যেখানে যার নিয়তি/কামদেব - অধ্যায় ২১

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-27499-post-2072335.html#pid2072335

🕰️ Posted on June 18, 2020 by ✍️ kumdev (Profile)

🏷️ Tags:
📖 944 words / 4 min read

Parent
একবিংশতি পর্ব লাবণ্যকে নামিয়ে দিয়ে মণি চলে গেল।সিড়ি দিয়ে দোতলায়  উঠে রমেশবাবুর শূণ্য বিছানার দিকে তাকিয়ে হু-হু করে উঠল মনটা।অসুস্থ হলেও মানুষটা চোখের সামনে ছিল।বিছানায় বসে বালিশে মুখ গুজে ফুপিয়ে কেদে ফেললেন লাবণ্য।বিয়ের পর আজই প্রথম একা।সমুর ডাকে উঠে  বসে চোখ মুছলেন।সমুকে জিজ্ঞেস করলেন,ওরা ফিরেছে? --এখনো ফেরেনি।কি হল কিছু বলেছে? --তপু এলে জিজ্ঞেস করিস।ওরা এলে চা করব। দুজনের  কথা বলার মধ্যে তপেন মৌমিতা ঢুকল।মৌমিতা ঢুকে বিছানায় বসে বলল,উফস কি ধকল।পাখা ফুল স্পীডে আছে?  --নর্থ থেকে একেবারে সাউথে কাছাকাছি আর নার্সিং হোম ছিলনা। --মণি শঙ্কর বলছিল নার্সিং হোম নয় ডাক্তারের জন্য ওখানে ভর্তি করা।তপেন বলল। --হ্যা ঠিকই ড অনঙ্গদেব লোকে বলে ধন্বন্তরী।সমু বলল। --দ্যাখো ঠাকুর-পো ভগবানের উপর ডাক্তার নয়। লাবণ্যর এসব আলোচনা ভাল লাগছিল না উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,তোরা বোস আমি চা করে আনছি। --হ্যা এখন একটু চা খুব দরকার।মৌমিতা বলল। --তুমি যাও না মাকে একটু--। কথা শেষ না হতেই মৌমিতা বলল,তুমি কি করে বলো একথা? তপেন কথা না বাড়িয়ে রান্না ঘরে গিয়ে বলল,মা তুমি যাও আমি চা করছি। লাবণ্য বললেন,তোকে চা করতে হবেনা। তুই বিস্কুটের টিনটা নামিয়ে বিস্কুট বের কর।সমুকে বল চা নিয়ে যেতে। সবাইকে চা ঢেলে দিতে ওরা চলে গেল।রমেশবাবুর কাপটা নিয়ে নিজের গালে বোলায়।এই কাপে আজ চা দিতে হবে না।ওর চায়ের নেশা ছিল।নার্সিং হোমে চা দেবে কিনা কে জানে।কাপটা নামিয়ে রেখে নিজের কাপে চা ঢেলে নিয়ে ঘরে এসে বসলেন।বউমা বলছিল ভগবানের কথা।ইঙ্গিতটা বুঝতে অসুবিধে হয়না।মনে হল আবার ফিরবে তো?কপোল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। রাতের খাওয়া শেষ হতে লাবণ্য বিছানা ঝেড়ে শোবার উদ্যোগ করছেন,ফোন বেজে ঊঠল।রিসিভার তুলে কানে লাগাতে শুনতে পেলেন মণির গলা।হ্যা এই খেয়ে এবার শোবো।....তুই গাড়ী নিয়ে আসবি...আচ্ছা ঠিক আছে বাসায় থাকব...জানি না কেকে যাবে...ঠিক আছে বলে দেব মণি নিয়ে যাবে...হ্যা..আচ্ছা। রিসিভার রেখে স্বস্তি বোধ করেন।মণি কাল নিয়ে যাবে। ফাল্গূনী জিজ্ঞেস করল,কিসের দোকান বললে নাতো? --দশকর্মা মাটির ঘট কুলো ত্রি-কাঠি পৈতে বিয়ে পুজোর উপকরন--। --কি হল ঘুমিয়ে পড়লে? --শালপাতা চাঁদমালা--।   --মণিকে কেমন বোকা-বোকা মনে হতো। --হু-উ। --অবশ্য লেখাপড়ায় ভাল ছিল। --হু-উ। --কই হু-হু করছ?কি ভাবছো বলতো? --কাল অফিস থেকে চলে যাব ভাবছি মাকে কে নিয়ে যাবে? --রোজ রোজ মা-র যাবার দরকার কি?আমি কিন্তু যেতে পারব না। মৌমিতা হাত দিয়ে তপেনকে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করল,কত দিলে আজ? --দশ হাজার। --মণি কিছু দেয়নি? --আজ শুধু দশ দিতে বলল। --তোমার ভাইটা হেভি সেয়ানা এইজন্য নিজে নাগিয়ে বউকে পাঠিয়েছে।শোনো তুমি আর দেবে না অন্যরা কেকি দেয় দেখো। --টেস্ট-ফেস্ট করতেই দশ চলে যাবে।ভাবছি কি হবে? --আমার সময় হয়ে এল সেটা ভুলে যেওনা।মাস তিনেক পরেই আমি ছুটির দরখাস্ত করব। --বুঝেছি দেখি সমু কি বলে? --তোমাকে অত ভাবতে হবে না,যারা ওস্তাদি করেছে তারা বুঝুক।ওদিকে আমার মায়ের কাজের লোক বেতন বাড়াবার তাগাদা দিচ্ছে। --কালকের ব্যাপারটা ভাবছি। --কিসের ব্যাপার? --আমি অফিস থেকে চলে যাব মাকে কে নিয়ে যাবে? --রোজ যাবার তো দরকার নেই।কিছু হলে দেখা যাবে। --দরকার নেই ঠিক একটা সেণ্টিমেণ্টের ব্যাপার আছে না।বাবাকে ছেড়ে মা কোনোদিন থাকেনি। --আমার মা তো একাই রয়েছে সে কথা তো বলছো না? সকাল বেলা মায়ের মুখে যখন শুনলো মণি মাকে নার্সিং হোমে নিয়ে যাবে বাড়ীতে একটা স্বস্তি ফিরে আসে।ফাল্গূনীর ইচ্ছে হল সেও যাবে কিন্তু লজ্জায় ইচ্ছেকে দমন করল। খেতে বসেছে মন।শাশুড়ি জিজ্ঞেস করলেন,ডাক্তার কি বলল? --খেতে বসে তোমার সঙ্গে কথা বলা মুষ্কিল। --তাহলে কিসের ডাক্তার? --মা আমি আপনাকে পরে সব বলব।কানের কাছে মুখ নিয়ে মণি বলল। নীচে গাড়ীর হর্ণ বাজে মণিশঙ্কর বিরক্ত হয়ে ডাকে,কি হল মণি গাড়ির হর্ণ শুনতে পাচ্ছো না? মনি এসে হাসতে হাসতে বলল,হর্ণ বাজছে যাও। মনিশঙ্কর গলা জড়িয়ে ধরে ঠোট দুটো মুখে নিয়ে চুষে নীচে নেমে গেল।প্রতিদিন যাবার আগে এই হচ্ছে রুটিন। গাড়ীতে বসে নিজেকে এলিয়ে দিল।কিছুটা যাবার পর মোবাইল বেজে উঠল।কানে লাগাতে শুনতে পেল, --এ্যাডভোকেট চৌধুরী। --হ্যা বলুন,কোনো খবর আছে? --অনেক ধন্যবাদ মি মুখার্জি। --ধন্যবাদের কি হল? --ছেলেটা বিটেক করে বসে বসে একেবারে ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে যাচ্ছিল--এ্যাপয়ণ্টমেণ্ট লেটার পেয়েছে। --নিজের যোগ্যতায় পেয়েছে। --সেতো জানি কিভাবে পেয়েছে।আপনার কথা মনে থাকবে।আর হ্যা নেক্সট বুধবার ডেট ম্যাডামকে একবার কোর্টে আসতে হবে। --বুধবার মানে পরশু? --অসুবিধে হবে?