে, “মেয়ে দেখলেই এমন করেন নাকি, ভাই? সিগারেটের আগুন চাইলো আর পিছেপিছে চলে এলেন? আগুন চেয়েছে, প্রেম চায় নাই তো?” নির্জনের কানে শুধু “ধানসিঁড়ি” শব্দটা বাজতে থাকে। ওর মনে হয়, এর চেয়ে ভালো নাম ও আর শোনেনি কোনদিন। ভোটকা ছেলেটা ওর দিকে ষাঁড়ের মতো তেড়ে আসছে দেখে চমক ভাঙ্গে ওর। সামান্য পিছিয়ে গিয়ে ও বলে, “ভাই, প্লিজ শান্ত হন। আমি কোন সিনক্রিয়েট করতে আসি নাই!” “সিন ক্রিয়েট করতে আসেন নাই মানে? মেয়েদের সিরিয়াল কিলারের মতো স্টক করছেন আর...” কাতল মাছটার কথা শেষ হওয়ার আগেই নির্জন কাঁতর গলায় বলে, “ওর চেহারা আমার মায়ের মতো, সেজন্যেই...” নির্জনের কথা শেষ হওয়ার আগেই খিলখিল হাসিতে জায়গাটা ভরে যায়। সেই ব্লল্ড চলের মেয়েটি হাসতে হাসতে কোমর নুইয়ে ফেলে। বলে, “এই ধানসিঁড়ি, কী বলছে শোন। তুই নাকি ওর মায়ের মতো দেখতে। টিনএজ ক্রস করতে না করতেই মিলফ হয়ে গেলি, শালা!” নির্জনের কান গরম হয়ে যায়। ওর ইচ্ছে করে এই অভদ্র মেয়েটাকে লাথি মেরে রাস্তার চলন্ত ট্রাকের নিচে ফেলে দেয়, তারপর ওর রক্তে ভেজা পিচের উপর দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরায়! কিন্তু চুপচাপ থাকে ও। ব্লন্ড চুলের মেয়েটি ওর মুখ দিয়েই পাদতে থাকে। বলে, “পুরাই অডিপাস কমপ্লেক্স কেইস!” “আঃ তোরা চুপ করবি?”, মেয়েটি, যার নাম ধানসিঁড়ি, বলে ওঠে। নির্জনের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলে, “আমি জানি না, আপনার মা দেখতে কেমন। আমার মতো দেখতে হতেই পারে। কিন্তু আমার সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। বুঝতে পারছেন কী? সিগারেটের আগুন দেয়ার জন্য ধন্যবাদ!” স্পষ্ট ও কড়া বলায় কথাগুলো বলে মেয়েটি। নির্জনের মনে হয়, ওর মা ওকে বকছে। “আরেকটু শাসন করো, মা! আমি একদম নষ্ট হয়ে গেছি, মা। আমি রক্তে বিষ ঢুকে গেছে। আমি কীটের মতো বেঁচে আছে। আমাকে শাসন করে সুপথে ফিরিয়ে আনো তুমি!” কিন্তু এ তো মা নয়। মায়ের মতো বকে কিছুক্ষণ পর আদর করে এ আর কাছে টেনে নেবে না। নির্জনের চোখ আবার ভিজতে শুরু করে। মায়ের মতো মেয়েটির দিকে, ধানসিঁড়ির দিকে, আরেকবার তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে হাঁটতে শুরু করে ও। গোরস্থান থেকে ফেরার অনুভূতি হয় ওর। বুকে জল জমে।
Parent