তাহলে বলুন আমি ডেট নিয়ে নেবো। --আচ্ছা রাতে জানালে হবে? --হ্যা-হ্যা কাল সকালের মধ্যে জানালেই হবে। --আমি বাসায় ফিরে কনফার্ম করছি।থ্যাঙ্ক ইউ রাখছি। ভদ্রলোক বেশ এফিসিয়েণ্ট।মণির বাবা নার্সিং হোমে কি অবস্থায় বোঝা যাচ্ছে না।এরমধ্যে একদিন কোর্টে যাওয়া কতখানি সম্ভব।কথাগুলো মনে মনে নাড়াচাড়া করতে থাকে মণিশঙ্কর।একবার ভাবল ফোন করে জানাবে কিনা আবার ভাবে থাক অহেতুক টেনশন হবে।নার্সিং হোমে গিয়ে লেটেস্ট অবস্থা জেনে কিছু একটা স্থির করা যাবে। মন চলে গেছে অফিসে।খেয়েদেয়ে একটু গড়িয়ে নেওয়ার যাক ভেবে মনিমালা পাখা ঘুরিয়ে শুয়ে পড়ল।মা বলছিল অতনু নাকি ফিরেছে।বিয়ে হলনা এদিকে পেটে বাচ্চা এসে গেল বিচ্ছিরি ব্যাপার।মন কি করছে কে জানে।অবশ্য ওর উপর চাপ কম যাচ্ছে না। আজ  একটু তাড়াতাড়ি বের হবে তাহলে মা-র সঙ্গে একটু গল্প করা যাবে।মনের সঙ্গে তার কি সম্পর্ক ওরা কিছু অনুমান করে থাকতে পারে কিন্তু কেউ স্পষ্ট করে কিছু জিজ্ঞেস করেনি।ভাবতে ভাবতে একসময় চোখ লেগে যায়। রান্না ঘরে খুটখাট শব্দ হতে ঘুম ভেঙ্গে গেল।চোখ মেলে দেওয়ালে ঘড়িতে দেখল তিনটে বাজে।বিছানা থেকে উঠে রান্না ঘরে গিয়ে দেখল শাশুড়ী-মা চা করছেন।বয়স হয়েছে দু-দণ্ড স্থির হয়ে বসে থাকবে না। মণিমালা বলল,আচ্ছা মা আপনার ক্লান্তি বলে কিছু নেই? শাশুড়ী ঘাড় ঘুরিয়ে হেসে বলল,শান্তি থাকবে না কেন?আমার ছেলে আছে এত সুন্দর বউমা আছে আমার কিসের অশান্তি।নেও চা নেও। মনিমালা হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিল।এই বুড়ীর সঙ্গে কথা বলাও যাবে না বলে এক শোনে আর এক।কাহাঁতক চিল্লাচিল্লি করা যায়।  কলিংবেল বাজতে ফাল্গুনি দরজা খুলে দিল।গাড়ী দেখে খুব ইচ্ছে হয় যাবে কিন্তু বাড়ী ফাকা রেখে যাবার উপায় নেই।মণিমালা জিজ্ঞেস করল,মা কি ঘুমোচ্ছে? --মা সকাল থেকে সেজে বসে আছে।হেসে বলল ফাল্গুনি। মনিমালা উপরে উঠে গেল।লাবণ্য তৈরী হয়ে বসে আছেন।তাকে দেখে উঠে দাড়ালেন। --উঠছো কেন বোসো।এখনো দেরী আছে।ডাক্তার আছে নার্স আছে এত ব্যস্ত হবার কই আছে? --এমনি কোনো কাজ নেই।তুই চা খাবি। --তুমি বোসো আমি চা করছি।মণি রান্না ঘরে গেল। একজন আরেকজনকে চেনে না জানে না।একদিন দুজনে বিয়ে হয়ে একটা সম্পর্ক তৈরী হল।সেই সম্পর্কের বাধন যেন নাড়ির বাধন।মন যতক্ষন চোখের সামনে থাকে কিছু মনে হয়না আড়াল হলেই সারাক্ষন একটা উদবেগ বুকের মধ্যে জমাট বেধে থাকে। অতনুর বেলায় সেরকম মনে হয়নি কখনো।ব্যাপারটা অদ্ভুত মনে হয়।চা করতে করতে ভাবে মণিমালা।ফাল্গুনী এসেছে টের পায়।তিন কাপ চা নিয়ে মায়ের ঘরে গেল।    
Parent